হেনরি এভরি
হেনরি এভরি | |
---|---|
— জলদস্যু — | |
ডাকনাম | লং বেন দ্য আর্ক পাইরেট দ্য কিং অফ পাইরেটস |
ধরন | জলদস্যু |
জন্ম | ২৩ আগস্ট, ১৬৫৯ |
জন্মস্থান | নিউটন ফিরার্স, ডেভন, ইংল্যান্ড |
মৃত্যু | ১৬৯৬-এর পর |
মৃত্যুর স্থান | অজানা, খুব সম্ভবত গ্রেট ব্রিটেনের কোন এক জায়গা |
আনুগত্য | নাই |
কার্যকাল | ১৬৯৪-১৬৯৬ |
স্থান | ক্যাপ্টেন |
অপারেশনের বেজ | আটলান্টিক মহাসাগর ও ভারত মহাসাগর |
কমান্ড | ফেঞ্চি, সাবেক নাম চার্লস ২ |
সম্পদ | গঞ্জ-ই-সাওয়াইসহ ১৬৯৫-এর মধ্যে ১১টি ভেসেল |
হেনরি এভরি বা এভোরি (২৩ আগস্ট ১৬৫৯-১৬৯৬-এর পর) ছিলেন একজন ইংরেজ জলদস্যু যিনি ১৬৯০-এর দশকের মাঝামাঝি আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরে বিচরন করতেন। তিনি তার জীবদ্দশায় বেশ কয়েকটি নাম ব্যবহার করেছেন তার মধ্যে, হেনরি ব্রিজম্যান এবং তার ক্রু ও অন্যান্যদের কাছে তিনি লং বেন নামে পরিচিত ছিলেন। এছাড়া তার নাম কখনো কখনো ভুলভাবে জন এভরি হিসেবেও উচ্চারিত হয়। সমকালীন ব্যক্তিরা তাকে আর্ক পাইরেট ও দ্য কিং অফ পাইরেটস বলতেন। এভরি ছিলেন তার সময়কার সবচেয়ে কুখ্যাত জলদস্যু এবং সেসময়কার সল্প সংখ্যক জলদস্যুদের মধ্যে একজন যারা কোন প্রকার গ্রেফতার বা যুদ্ধে মৃত্যু এড়িয়ে জলদস্যু পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। যদিও এভরির জলদস্যুবৃত্তি দুই বছর স্থায়ী ছিল কিন্তু তিনি এই সময়ের মধ্যে এমন কিছু কাজ করেছেন যার জন্য অনেকেই জলদস্যু পেশায় আসতে উৎসাহিত হয়েছেন এবং তার বিচিত্র জীবন নিয়ে অসংখ্য সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে।
জলদস্যুতা
[সম্পাদনা]এভরি ইংল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন কিন্তু তার প্রারম্ভিক জীবন সম্পর্কে তেমন জানা যায় না। তিনি ১৬৮৯ থেকে ১৬৯০ পর্যন্ত রাজকীয় নৌবাহিনীতে অতিবাহিত করেন এবং সম্ভবত নয় বছরের যুদ্ধের (১৬৮৮-১৬৯৭) সময় কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন। নেভি থেকে অপসারিত হওয়ার পর তিনি আফ্রিকা উপকূলে দাস বাণিজ্য শুরু করেন। ১৬৯৩ সালে তিনি পুনরায় নৌবাহিনীতে যোগদান করেন ও এসময় তিনি ফার্স্ট ম্যাট হিসেবে চার্লস ২ নামক যুদ্ধজাহাজে নিযুক্ত হন। ১৬৯৩ সালের আগস্টে চার্লস ২ লন্ডন ত্যাগ করার পর করোনার উত্তর স্প্যানিশ হার্বারে নোঙ্গর ফেলে যেখানে অন্যান্য জাহাজ এক্সপিডিসনের জন্য জড়ো হয়েছিল। ৭ই মে ১৬৯৪ সালে চার্লস ২-এর ক্রুরা বিদ্রোহ করে। জাহাজের নাম পরিবর্তন করে ফেঞ্চি রাখা হয় এবং ক্রুরা এভরিকে তাদের নতুন ক্যাপ্টেন হিসেবে মনোনয়ন দেন। ফেঞ্চি দক্ষিণের পথ ধরে ভারত মহাসাগরের দিকে যাত্রা করে এবং তারা শীঘ্রই পশ্চিম আফ্রিকা উপকূল থেকে পাঁচটি জাহাজ লুট করে।
১৬৯৫-এর প্রথম দিকে ফেঞ্চি কমোরুজ দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছে, সেখানে এভরির ক্রুরা একটি ফরাসি ভেসেরে অভিযান চালায় এবং অল্পের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়ার সৈন্যদের হাত থেকে রক্ষা পান। পরবর্তীতে এভরি উত্তরে আরবীয় সাগরের দিকে যাত্রা করে। সেখানে মুঘলদের ২৫টি জাহাজের একটি বহর মক্কার দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অবস্থান করছিল। এছাড়াও এই বহরে ধন-রত্ন বহনকারী জাহাজ গঞ্জ-ই-সাওয়াইও অবস্থান করছিল। এভরি নিজে এবং থমাস টিউসহ আরো কয়েকজন জলদস্যুর সহয়তায় মুঘলদের বহরে অভিযান পরিচালনা করেন। থমাস টিউ মুঘলদের হাতে নিহত হন ও এভরি জলদস্যুদের একটি ছোট দল নিয়ে গঞ্জ-ই-সাওয়াই-এর এসর্ক্ট জাহাজ ফাহাত মুহাম্মদ আটক করেন এবং পরবর্তীতে গঞ্জ-ই-সাওয়াই আটক করেন। গঞ্জ-ই সাওয়াই আটকের সময় জলদস্যুদের সাথে মুঘল সৈন্যদের লড়াই হয় কিন্তু অধিকাংশ জলদস্যু নিহত হওয়ার পরও লড়াইয়ে জলদস্যিরা জয় লাভ করে। জাহাজ থেকে এভরি £৬০০,০০০ সমমূল্যের ধন-রত্ন ও গহনা লুট করে। এই ধন-রত্ন তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী জলদস্যুতে পরিনত করে।
অবসর
[সম্পাদনা]এভরির গঞ্জ-ই-সাওয়াই লুটের ঘটনা তখনকার ব্রিটিশ ও মুঘল কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল। পরবর্তীতে প্রাইভে কাউন্সিল ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্মিলিতভাবে এভরিকে ধরার জন্য £১,০০০ ইউরো পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, যা ছিল বৈশ্বয়ীকভাবে ইতিহাসের প্রথম মানুষ শিকার। এভরি ও তার ক্রুরা পালিয়ে বাহামাস চলে আসেন এবং তারা সেসময় জলদস্যুদের স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত নিউ প্রোভিডেন্সে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে জলদস্যুরা দল ভেঙ্গে দেন, তাদের কেউ কেউ বাড়ি ফিরে যান, কেউ কেউ ব্রিটিশ ওয়েস্ট ইন্ডিজে রয়ে যান বা উত্তর আমেরিকা উপনিবেশে চলে যান। ২৪ জন জলদস্যু ধরা পরেন, তাদের মধ্যে ছয় জনকে লন্ডনে ১৬৯৬ সালের নভেম্বরে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। যাইহোক, এভরি গ্রেফতার এড়াতে সমর্থ হন, ১৬৯৬ সালে তিনি তার সমস্ত রেকর্ড মুছে ফেলেন এবং তার পরবর্তী জীবন বা কর্মজীবন অজানা। অনিশ্চিত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, তিনি সম্ভবত তার নাম পরিবর্তন করে অবসর গ্রহণ করেন এবং তার বাকী জীবন ইংল্যান্ড বা কোন অজানা দ্বীপে অতিবাহিত করেন ও ১৬৯৬ সালের পরে কোন একসময় মৃত্যুবরণ করেন।
পদটীকা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- গ্রন্থপঞ্জি
- Baer, Joel H. (১৯৯৪)। "'Captain John Avery' and the Anatomy of a Mutiny"। Eighteenth-Century Life। Johns Hopkins University Press। 18 (1): 1–26। আইএসএসএন 0098-2601।
- Baer, Joel H. (১৯৯৫)। "Bold Captain Avery in the Privy Council: Early Variants of a Broadside Ballad from the Pepys Collection"। Folk Music Journal। English Folk Dance and Song Society। 7 (1): 4–26। আইএসএসএন 0531-9684।
- Baer, Joel H. (২০০৫)। Pirates of the British Isles। London: Tempus Publishing। আইএসবিএন 978-0-7524-2304-3।
- Baker, David Erskine; Reed, Isaac; Jones, Stephen (১৮১২)। Biographia Dramatica; or, A Companion to the Playhouse। 3। London: Longman, Hurst, Rees, Orme, and Brown [etc.]। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১২।
- Botting, Douglas (১৯৭৮)। The Pirates। Alexandria, VA: Time-Life Books। আইএসবিএন 978-0-8094-2650-8।
- Breverton, Terry (২০০৪)। Black Bart Roberts: The Greatest Pirate of Them All। Gretna, LA: Pelican Publishing। আইএসবিএন 1-58980-233-0।
- Bruce, Peter Henry (১৭৮২)। Memoirs of Peter Henry Bruce, Esq.। London: T. Payne, and Son, Mewsgate। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১০।
- Burgess, Douglas R. (২০০৯a)। The Pirates' Pact: The Secret Alliances Between History's Most Notorious Buccaneers and Colonial America। New York, NY: McGraw-Hill। আইএসবিএন 978-0-07-147476-4।
- Burgess, Douglas R. (২০০৯b)। "Piracy in the Public Sphere: The Henry Every Trials and the Battle for Meaning in Seventeenth‐Century Print Culture"। Journal of British Studies। The University of Chicago Press। 48 (4): 887–913। ডিওআই:10.1086/603599।
- Davis, Ralph (১৯৬২)। The Rise of the English Shipping Industry in the Seventeenth and Eighteenth Centuries। London: Macmillan Publishers। আইএসবিএন 978-0-905555-20-1।
- Dow, George Francis; Edmonds, John Henry (১৯৯৬) [1923]। The Pirates of the New England Coast 1630–1730। Mineola, NY: Dover Publications। আইএসবিএন 978-0-486-29064-5।
- Earle, Peter (২০০৬)। The Pirate Wars। New York, NY: St. Martin's Griffin। আইএসবিএন 978-0-312-33580-9।
- Emlyn, Sollom, সম্পাদক (১৭৩০)। A Complete Collection of State-Trials, and Proceedings upon High-Treason, and Other Crimes and Misdemeanours; from the Reign of King Richard II to the End of the Reign of King George I.। 5 (2nd সংস্করণ)। London: J. Walthoe Sen. [etc.]। ওসিএলসি 2730073। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১২।
- Fox, E. T. (২০০৮)। King of the Pirates: The Swashbuckling Life of Henry Every। London: Tempus Publishing। আইএসবিএন 978-0-7524-4718-6।
- Fraser, George MacDonald (১৯৮৩)। The Pyrates। London: William Collins & Sons। আইএসবিএন 0-330-28390-1।
- Gosse, Philip (১৯২৪)। The Pirates' Who's Who। New York, NY: Burt Franklin।
- Grey, Charles (১৯৩৩)। Pirates of the Eastern Seas (1618–1723): A Lurid Page of History। London: Sampson Low, Marston & Co। ওসিএলসি 499970।
- Elliot, Henry Miers; Dowson, John, সম্পাদকগণ (১৮৭৭)। The History of India, as Told by Its Own Historians: The Muhammadan Period। 7। London: Trübner & Co। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১২।
- Jameson, John Franklin (১৯২৩)। "Case of Henry Every"। Privateering and Piracy in the Colonial Period: Illustrative Documents। New York, NY: Macmillan Publishers। পৃষ্ঠা 153–188। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১০।
- Johnson, Charles (১৯৮০) [1709]। The Life and Adventures of Capt. John Avery। University of California, Los Angeles: The Augustan Reprint Society।
- Keay, John (১৯৯১)। The Honourable Company: A History of the English East India Company। London: HarperCollins। আইএসবিএন 978-0-00-217515-9।
- Konstam, Angus (২০০৮)। Piracy: The Complete History। Oxford: Osprey Publishing। আইএসবিএন 978-1-84603-240-0।
- Laughton, John Knox (১৮৮৫)। "Avery, John"। Leslie Stephen। Dictionary of National Biography। 2। London: Smith, Elder & Co।
- Marley, David F. (২০১০)। Pirates of the Americas। Santa Barbara, CA: ABC-CLIO। আইএসবিএন 978-1-59884-201-2।
- Marley, David F. (২০১২)। Daily Life of Pirates। Santa Barbara, CA: Greenwood Press। আইএসবিএন 978-0-313-39563-5।
- McCarthy, Tom, সম্পাদক (২০০৬)। Incredible Pirate Tales: Fourteen Classic Stories of Outlaws on the High Seas। Guilford, CT: Lyons Press। আইএসবিএন 978-1-59228-284-5।
- Phillips, Thomas (১৭৪৪) [1732], "A Journal of a Voyage Made in the Hannibal of London", Churchill, Awnsham; Churchill, John, A Collection of Voyages and Travels, Some Now first Printed from Original Manuscripts, Others Now first Published in English. In Six Volumes, 6, London, পৃষ্ঠা 171–239
- Price, Frederick George Hilton, সম্পাদক (১৮৯১)। A Handbook of London Bankers, With Some Account of Their Predecessors the Early Goldsmiths। London: Leadenhall Press। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১১।
- Pringle, Patrick (২০০১) [1953]। "Jolly Roger: The Story of the Great Age of Piracy"। Mineola, NY: Dover। আইএসবিএন 0-486-41823-5।
- Rediker, Marcus (২০০৪)। Villains of All Nations: Atlantic Pirates in the Golden Age। Boston, MA: Beacon Press। আইএসবিএন 978-0-8070-5024-8।
- Rogoziński, Jan (২০০০)। Honor Among Thieves: Captain Kidd, Henry Every, and the Pirate Democracy in the Indian Ocean। Mechanicsburg, PA: Stackpole Books। আইএসবিএন 978-0-8117-1529-4।
- Saletore, Rajaram Narayan (১৯৭৮)। Indian Pirates: From the Earliest Times to the Present Day। Delhi: Concept Publishing। ওসিএলসি 5414009।
- Sherry, Frank (১৯৮৬)। Raiders and Rebels: The Golden Age of Piracy। New York, NY: Hearst Marine Books। আইএসবিএন 978-0-688-04684-2।
- Travers, Tim (২০০৭)। Pirates: A History। London: Tempus Publishing। আইএসবিএন 978-0-7524-3936-5।
- Woodard, Colin (২০০৭)। The Republic of Pirates: Being the True and Surprising Story of the Caribbean Pirates and the Man Who Brought Them Down। Orlando, FL: Houghton Mifflin Harcourt। আইএসবিএন 978-0-15-101302-9।
- Wright, Arnold (১৯১৮)। Annesley of Surat and His Times, the True Story of the Mythical Wesley Fortune। London: Andrew Melrose। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১১।
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- Baer, Joel H. (২০০৭)। Pirates। Stroud: Tempus Publishing। আইএসবিএন 978-0-7524-4298-3।
- Baer, Joel H. (২০০৭)। British Piracy in the Golden Age: History and Interpretation 1660–1730। London: Pickering & Chatto Publishers। আইএসবিএন 978-1-85196-845-9।
- Cordingly, David (২০০৬)। Pirates: Terror on the High Seas—From the Caribbean to the South China Sea। North Dighton, MA: World Publications। আইএসবিএন 978-1-57215-264-9।
- Seitz, Don Carlos (২০০২) [1925]। Under the Black Flag: Exploits of the Most Notorious Pirates। Mineola, NY: Dover Publications। আইএসবিএন 978-0-486-42131-5।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- "Avery, Henry"। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ডিওআই:10.1093/ref:odnb/924। (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন।). The first edition of this text is available as an article on Wikisource: "Avery, John"। Dictionary of National Biography। London: Smith, Elder & Co। ১৮৮৫–১৯০০।
- The Tryals of Joseph Dawson [et al.] — the 1696 government-sanctioned report on the trial of Henry Every's crew, available in page view and PDF at the Library of Congress
- Notable Pirates: Henry Every — a short biography of Henry Every at the Pirate Soul Museum