প্রযুক্তি
প্রযুক্তি হল কৌশল, দক্ষতা, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া-সমষ্টি, যা পণ্য ও সেবা উৎপাদনে বা উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়; যেমন: বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান। প্রযুক্তি হতে পারে কৌশল ও প্রক্রিয়ার জ্ঞান বা এটি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে শুধুমাত্র যন্ত্রের ধারণা যে, এটি কীভাবে পরিচালিত হয় এগুলো সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান ব্যতীত। কৌশল, ( অর্থাৎ মেশিন বা যন্ত্র) যা প্রযুক্তির ইনপুট ব্যবহার নিয়ে ১টি আউটপুট ফলে পরিণত করে তাকে প্রযুক্তি কৌশল বা প্রযুক্তিগত কৌশল বলে।
প্রযুক্তির সরলতম রূপ হল মৌলিক সরঞ্জামের বিকাশ ও ব্যবহার। প্রাগৈতিহাসিক কালে আগুন নিয়ন্ত্রণের আবিষ্কার ও পরবর্তীকালে নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লব খাদ্যের উৎসের বৃদ্ধি করেছে এবং চাকার আবিষ্কার মানুষকে এই পরিবেশে পরিভ্রমণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছে। ক্রমে ক্রমে ছাপাখানা, টেলিফোন, মোবাইল, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের আবিষ্কার যোগাযোগ ক্ষেত্রে মানুষের শারীরিক বাঁধাকে দূর করেছে এবং মানুষকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে মুক্তভাবে যোগাযোগে সক্ষম করেছে।
প্রযুক্তির অনেক প্রভাব রয়েছে। এটি অধিক সমৃদ্ধ অর্থনীতি বিকাশে সাহায্য করেছে (বর্তমানের বৈশ্বিক অর্থনীতি সহ) এবং যার ফলে বিলাসী সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছে।অনেক প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত উপজাত উৎপন্ন হয় যা দূষণ হিসেবে পরিচিত এবং যা প্রাকৃতিক সম্পদের অবনতির মাধ্যমে পৃথিবীর পরিবেশের ক্ষতি করে। উদ্ভাবন সর্বদাই সমাজের মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে ও সাথে সাথে প্রযুক্তির শিষ্টাচার নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।উদাহরণের মধ্যে রয়েছে দক্ষতার ভিত্তিতে খ্যাতির নির্ধারণ জৈব শিষ্টাচার কে বাধাগ্রস্ত করে।
প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে দার্শনিক যুক্তি তর্ক এখনো একমত নয় যে এটি মানুষের পরিস্থিতির উন্নতি করেছে নাকি অবনতি করছে। নব্য-লুডিজম, অ্যানার্কো-আদিমবাদ এবং অনুরূপ প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন প্রযুক্তির বিস্তারকে সমালোচনা করে যুক্তি দেন যে এটি মানুষের ক্ষতি করে। অন্যদিকে টেকনো-প্রগতিবাদ মতামতের সমর্থকরা প্রযুক্তিকে সমাজের পক্ষে উপকারী মনে করেন।
প্রযুক্তি বলতে কোন একটি প্রজাতির বিভিন্ন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান প্রয়োগের ব্যবহারিক জ্ঞানকে বোঝায়। নিজের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে প্রজাতিটি কেমন খাপ খাওয়াতে পারছে এবং তাকে কীভাবে ব্যবহার করছে তাও নির্ধারণ করে প্রযুক্তি। মানব সমাজে প্রযুক্তি হল বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের একটি আবশ্যিক ফলাফল। অবশ্য অনেক প্রাযুক্তিক উদ্ভাবন থেকেই আবার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের অনেক জ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। মানব সমাজের প্রেক্ষিতে প্রযুক্তির সংজ্ঞায় বলা যায়, "প্রযুক্তি হল কিছু প্রায়োগিক কৌশল যা মানুষ তার প্রতিবেশের উন্নয়নকার্যে ব্যবহার করে।" যেকোন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান সম্বন্ধে জ্ঞান এবং তা দক্ষভাবে ব্যবহারের ক্ষমতারকেও প্রযুক্তি বলা হয়।
আমরা যে পৃথিবী তে বাস করি তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করি। প্রযুক্তি হল জ্ঞান, যন্ত্র এবং তন্ত্রের ব্যবহার কৌশল যা আমরা আমাদের জীবন সহজ করার স্বার্থে ব্যবহার করছি।
সংজ্ঞা ও ব্যবহার
[সম্পাদনা]‘প্রযুক্তি’ শব্দটির ব্যবহার গত ২০০ বছরের তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর আগে এই শব্দটি ইংরেজিতে অপরিচিত ছিল যা সাধারণত কখনো কখনো প্রয়োজনীয় কলার[২]ব্যাখ্যা দিতে ব্যবহৃত হতো আবার কখনো কখনো ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এর কৌশলগত বিদ্যাকে বোঝানো হতো (১৮৬১ সালে তালিকাভুক্ত)।[৩]
‘প্রযুক্তি’ শব্দটি প্রাধান্য পায় দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সান্নিধ্যের মাধ্যমে।এই শব্দটির অর্থ বিংশ শতাব্দীতে পরিবর্তিত হয় যখন থর্স্টেইন ভেবলেন থেকে শুরু করে আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানীরা জার্মান Technik থেকে ‘প্রযুক্তি’ এর অনুবাদ করা শুরু করেন। জার্মান ও ইউরোপীয় ভাষায় technik এবং technologie দুটি শব্দ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে কিন্তু ইংরেজিতে এ দুটিকেই একই অর্থে ‘Technology’ তে অনুবাদ করা হয়েছে। ১৯৩০ এর দশকে প্রযুক্তি কেবল ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি।[৪]
১৯৩৭ সালে মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী রেড বাইন লিখেছিলেন ‘ প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করে সমস্ত মেশিন, সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি এবং যোগাযোগ ও পরিবহনের ডিভাইস ও দক্ষতা যা আমরা তৈরি এবং ব্যবহার করি।[৫] বাইন এর সংজ্ঞা আজ ও পরিচিত বিশেষ করে সমাজ বিজ্ঞানীদের কাছে। বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা যেকোনো কিছু তৈরি ও ব্যবহার কে প্রযুক্তির সংজ্ঞা দেওয়ার চাইতে এটিকে ফলিত বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করতে অধিক আগ্রহী।[৬] সম্প্রতি বিভিন্ন যান্ত্রিক কারণে অনেক বিজ্ঞানীরা ইউরোপীয় দার্শনিকদের চিন্তা ধারাকে বিবেচনা করেন প্রযুক্তিকে বিশ্লেষণ করতে যেমন করা হয়েছে ফোকল্টসের টেকনোলজিস অফ দ্যা সেলফ।
অভিধান ও বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা দিয়ে থাকেন। মেরিয়ামিয়াম-ওয়েস্টার লার্নার্স ডিকশনারি বিষয়টির এইরকম সংজ্ঞা প্রদান করে ‘প্রযুক্তি হল শিল্প ও প্রকৌশল ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যবহার যা প্রয়োজনীয় জিনিস আবিষ্কার ও সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়’ এবং ‘মেশিন বা সরঞ্জাম হল প্রযুক্তির তৈরি ফলাফল’।[৭] উরসুলা ফ্রাঙ্কলিন ১৯৮৯ সালে তাঁর ‘রিয়েল ওয়ার্ল্ড অফ টেকনোলজি’ লেকচারে এই ধারণাটির অন্য একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন ‘ এটি হলো আমরা চারপাশের কাজ কীভাবে করি তার কৌশল।[৮] এটি প্রায়শই ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি বা উচ্চতর প্রযুক্তিকে বুঝায়’।[৯] বার্নার্ড স্টিলগার ‘প্রযুক্তি ও সময়-১’ প্রযুক্তিকে দুইভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন যেমন - ‘জৈবিক উপায় ছাড়া জৈবিক কার্য সাধন’ এবং ‘সুসংহত অজৈব পদার্থ’ হিসেবে।[১০]
বিস্তর পরিসরে প্রযুক্তি হল মানসিক ও শারীরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সৃষ্ট বস্তুগত ও অবস্তুগত জিনিস বা মাধ্যম যার মাধ্যমে কোনো মূল্য অর্জন করা হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রযুক্তি হল যন্ত্র ও সরঞ্জাম যা বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি সুদূরপ্রসারি ধারণা যা সরল যন্ত্র যেমন চামচ থেকে শুরু করে অনেক জটিল যন্ত্র যেমন মহাশূন্য স্টেশন ইত্যাদি কে অন্তর্ভুক্ত করে। যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেবল বস্তুই হতে হবে তা নয় যেমন কম্পিউটার সফটওয়্যার ও ব্যবসার পদ্ধতি এগুলো প্রযুক্তির সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে।[১১] ডব্লিউ ব্রায়ান আর্থার একইভাবে বিস্তর পরিসরে প্রযুক্তিকে সংজ্ঞায়িত করেন, ‘একটি পদ্ধতি হিসেবে যা মানুষের উদ্দেশ্য পূরণ করে’।[১২]
প্রযুক্তির শব্দটি বিভিন্ন কৌশলের সংগ্রহকে ও বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই পাঠ্য অংশে মানবিক জ্ঞানের প্রচলিত ধারণা উৎসগুলোকে সমন্বিত করে কাঙ্ক্ষিত জিনিস তৈরি, সমস্যা সমাধান, চাহিদা পূরণ করা হয় তা প্রযুক্তি, পদ্ধতি ও এর কাঁচামাল ব্যবহার করে।যখন এটি ‘চিকিৎসা প্রযুক্তি’ ও ‘মহাশূন্য প্রযুক্তি’ এর সাথে জড়িত হয় তখন এটি সেই ক্ষেত্রের সরঞ্জামও জ্ঞানকে বুঝায়। ‘কলা প্রযুক্তি’ মানবিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত উন্নত প্রযুক্তিকে বুঝায়।
প্রযুক্তিকে সমাজ পরিবর্তনের কার্যক্রম হিসেবে উল্লেখ করা যায়।[১৩] তাছাড়া প্রযুক্তি হল গণিত, বিজ্ঞান ও কলার প্রয়োগ যা জীবনে উপকারে আসে। এর আধুনিক উদাহরণ হল যোগাযোগ প্রযুক্তির উদ্ভব যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যকার শারীরিক মিথস্ক্রিয়ার বাধাকে অতিক্রম করে একটি নতুন সংস্কৃতি সাইবার সংস্কৃতির নামে আবির্ভূত হয়েছে যার ভিত্তি হলো কম্পিউটার ও ইন্টারনেট।[১৪] একটি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হিসেবে প্রযুক্তি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল কে নির্দেশিত করে কারণ এদের প্রত্যেকটি প্রযুক্তিগত প্রচেষ্টার ধারণা উদ্ভব করে।
বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
[সম্পাদনা]বর্তমানে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন বই, কলম, টেবিল, বৈদ্যুতিক বাতি, ঘড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করে লেখাপড়া করছি। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে এ সকল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য কী? এদের মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে?[১৫]
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্য
[সম্পাদনা]বিজ্ঞান হলো প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান যা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা ও বর্ণনা করে। প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন। যার মধ্যে নিম্নোক্ত ধাপগুলো রয়েছে।
ধাপ সমূহ | বিবরণ |
---|---|
পর্যবেক্ষণ | আমাদের চারপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করার মধ্যে দিয়ে আমরা প্রাকৃতিক ঘটনা কিংবা নিজের পছন্দের কোনো বিষয় সম্পর্কে কৌতূহল বোধ করি। |
প্রশ্নকরন | যখন আমরা কোনো কিছু দেখি, শুনি বা পড়ি আমাদের মনে এ সম্পর্কিত নানা প্রশ্ন আসতে পারে। এ সকল প্রশ্ন থেকে এমন একটি প্রশ্ন বেছে নেই যার উত্তর পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। |
অনুমান | পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে প্রশ্নটির সম্ভাব্য উত্তর ঠিক করি এবং খাতায় লিখি। এটিই অনুমান। |
পরীক্ষণ | অনুমানটি সঠিক কিনা তা যাচাই করার জন্য একটি পরীক্ষার পরিকল্পনা করি। পরীক্ষাটি করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করি। পরীক্ষাটি সম্পাদন করি।তথ্য সংগ্রহ করে পরীক্ষার ফলাফল লিপিবদ্ধ করি। |
সিদ্ধান্ত গ্রহণ | প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করি এবং ফলাফলের সারসংক্ষেপ করি। ফলাফলটি অনুমানের সাথে মিলেছে কিনা যাচাই করি। |
বিনিময় | প্রাপ্ত ফলাফল ও গৃহীত সিদ্ধান্ত অন্যদের সাথে বিনিময় করি। |
প্রযুক্তি হল আমাদের জীবনের বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ।প্রযুক্তি মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে বিভিন্ন পণ্য, যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতির উদ্ভাবন করে। যেমন - বিজ্ঞানীরা বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণা করে এ বিষয়ে আমাদের ধারণা বা জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন। এই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আবার ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল এবং বৈদ্যুতিক বাতি উদ্ভাবনে কাজে লাগানো হয়েছে।প্রযুক্তি ব্যবহারের নানান ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন - শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, যাতায়াত ইত্যাদি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্পর্ক
[সম্পাদনা]বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও আমাদের জীবনে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এরা পরস্পরের সাথে নিবিড় ভাবে সম্পর্কিত। অতীতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে এত নিবিড় সম্পর্ক ছিল না। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে ব্যবহারিক জীবনের সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্দেশ্যে ছিল না। তারা বিদ্যুৎ ও আলোর মত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আবিষ্কার করেছেন। অপরদিকে জীবনকে উন্নত করার লক্ষ্যে বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে।তারা পাথরের হাতিয়ার, আগুন, পোশাক, ধাতব যন্ত্রপাতি এবং চাকার মত সরল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
আঠারো শতকে শিল্প বিপ্লবের সময়কালে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি, শিল্প-কারখানা, পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত জলীয় বাষ্পের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছে। এই বাষ্পীয় ইঞ্জিন কল-কারখানা রেল গাড়ি এবং জাহাজ চালাতে ব্যবহার করা হতো।
বিভিন্ন প্রশ্ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে মানুষ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে থাকে। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার সময়ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকেন। যেমন - দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা মহাকাশের বিভিন্ন বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। খালি চোখে দেখা যায় না এমন জিনিস অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য সর্বদা পরিষ্কার হয় না। বিজ্ঞান হল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক জগতের নিয়মতান্ত্রিক জ্ঞান। প্রকৌশল হল প্রায়শই (তবে সর্বদা নয়) বিজ্ঞানের ফলাফল এবং কৌশল গুলো ব্যবহার করে ব্যবহারিক মানবিক উপায়ে প্রাকৃতিক ঘটনাকে কাজে লাগানোর জন্য সরঞ্জামগুলি এবং সিস্টেমগুলি ডিজাইন এবং তৈরির লক্ষ্য-ভিত্তিক প্রক্রিয়া।প্রযুক্তি প্রায়শই বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের পরিণতি হয়।
প্রযুক্তির জীবনচক্র (টিএলসি) একটি পণ্যের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পর্ব থেকে বাজারের পরিপক্কতা পর্যন্ত অবশেষে পতন পর্যন্ত ব্যয় এবং লাভের বর্ণনা দেয়। গবেষণা ও উন্নয়নের (আরএন্ডডি) ব্যয়গুলো একবার পণ্য বাজারে আসার পরে অবশ্যই লাভ দ্বারা ভারসাম্য করতে হয়। প্রযুক্তির জীবনচক্র মূলত উন্নয়নের ব্যয় এবং এর থেকে সম্ভাব্য লাভ এর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।
প্রযুক্তির জীবন চক্রের চারটি পর্যায় রয়েছে। পাশের চিত্রে এটি বোঝা যাচ্ছে। ধাপ চারটি হচ্ছে -
- গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) - এই পর্যায়ে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য বিনিয়োগের ঝুঁকি নেওয়া হয় ।সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলো গবেষণা ও উন্নয়নে কৌশলগত দিক নির্দেশনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক সংস্করণে পৌঁছায়।
- সমুত্থান ও বাণিজ্যিকীকরণ - এই পর্বে পণ্য আবিষ্কার থেকে সম্পূর্ণরূপে ব্যয় পুনরুদ্ধার করা সময়সীমার অন্তর্ভুক্ত।এই পর্যায়ে আবিষ্কারের দ্রুত বৃদ্ধি ও বণ্টন দেখা যায় এবং নতুন ও অধিক কার্যকরী পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার দ্বার উন্মোচিত হয়।
- ব্যাপন ও পরিপক্কতা - যেহেতু জনসাধারণ নতুন উদ্ভাবন গ্রহণ করে তাই প্রতিযোগিরা বাজারে প্রবেশ করে এবং জোগান চাহিদাকে অতিক্রম করতে শুরু করে। এই পর্যায়ে, ধারণাটি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে বিনিময় ধীর হতে শুরু করে।
- পতন ও প্রতিকল্পন - চূড়ান্ত পর্যায়ে যখন পণ্য সুবিধা ও সম্ভাব্য মূল্য নিয়ন্ত্রিত হয় তখন উৎপাদন ও বিক্রয় কমতে থাকে। এই হ্রাস একসময় পতনে পৌঁছে যায়। তখন সংস্থাগুলো নতুন উদ্ভাবনের দিকে অগ্রসর হয়।
- বায়বান্তরীক্ষ প্রযুক্তি: মহাকাশ অভিযানের জন্য ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ যান তৈরি এবং চালনা। নভোযান উৎক্ষেপণ, উচ্চ গতি সম্পন্ন আকাশযান, বিমান , নভোযান নির্দেশনার জন্য ব্যবহৃত ভূ-কেন্দ্রিক উপকরণসময় তৈরি এই প্রযুক্তির কাজ। ভৌগোলিক যোগাযোগ এবং তথ্য চালনা পদ্ধতি এখান থেকেই উন্নয়ন লাভ করে।
- কৃষি প্রযুক্তি: এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথাগত ট্রাক্টর এবং চাষের অন্যান্য যন্ত্রপাতির সাথে আধুনিক ল্যাপটপ এবং গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম-এর সমন্বয় ঘটায়। খাদ্য উৎপাদনের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় তলিয়ে দেখা এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিই এর মূল কাজ।
- জৈব প্রযুক্তি: এটি জীবনের মূল উপাদান এবং একক যেমন, কোষ, জিন এবং ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে অধ্যয়ন করে । এর মাধ্যমে নতুন খাদ্য এবং ওষুধ, মানুষের জিনের নকশা ইত্যাদি তৈরি করা হয় যাতে রোগ প্রতিরোধ এবং জৈবিক ঝুঁকি নির্ণয় করা যায়।
- নির্মাণ প্রযুক্তি: নির্মাণ প্রযুক্তি পৌর প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি কে একত্র করে বসবাসের এবং কাজের নিরাপদ পরিবেশ তৈরি, পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা করে।এটি দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, জন-পরিবহন ব্যবস্থা, টানেল, পানি পরিশোধন, ব্রিজ ইত্যাদির ডিজাইন এবং নির্মাণ নিয়ে কাজ করে।
- প্রকৌশল প্রযুক্তি: ইলেকট্রনিক্স এবং বলবিদ্যা থেকে শুরু করে জেট ইঞ্জিন এবং আকাশযান পর্যন্ত প্রকৌশল প্রযুক্তি সমস্ত কিছু তৈরি করে যা আমাদের পৃথিবীকে চালায়। এই বিস্তারিত ক্ষেত্র বস্তু কীভাবে কাজ করে তা বুঝার জন্য এর বিশেষত্ব সহ গণিত, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির নীতি গুলো কাজে লাগায়।
- পরিবেশগত প্রযুক্তি: পরিবেশগত প্রযুক্তি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুর গুনাগুন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের নির্ভরযোগ্যতা বুঝতে সক্ষম করেছে।পরিবেশের উপর মানুষের ক্রিয়া-কলাপ এর প্রভাব ও শক্তির নবায়নযোগ্য উৎস এর সঠিক ব্যবহার পরিদর্শন এবং বুঝতে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।
- ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা: জিআইএস এবং জিপিএস রক্ষণশীল নকশা প্রযুক্তিকে আমাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। জিপিএস বিভিন্ন স্থানের অবস্থান নির্ণয় ও পরিভ্রমণ করতে ভূগোল এবং কৃত্রিম উপগ্রহ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এর অনুষাঙ্গিক প্রযুক্তি জিআইএস কম্পিউটার থেকে উৎপন্ন স্থল ও জল পরিবেশের নকশা তৈরি করে যা অন্য কোন বিকল্প উপায়ে করা সম্ভব নয়।
- তথ্য প্রযুক্তি: তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) হলো আজকের কম্পিউটারাইজড ও ওয়্যারলেস দুনিয়ার কেন্দ্র যার মধ্যে আমরা বসবাস করি।এটির যেমন একটি ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে ইলেকট্রনিক্স তত্ত্বের সমন্বয়ে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার তৈরি করছে তেমনি একটি প্রযুক্তি হিসেবে বর্তমানে অন্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলোকে সচল করছে। আইটি যেকোনো ধরনের তথ্য তৈরি, জমা ও আদান প্রদানে ব্যবহৃত হয় যেমন - বিজনেস ডাটা, ভয়েস কমিউনিকেশন, ফটোগ্রাফি ও গ্রাফিক্স ইত্যাদি।
- উৎপাদন প্রযুক্তি: আমরা যে খাদ্য খাই, যে গাড়ি চালাই, যে কম্পিউটার ও ওষুধ ব্যবহার করি ওদের জীবন নিরাপদ ও সহজ করার জন্য এই সমস্ত কিছু একটি সুনির্দিষ্ট উৎপাদন প্রক্রিয়ার ফলাফল।উৎপাদন প্রযুক্তি কম্পিউটার ও অর্ধপরিবাহী এবং এদের উপাংশ তৈরি করে। এটি যান্ত্রিক এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে যন্ত্র ও উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি করে।
- নৌ প্রযুক্তি: নৌ প্রযুক্তি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল কে সমন্বয় করে পানির নিচের জগতে বিচরণ করে।নৌ প্রযুক্তিবিদ সাবমারসিবল রোবট, সোনার এবং আন্ডারওয়াটার স্যাটেলাইট ব্যবহার করে পানির নিচের সামুদ্রিক পরিবেশ, বাস্তুসংস্থান, জলবায়ু ও প্রাকৃতিক শক্তির উৎস বুঝতে সক্ষম হন।
- মাইক্রো প্রযুক্তি ও ন্যানো প্রযুক্তি: মাইক্রো প্রযুক্তি প্রচলিত যন্ত্রপাতি কে ক্ষুদ্র লেভেলে পরিচালিত করে। এই প্রযুক্তি এমন ক্যামকর্ডার ও কম্পিউটার তৈরি করেছে যা হাতের মুঠিতে মধ্যে রাখা সম্ভব। ন্যানো প্রযুক্তি আরো এক ধাপ এগিয়ে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম যন্ত্রের উদ্ভাবন করেছে।
- রাসায়নিক প্রযুক্তি: রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল যেমন তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি নিয়ে পরিশোধিত করে প্রচলিত বিভিন্ন জ্বালানি থেকে শুরু করে বর্তমানে বিভিন্ন আধুনিক বহনযোগ্য শক্তির উৎস উৎপন্ন করছে। এই প্রযুক্তি বিভিন্ন উপাদান বিশুদ্ধকরণ এর ক্ষেত্রে ও ব্যবহৃত হয়।
- যাতায়াত প্রযুক্তি: যাতায়াত প্রযুক্তি মানুষ, পণ্য এবং সেবা কে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করে যেমন - কার, ট্রাক, প্লেন, ট্রেন, বাইক।এটি পরিবেশের উপর যাতায়াত ব্যবস্থার প্রভাব নিয়েও আলোচনা করে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]পুরা প্রস্তর যুগ (২.৫ মিলিয়ন বছর পূর্ব - ১০ হাজার বছর পূর্ব)
[সম্পাদনা]প্রথমদিকে মানুষের দ্বারা সরঞ্জাম এর ব্যবহার আবিষ্কার ও বিবর্তন অংশ ছিল। মানুষ প্রথম দিকে শিম্পাঞ্জির একটি প্রজাতি যা ইতিমধ্যে দ্বিপদী[১৯] ছিল তা থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আসে যার মস্তিষ্কের ওজন ছিল আধুনিক মানুষের আধুনিক মানুষের এক-তৃতীয়াংশ।[২০] প্রাক-প্রাথমিক কালে মানুষের সরঞ্জাম ব্যবহারের ইতিহাস অপরিবর্তিত ছিল। প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে সরঞ্জাম ও জটিল ব্যবহারের আবির্ভাব হয় এবং অনেক প্রত্নতাত্ত্বিকগণ এ সময় কে একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষার আবির্ভাব বলে মনে করেন।[২১]
পাথরের সরঞ্জাম
[সম্পাদনা]আদি মানব মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে পাথরের সরঞ্জাম ব্যবহার করতেন। সর্বপ্রথম পাথরের হাতিয়ার ছিল ভাঙ্গা শিলা কিন্তু প্রায় ৭৫,০০০ বছর আগে চাপের প্রয়োগ আরো সূক্ষ্ম কাজ করতে সাহায্য করে।[২২]
আগুন
[সম্পাদনা]শক্তির উৎস হিসেবে আগুনের আবিষ্কার ও ব্যবহার মানবসৃষ্ট প্রযুক্তির আবির্ভাবের অগ্রদূত ছিল।[২৩] এই আবিষ্কারের সুনির্দিষ্ট তারিখ জানা যায়নি তবে ‘মানবজাতির ক্র্যাডল’ এ ১ মিলিয়ন বছর আগে গৃহ কাজে আগুনের ব্যবহার নিদর্শন পাওয়া যায়।[২৪] পরীক্ষিত আদমশুমারি দেখায় যে মানুষ ৫০০ হাজার বছর এবং ৪০০ হাজার বছরের আগের মধ্যবর্তী সময়ে আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।[২৫][২৬] কাঠ ও কয়লার জ্বালানি ব্যবহার করে আগুনের দ্বারা মানুষের রান্না করা তাদেরকে সক্ষম করেছে খাদ্যের হজম যোগ্যতা, পুষ্টি ও উৎস বৃদ্ধি করতে।[২৭]
পোশাক ও আশ্রয়
[সম্পাদনা]প্যালিওলিথিক কালে আরেকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছিল পোশাক ও আশ্রয় যার সঠিক তারিখ না জানা থাকলেও এটি মানুষের সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্যালিওলিথিক কালের অগ্রসর এর সাথে সাথে মানুষের বাসস্থান আরো সংরক্ষণশীল ও প্রসারিত হতে থাকে এবং ৩৮০ হাজার বছর পূর্বের কাছাকাছি সময়ে মানুষ সর্বপ্রথম কাঠের তৈরি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে।[২৮][২৯] গাছের বাকল ও শিকারকৃত পশুদের চামড়া দ্বারা তৈরিকৃত পোশাক মানুষকে শীতপ্রধান অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে এবং ২০০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা ও ইউরেশিয়া মানুষ অভিবাসন শুরু করে।[৩০]
শাস্ত্রীয় প্রাচীনতার মাধ্যমে নিওলিথিক (১০ হাজার বছর পূর্ব - ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব)
[সম্পাদনা]মানুষের প্রযুক্তির উৎসাহ শুরু হয় যে প্রাক্কালে তাকে বলে নিওলিথিক পর্ব (নিউ স্টোন এজ)। মসৃণ পাথরের দন্ডের আবিষ্কার একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল যার মাধ্যমে জঙ্গল কেটে চাষাবাদের তৈরি করা হয়। এই মসৃণ পাথরের দন্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায় নিওলিথিক কালে কিন্তু যা প্রকৃতপক্ষে আবিষ্কৃত হয় মেসোলিথিক খালে আয়ারল্যান্ডের মত কিছু জায়গায়।[৩১] কৃষি উল্লেখযোগ্য মানুষের খাদ্যের যোগান দিত যার ফলে একইসাথে স্থানান্তর ও অধিক সন্তান লালন পালন সম্ভব হয় কারণ তখন শিশুদের বহন করতে হত না যা নমাডিকদের জন্য অবশ্য পালনীয় ছিল। তাছাড়া শিকার নির্ভর অর্থনীতির চেয়ে কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে সন্তানেরা অধিক সহজে শ্রম দিতে পারছিল।[৩২][৩৩]
একই সাথে জনসংখ্যা ও শ্রমের বৃদ্ধির ফলে শ্রমের ধরনের মধ্যে বিশেষত্বের বৃদ্ধি হয়।[৩৪] যা প্রাথমিক নিওলিথিক গ্রাম থেকে প্রথম শহরের উত্তরণের সাহায্য করে যেমন - উরুক এবং প্রথম সভ্যতা যেমন - সুমার। যদিও তা অধিক পরিমাণে পরিচিত ছিল না। পর্যায়ক্রমিক সমাজব্যবস্থার এবং বিশেষায়িত শ্রমের বৃদ্ধির ফলে সংস্কৃতির মধ্যে বাণিজ্য ও যুদ্ধ শুরু হয়। প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে সেচ এর প্রয়োজনীয়তা এক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে।[৩৫]
ধাতব সরঞ্জাম
[সম্পাদনা]প্রযুক্তির চলমান উন্নতির ফলে সোনা, তামা, রুপা, সিসা - বিশুদ্ধ ধাতুসমূহ গলানো ও আকার দেওয়া সম্ভব হয়েছে।[৩৬] পাথর ও কাঠের তৈরি সরঞ্জাম এর তুলনায় তামার তৈরি সরঞ্জাম গুলোর অধিক সুবিধা পরিষ্কারভাবে এগুলো ব্যবহারের তাগিদ শুরু হয় নিওলিথিক কালের শুরুর দিকে (প্রায় ১০ হাজার বছর আগে)।[৩৭] বিশুদ্ধ তামা প্রকৃতিতে অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় না কিন্তু এগুলোর আকরিক খুব সহজে পাওয়া যায় যা কাঠ ও কয়লার আগুনে পুড়িয়ে খুব সহজে বিশুদ্ধ তামা পাওয়া যায়। এর পরিণতি ধাতু নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে আবিষ্কার মিশ্র ধাতু হয় যেমন কাঁসা ও পিতল (প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ দিকে)। লোহার প্রথম মিশ্র ধাতু হিসেবে সর্বপ্রথম স্টিল ব্যবহৃত হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ সালে।[৩৮]
শক্তি ও পরিবহন
[সম্পাদনা]ইতিমধ্যে মানুষ শক্তির অন্যান্য গ্রুপগুলো কাজে লাগাতে শুরু করেছে।বায়ুর ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নীল নদে প্রথম নামে পাল তোলা নৌকা চালানোর নিদর্শন পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম সহস্রাব্দের দিকে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মিশরীরা নীল নদের বার্ষিক বন্যাকে কাজে লাগিয়ে সেচ কার্য পরিচালনা করত যা পরবর্তীতে তাদের পানি সংরক্ষণ করতে ও সাহায্য করেছিল। মেসোপটেমিয়ায় সুমেরীয়রা জটিল খাল ও নর্দমার মাধ্যমে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর পানিকে তাদের সেচে পরিণত করত।[৩৯]
প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে চাকা প্রথম আবিষ্কৃত হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ বছর পূর্বে একই সাথে কিন্তু পৃথকভাবে মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক), উত্তর ককেশাস (মেকপ সংস্কৃতি) ও মধ্য ইউরোপে। খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০০ থেকে ৩০০০ সময়কালে অধিকাংশের মতে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ সালে এটি আবিষ্কৃত হয় বলে ধারণা করা হয়।[৪০] খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ এর দিকে সবচেয়ে পুরনো চাকার চিত্র পাওয়া যায়।[৪১] যাইহোক এই চিত্র আঁকার সহস্রাব্দ আগে থেকে চাকার ব্যবহার অব্যাহত ছিল। অতি সম্প্রতি কাঠের তৈরি চাকার নিদর্শন পাওয়া যায় লুবলজানা স্লোভেনিয়ার জলাভূমিতে।[৪২]
চাকার আবিষ্কার বাণিজ্য যুদ্ধে বিপ্লব আনয়ন করে। এটা আবিষ্কার করতে বেশি সময় লাগেনি যে চাকার তৈরি মালগাড়ি অধিক ভার বহন করতে পারে। প্রাচীন সুমেরীয়রা প্রথম কুমোরের চাকা ব্যবহার করেন অথবা আবিষ্কার করেন।[৪৩] খ্রিস্টপূর্ব ৩৪২৯ এর দিকে উর শহরে প্রথম কুমোরের চাকার নিদর্শন পাওয়া যায় এবং চাকার অন্যান্য পুরাতন নিদর্শনগুলো ওই একই অঞ্চলে পাওয়া যায়।[৪৪]এই ধরনের দ্রুত চাকা (ঘূর্ণনশীল) শক্তির রূপান্তরক হিসেবে প্রথম ব্যবহৃত হয় (পানিকল, বায়ুকল ও ট্রেডকল এর মাধ্যমে)।[৪৫] এর প্রয়োগ মানুষের শ্রম বিহীন শক্তির উৎস হিসেবে বিপ্লব সাধন করে। প্রথম দুই চাকার গাড়ি তৈরি হয় ট্র্যাভয়েস থেকে যা প্রথম ব্যবহৃত হয় মেসোপটেমিয়া ও ইরানে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ এর দিকে।
প্রথম পাথরের তৈরি রাস্তা নির্মাণ হয় উর শহরে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ এর দিকে এবং কাঠের তৈরি নির্মাণ হয় ইংল্যান্ডের গ্লাস্টনবারির জলাবনে প্রায় একই সময়ের দিকে।[৪৬] খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ এর দিকে প্রথম দীর্ঘ রাস্তা তৈরি হয় পারস্যের গলফ থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ মাইল যদিও তা বাঁধানো ছিল না। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ এর দিকে ১৫ কিলোমিটার (৩০ মাইল) দীর্ঘ রাস্তা গ্রিক দ্বীপের ক্রিটের মিনোয়্যানরা নির্মাণ করেন যা দ্বীপের দক্ষিণ দিক গোর্তিন প্যালেস থেকে পর্বতের মধ্য দিয়ে দ্বীপের উত্তর দিক ননোসোস প্যালেস পর্যন্ত লম্বা। পূর্বের রাস্তার ব্যতিক্রম হিসেবে মিনোয়্যানদের তৈরি রাস্তা সম্পূর্ণরূপে বাঁধানো ছিল।
চৌবাচ্চা স্থাপন
[সম্পাদনা]মিনোয়্যানদের ব্যক্তিগত বাড়িতে চলমান পানির ধারা ছিল।[৪৭] বর্তমানের বাথটাবের আদি নিদর্শন ননোসোস প্যালেসে পাওয়া যায়।[৪৮] কতিপয় মিনোয়্যানদের ব্যক্তিগত বাড়িতে টয়লেট এর ব্যবস্থাও ছিল যা পানি ঢেলে পরিষ্কার করা হতো।প্রাচীন রোমানদের ফ্লাশ টয়লেট ছিল যা বিস্তর পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতির দ্বারা খালি করা হতো। রোমের প্রথম ও প্রধান নর্দমা ‘ক্লোকা ম্যাক্সিমা’ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর দিকে নির্মাণ শুরু হয় যা এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাচীন রোমানদের সুগঠিত কৃত্রিম জল-প্রণালী বা নালার ব্যবস্থা যা দূরবর্তী স্থানে পানি স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হতো। রোমানদের প্রথম প্রাচীন জল-প্রণালী খ্রিস্টপূর্ব ৩১২ সালে নির্মিত হয় এবং একাদশতম ও শেষ জল-প্রণালী নির্মিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ২২৬ সালে।একত্রে রোমান জল-প্রণালী প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ কিন্তু ৭০ কিলোমিটার এর কম দূরত্ব মাটির উপরে ও খিলান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।
মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক ইতিহাস (৩০০ খ্রিস্টপূর্ব - বর্তমান)
[সম্পাদনা]মধ্যযুগে রেশম এর উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নয়ন চলতে থাকে (ইউরোপে এর পরিচিতি এশিয়ার পরিচিতি লাভের শতবর্ষ পর সম্পন্ন হয়)।পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের প্রথম কয়েক শত বছরের মধ্যে ঘোড়ার লাগাম ও ঘোড়ার খুরের নাল এর ব্যবহার শুরু হয়। মধ্যযুগীয় প্রযুক্তি দেখিয়ে দেয় সহজ যন্ত্র সমূহ এর ব্যবহার (যেমন লিভার, স্ক্রু ও পুলি) এর সমন্বয়ে আরো জটিল যন্ত্র যেমন ঠেলাগাড়ি, বায়ুকল ও ঘড়ি তৈরি হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা করে উঠে যার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ধারণা ও অনুশীলনগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয়। রেনেসাঁ এর সময় প্রিন্টিং প্রেস (যা জ্ঞানের আদান প্রদানকে সহজ করে) সহ নানা আবিষ্কার সম্পন্ন হয় এবং প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সাথে মিলে যৌথ ভাবে উন্নতি লাভ করতে থাকে।প্রযুক্তির উন্নতি খাদ্যের সরবরাহকে আরো নির্ভরশীল করে তুলে সাথে সাথে অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের সরবরাহকে ও। অষ্টাদশ শতাব্দীতে যুক্তরাজ্যের শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে কৃষি, উৎপাদন, খনন, কঠিন ধাতু ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের উন্নয়ন সাধিত হয়। যা বাষ্প ইঞ্জিন ও ফ্যাক্টরি ব্যবস্থার মাধ্যমে গতি লাভ করে। প্রযুক্তি দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সময় (১৮৭০ সাল থেকে ১৯১৪ সাল) আরেকটি পদক্ষেপ নিয়ে বৈদ্যুতিক মোটর, আলোর বাতি ইত্যাদির মত আবিষ্কার এর সুবিধা পাইয়ে দেয়।প্রযুক্তির উন্নয়ন নতুন নতুন আবিষ্কারের ধারণা পরবর্তীতে চিকিৎসা, রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যা এর জন্ম দেয়। প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়ন আকাশচুম্বী সফলতা লাভ করে এবং বড় বড় নগরের বাসিন্দারা এখন তাদের কাজের জন্য ও খাদ্য সরবরাহের জন্য স্বয়ংক্রিয় মোটর এর উপর নির্ভরশীল। টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, রেডিও ও টেলিভিশনের আবিষ্কার এর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন লাভ করে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বিমান ও মোটর গাড়ির আবিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব এনে দেয়। বিংশ শতাব্দী উদ্ভাবন এর পোষক হিসেবে কাজ করে। পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার ফিশন এর আবিষ্কার নিউক্লিয়ার অস্ত্র ও নিউক্লিয়ার শক্তির দিকে ধাবিত করে। কম্পিউটার আবিষ্কারের পর ট্রানজিস্টর ও সমন্বিত বর্তনীর মাধ্যমে এগুলোকে ক্ষুদ্রাকারে নিয়ে আসা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি পর্যায়ক্রমে উনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকে ইন্টারনেটের জন্ম দেয় যা বর্তমান তথ্য যুগের ভিত্তি স্থাপন করে। মানুষ কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে মহাশূন্যে বিচরণ (উনবিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে, যা পরবর্তীতে টেলিকমিউনিকেশন এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়) শুরু করে ও সাথে সাথে চাঁদে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করে (উনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে)। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন ওপেন হার্ট সার্জারি ও পরবর্তীতে স্টেম সেল থেরাপি ইত্যাদি নিয়ে আসে।
জটিল উৎপাদন ও নির্মাণের প্রয়োজনে মানুষের কাজগুলো সহজ করার জন্য ইন্ডাস্ট্রি ও সংস্থাগুলো জটিল যন্ত্র উদ্ভাবন শুরু করে। আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য এখন ডিজাইনার, নির্মাতা, ব্যবস্থাপক ও এর ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। অধিকন্তু প্রযুক্তির এখন এতটা জটিল হয়ে গেছে যে প্রকৌশল বিদ্যা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান এই সমস্ত ক্ষেত্রগুলোকে এখন নির্মাণ, পরিবহন ও স্থাপনা সম্পন্ন করতে সংরক্ষণশীল ভাবে কাজ করতে হয়।
দর্শন
[সম্পাদনা]টেকনিসিজম
[সম্পাদনা]সাধারণভাবে টেকনিসিজম হল মানব সমাজের উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মতবাদ।[৪৯] আরেকটু জোরালোভাবে, ‘টেকনিসিজম বাস্তবতাকে নিয়ন্ত্রণ এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ভাবে সকল সমস্যা সমাধানের মৌলিক মনোভাবকে প্রতিফলিত করে’।[৫০] অন্যভাবে বলা যায় মানুষ একদিন সকল সমস্যা সমাধানে সক্ষম হবে এবং সম্ভবত ভবিষ্যতকেও প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করবে। যেমন, স্টিফেন ভি মন্সমা[৫১] এই ধারণাগুলো কে ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ও নৈতিকতা বিরোধী হিসেবে গণ্য করেছেন।
অপটিমিজম
[সম্পাদনা]অপটিমিস্টিক ধারণা গুলো ট্রান্সহিউম্যানিজম ও একবিন্দুবাদ দার্শনিক মতবাদের প্রবক্তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যা সাধারণত প্রযুক্তিকে মানুষের অবস্থা ও সমাজের জন্য উপকারী মনে করে। এই মতবাদ অনুযায়ী, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নৈতিকভাবে ও ভালো।
ট্রান্সহিউম্যানিস্টগণ মনে করেন প্রযুক্তিগত ধারণা প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে ও যা সাধারণভাবে মনে করে মানুষের অবস্থা একটি প্রতিবন্ধকতা যা তাকে সব সময় অতিক্রম করতে হবে।
একবিন্দুবাদীগণ মনে করেন একটি ‘ত্বরান্বিত পরিবর্তন’ যার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি পাবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবিষ্কারের মাধ্যমে অসীম উন্নয়নের মধ্য দিয়ে তা এককতায় পরিণত হবে। এককতায় পরিণত হওয়ার সময় এখনও অনুমান করা যায়নি[৫২] তবে বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বাণী প্রণেতা রে কুর্জওয়েল ধারণা করেন ২০৪৫ সালের মধ্যে এটি সংঘটিত হবে।
কুর্জওয়েল তার মহাবিশ্বের ছয় যুগ ইতিহাসের জন্য পরিচিত - (১) ভৌতিক / রাসায়নিক যুগ, (২) জীব যুগ, (৩) মানব / বুদ্ধিমত্তার যুগ, (৪) প্রযুক্তির যুগ, (৫)কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ এবং (৬) বৈশ্বিক উপনিবেশায়নের যুগ। এক যুগ থেকে অন্য যুগে গমন একতা দ্বারা পরিচালিত ও ত্বরান্বিত হয়। প্রতিটি যুগ স্বল্প সময় নিয়ে গঠিত যার মানে বুঝায় সমগ্র মহাবিশ্বের ইতিহাস একটি প্রকাণ্ড এককতার ঘটনা মাত্র।[৫৩]
কিছু সমালোচকগণ এই মতবাদ গুলো কে বৈজ্ঞানিকতা ও টেকনো-ইউটোপিয়ানিজম এর উদাহরণ হি সেবে গণ্য করেন এবং তারা মানুষের বর্ধন এবং প্রযুক্তিগত এককত্বের ধারণা নিয়ে শঙ্কিত। কিছু লোক কার্ল মার্কস কে টেকনো-অপটিমিস্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[৫৪]
স্কেপটিসিজম এবং ক্রিটিক্স
[সম্পাদনা]কতিপয় সংশয়বাদী দার্শনিকগণ যেমন - হারবার্ট মার্কুস এবং জন জেরজান বিশ্বাস করে প্রযুক্তিগত সমাজ সহজাতভাবে ত্রুটিপূর্ণ।তারা প্রস্তাব করেন অত্যধিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হল স্বাধীনতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষয়।
অনেকে যেমন লুডাইটস এবং প্রখ্যাত দার্শনিক মার্টিন হাইডেগার গুরুতর ক্ষয়কারী যদিও পুরোপুরি নয় ধারণা পোষন করেন প্রযুক্তি সম্পর্কে। হাইডেগার এর শিক্ষক হুবার্ট ড্রইফাস এবং চার্লস স্পিনোসা এর মতে, “হাইডেগার প্রযুক্তি এর বিরোধিতা করেন না। তিনি শুধু আশা করে প্রযুক্তিকে এমনভাবে প্রকাশ করতে, ‘যে প্রকারে কেউ আমাদেরকে সংশয় সম্পন্ন না করে প্রযুক্তিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করতে’। যা তাকে প্রযুক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তুলেছে”। প্রকৃতপক্ষে, তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে 'আমরা যখন প্রযুক্তির সারমর্মের কাছে একবার নিজেকে প্রকাশ করি, তখন আমরা নিজেকে অপ্রত্যাশিতভাবে একটি মুক্ত দাবিতে নিয়ে যেতে দেখি’।[৫৫] প্রযুক্তিগত-আশাবাদী বা টেকনো-হতাশাবাদীরা এর অনুমোদন দেওয়ার চেয়ে প্রযুক্তির সাথে আরও জটিল সম্পর্ককে অন্তর্ভুক্ত করে।[৫৬]
প্রযুক্তির সবচেয়ে কটু সমালোচনা পাওয়া যায় যেমন - আলডাস হাক্সলির ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’, এন্থনি বার্জেস এর ‘এ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’, এবং জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইটি ফোর’ এর মধ্যে যা এখন ডিস্টোপিয়ান ক্লাসিক সাহিত্য বলে মনে করা হয়। গ্যাটের ফাউস্ট এর মধ্যে,ফাউস্ট এর শয়তানের কাছে জড়জগৎ উপর ক্ষমতা বিনিময়ে তার আত্মা বিক্রি প্রায়ই শিল্প প্রযুক্তি গ্রহণ একটি রূপক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। সম্প্রতি, ফিলিপ কে ডিক ও উইলিয়াম গিবসনের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর আধুনিক কাজগুলো এবং ব্লেড রানার ও গোস্ট ইন দ্য সেল এর মত চলচ্চিত্রগুলো মানব সমাজ ও পরিচয় এর উপর প্রযুক্তির প্রভাবের অত্যন্ত সতর্কতাপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে।
প্রয়াত সাংস্কৃতিক সমালোচক নীল পোস্টম্যান সরঞ্জাম-ব্যবহারকারী সমাজগুলোকে প্রযুক্তিগত সমাজগুলো এবং যেটিকে তিনি "টেকনোপলিজ" বলে সম্বোধন করেছেন সেগুলি থেকে আলাদা করেছেন যার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির আদর্শের দ্বারা অন্যান্য সাংস্কৃতিক চর্চা, মূল্যবোধ এবং বিশ্ব-মতামত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।[৫৭]
ডারিন বার্নি নাগরিকত্ব ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চায় প্রযুক্তির প্রভাব সম্পর্কে লিখেছেন এবং প্রস্তাব করেন প্রযুক্তিটিকে চিহ্নিত করা যেতে পারে, (১) রাজনৈতিক বিতর্কের একটি বিষয় হিসেবে, (২) আলোচনার উপায় বা মাধ্যম হিসেবে, এবং (৩) গণতান্ত্রিক মুক্তি ও নাগরিকত্বের বিন্যাস হিসেবে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির একটি বিন্যাস হিসেবে, বার্নি সুপারিশ করেছেন যে প্রযুক্তি একটি ভাল জীবন কী নিয়ে গঠিত এসব প্রশ্ন সহ নীতিগত প্রশ্ন তোলে, যা প্রায় অসম্ভব কারণ তারা ইতিমধ্যে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে: একটি ভাল জীবন হলো যা অধিক থেকে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহারকে অন্তর্ভুক্ত করে।[৫৮]
নিকোলাস কমপ্রিডিস নতুন প্রযুক্তি বিপদ নিয়েও লিখেছেন যেমন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানোপ্রযুক্তি, সিন্থেটিক জীববিদ্যা এবং রোবোটিক্স । তিনি সতর্ক করেছেন যে এই প্রযুক্তিগুলি আমাদের জৈবিক প্রকৃতির স্থায়ীভাবে পরিবর্তনের সম্ভাবনা সহ মানুষের কাছে অভূতপূর্ব নতুন চ্যালেঞ্জের পরিচয় দেয়। এই উদ্বেগগুলি অন্যান্য দার্শনিক, বিজ্ঞানী এবং পাবলিক বুদ্ধিজীবীরা প্রকাশ করেছেন যারা অনুরূপ বিষয় সম্পর্কে লিখেছেন (যেমন ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা, জর্জেন হাবেরমাস, উইলিয়াম জয় এবং মাইকেল স্যান্ডেল)।[৫৯]
প্রযুক্তির আর একটি বিশিষ্ট সমালোচক হুবার্ট ড্রেইফাস , যিনি ‘অন দ্যা ইন্টারনেট’ এবং ‘হোয়াট কম্পিউটারস স্টিল ক্যান টু ডো’ এর মতো বই প্রকাশ করেছেন।
আরো কুখ্যাত প্রযুক্তি-বিরোধী গ্রন্থ হল ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাইটি এন্ড ইটস ফিউচার’, আনবমবার টেড ক্যাকজেনস্কি দ্বারা লিখিত এবং অনেকগুলি প্রধান সংবাদপত্র (এবং পরে বইগুলোতে) ছাপানো হয় তার টেকনো-শিল্প পরিকাঠামো বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণ অভিযান শেষ করার একটি প্রচেষ্টা অংশ হিসেবে। এছাড়াও এমন উপ-সংস্কৃতি রয়েছে যা কিছু বা বেশিরভাগ প্রযুক্তি অস্বীকার করে যেমন স্ব-চিহ্নিত অফ-গ্রিডারগুলি।[৬০]
উপযুক্ত প্রযুক্তি
[সম্পাদনা]উপযুক্ত প্রযুক্তির ধারণাটি বিকশিত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে ই এফ শুমাচর এবং জ্যাক এলুলের মতো চিন্তাবিদদের দ্বারা এমন পরিস্থিতি বর্ণনা করার জন্য যেখানে খুব নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা বা কাঙ্ক্ষিত কিছু কেন্দ্রীয় অবকাঠামো বা অংশ বা দক্ষতা বা অন্য কোথাও থেকে আমদানি করা দক্ষতাগুলির ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় ছিল না। ইকোভিলেজ আন্দোলন এর অংশ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
একবিংশ শতাব্দীতে অপটিমিজম ও স্কেপটিসিজম
[সম্পাদনা]এই বিভাগটি মূলত আমেরিকান উদ্বেগকে কেন্দ্র করে এমনকি অন্য পশ্চিমা দেশগুলিতে যুক্তিসঙ্গতভাবে সাধারণীকরণ করা যেতে পারে।
আমেরিকান চাকরির অপর্যাপ্ত পরিমাণ এবং গুণগত মান হল অন্যতম মৌলিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ যার আমরা সম্মুখীন হই। প্রযুক্তি এবং এই মৌলিক সমস্যার মধ্যে যোগসূত্রটি কী?
- বার্নস্টেইন জ্যারেড, "আমেরিকান প্রত্যাশা, অক্টোবর ২০১৪ এ " এটি কোনও দক্ষতার অভাব নয় যা মজুরিকে কমিয়ে রাখে: এটি দুর্বল অর্থনীতি"
জ্যারেড বার্নস্টেন, বাজেট এবং নীতি অগ্রাধিকার সেন্টারের[৬১] সিনিয়র সহকর্মী তার নিবন্ধটিতে, প্রশ্ন তোলেন যে অটোমেশন এবং আরও ব্যাপকভাবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রধানত এই ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজার সমস্যা সৃষ্টিতে অবদান রাখে। তার থিসিসটি অপটিমিজম ও স্কেপটিসিজম এর মধ্যে তৃতীয় উপায় হিসেবে আবির্ভূত হয়। মূলত, তিনি বেকারত্ব এবং ক্রমহ্রাসমান মজুরি এর সাথে প্রযুক্তি এবং আমেরিকান ইস্যুগুলির মধ্যে যোগসূত্রের একটি নিরপেক্ষ পদ্ধতির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
তিনি তার বক্তব্য রক্ষার জন্য দুটি প্রধান যুক্তি ব্যবহার করেন। প্রথমত, সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে, একটি ক্রমবর্ধমান সংখ্যক শ্রমিক তাদের চাকরি হারাচ্ছেন। তবুও, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে প্রযুক্তি এত বেশি শ্রমিককে বাস্তুচ্যুত করেছে যে এটি সমাধানের চেয়ে আরও বেশি সমস্যা তৈরি করেছে। প্রকৃতপক্ষে, অটোমেশন পুনরাবৃত্তিমূলক চাকরীর জন্য সুবিধাজনক তবে উচ্চতর কর্মসংস্থানগুলি এখনও প্রয়োজনীয় কারণ তারা প্রযুক্তি এবং ম্যানুয়াল কাজের পরিপূরক যার জন্য "নমনীয়তার বিচার এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রয়োজন" [৬২]যা মেশিনগুলির দ্বারা প্রতিস্থাপন করা কঠিন হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, অধ্যয়নগুলি সাম্প্রতিক প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গত দশকগুলির মজুরি প্রবণতার মধ্যে সুস্পষ্ট যোগসূত্র দেখায় নি।
সুতরাং, বার্নস্টেইনের মতে, বর্তমান আমেরিকান বর্ধমান বেকারত্ব ও ক্রমহ্রাসমান মজুরির উপর প্রযুক্তি এবং এর অনুমানমূলক প্রভাবগুলিতে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে, "অচল নীতি যা চাহিদা, বাণিজ্য, আয় এবং সুযোগের ভারসাম্যহীনতা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়" সে সম্পর্কে আরও বেশি চিন্তা করা দরকার।[৬২]
জটিল প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]টমাস পি হিউজেস বলেছিলেন যে প্রযুক্তি সমস্যা সমাধানের মূল উপায় হিসাবে বিবেচিত হয়েছে, তাই আরও কার্যকরভাবে এটি ব্যবহার করার জন্য আমাদের এর জটিল এবং বিচিত্র চরিত্র সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার।[৬৩] চাকা বা কম্পাস এবং রান্না করার যন্ত্র যেমন ওভেন বা গ্যাসের চুলার মধ্যে পার্থক্য কী? আমরা কি তাদের সমস্ত কিছু, বা কেবল তাদের একটি অংশ, অথবা না তাদের কোনওটিকেই প্রযুক্তি হিসাবে বিবেচনা করতে পারি?
প্রযুক্তি প্রায়শই খুব সংকীর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়; হিউজেসের মতে, "প্রযুক্তি মানবীয় কৌতূহল জড়িত একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া"।[৬৪] এই সংজ্ঞাটি সৃজনশীলতার উপর জোর সীমাহীন সংজ্ঞাগুলো এড়িয়ে চলে যা ভুলভাবে রান্না করাকে "প্রযুক্তি" এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে; তবে এটি জটিল প্রযুক্তিগত সিস্টেমগুলির ব্যবহারের জন্য মানুষের ভূমিকা এবং তাদের দায়িত্ব এর উপর গুরুত্বারোপও করে।
তবুও, যেহেতু প্রযুক্তি সর্বত্র রয়েছে এবং নাটকীয়ভাবে ভূদৃশ্য এবং সমাজ গুলোকে পরিবর্তন করেছে, হিউজেস যুক্তি দিয়েছিলেন যে প্রকৌশলী , বিজ্ঞানীরা এবং পরিচালকরা প্রায়শই বিশ্বাস করেছেন যে তারা প্রযুক্তিটিকে তারা যেমন চান তেমন রূপ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারে্ন। তারা প্রায়শই ধরে নিয়েছে যে প্রযুক্তি সহজেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং এই অনুমানটি যথাযথভাবে প্রশ্ন করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাভজেনি মরোজভ বিশেষত দুটি ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন: "ইন্টারনেট কেন্দ্রিক" এবং "সমাধানবাদ"।[৬৫] ইন্টারনেট কেন্দ্রিক ধারণাটি বোঝায় যে আমাদের সমাজ নিশ্চিত যে ইন্টারনেট অন্যতম স্থিতিশীল এবং সুসংহত শক্তি। সমাধানবাদ হল একটি আদর্শ যা বিশ্বাস করে প্রযুক্তির এবং বিশেষত ইন্টারনেটের সুবাদে প্রতিটি সামাজিক সমস্যা সমাধান করা যায়। আসলে, প্রযুক্তির অভ্যন্তরীণভাবে অনিশ্চয়তা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আলেক্সিস মাদ্রিগালের মোরোজভের তত্ত্বের পর্যালোচনা অনুসারে, এটিকে অবহেলা করলে "অপ্রত্যাশিত পরিণতি তারা যে সমস্যার সমাধান করতে চায় তার চেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে"।[৬৬] বেনজামিন আর কোহেন এবং গেন ওয়েটিংগার প্রযুক্তির বহুল যোজী প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা করেছিলেন।[৬৭]
অতএব, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাগুলির নির্ণয় এবং আরও ব্যাপকভাবে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রয়োজন - বিশেষত পরিবেশগত বিচার এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে। ওটিঞ্জার এই যুক্তিটি অব্যাহত রেখেছেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার চলমান স্বীকৃতি বিজ্ঞানীদের এবং ইঞ্জিনিয়ারদের তাদের ভূমিকার নতুন অনুধাবনের সাথে মিশে গেছে। প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের এই ধরনের প্রভাবে প্রযুক্তিগত পেশাদারদের এই প্রক্রিয়াটিতে তাদের ভূমিকা আলাদাভাবে বিবেচনা করা উচিত। কেবলমাত্র তথ্য এবং প্রযুক্তিগত সমাধান সরবরাহকারীদের চেয়ে গবেষণা এবং সমস্যা সমাধানে তাদের নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে।[৬৮]
অন্যান্য প্রাণী প্রজাতি
[সম্পাদনা]মৌলিক প্রযুক্তির ব্যবহার মানব ছাড়াও অন্যান্য প্রাণী প্রজাতির বৈশিষ্ট্য। এর মধ্যে শিম্পাঞ্জি[৬৯], কিছু ডলফিন সম্প্রদায়[৭০], এবং কাকের[৭১][৭২] মতো প্রাইমেট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রযুক্তির আরও বৈশিষ্ট্যগত দৃষ্টিভঙ্গিকে সক্রিয় পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রণের নীতিশাস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে আমরা প্রাণীর উদাহরণ গুলি যেমন বিভার এবং তাদের বাঁধগুলো, বা মৌমাছি এবং তাদের মধুচক্রগুলিও উল্লেখ করতে পারি।
সরঞ্জাম তৈরি ও ব্যবহারের দক্ষতা একসময় Homo গণ এর একটি সংজ্ঞাযুক্ত বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হত।[৭৩] তবে শিম্পাঞ্জি এবং এদের সম্পর্কিত প্রাইমেটের মধ্যে সরঞ্জাম নির্মাণের আবিষ্কারটি মানুষের একমাত্র প্রযুক্তি ব্যবহারের ধারণাটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। উদাহরণস্বরূপ, গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন বুনো শিম্পাঞ্জি গুলি চারণের জন্য সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করে: ব্যবহৃত কয়েকটি সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে লিফ স্পঞ্জস , ডাইমেট ফিশিং প্রোব, কীটপতঙ্গ এবং লিভার।[৭৪] পশ্চিম আফ্রিকান শিম্পাঞ্জি পাথরের হাতুড়ি ও নেহাই ব্যবহার করে বাদাম গুঁড়া[৭৫] করার জন্য যেমনটা বোয়া ভিস্তা, ব্রাজিল এর একপ্রকার সন্ন্যাসী বানরও করে থাকে।[৭৬]
ভবিষ্যত প্রযুক্তি
[সম্পাদনা]প্রযুক্তির তত্ত্বগুলি প্রায়শই কোনো সময়ের উচ্চ প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে প্রযুক্তির ভবিষ্যতের ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্টা করে। ভবিষ্যতের সমস্ত পূর্বাভাসের মতো, প্রযুক্তিও অনিশ্চিত।
২০০৫ সালে, ভবিষ্যৎ বিদ রে কুর্জওয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে প্রযুক্তির ভবিষ্যতে মূলত জেনেটিক্স, ন্যানো টেকনোলজি ও রোবটিক্স এর একটি ওভারল্যাপিং "জিএনআর রেভোলিউশন" সমন্বয় থাকবে এবং এই তিনটির মধ্যে রোবটিক্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে।[৭৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ National Research Council; Division on Engineering and Physical Sciences; Energy Engineering Board; Commission on Engineering and Technical Systems; Committee on Electricity in Economic Growth (১৯৮৬)। Electricity in Economic Growth। Washington, DC: National Academies Press। পৃষ্ঠা 16, 40। আইএসবিএন 978-0-309-03677-1। ৭ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৫।
- ↑ Universal Technological Dictionary, or Familiar Explanation of the Terms Used in All Arts and Sciences। London: Baldwin, Cradock, and Joy: Crabb, George। ১৮২৩। পৃষ্ঠা ৫২৪।
- ↑ Mind and Hand: The Birth of MIT। Cambridge: MIT Press। ২০০৫। পৃষ্ঠা ১৯০–৯২। আইএসবিএন 978-0-262-19524-9।
- ↑ Technology and Culture। ১৯৩০। পৃষ্ঠা ৪৭।
- ↑ Bain, Read (১৯৩৭)। "Technology and State Government"। American Sociological Review। 2 (6): 860–874। আইএসএসএন 0003-1224। ডিওআই:10.2307/2084365।
- ↑ The social shaping of technology। Internet Archive। Buckingham [England] ; Philadelphia : Open University Press। ১৯৯৯। আইএসবিএন 978-0-335-19914-3।
- ↑ "Definition of TECHNOLOGY"। www.merriam-webster.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Franklin, Ursula (১৯৯৯)। The Real World of Technology (revised ed.)। Scarborough: House of Anansi। আইএসবিএন 978-0-88784-891-9।
- ↑ "Technology News - BBC News"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Stiegler, Bernard (১৯৯৮)। Technics and Time, 1: The Fault of Epimetheus। Stanford University Press। পৃষ্ঠা ১৭,৮২। আইএসবিএন 978-0-8047-3041-9।
- ↑ "Chapter 6: Industry, Technology, and the Global Marketplace: International Patenting Trends in Two New Technology Areas"। wayback.archive-it.org। Archived from the original on ২০১৫-০৮-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Arthur, W. Brian (২০০৯)। The nature of technology : what it is and how it evolves। Internet Archive। New York : Free Press। আইএসবিএন 978-1-4165-4405-0।
- ↑ Borgmann, Albert (২০০৬)। "Technology as a Cultural Force: For Alena and Griffin"। The Canadian Journal of Sociology। 31 (3): 351–360। আইএসএসএন 1710-1123। ডিওআই:10.1353/cjs.2006.0050।
- ↑ "Defining Cyberculture"। web.archive.org। ২০০৭-০৭-০৩। Archived from the original on ২০১২-০২-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ পঞ্চম, শ্রেণি (২০১৯)। প্রাথমিক বিজ্ঞান। ৬৯-৭০, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা - ১০০০: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। পৃষ্ঠা ৬২–৬৭।
- ↑ "Technology"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৩-০১।
- ↑ "Technology and Innovation | Boundless Management"। courses.lumenlearning.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৫।
- ↑ "Pathways to Technology - Tech Fields"। web.archive.org। ২০০৭-০৫-০৯। Archived from the original on ২০০৭-০৫-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৫।
- ↑ "BBC - Science & Nature - The evolution of man"। web.archive.org। ২০০৭-১০-১২। Archived from the original on ২০০৭-১০-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ "HUMAN EVOLUTION,"। web.archive.org। ২০০৮-০৪-২৩। Archived from the original on ২০০৮-০৪-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Wade, Nicholas (২০০৩-০৭-১৫)। "Early Voices: The Leap to Language"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ "Stone Agers Sharpened Skills 55,000 Years Earlier Than Thought"। Wired (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 1059-1028। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ "Constable & Robinson"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১১-২৭।
- ↑ Centre, UNESCO World Heritage। "Fossil Hominid Sites of South Africa"। UNESCO World Heritage Centre (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ "STONE AGE MAN"। www.historyworld.net। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ James, Steven R.; Dennell, R. W.; Gilbert, Allan S.; Lewis, Henry T.; Gowlett, J. a. J.; Lynch, Thomas F.; McGrew, W. C.; Peters, Charles R.; Pope, Geoffrey G. (১৯৮৯-০২-০১)। "Hominid Use of Fire in the Lower and Middle Pleistocene: A Review of the Evidence [and Comments and Replies]"। Current Anthropology। 30 (1): 1–26। আইএসএসএন 0011-3204। ডিওআই:10.1086/203705।
- ↑ Stahl, Ann Brower; Dunbar, R. I. M.; Homewood, Katherine; Ikawa-Smith, Fumiko; Kortlandt, Adriaan; McGrew, W. C.; Milton, Katharine; Paterson, J. D.; Poirier, F. E. (১৯৮৪-০৪-০১)। "Hominid Dietary Selection Before Fire [and Comments and Reply]"। Current Anthropology। 25 (2): 151–168। আইএসএসএন 0011-3204। ডিওআই:10.1086/203106।
- ↑ "Evolution of Modern Humans: Archaic Homo sapiens Culture"। web.archive.org। ২০০৭-০৪-০৪। Archived from the original on ২০০৭-০৪-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Villa, Paola (১৯৮৩)। Terra Amata and the Middle Pleistocene archaeological record of southern France। Berkeley: University of California Press। পৃষ্ঠা ৩০৩। আইএসবিএন 978-0-520-09662-2।
- ↑ "Ciné, Resto, Concert... Idées de sorties dans ma ville - 118 712"। www.118712.fr। ২০০৯-০৪-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Driscoll, Killian (২০০৬)। "history prehistory research Ireland chapter 2"।
- ↑ "The First Baby Boom: Skeletal Evidence Shows Abrupt Worldwide Increase In Birth Rate During Neolithic Period"। ScienceDaily (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Sussman, Robert W.; Hall, Roberta L. (১৯৭২-০৪-০১)। "Addendum: Child Transport, Family Size, and Increase in Human Population During the Neolithic"। Current Anthropology। 13 (2): 258–267। আইএসএসএন 0011-3204। ডিওআই:10.1086/201274।
- ↑ Ferraro, Gary P. (২০০৬)। Cultural Anthropology: An Applied Perspective (ইংরেজি ভাষায়)। Thomson Higher Education। আইএসবিএন 978-0-495-03039-3।
- ↑ Patterson, Gordon M. (১৯৯০)। The ESSENTIALS of Ancient History: 4,500 BC to 500 AD, the Emergence of Western Civilization (ইংরেজি ভাষায়)। Research & Education Assoc.। আইএসবিএন 978-0-87891-704-4।
- ↑ Thompson, F. C. (১৯৬৪)। "A Short History of Metals"। Nature (ইংরেজি ভাষায়)। 203 (4943): 337–337। আইএসএসএন 1476-4687। ডিওআই:10.1038/203337a0।
- ↑ Chisholm, Hugh (১৯১০)। The Encyclopedia Britannica: A Dictionary of Arts, Sciences, Literature and General Information (ইংরেজি ভাষায়)। Encyclopedia Britannica Company।
- ↑ "The Hindu News Update Service"। web.archive.org। ২০০৯-০৩-২৯। Archived from the original on ২০০৯-০৩-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Crawford, Harriet (২০১৩-০৮-২৯)। The Sumerian World (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 978-1-136-21912-2।
- ↑ Childe, V. Gordon (১৯২৮)। New Light on the Most Ancient East। পৃষ্ঠা ১১০।
- ↑ Anthony, David A (২০০৭)। The Horse, the Wheel, and Language: How Bronze-Age Riders from the Eurasian Steppes Shaped the Modern World। Princeton: Princeton University Press। পৃষ্ঠা ৬৭। আইএসবিএন 978-0-691-05887-0।
- ↑ "World's Oldest Wheel Found in Slovenia | Government Communication Office"। web.archive.org। ২০১৬-০৮-২৬। Archived from the original on ২০১৬-০৮-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Kramer, Samuel Noah (১৯৬৩)। The Sumerians: Their History, Culture, and Character (ইংরেজি ভাষায়)। University of Chicago Press। আইএসবিএন 978-0-226-45238-8।
- ↑ Moorey, Peter Roger Stuart (১৯৯৯)। Ancient Mesopotamian Materials and Industries: The Archaeological Evidence (ইংরেজি ভাষায়)। Eisenbrauns। আইএসবিএন 978-1-57506-042-2।
- ↑ Lay, M G (১৯৯২)। Ways of the World। Sydney, Australia: Primavera Press। পৃষ্ঠা ২৮। আইএসবিএন 978-1-875368-05-1।
- ↑ Publishing, Britannica Educational (২০১১-১১-০১)। The Complete History of Wheeled Transportation: From Cars and Trucks to Buses and Bikes (ইংরেজি ভাষায়)। Britannica Educational Publishing। আইএসবিএন 978-1-61530-728-9।
- ↑ Eslamian, Saeid (২০১৪-০৩-২১)। Handbook of Engineering Hydrology: Environmental Hydrology and Water Management (ইংরেজি ভাষায়)। CRC Press। আইএসবিএন 978-1-4665-5250-0।
- ↑ Lechner, Norbert M. (২০১১-১১-২৯)। Plumbing, Electricity, Acoustics: Sustainable Design Methods for Architecture (ইংরেজি ভাষায়)। John Wiley & Sons। আইএসবিএন 978-1-118-01475-2।
- ↑ Breslin, Gerry (২০১১)। Collins English Dictionary। HarperCollins। আইএসবিএন 978-0-00-743786-3।
- ↑ Philosophical and Ethical Problems of Technicism and Genetic Engineering। Society for Philosophy and Technology।
- ↑ "Grand Rapids, Michigan"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৩-১৫।
- ↑ "Intelligence Explosion FAQ"। Machine Intelligence Research Institute (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Kurzweil, Ray (২০০৫)। "The Six Epochs". The Singularity is Near: When Humans Transcend Biology। Penguin। আইএসবিএন 978-1-101-21888-4।
- ↑ "Democratic Transhumanism"। www.changesurfer.com। ২০১৯-০৮-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Heidegger, Martin (১৯৭৭)। The Question Concerning Technology and Other Essays। New York: HarperCollins। পৃষ্ঠা ২৫–২৬।
- ↑ Dreyfus, Spinosa, Hubert, Charles (২০০৬)। "Further Reflections on Heidegger, Technology, and the Everyday". In Kompridis, Nikolas (ed.). Philosophical Romanticism। New York: Routledge। পৃষ্ঠা 265–81।
- ↑ Postman, Neil (১৯৯৩)। Technopoly: The Surrender of Culture to Technology। New York: Vintage।
- ↑ Barney, Darin (২০০৭)। One Nation Under Google। Toronto: House of Anansi Press।
- ↑ Technology's Challenge to Democracy। Parrhesia।
- ↑ Vannini, Jonathan, Phillip, Taggart। Voluntary simplicity, involuntary complexities, and the pull of remove: The radical ruralities of off-grid lifestyles.। Environment and Planning A 45.2 (2013): 295-311।
- ↑ "Jared Bernstein"। Center on Budget and Policy Priorities (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ ক খ "It's Not a Skills Gap That's Holding Wages Down: It's the Weak Economy, Among Other Things"। The American Prospect।
- ↑ Hughes, Thomas P (২০০৪)। Human-Built World: How to Think About Technology and Culture। Chicago: University of Chicago Press। পৃষ্ঠা ১–১১। আইএসবিএন 978-0-226-35933-5।
- ↑ Hughes, Thomas P (২০০৪)। "Introduction: Complex Technology" (1–11) in "Human-Built World: How to Think About Technology and Culture"।
- ↑ Morozov, Evgeny (২০১৩)। To save everything, click here : the folly of technological solutionism। Internet Archive। New York : PublicAffairs। আইএসবিএন 978-1-61039-138-2।
- ↑ Madrigal, Alexis C. (২০১৩-০৩-১৩)। "Toward a Complex, Realistic, and Moral Tech Criticism"। The Atlantic (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Cohen; Ottinger, Benjamin; Gwen (২০১১)। "Introduction: Environmental Justice and the Transformation of Science and Engineering". In Ottinger, Gwen; Cohen, Benjamin (eds.). Technoscience and Environmental Justice: Expert Cultures in a Grassroots Movement.। MIT Press। পৃষ্ঠা ১–১৮। আইএসবিএন 978-0-262-01579-0।
- ↑ Ottinger, Gwen (২০১১)। "Rupturing Engineering Education: Opportunities for Transforming Expert Identities Through Community-Based Projects". In Ottinger, Gwen; Cohen, Benjamin (eds.). Technoscience and Environmental Justice: Expert Cultures in a Grassroots Movement। MIT Press। পৃষ্ঠা ২২৯–৪৮। আইএসবিএন 978-0-262-01579-0।
- ↑ "Chimpanzee Tool Use and More"। web.archive.org। ২০০৬-০৯-২১। Archived from the original on ২০০৬-০৯-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ "Sponging dolphins learn from mum" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৫-০৬-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ "Crows use tools to find food"। NBC News (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Rutz, Christian; Bluff, Lucas A.; Weir, Alex A. S.; Kacelnik, Alex (২০০৭-১১-০২)। "Video Cameras on Wild Birds"। Science (ইংরেজি ভাষায়)। 318 (5851): 765–765। আইএসএসএন 0036-8075। ডিওআই:10.1126/science.1146788। পিএমআইডি 17916693।
- ↑ "Man the Tool Maker"। Nature (ইংরেজি ভাষায়)। 199 (4898): 1042–1043। ১৯৬৩। আইএসএসএন 1476-4687। ডিওআই:10.1038/1991042e0।
- ↑ McGrew, W. C (১৯৯২)। Chimpanzee Material Culture। Cambridge: Cambridge Univ. Press। আইএসবিএন 978-0-521-42371-7।
- ↑ Boesch, Christophe; Boesch, Hedwige (১৯৮৪-০৪-০১)। "Mental map in wild chimpanzees: An analysis of hammer transports for nut cracking"। Primates (ইংরেজি ভাষায়)। 25 (2): 160–170। আইএসএসএন 1610-7365। ডিওআই:10.1007/BF02382388।
- ↑ Brahic, Catherine। "Nut-cracking monkeys find the right tool for the job"। New Scientist (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৯।
- ↑ Kurzweil, Ray (২০০৫)। "GNR: Three Overlapping Revolutions". The Singularity is Near.। Penguin। আইএসবিএন 978-1-101-21888-4।
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- অ্যামব্রোস, স্ট্যানলি এইচ. (২ মার্চ ২০০১)। "Paleolithic Technology and Human Evolution" (পিডিএফ)। Science (ইংরেজি ভাষায়)। 291 (5509): 1748–53। এসটুসিআইডি 6170692। ডিওআই:10.1126/science.1059487। পিএমআইডি 11249821। বিবকোড:2001Sci...291.1748A। ১৪ জুন ২০০৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২১।
- হুসমান, এম. এইচ.; হুসমান, জে. এ. (২০১১)। Technofix: Why Technology Won’t Save Us or the Environment (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ সোসাইটি পাবলিশার্স। আইএসবিএন 0-86571-704-4।
- ক্রেমার, মাইকেল (১৯৯৩)। "Population Growth and Technological Change: One Million B.C. to 1990"। Quarterly Journal of Economics (ইংরেজি ভাষায়)। ১০৮ (৩): ৬৮১–৭১৬। এসটুসিআইডি 139085606। জেস্টোর 2118405। ডিওআই:10.2307/2118405। .
- কেলি, কেভিন (২০১০)। What Technology Wants (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: ভাইকিং প্রেস। আইএসবিএন 978-0-670-02215-1।
- মামফোর্ড, লুইস (২০১০)। Technics and Civilization (ইংরেজি ভাষায়)। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। আইএসবিএন 0-226-55027-3।
- রোডস, রিচার্ড (২০০০)। Visions of Technology: A Century of Vital Debate about Machines, Systems, and the Human World (ইংরেজি ভাষায়)। সিমন অ্যান্ড শুস্টার। আইএসবিএন 0-684-86311-1।
- টেইচ, এ. এইচ. (২০০৮)। Technology and the Future (ইংরেজি ভাষায়) (১১তম সংস্করণ)। ওয়াডসওয়ার্থ পাবলিশিং। আইএসবিএন 0-495-57052-4।
- টুজ, অ্যাডাম (৬ জুন ২০১৯)। "Democracy and Its Discontents"। দ্য নিউ ইয়র্ক রিভিউ অব বুকস (ইংরেজি ভাষায়)। খণ্ড LXVI নং ১০। পৃষ্ঠা ৫২–৫৩, ৫৬–৫৭।
- রাইট, আর. টি. (২০০৮)। Technology (ইংরেজি ভাষায়) (৫ম সংস্করণ)। গুডহার্ট-উইলকক্স কোম্পানি। আইএসবিএন 1-59070-718-4।