ভারতের নামসমূহ
এই নিবন্ধটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |
হিন্দু শব্দটির উৎপত্তি এবং এক দেশের দুই নাম ভারত ও ইন্ডিয়া এর কারণ
১। (ইন্ডিয়া) India: এটি ভারতের ইংরেজি নাম, Herodotus (খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক) এর সময় থেকে গ্রিক শব্দ India থেকে উদ্ভূত হয়ে ল্যাটিন, পার্সিয়ান ভাষার মধ্য দিয়ে বিকাশ লাভ করেছে। India বলতে Indus river (সংস্কৃত, সিন্ধু নদ) এর তীরবর্তী এবং পেছনের এলাকা নির্দেশ করা হত। আ্যংলো-সেক্সনদের কাছে India শব্দটি পরিচিত ছিল এবং রাজা আলফ্রেডের Orosius অনুবাদে শব্দটি পাওয়া যায়। Middle English-এ ফরাসি প্রভাবে শব্দটি Ynde বা Inde-তে পরিণত হয়, যা Early Modern English-এ Indie হিসেবে প্রবেশ করে। বর্তমান India নামটি ১৭ শতক থেকে প্রচলিত।
২। ভারত: এ নামটি বিভিন্ন প্রাচীন সংস্কৃত পুরাণ থেকে এসেছে। যেমন, বায়ু পুরাণে নামটি পাওয়া যায়। ভারত মূলত দেবতা ‘অগ্নি’র একটি নাম। ঋগ্বেদে ভারতী হিসেবে এখানকার অধিবাসীদের, বিশেষ করে যারা দশ-রাজার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, বুঝানো হয়েছে। মহাভারতে ভরতের রাজ্যকে বলা হয় ভারতবর্ষ। ভগবত পুরাণে ভারত শব্দটি জাত ভারতের নাম থেকে এসেছে বলে বর্ণিত। ইংরেজিতে ইন্ডিয়া (India,) কথাটি সিন্ধু নদের আদি ফার্সি নাম হিন্দু থেকে। প্রাচীন গ্রিকরা ভারতীয়দের বলত ইন্দোই (Ινδοί), বা ‘ইন্দাস’ (সিন্ধু) নদী অববাহিকার অধিবাসী। ‘ইন্দাস’ নাম থেকেই ‘ইন্ডিয়া’ নামটির উতপত্তি।
সিন্ধু/হিন্দু নদের অববাহিকায় যারা বাস করত তাদের হিন্দু বলা হত৷ হিন্দু বলতে কোন ধর্মের অনুসারী বোঝাত না৷ অর্থাৎ সমস্ত ভারতে বসবাস কারীদের হিন্দু বলা হত৷
ইন্ডিয়া
[সম্পাদনা]ইংরেজিতে ইন্ডিয়া (India) কথাটি সিন্ধু নদের আদি ফার্সি নাম হিন্দু থেকে। প্রাচীন গ্রিকরা ভারতীয়দের বলত ইন্দোই (Ινδοί), বা ‘ইন্দাস’ (সিন্ধু) নদী অববাহিকার অধিবাসী। 'ইন্দাস' নাম থেকেই 'ইন্ডিয়া' নামটির উতপত্তি।
ভারত/ ভারতবর্ষ
[সম্পাদনা]ভারত নামটির উৎপত্তি হয়েছে হিন্দু পৌরাণিক রাজা ভরতের নামানুসারে। কথিত আছে এই অঞ্চল বা বর্ষ রাজা ভরতকে দান করা হয়েছিল বলে এর নাম ভারতবর্ষ। এছাড়া ভারত নামে সিন্ধু নদ অঞ্চলে বাসকারী বৈদিক জাতির থেকে "ভারত" নামকরণ করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
হিন্দুস্তান ও হিন্দু
[সম্পাদনা]সিন্ধু নদের আদি ফার্সি নাম হিন্দু থেকে হিন্দুস্থান শব্দটির উৎপত্তি হতে পারে। সেই থেকে সিন্ধু নদের অববাহিকাতে বসবাসকারীরা হিন্দের বংশধর বা হিন্দু নামে পরিচিত ছিল। সেই হিন্দুদের থাকার জায়গাই পরবর্তী কালে হিন্দুস্তান অথবা 'হিন্দুদের দেশ' নামে পরিচিত হয়।
আর্যদেশ
[সম্পাদনা]ভারতবর্ষের নাম আর্যদেশ হবার পেছনে দুটি যুক্তি বিদ্যমান।
প্রথমত,
ইউরোপীয় পণ্ডিতগণের মতে এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, আর্যগণ ছিল একদল কৃষিকর্মকারী যাযাবর জাতি। এরা ককেশীয় শ্রেণীভুক্ত আফ্রিকান জাতি যারা খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৭৫হাজার বছর পূর্বে আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বিশেষত তারা তাদের পশুচারণের জন্য বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতো। এরই ধারাবাহিকতায় খ্রিষ্টপূর্ব ২৫হাজার বছর পূর্বে এরা বর্তমানের ইরান অঞ্চলে আসে। কথিত আছে, তাদেরই একটি দল কোন এককালে ভারতবর্ষে আগমন করে এবং বসতি গড়ে। মূলত তাদের হাত ধরেই সিন্ধু সভ্যতা গড়ে ওঠে এবং বিকশিত হয়। এরূপে আর্যগণ ভারতবর্ষে বসতি শুরু করলে এর নামকরণ হয় আর্যদেশ।
দ্বিতীয়ত,
সংস্কৃত ভাষায় লিখিত শ্লোক তথা পৌরাণিক গ্রন্থসমূহতে আর্যদের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে আর্য বলতে জ্ঞানী বা বুদ্ধিমান লোকদের বোঝানো হয়েছে। আবার কারও মতে, আর্য শব্দের অর্থ ঈশ্বরের পুত্র। ঈশ্বরের অনেক পুত্রদের মধ্যে যে পিতার আজ্ঞাবহ, অনুগত, ও জ্ঞানশীল সে আর্য নামে অভিহিত হতো। এই ধারণা অনুয়ায়ী ভারতবর্ষে বসবাসকারী লোকদের ঈশ্বরের পুত্র তথা অত্যন্ত জ্ঞানী মনে করা হয়। ভারতবর্ষে এই শ্রেণীর লোকদের বসবাস হওয়ায় তা আর্যদেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
এ দুটি উক্তির মধ্যে প্রথমোক্ত যুক্তিটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বিশ্লেষণ দ্বারা প্রাপ্ত এবং দ্বিতীয়টি পৌরাণিক কাহিনী ও সংস্কৃত শ্লোক হতে প্রাপ্ত।
তেন্জিকু
[সম্পাদনা]তেন্জিকু বা তিআন্ঝু, এটা হচ্ছে হিন্দু শব্দের চৈনিক অপভ্রংশ।
জম্বুদ্বীপ
[সম্পাদনা]পুরাতন লিপি থেকে জানা যায় যে ভারতবর্ষ নামটির পরিচিতির পূর্বে ভারত, জম্বুদ্বীপ নামেই পরিচিত ছিল। সূর্যসিধান্তের লেখায় পাওয়া জম্বুদ্বীপ।আক্ষরিক অর্থ ধরলে এর মানে হল জাম গাছে ভরা দ্বীপ কিন্তু সনাতন সৃষ্টিতত্ব (মানে হিন্দু বৌদ্ধ কিংবা জৈন) অনুযায়ী জম্বুদ্বীপ মানে হল “সাধারণ মানুষের বাসস্থান”। দার্শনিকভাবে এটা ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ নাম হতে পারত। পুরাণ অনুযায়ী এই জায়গা নয়টি পর্বত ও আটটি বর্ষ নিয়ে তৈরি। বৌদ্ধ লিপি মহাবংশ অনুযায়ী অশোকপুত্র মাহিন্দা (পরে যার নাম হয় মহেন্দ্র) অনুরাধাপুরের (সিংহল) অধিপতি দেবনমপিয় তিস্যের কাছে নিজেকে জম্বুদ্বীপ থেকে আসছেন বলেই জানিয়েছিলেন। আর অশোকের সাম্রাজ্যের বিস্তারে উত্তর পূর্ব আর তামিলনাড়ু ছাড়া মোটামুটি পুরো দেশটাই ঢুকে যায়। এছাড়া উত্তরপ্রদেশের হস্তিনাপুরে জৈন তীর্থ জম্বুদ্বীপের স্তাপত্যশৈলীতেও জম্বুদ্বীপের মোটামুটি একটা গাঠনিক ধারণা মেলে।
কয়েকটি ঐতিহাসিক সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]ভারতীয় প্রজাতন্ত্র
[সম্পাদনা]ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সরকারি এবং জনপ্রিয় উভয় ইংরেজি ব্যবহারের জন্য দুটি প্রধান সংক্ষেপণ রয়েছে, যার প্রতিটিই ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ - "ইন্ডিয়া" এবং "ভারত"। ভারতের সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে (Article 1) বলা হয়েছে যে "ইন্ডিয়া, অর্থাৎ ভারত, রাজ্য সমূহের ইউনিয়ন হবে" , সেই জন্য " ইন্ডিয়া"এবং" ভারত " সমানভাবে প্রজাতন্ত্রের সরকারি সংক্ষেপণ রূপে স্বীকৃত।
ভারতকে মোগল স্থান বলা হয় কারণ এখানে মুঘলরা শাসন করেছিল তাই ভারতকে মুঘল স্থান বলা হয়।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- The Unity of India Dileep Karanth's article about the terms "Hindu" and "India"
- Meaning of the word Hindu
- Looking for a Hindu Identity ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ মে ২০১১ তারিখে