শিব নারায়ণ দাস
শিব নারায়ণ দাশ | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৯ এপ্রিল ২০২৪ পিজি হাসপাতাল, ঢাকা | (বয়স ৭৭)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
অন্যান্য নাম | শিবুদা |
মাতৃশিক্ষায়তন | কুমিল্লা জিলা স্কুল |
দাম্পত্য সঙ্গী | গীতশ্রী চৌধুরী |
সন্তান | অর্ণব আদিত্য দাশ |
পিতা-মাতা |
|
শিব নারায়ণ দাশ (১৬ ডিসেম্বর ১৯৪৬ - ১৯ এপ্রিল ২০২৪) বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার অন্যতম এবং মূল নকশাকার।[১][২] তিনি একজন ছাত্রনেতা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা ও স্বভাব আঁকিয়ে ছিলেন। ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৬ নং কক্ষে রাত এগারটার পর পুরো পতাকার নকশা সম্পন্ন করেন। এ পতাকাই পরবর্তীতে ১৯৭১-এর ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলিত হয়।[৩][৪]
ব্যক্তিজীবন
[সম্পাদনা]শিব নারায়ণ দেশের পিতা সতীশচন্দ্র দাশ। তিনি কুমিল্লাতে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে।[৫] শিব নারায়ণ দাশের সহধর্মিণীর নাম গীতশ্রী চৌধুরী ও এক জন বীর মুক্তিযোদ্ধা[৪] এবং ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ।[৬]
ছাত্র রাজনীতি
[সম্পাদনা]শিব নারায়ণ দাশ প্রথম ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন।[৬][৪]
পতাকা নকশার প্রেক্ষাপট
[সম্পাদনা]১৯৭০ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশ গ্রহণের কথা ছিল। এই লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি জয়বাংলা বাহিনী, মতান্তরে 'ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী' গঠন করা হয়। ছাত্র নেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।[৪]
এই লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১০৮ নং কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন। এ বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিব নারায়ন দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন।
সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের উপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কামরুল আলম খান (খসরু) তখন ঢাকা নিউ মার্কেটের এক বিহারী দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে আনলেন; এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়েদে আজম হল (বর্তমানে তিতুমীর হল)-এর ৩১২ নং কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকা হলো পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র। শিব নারায়ণ দাস পরিশেষে তার নিপুন হাতে মানচিত্রটি আঁকলেন লাল বৃত্তের মাঝে, এমনি করে রচিত হলো 'ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী'র পতাকা। যা কিছুদিন পর বাংলাদেশের প্রথম পতাকা হিসেবে স্বীকৃত হয়।[৭]
পতাকা উত্তোলন
[সম্পাদনা]জুন ৭, ১৯৭০
[সম্পাদনা]৭ জুন ১৯৭০ এ অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব প্রদান করেন আ স ম আবদুর রব। অল্প পেছনে পতাকা হাতে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন হাসানুল হক ইনু। রব সেই পতাকা বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেন এবং শেখ মুজিবুর রহমান সেই পতাকা ছাত্র-জনতার সামনে তুলে ধরেন। এরপর ইনু পতাকাটি তার কক্ষে নিয়ে যান এবং সহপাঠি শরীফ নুরুল আম্বিয়া শেরে বাংলা হলের ৪০৪ কক্ষের খবিরুজ্জামানকে পতাকাটি বাক্সে লুকিয়ে রাখতে বলেন। এরপর একাত্তরের শুরুতে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জাহিদ হোসেন পতাকাটি নিয়ে যান তার মালিবাগের বাসায়।[৪]
মার্চ ২, ১৯৭১
[সম্পাদনা]১৯৭১ এর ২ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক বিশাল সমাবেশ হয়। এ সমাবেশে আ স ম আবদুর রব যখন বক্তৃতা করছিলেন, তখন নগর ছাত্রলীগ নেতা শেখ জাহিদ হোসেন একটি বাঁশের মাথায় পতাকা বেঁধে রোকেয়া হলের দিক থেকে মঞ্চস্থলে মিছিল নিয়ে এগিয়ে আসেন। রব তখন সেই পতাকা তুলে ধরেন।[৪]
মার্চ ২৩, ১৯৭১
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে শিব নারায়ন দাশের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
পতাকায় পরিবর্তন
[সম্পাদনা]১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিব নারায়ন দাশের নকশাকৃত পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ, ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটূয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।[৪][৮]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]শিব নারায়ন দাশ জীবনের শেষকালে ঢাকার মনিপুরী পাড়াতে বসবাস করছিলেন। ২০২৪ সালের ১৯ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার চোখের কর্নিয়া ও মরণোত্তর দেহ দান করেন।[৯][১০][১১][১২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ লেখা (২০২৪-০৪-১৯)। "চোখের শূন্যতার মধ্যেই তিনি লুকিয়ে রেখেছিলেন বেদনা আর অপ্রাপ্তি"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১৯।
- ↑ "জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই"। বাংলা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১৯।
- ↑ "জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই"। জাগো নিউজ ২৪। ১৯ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ দৈনিক আমাদের সময়, ডিসেম্বর ১৮, ২০০৭
- ↑ "পতাকা উত্তোলন দিবস যেন হারিয়ে না যায়"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-০২।
- ↑ ক খ "জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার শিবনারায়ণ দাশ মারা গেছেন"। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। ২০২৪-০৪-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১৯।
- ↑ 'আমাদের জাতীয় পতাকার ইতিহাস', দৈনিক আমাদের সময়, ডিসেম্বর ৩, ২০০৯
- ↑ কামরুল হাসান-বাংলাপিডিয়া ফেব্রুয়ারি ২০০৭
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (১৯৭০-০১-০১)। "কর্নিয়ার পর মরদেহও দান করলেন শিব নারায়ণ"। dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২১।
- ↑ "কর্নিয়া দান করেছেন শিবনারায়ণ দাশ, দেওয়া হবে দুজন অন্ধ মানুষকে"। ইত্তেফাক। ২০ এপ্রিল ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২১।
- ↑ "প্রয়াত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাস"। এই সময়। ১৯ এপ্রিল ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১৯।
- ↑ "চলে গেলেন প্রথম পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাশ"। যুগান্তর। ১৯ এপ্রিল ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২৪।