একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী
একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী | |
---|---|
বাংলাদেশের ১৪তম রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ১৪ নভেম্বর ২০০১ – ২১ জুন ২০০২ | |
প্রধানমন্ত্রী | খালেদা জিয়া |
পূর্বসূরী | শাহাবুদ্দিন আহমেদ |
উত্তরসূরী | জমিরুদ্দিন সরকার (ভারপ্রাপ্ত) |
ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১৯৭৯ – ১৯৮২ | |
পূর্বসূরী | এম কোরবান আলী |
উত্তরসূরী | শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন |
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১৯৯১ – ২০০২ | |
পূর্বসূরী | শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন |
উত্তরসূরী | মাহি বি চৌধুরী |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | কুমিল্লা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)[১] | ১১ অক্টোবর ১৯৩০
মৃত্যু | ৫ অক্টোবর ২০২৪ ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স ৯৩)
রাজনৈতিক দল | বিকল্প ধারা বাংলাদেশ |
অন্যান্য রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (১৯৭৮–২০০২) |
দাম্পত্য সঙ্গী | হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী |
সন্তান | মাহি বি চৌধুরী |
পিতামাতা | কফিল উদ্দিন চৌধুরী (পিতা) |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা কলেজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ |
ধর্ম | ইসলাম |
পুরস্কার | স্বাধীনতা পুরস্কার ১৯৯৩ |
আবুল কাসেম মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা চৌধুরী[২] বা বি.চৌধুরী (১১ অক্টোবর ১৯৩০ – ৫ অক্টোবর ২০২৪) ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও চিকিৎসক। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় আসার পর তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। এর কিছুদিন পর ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। এছাড়া তিনি একজন লেখক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, উপস্থাপক এবং সুবক্তা।[৩] ২০০২ সালে সৃষ্ট এক বিতর্কিত ঘটনার জের ধরে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ও পরবর্তীকালে আরেকটি রাজনৈতিক দল বিকল্প ধারা বাংলাদেশ গঠন করেন।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]বদরুদ্দোজা চৌধুরী অক্টোবর ১১, ১৯৩০ সালে কুমিল্লায় তার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সেইন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল থেকে ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হতে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরী লন্ডনে অবস্থিত কারফিউ এন্ড এডিনবার্গ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত কফিল উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ও খ্যাতনামা আইনজীবী। এছাড়াও তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের মন্ত্রী। জনাব বি.চৌধুরী তার নানাবাড়ি কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষাজীবন কাটে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সেইন্ট গ্রেগরী উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও লন্ডন, এডিনবরা ও গ্লাসগো রয়াল কলেজ এ। সেইন্ট গ্রেগরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থেকে। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে বিদেশে উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য নির্বাচিত হন।
জনাব চৌধুরী তার কর্মজীবন শুরু করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সবচাইতে নবীন অধ্যাপক হিসেবে। তিনি স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ষাটের দশকের শেষের দিকে জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান "আপনার ডাক্তার" এর উপস্থাপক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৭৭ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমান এর সরকারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
রাজনৈতিক জীবন, ১৯৭৫-১৯৮১
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলেন। এপ্রিল ১৫, ১৯৭৯ সালে তিনি জিয়াউর রহমান সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এসময় তিনি স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ড. চৌধুরী একজন প্রবীণ রাজনৈতিক ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। তিনি বিএনপির মনোনয়নে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিজ নির্বাচনী এলাকা মুন্সীগঞ্জ-১ আসন (সিরাজদিখান-শ্রীনগর) থেকে। বিভিন্ন সময়ে বিএনপির পাঁচবারের শাসনামলে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিএনপির জয়লাভের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ও পরবর্তীকালে ১৪ নভেম্বর ২০০১ এ তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব লাভ করেন ও পদত্যাগের আগ পর্যন্ত (২১ জুন, ২০০২) দায়িত্বে বহাল ছিলেন। পদত্যাগের পর তিনি বিকল্প ধারা বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন ও এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অদ্যাবধি তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনৈতিক জীবন, ২০০১-২০০৬
[সম্পাদনা]২০০২ সালের ২১ জুন দলের অভ্যন্তরের অন্যান্য নেতাদের চাপে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ হতে পদত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে তিনি এর আগের মাসে বিএনপি র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার মাজারে না গিয়ে তার প্রতি অশ্রদ্ধা পোষণ করেন। এরপর তিনি তার পুত্র বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মাহি বি চৌধুরীকে সাথে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল বিকল্প ধারা গঠন করেন।
সাত মাসাধিককাল রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ৩০ মে ২০০২ তারিখে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিরপেক্ষ থেকে জিয়াউর রহমানের সমাধি পরিদর্শন না করার সিদ্ধান্ত নেন। তার এই পদক্ষেপে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির অনেক নেতা তার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনেন। সংসদে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাবেরও পরিকল্পনা চলছিল। নিজ দলের মধ্যে বিরাজমান ক্ষোভ ও ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে তিনি জুনের ২১ তারিখ বিএনপি সভানেত্রী খালেদা জিয়ার বাসভবনে তার সাথে সাক্ষাত করেন ও পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের পর ড. চৌধুরী বিএনপি থেকেও পদত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত তার পুত্র মাহি বি চৌধুরী ও ও বিএনপির আরেকজন সাংসদ এম এ মান্নান সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। মার্চ ২০০৪ এ বি চৌধুরীর উদ্যোগে তারা সমন্বিত ভাবে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। বি চৌধুরী দলের সভাপতির ও এম এ মান্নান মহাসচিব এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উপনির্বাচনে দলটি মুন্সীগঞ্জ ১ আসনে জয়লাভ করে। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের অধীনে দলটি ২টি আসনে জয়লাভ করে।[৪]
ব্যক্তিগত জীবন ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]ড. চৌধুরী ব্যক্তিগত জীবনে হাসিনা ওয়ারদা চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক। তার পুত্র মাহি বি চৌধুরী তরুন রাজনৈতিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব। তার বড় মেয়ে ব্যারিস্টার মুনা চৌধুরী পেশায় একজন আইনজীবী ও ছোট মেয়ে ডাঃ শায়লা শারমিন চৌধুরী পেশায় একজন চিকিৎসক।[৫] জনাব চৌধুরী রাজনীতি ও সমাজ উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৩ সালে দেশের সর্ব-উচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। শ্রেষ্ঠ টিভি উপস্থাপক হিসেবে তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন পুরস্কারও লাভ করেন।
অসুস্থতা ও মৃত্যু
[সম্পাদনা]ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় গত ২ অক্টোবর সকালে বি চৌধুরীকে উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মেয়ে শায়লা চৌধুরী জানান যে, তার বাবা আগে থেকেই ইস্কিমিক হার্ট ডিজিসে ভুগছিলেন।[৬] তিনি ৫ অক্টোবর ২০২৪ খ্রি. রাত ৩টা ১৫মিনিটে চিকিৎসারত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।[৭]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Banglapedia article on AQM Badruddoza Chowdhury"। Banglapedia। ৩০ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৩।
- ↑ "Bangladesh: Heads of State: 1971-2024 - Archontology"। www.archontology.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-০৬।
- ↑ ক খ মোঃ আজহারুল ইসলাম (২০১০)। বিক্রমপুর ইতিহাস ও ব্যক্তিত্ব। ঢাকা: নওরোজ সাহিত্য সম্ভার। পৃষ্ঠা ১৭৯–১৮০। আইএসবিএন 978-984-33-1362-1।
- ↑ রিপোর্টার, স্টাফ। "২৯৮ আসনের ফলাফল: মহাজোট ২৮৮, ঐক্যফ্রন্ট ৭ ও স্বতন্ত্র ৩"। DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৩।
- ↑ রিপোর্টার, স্টাফ। "৮৮ বছরে পা রাখলেন বি চৌধুরী"। DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-১৭।
- ↑ https://www.somoynews.tv/news/2024-10-04/EtLLLGtW
- ↑ "সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই"। www.kalerkantho.com। 2024-10। সংগ্রহের তারিখ 2024-10-05। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)
পূর্বসূরী: শাহাবুদ্দিন আহমেদ |
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নভেম্বর, ২০০১ - ২১ জুন, ২০০২ |
উত্তরসূরী: জমিরুদ্দিন সরকার |
- ১৯৩২-এ জন্ম
- ২০২৪-এ মৃত্যু
- মুন্সীগঞ্জ জেলার রাজনীতিবিদ
- বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
- চিকিৎসাবিদ্যায় স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী
- বিকল্পধারা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ
- দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ সদস্য
- পঞ্চম জাতীয় সংসদ সদস্য
- ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ সদস্য
- সপ্তম জাতীয় সংসদ সদস্য
- অষ্টম জাতীয় সংসদ সদস্য
- বাংলাদেশী চিকিৎসক
- খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার সদস্য
- ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- খালেদা জিয়ার প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য
- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহাসচিব
- ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- কুমিল্লা জেলার ব্যক্তি
- বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- বাংলাদেশের উপপ্রধানমন্ত্রী
- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বাংলাদেশ) এর রাজনীতিবিদ
- বাংলাদেশী রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা
- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিবিদ
- স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী