মানব মস্তিষ্ক
মানব মস্তিষ্ক | |
---|---|
বিস্তারিত | |
পূর্বভ্রূণ | স্নায়ু নালিকা |
তন্ত্র | কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র স্নায়ু অনাক্রম্যতন্ত্র |
ধমনী | অভ্যন্তরীণ চেতন ধমনীসমূহ, মেরুদণ্ডীয় ধমনীসমূহ |
শিরা | অভ্যন্তরীণ গ্রীবা শিরা, অভ্যন্তরীণ মস্তিষ্ক শিরাসমূহ, বহিঃশিরাসমূহ: (ঊর্ধ্ব ও অধোমস্তিষ্ক শিরাসমূহ, মধ্য মস্তিষ্ক শিরাসমূহ), মস্তিষ্কতলীয় শিরা, ঊর্ধ্ব থ্যালামাস-ডোরাকাটা শিরা, আবরণীবৎ শিরা, লঘুমস্তিষ্ক শিরাসমূহ |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | Cerebrum কেরেব্রুম (ইংরেজি উচ্চারণ সেরিব্রাম)[১] |
গ্রিক | ἐγκέφαλος (enképhalos) এনকেফালোস[২] |
টিএ৯৮ | A14.1.03.001 |
টিএ২ | 5415 |
এফএমএ | FMA:50801 |
শারীরস্থান পরিভাষা |
মানব মস্তিষ্ক মানব স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্রীয় অঙ্গ । এটি সুষুম্নাকাণ্ডের সাথে মিলে মানবদেহের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠন করেছে। মানুষের মস্তিষ্ক গুরুমস্তিষ্ক, মস্তিষ্ককাণ্ড ও লঘুমস্তিষ্ক নামক তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। মস্তিষ্ক মানবদেহের সিংহভাগ কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এই উদ্দেশ্যে মস্তিষ্ক সংজ্ঞাবহ স্নায়ুতন্ত্র বা জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, সেগুলির প্রক্রিয়াজাতকরণ সম্পন্ন করে, প্রক্রিয়াজাত তথ্যগুলির সমবায় ও সমন্বয় সাধন করে এবং এর প্রত্যুত্তরে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ বা তন্ত্রে স্নায়ুকেন্দ্র থেকে কী ধরনের নির্দেশাবলি স্নায়বিক সমন্বয়যুক্ত অঙ্গে বা তন্ত্রে পাঠানো হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। নরম উপাদানে গঠিত মস্তিষ্ক মানুষের মাথাতে (মানবমস্তক) খুলির হাড়গুলির ভেতরে সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে।
গুরুমস্তিষ্ক মানব মস্তিষ্কের বৃহত্তম অংশ। এটি দুইটি মস্তিষ্ক গোলার্ধে বিভক্ত। গুরুমস্তিষ্কের বহিঃস্তর ধূসর পদার্থ দিয়ে গঠিত এবং এটি শ্বেত পদার্থ দিয়ে গঠিত একটি মজ্জাকে ঘিরে রেখেছে। বহিঃস্তরটিকে নবমস্তিষ্ক বহিঃস্তর এবং অপেক্ষাকৃত অনেক ছোট আদিমস্তিষ্ক বহিঃস্তর – এই দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। নবমস্তিষ্ক বহিঃস্তরটি ছয়টি স্নায়ুকোষীয় স্তর নিয়ে গঠিত, অন্যদিকে আদিমস্তিষ্ক বহিঃস্তরটিতে তিন বা চারটি স্তর থাকে। প্রতিটি মস্তিষ্ক গোলার্ধকে চিরায়তভাবে চারটি খণ্ডকে ভাগ করা হয় – ললাটীয় খণ্ডক, রগাঞ্চলীয় খণ্ডক, পার্শ্বকরোটি খণ্ডক এবং পশ্চাৎকরোটি খণ্ডক। ললাটীয় খণ্ডকটি নির্বাহী কার্যকলাপ যেমন আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, পরিকল্পনা, যুক্তিপাত ও বিমূর্ত চিন্তার সাথে সংশ্লিষ্ট। অন্যদিকে পশ্চাৎকরোটি খণ্ডকটি বীক্ষণের (অর্থাৎ দর্শন বা দেখা) কাজে নিয়োজিত। বহিঃস্তরীয় প্রতিটি খণ্ডকে বিভিন্ন এলাকা থাকে যেগুলি বিশেষ বিশেষ কাজের সাথে সম্পর্কিত। যেমন সংবেদী বহিঃস্তর, চেষ্টীয় বহিঃস্তর এবং সংযুক্তি অঞ্চলসমূহ। যদিও ডান ও বাম মস্তিষ্ক গোলার্ধগুলি আকৃতি ও কাজে মোটামুটি একই রকম, কিছু কিছু কাজ একটি মাত্র গোলার্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট, যাকে মস্তিষ্ককার্যের পার্শ্বীভবন বলে। যেমন ভাষা বাম মস্তিষ্ক এবং স্থানিক দৃষ্টিক্ষমতা ডান মস্তিষ্কের সাথে সম্পর্কিত। গোলার্ধগুলি করোটিসন্ধি তন্তু দ্বারা একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে; এদের মধ্যে বৃহত্তমটিকে গুরুমস্তিষ্ক যোজক বলে।
গুরুমস্তিষ্ক মস্তিষ্ককাণ্ডের মাধ্যমে সুষুম্নাকাণ্ডের সাথে সংযুক্ত থাকে। মস্তিষ্ককাণ্ডটি মধ্যমস্তিষ্ক, লঘুমস্তিষ্ক যোজক এবং সুষুম্নাশীর্ষক নিয়ে গঠিত। লঘুমস্তিষ্ক মস্তিষ্ককাণ্ডের সাথে একজোড়া লঘুমস্তিষ্ক বৃন্তদন্তের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। গুরুমস্তিষ্কের ভেতরে মস্তিষ্কগহ্বর ব্যবস্থা অবস্থিত, যাতে চারটি পরস্পর-সংযুক্ত মস্তিষ্কগহ্বর থাকে। এই গহ্বরগুলির ভেতরে মস্তিষ্ক-সুষুম্না তরল উৎপাদিত হয় ও চলাচল করে। গুরুমস্তিষ্ক বহিঃস্তরের নিচে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো বা অঙ্গ অবস্থিত, যাদের মধ্যে (আন্তরমস্তিষ্ক) কক্ষ (থ্যালামাস), অধিকক্ষ (এপিথ্যালামাস), অবকক্ষ (হাইপোথ্যালামাস), অধোকক্ষ (সাবথ্যালামাস), পিনিয়াল গ্রন্থি ও পিটুইটারি গ্রন্থি উল্লেখযোগ্য। আরও আছে প্রান্তীয় কাঠামোসমূহ, যাদের মধ্যে বাদামাকৃতি কেন্দ্র (অ্যামিগডালা) ও সমুদ্রঘোড়াকৃতি কেন্দ্র (হিপোক্যাম্পাস); বেষ্টকেন্দ্র (ক্লস্ট্রাম), মস্তিষ্কতলীয় স্নায়ুগ্রন্থিগুলির বিভিন্ন কোষকেন্দ্র; সম্মুখমস্তিষ্কতলীয় কাঠামোসমূহ এবং তিনটি গহ্বরবেষ্টনকারী অঙ্গ। মস্তিষ্কের কোষগুলির মধ্যে আছে স্নায়ুকোষ (নিউরন) এবং এগুলিকে সমর্থনকারী স্নায়ুধারকোষ (গ্লিয়া কোষ)। মানব মস্তিষ্কে ৮ হাজার ৬ শত কোটিরও বেশি স্নায়ুকোষ আছে এবং একই সংখ্যক বা তারও বেশি সংখ্যক অন্যান্য কোষ আছে। স্নায়ুকোষগুলি একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং স্নায়বিক উদ্দীপনার প্রত্যুত্তরে স্নায়ুপ্রেরক নামের পদার্থ নিঃসরণ করে, ফলে মস্তিষ্ক তার কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারে। স্নায়ুকোষগুলি স্নায়ুপথ ও বর্তনীর সমন্বয়ে একটি বিস্তৃত স্নায়বিক জালিকাব্যবস্থা গঠন করে। এই পুরো বর্তনীব্যবস্থাটি স্নায়ুপ্রেরণ প্রক্রিয়ার দ্বারা চালিত হয়।
মস্তিষ্ককে মাথার খুলি সুরক্ষা প্রদান করে। এটি মস্তিষ্ক-সুষুম্না তরলের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। এটি রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধকের দ্বারা রক্ত সংবহন তন্ত্র থেকে পৃথক থাকে। তা সত্ত্বেও মস্তিষ্কের ক্ষতি, রোগব্যাধি বা জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। মাথায় চোট লেগে বা সন্ন্যাসরোগ (হঠাৎ রক্তের সরবরাহ বন্ধ হওয়া তথা “স্ট্রোক” হওয়া) হয়ে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া মস্তিষ্কে পার্কিনসনের রোগ, চিত্তভ্রংশ যেমন আলৎসহাইমারের রোগ এবং বহুল কঠিনীভবন (মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস) জাতীয় অবক্ষয়মূলক ব্যাধি হতে পারে। কিছু মানসিক ব্যাধি, যেমন চিত্তভ্রংশী বাতুলতা এবং গুরুতর বিষন্নতাজনিত ব্যাধি মস্তিষ্কের কার্যবিকৃতির সাথে সম্পর্কিত বলে ধারণা করা হয়। এর বাইরে মস্তিষ্কে নির্দোষ ও সংহারক উভয় ধরনের অর্বুদ (টিউমার) হতে পারে। সংহারক বা প্রাণঘাতী অর্বুদগুলি সাধারণত মানবদেহের অন্যান্য স্থান থেকে উৎপত্তি লাভ করে।
মানব পুরুষ ও নারীর মস্তিস্কের মধ্যে গঠনগত পার্থক্য দেখা যায়। নারীর ললাটীয় খণ্ডক ও প্রান্তীয় মস্তিষ্ক-বহিঃস্তর (লিম্বিক কর্টেক্স) পুরুষদের তুলনায় বড় হয়। মস্তিস্কের ললাটীয় এই দুইটি অংশ সমস্যা সমাধান ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত। অন্যদিকে পুরুষদের মস্তিষ্কের পার্শ্বকরোটীয় মস্তিষ্ক-বহিঃস্তর ও বাদামাকৃতি কেন্দ্র (অ্যামিগডালা) নারীদের তুলনায় বড় হয়ে থাকে। এই অংশ দুইটি স্থানিক ধারণা তৈরি ও স্মৃতি প্রক্রিয়াজাত করার সাথে জড়িত।[৩]
মস্তিষ্কের শারীরস্থান বিষয়ক গবেষণাক্ষেত্রকে স্নায়ুশারীরস্থানবিজ্ঞান বলে। অন্যদিকে মস্তিষ্কের কার্যকলাপের গবেষণাকে স্নায়ুবিজ্ঞান বলে। মস্তিষ্ককে অধ্যয়ন করার জন্য বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে অন্যান্য প্রাণীর জৈব নমুনায় প্রাপ্ত কলা ও কোষগুলি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে অনেক তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক চিত্রণ প্রযুক্তি যেমন বৃত্তিমূলক স্নায়ুচিত্রণ এবং বৈদ্যুতিক মস্তিষ্কলেখচিত্র ধারণ মস্তিষ্কের অধ্যয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের চিকিৎসা ইতিহাস অধ্যয়ন করে মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশের কাজ বা বৃত্তি সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা সম্ভব হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক সমাজের বাইরের সংস্কৃতিতে মনের দর্শন নামের গবেষণাক্ষেত্রটিতে বহু শতাব্দী ধরে চেতনার প্রকৃতি ও মন-দেহ সমস্যার মত প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার প্রচেষ্টা চলছে। উনবিংশ শতকের শেষদিকে বহিঃমস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চল ও মানুষের ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন ধর্ম সংযুক্ত করার একটি ছদ্মবিজ্ঞান প্রচলিত ছিল।
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ এবং কাজ
[সম্পাদনা]সেরিব্রাম বা গুরুমস্তিষ্ক (Cerebrum): এটি একটি খাঁজের দ্বারা দক্ষিণ ও বাম গোলার্ধে (hemisphere) বিভক্ত। দুটি গোলার্ধ অভ্যন্তরভাগে করপাস ক্যালোসাম (Corpus Callosum) নামে স্নায়ুযোজকের দ্বারা পরস্পর যুক্ত। গুরুমস্তিষ্কের সামনের অলফ্যাকটারী বালব (Olfactory bulb) নামে অংশ আকারে অতি ক্ষুদ্র। গুরুমস্তিষ্কের উপরিতলে (Cortex) অসংখ্য ভাঁজ (Fissures or Convolutions) দেখা যায়। সমস্ত ভাঁজগুলিকে মেলে ধরলে তার ক্ষেত্রফল হবে প্রায় 2000 বর্গ সেন্টিমিটার। অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের মস্তিষ্কের এই অংশ অনেক বেশী প্রশস্ত বা সুগঠিত। কাজ: গুরুমস্তিষ্ক আমাদের বুদ্ধি, চেতনা, স্মৃতি প্রভৃতির আধার। এই অঞ্চলে সামান্য আঘাত লাগলেও তাতে আচার-আচরণে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। অলফ্যাকটরী বালব অঞ্চলটি আবার ঘ্রাণানুভূতির জন্যে দায়ী। কর্টেক্সের বিভিন্ন অঞ্চল দৃষ্টিকেন্দ্র, ঘ্রাণকেন্দ্র, আস্বাদনকেন্দ্র, শ্রবণকেন্দ্র, বাচনকেন্দ্র এবং পেশী উদ্দীপক কেন্দ্র ইত্যাদিতে বিভক্ত।
ডায়েনসেফালন (Diencephalon)
গুরুমস্তিষ্কের পিছনেই এই সংকীর্ণ বা অপ্রশস্ত কক্ষটি অবস্থিত যা থ্যালামাস ও
হাইপোথ্যালামাস অংশে বিভক্ত। এর দুটি পার্শ্বপ্রাচীর অত্যন্ত স্থূল। পৃষ্ঠপ্রাচীর পাতলা স্নায়ুকোষ-বিহীন কৈশিকনালী-সমন্বিত ঝিল্লির ন্যায় গঠনবিশিষ্ট (অগ্র-কোরয়েড প্লেকসাস)। পৃষ্ঠপ্রাচীর থেকে এপিফাইসিস (Epiphysis) প্রসারিত থাকে, যার অগ্রভাগে পিনিয়াল বডি (Pineal body) অবস্থিত। অঙ্কপ্রাচীরের নাম ইনফানডিব্যুলাম (Lafundibulum) যা নীচের দিকে নেমে গিয়ে গ্রন্থিময় পিটুইটারী বডি (Pituitary body) গঠন করে।
কাজ: ডায়েনসেফালনের অন্তর্গত থ্যালামাস স্থূল অনুভূতি গ্রহণ কেন্দ্র। হাইপোথ্যালামাস অংশ স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের মূল নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র। পিটুইটারী বডি এন্ডোক্রাইন বা অন্তঃক্ষরা তন্ত্রের মধ্যমণি কেননা অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্রিয়াকলাপের মধ্যে তা সমন্বয়- সাধন করে।
মেসেনসেফালন (Mesencephalon)
আমাদের মধ্যমস্তিষ্ক অংশ অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। এই অংশের পৃষ্ঠদেশ চারটি ক্ষুদ্র অপটিক লোব (Optic lobe) গঠন করে ব'লেই তাকে করপোরা কোয়াড্রিজেমিনা বলা হয়েছে। এর অঙ্কপ্রাচীর স্থূল।
কাজ: এই অংশ দর্শন ও শ্রবণশক্তি নিয়ন্ত্রণের জন্যে দায়ী।
সেরিবেলাম বা লঘুমস্তিষ্ক (Cerebellum)
মাথার পিছনদিকে অবস্থিত গোলাকার ঝুঁটির মতো অংশটিই সেরিবেলাম বা লঘুমস্তিষ্ক। এর বাইরেও প্রচুর খাঁজ দেখা যায়। লঘুমস্তিষ্কের অঙ্কদেশ পন্স (Pons) নামে পরিচিত। পন্স অঞ্চলে বহুসংখ্যক স্নায়ুকেন্দ্রের সমাবেশ ঘটে।
কাজ: লঘুমস্তিষ্ক চলনের সামঞ্জস্য বিধান করে। পন্স অঞ্চলটি শ্বাসক্রিয়া, মূত্রত্যাগ, অক্ষিগোলকের নড়াচড়া, আন্তরযন্ত্রের পরিবর্ত ক্রিয়া প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। লঘুমস্তিষ্ক আহত হলে দেহের পেশীসঞ্চালন বা চলনের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মদ্যপান লঘুমস্তিষ্কের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপে বাধা ঘটায় বলেই মত্ত ব্যক্তির হাঁটাচলা স্বাভাবিক থাকে না।
মেডালা অবলংগাটা (Medulla Oblongata)
লঘুমস্তিষ্কের পিছনের ত্রিকোণাকৃতি অংশটিই মেডালা অবলংগাটা নামে পরিচিত। এর সামনের প্রান্ত প্রশস্ত ও পিছনের প্রান্ত ক্রমে সংকীর্ণ হয়ে সুষুম্নাকাণ্ডের সঙ্গে মেশে। এর পৃষ্ঠপ্রাচীর পাতলা স্নায়ুকোষ-বিহীন ও কৈশিকনালী সমন্বিত ঝিল্লীতে গঠিত ব'লে একে পশ্চাদ-কোরয়েড প্লেক্সাস বলে। কাজ: এই অংশ আমাদের সাধারণ বিপাকক্রিয়া, হৃদঘাত ও শ্বাসক্রিয়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এটি চর্বণ, বমন, হাঁচি কাশি, মুখমণ্ডলের পেশীসংকোচন, লালা নিঃসরণ প্রভৃতির নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র।[৪]
পরিভাষা (বাংলা থেকে ইংরেজি; বর্ণানুক্রমিক)
[সম্পাদনা]- অঙ্গ - Organ
- অধো মস্তিষ্ক শিরা - inferior cerebral vein
- অভিবাসন - Metastasis
- অভ্যন্তরীণ গ্রীবা শিরা - Internal jugular vein
- অভ্যন্তরীণ চেতন ধমনী - Internal carotid artery
- অভ্যন্তরীণ মস্তিষ্ক শিরা - internal cerebral veins
- আত্ম-নিয়ন্ত্রণ - Self-control
- আদিমস্তিষ্ক বহিঃস্তর - Allocortex
- আন্তরমস্তিষ্ক - Diencephalon
- আন্তরমস্তিষ্ক অধিকক্ষ - Epithalamus
- আন্তরমস্তিষ্ক অধোকক্ষ - Subthalamus
- আন্তরমস্তিষ্ক অবকক্ষ - Hypothalamus
- আন্তরমস্তিষ্ক কক্ষ - Thalamus
- আবরণীবৎ শিরা - Choroid vein
- আলৎসহাইমারের রোগ - Alzheimer's disease
- ঊর্ধ্ব কক্ষীয় ডোরাকাটা শিরা - Superior thalamostriate vein
- ঊর্ধ্ব মস্তিষ্ক শিরা - superior cerebral vein
- করোটিসন্ধি তন্তু - Commisural fiber
- কর্কটরোগ - Cancer
- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র - Central nervous system
- খুলি - Skull
- গহ্বরবেষ্টনকারী অঙ্গ - Circumventricular organ
- গুরুতর বিষন্নতাজনিত ব্যাধি - Clinical depression
- গুরুমস্তিষ্ক - Cerebrum
- গুরুমস্তিষ্ক বহিঃস্তর - Cerebral cortex
- গুরুমস্তিষ্ক যোজক - Corpus Callosum
- চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক চিত্রণ - Medical imaging
- চিত্তভ্রংশ - Dementia
- চিত্তভ্রংশী বাতুলতা - Schizophrenia
- চেতনা - Consciousness
- চেষ্টীয় বহিঃস্তর - Motor cortex
- জৈব নমুনা - Biological specimen
- জৈবিক স্নায়বিক জালিকাব্যবস্থা - Biological neural network
- জ্ঞানেন্দ্রিয় - Sense organ
- ধূসর পদার্থ - Grey matter
- নবমস্তিষ্ক বহিঃস্তর - Neocortex
- নির্দোষ অর্বুদ - Benign tumor
- নির্বাহী কার্যকলাপ - Executive function
- পরিকল্পনা - Planning
- পশ্চাৎকরোটি খণ্ডক - Occipital
- পার্কিনসনের রোগ - Parkinson's disease
- পার্শ্বকরোটি খণ্ডক - Parietal lobe
- পিটুইটারি গ্রন্থি - Pituitary gland
- পিনিয়াল গ্রন্থি - Pineal gland
- প্রান্তীয় ব্যবস্থা - Limbic system
- বহুল কঠিনীভবন (মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস) - Multiple Sclerosis
- বাদামাকৃতি কেন্দ্র (অ্যামিগডালা) - Amygdala
- বিমূর্ত চিন্তা - Abstract thought
- বীক্ষণ, দর্শন - Vision
- বৃত্তিমূলক স্নায়ুচিত্রণ - Functional neuroimaging
- বেষ্টকেন্দ্র (ক্লস্ট্রাম) - Claustrum
- বৈদ্যুতিক মস্তিষ্কলেখচিত্র ধারণ - Electroencephalography
- মজ্জা - Core
- মধ্য মস্তিষ্ক শিরা - middle cerebral vein
- মধ্যমস্তিষ্ক - Midbrain
- মন-দেহ সমস্যা - Mind-body problem
- মনের দর্শন - Philosophy of mind
- মস্তিষ্ক অর্বুদ - Brain tumor
- মস্তিষ্ক গোলার্ধ - Cerebral hemisphere
- মস্তিষ্ক শিরা - cerebral veins
- মস্তিষ্ককাণ্ড - Brainstem
- মস্তিষ্ককার্যের পার্শ্বীভবন - Lateralization of brain functions
- মস্তিষ্কগহ্বর - Ventricle
- মস্তিষ্কগহ্বর ব্যবস্থা - Ventricular system
- মস্তিষ্কতলীয় স্নায়ুগ্রন্থি - Basal ganglia
- মস্তিষ্কতলীয় শিরা - basal vein
- মস্তিষ্ক-সুষুম্না তরল - Cerebrospinal fluid
- মস্তিষ্কের ক্ষতি - Brain damage
- মস্তিষ্কের খণ্ডক - Brain lobe
- মস্তিষ্কের জীবাণু সংক্রমণ - Brain infection
- মস্তিষ্কের রোগব্যাধি - Brain disease
- মাথায় আঘাত - Head injury
- মানব মস্তিষ্ক - Human Brain
- মানবদেহ - Human body
- মানসিক ব্যাধি - Mental disorder
- মানুষের মাথা, মানবমস্তক - Human head
- মেরুদণ্ডীয় ধমনী - Vertebral artery
- যুক্তিপাত - Reasoning
- রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক - Blood-brain barrier
- রগাঞ্চলীয় খণ্ডক - Temporal lobe
- লঘুমস্তিষ্ক - Cerebellum
- লঘুমস্তিষ্ক বৃন্তদন্ত - Cerebellar peduncle
- লঘুমস্তিষ্ক যোজক - Pons
- লঘুমস্তিষ্ক শিরা - cerebellar veins
- ললাটীয় খণ্ডক - Frontal lobe
- শ্বেত পদার্থ - White matter
- সংজ্ঞাবহ স্নায়ুতন্ত্র - Sensory nervous system
- সংবেদী বহিঃস্তর - Sensory cortex
- সংযুক্তি অঞ্চল - Association area
- সংহারক অর্বুদ - Malignant tumor
- সক্রিয়ন বিভব - Action potential
- সন্ন্যাসরোগ - Stroke
- সমুদ্রঘোড়াকৃতি কেন্দ্র (হিপোক্যাম্পাস) - Hippocampus
- সম্মুখমস্তিষ্কতল - Basal forebrain
- সুষুম্নাকাণ্ড - Spinal cord
- সুষুম্নাশীর্ষক - Medulla Oblongata
- স্থানিক দৃষ্টিক্ষমতা - Visual-spatial ability
- স্নায়বিক অবক্ষয় - Neurodegeneration
- স্নায়বিক উদ্দীপনা - Nerve impulse
- স্নায়ুকোষ (নিউরন) - Neuron
- স্নায়ুকোষীয় স্তর - Neuronal layer
- স্নায়ুতন্ত্র - Nervous system
- স্নায়ুধারকোষ (গ্লিয়া কোষ) - Glial cell
- স্নায়ুপথ - Neural pathway
- স্নায়ুপ্রেরক - Neurotransmitter
- স্নায়ুপ্রেরণ - Neurotransmission
- স্নায়ুবিজ্ঞান - Neuroscience
- স্নায়ুশারীরস্থানবিজ্ঞান - Neuroanatomy
- স্নায়ু-অনাক্রম্যতন্ত্র - Neuroimmune system
- স্নায়ুনল - Neural tube
- স্নায়ুবর্তনী - Neural circuit
- ক্রিয়া বিভব-Action potential
- স্থির বিভব-Resting potential
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Cerebrum Etymology"। dictionary.com। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৪, ২০১৫।
- ↑ "Encephalo- Etymology"। Online Etymology Dictionary। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৪, ২০১৫।
- ↑ "মস্তিষ্ক যেভাবে স্মৃতি ধরে রাখে - বিজ্ঞান জগৎ" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৩-৩১। ২০২২-০৪-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২৩।
- ↑ উচ্চমাধ্যমিক জীববিজ্ঞান: শারীরবিদ্যা: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, ১৯৭৬ পৃঃ ৫৫,৫৬