বেতার তরঙ্গ
বেতার তরঙ্গ বা রেডিও তরঙ্গ এক প্রকারের তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ। এটি সর্বাপেক্ষা বৃহত্তম তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ যার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সীমা ১ মিলিমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এই তরঙ্গ খালি চোখে দেখা যায় না। বেতার তরঙ্গের কম্পাঙ্ক দৃশ্যমান আলোর থেকে কম - ৩ কিলোহার্টজ থেকে ৩০০ গিগাহার্টজ। ৩০০ গিগা হার্টজ রেডিও তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১ মিলিমিটার (চালের দানার চেয়ে ছোট); আবার ৩০ হার্টজ রেডিও তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১০,০০০ কিলোমিটার (যা পৃথিবীর ব্যাসার্ধের চেয়েও দীর্ঘ)।
সর্বপ্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু বৈদ্যুতিক তার ছাড়া কীভাবে দূরে রেডিও সংকেত পাঠানো যায় এ বিষয়ে তিনি অনেক গবেষণা করেন। 1895 সালে তিনি প্রথমবারের মতো বেতারে দূরবর্তী স্থানে রেডিও সংকেত পাঠিয়ে দেখান। মাইক্রোওয়েভ গবেষণার ক্ষেত্রেও তার বড় অবদান আছে, তিনিই প্রথম বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ দৈর্ঘ্যকে মিলিমিটার পর্যায়ে (প্রায় 5 মিলিমিটার) নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও সংকেতকে শনাক্ত করার জন্য অর্ধপরিবাহী জংশন ব্যবহার করেন। এই আবিষ্কার পেটেন্ট করে বাণিজ্যিক সুবিধা নেওয়ার পরিবর্তে তিনি সেটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারিগরি, প্রযুক্তিবিদ এবং পেশাজীবীদের প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস বসু। ইঞ্জিনিয়ারিং (IEEE) তাঁকে রেডিও বিজ্ঞানের একজন জনক হিসেবে অভিহিত করে।
বড় তরঙ্গ দৈর্ঘ্য খুবই কম শক্তি সম্পন্ন হয় এবং অকল্পনীয় দুরত্ব পাড়ি দিতে পারে। অন্যান্য সব তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণের মত বেতার তরঙ্গও শুন্যে আলোর গতিতে ভ্রমণ করে, তবে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের কাছাকাছি কিছুটা কম গতিতে ভ্রমণ করে। বেতার তরঙ্গ সাধারণত ত্বরণে গতিপ্রাপ্ত চার্জযুক্ত কণা দ্বারা উৎপন্ন হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে বেতার তরঙ্গ সৃষ্টি হয় সাধারণতঃ বজ্রপাত বা মহাজাগতিক বস্তু থেকে এবং কৃষ্ণবস্তু বিকিরণের অংশ হিসেবেও এ তরঙ্গ পাওয়া যায়। রেডিও তরঙ্গ কৃত্রিমভাবে ট্রান্সমিটার দিয়ে তৈরি হয় এবং এন্টেনার সাহায্যে রেডিও রিসিভার দ্বারা পাওয়া যায়। কৃত্রিমভাবে তৈরীকৃত বেতার তরঙ্গ মোবাইল টেলিযোগাযোগ, বেতার যোগাযোগ, সম্প্রচার, রাডার ও অন্যান্য দিকনির্দেশনা (navigation) ব্যবস্থা, কৃত্রিম উপগ্রহের সাথে যোগাযোগ, তারবিহীন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সহ অসংখ্য কাজে ব্যবহৃত হয়। ভিন্ন কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন রকম হয়। বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ পাহাড়ের মতো বাধার কারণে বিচ্ছুরিত হতে পারে এবং পৃথিবীর সীমারেখা অনুসরণ করে যেতে পারে(গ্রাউন্ড ওয়েভ)। ছোট বা ক্ষুদ্র তরঙ্গ আয়নমন্ডল দ্বারা প্রতিফলিত হতে পারে এবং অতি ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ খুবই অল্প বাঁক নিতে পারে বলে শুধু দৃষ্টি রেখা (line of sight) বরাবর ভ্রমণ করতে পারে।
বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের মধ্যে যাতে হস্তক্ষেপ না ঘটে সেজন্য কৃত্রিমভাবে রেডিও তরঙ্গের উৎপাদন ও ব্যবহার আইন দ্বারা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন কর্তৃক কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, যা বেতার তরঙ্গকে কৃত্রিম সহায়তা ছাড়া মহাকাশে ভ্রাম্যমাণ ৩০০০ গিগাহার্জ এর কম কম্পাংকের তরঙ্ হিসেবে সজ্ঞায়িত করে।[১]বেতার বর্ণালিটি কম্পাংকের ভিত্তিতে কয়েকটি রেডিও ব্যান্ডে বিভক্ত করে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
আবিষ্কার ও অগ্রগতি
[সম্পাদনা]১৮৬৭ সালে স্কটিশ গাণিতিক পদার্থবিদ জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল গাণিতিক তত্ত্বের মাধ্যমে রেডিও তরঙ্গের ধারণা সামনে আনেন[২]। তার গাণিতিক তত্ত্ব এখন ম্যাক্সওয়েলর সমীকরণ নাম পরিচিত। ম্যাক্সওয়েল তাঁর তত্ত্বের মাধ্যমে ভবিষৎবাণী করেন যে যুগল তড়িৎ ও চুম্বক ক্ষেত্র স্পেসের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করতে পারে তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ আকারে। ম্যাক্সওয়েল আরও দাবি করেন যে আলো এক প্রকার তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ যার তরঙ্গ দৈর্ঘ খুব কম। ১৮৮৭ সালে জার্মান পদার্থবিদ হেনরিখ হার্টজ পরীক্ষার মাধ্যমে ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বের প্রমান করেন। প্রমানের জন্য তিনি পরীক্ষাগারে রেডিও তরঙ্গ উৎপন্ন করেন এবং দেখান যে রেডিও তরঙ্গ আলোর মতো ধর্ম প্রদর্শন করে[৩]। ধর্ম গুলো হলো স্থির তরঙ্গ, প্রতিসরণ, বিচ্ছুরণ এবং সমবর্তন।
সর্বপ্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু বৈদ্যুতিক তার ছাড়া কীভাবে দূরে রেডিও সংকেত পাঠানো যায় এ বিষয়ে তিনি অনেক গবেষণা করেন। 1895 সালে তিনি প্রথমবারের মতো বেতারে দূরবর্তী স্থানে রেডিও সংকেত পাঠিয়ে দেখান। মাইক্রোওয়েভ গবেষণার ক্ষেত্রেও তার বড় অবদান আছে, তিনিই প্রথম বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ দৈর্ঘ্যকে মিলিমিটার পর্যায়ে (প্রায় 5 মিলিমিটার) নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও সংকেতকে শনাক্ত করার জন্য অর্ধপরিবাহী জংশন ব্যবহার করেন। এই আবিষ্কার পেটেন্ট করে বাণিজ্যিক সুবিধা নেওয়ার পরিবর্তে তিনি সেটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারিগরি, প্রযুক্তিবিদ এবং পেশাজীবীদের প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস বসু। ইঞ্জিনিয়ারিং (IEEE) তাঁকে রেডিও বিজ্ঞানের একজন জনক হিসেবে অভিহিত করে।
১৮৯৪ থেকে ১৮৯৫ সালের মধ্যে ইতালীয় উদ্ভাবক গুগলিয়েলমো মার্কোনি সর্বপ্রথম ব্যবহার উপযোগী রেডিও ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার আবিষ্কার করেন। এর জন্য তিঁনি ১৯০৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। বাণিজ্যিক ভাবে রেডিও যোগাযোগব্যবস্থা শুরু হয় ১৯০০ সালের দিকে। ১৯১২ সালের দিকে পূর্বের নাম "হার্টজিয়ান তরঙ্গ" এর পরিবর্তে আধুনিক "রেডিও তরঙ্গ" নামের প্রচলন শুরু হয়।
প্রেরণ ও গ্রহণ
[সম্পাদনা]ত্বরিত চার্জযুক্ত কণার মাধ্যমে বেতার তরঙ্গ তৈরি করা যায়। রেডিও তরঙ্গের প্রাকৃতিক উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে সূর্য,ছায়াপথ এবং নীহারিকা। উষ্ণ বস্তুসমূহ তাদের কৃষ্ণবস্তু বিকিরণের অংশ হিসেবে উচ্চ কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গ(মাইক্রোওয়েভ) বিকিরণ করে।
বেতার তরঙ্গগুলো কৃত্রিমভাবে সময়-পরিবর্তী বিদ্যুৎ প্রবাহ দ্বারা উৎপাদিত হয়, একটি বিশেষ আকৃতির ধাতব পরিবাহী যা এন্টেনা নামে পরিচিত, এ কাজে ব্যবহৃত হয়। রেডিও ট্রান্সমিটার নামক একটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র দোলায়মান বৈদ্যুতিক প্রবাহ তৈরি করে এবং এন্টেনা শক্তিকে বেতার তরঙ্গ হিসেবে বিকিরণ করে। বেতার তরঙ্গ রেডিও রিসিভারের সাথে যুক্ত অপর একটি এন্টেনা দ্বারা গৃহীত হয়। বেতার তরঙ্গ যখন রিসিভিং এন্টেনায় আঘাত করে তখন তারা ধাতুর ইলেক্ট্রনগুলোকে সামনে পিছনে ঠেলে দিয়ে ক্ষুদ্র দোদুল্যমান স্রোত তৈরি করে যা রিসিভার দ্বারা শনাক্ত করা হয়।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে,অন্য সকল তড়িৎচৌম্বক বিকিরণের মতো বেতার তরঙ্গকেও ফোটন নামক চার্জহীন কণার প্রনাহ হিসেবে গণ্য করা যায়। তরঙ্গ প্রেরণকারী একটি এন্টেনার ইলেক্ট্রনগুলো রেডিও ফোটন নামক বিছিন্ন প্যাকেটে শক্তি নির্গত করে এবং গ্রহণকারী এন্টেনার ইলেক্ট্রনগুলো রেডিও ফোটন হিসেবে শক্তি শোষণ করে। একটি এন্টেনা একটি লেজারের মত ফোটনের একটি সুসংগত বিকিরণকারী, তাই রেডিও ফোটনগুলি সব সমদশায় থাকে। প্ল্যাঙ্কের সম্পর্ক E =hν থেকে প্রাপ্ত রেডিও ফোটনের শক্তি অত্যন্ত ছোট, ১০-২২ থেকে ১০-৩০ জুল পর্যন্ত। এটি এতই ছোট যে, কিছু নির্দিষ্ট আণবিক ইলেক্ট্রন স্থানান্তর প্রক্রিয়া ব্যতীত( যেমন একটি মেসার নির্গত মাইক্রোওয়েভ ফোটন পরমাণু), রেডিও তরঙ্গ নির্গমন এবং শোষণকে সাধারণত একটি ক্ল্যাসিক্যাল প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যা ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ দ্বারা পরিচালিত হয়।
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]শূন্যে রেডিও তরঙ্গ আলোর গতিতে চলে। একটি মাধ্যমের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় মাধ্যমের চৌম্বক প্রবেশ্যতা এবং ভেদনযোগ্যতার উপর নির্ভর করে ধীর হয়ে যায়। বায়ু যথেষ্ট পাতলা বলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বেতার তরঙ্গ আলোর গতির খুব কাছাকাছি ভ্রমণ করে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য হল তরঙ্গের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের একটি চূড়া (ক্রেস্ট) থেকে পরের চূড়ার দূরত্ব, এবং তরঙ্গের কম্পাঙ্কের ব্যস্তানুপাতিক। শুণ্যে বা বাতাসে ভ্রমণকারী রেডিও তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সম্পর্ক হল
λ=c/f,
যেখানে, c=২.৯৯৯.৭৯*১০৬ m/s (প্রায়)
সুতরাং একটি বেতার তরঙ্গ এক সেকেন্ডে শুণ্যে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তা হল ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ মিটার (৯৮৩,৫৭১,০৫৬ ফুট), যা একটি ১ হার্টজ বেতার সংকেতের তরঙ্গদৈর্ঘ্য। একটি ১ মেগাহার্টজ বেতার ওয়েভ (মিড-এএম ব্যান্ড) এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ২৯৯.৭৯ মিটার (৯৮৩.৬ ফুট)
সমবর্তন
অন্যান্য ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের মতো, একটি রেডিও তরঙ্গের সমবর্তন নামে একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা গতির দিকের দিকে লম্বভাবে তরঙ্গের স্পন্দনরত বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের দিক হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। একটি সমতল সমবর্তিত বেতার তরঙ্গের একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র থাকে যা গতির দিক বরাবর একটি সমতলে স্পন্দিত হয়। একটি অনুভূমিক সমবর্তিত রেডিও তরঙ্গে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রটি একটি অনুভূমিক দিকে স্পন্দিত হয়। একটি উল্লম্ব মেরুকৃত তরঙ্গে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রটি একটি উল্লম্ব দিকে স্পন্দিত হয়। একটি বৃত্তাকারভাবে সমবর্তিত তরঙ্গে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রটি প্রতি চক্রে একবার ভ্রমণের দিকের দিকে ঘুরতে থাকে। একটি ডান বৃত্তাকার সমবর্তিত তরঙ্গ ভ্রমণের দিকের সাথে ডান দিকে ঘোরে, যখন একটি বাম বৃত্তাকার সমবর্তিত তরঙ্গ বিপরীত দিকে ঘোরে। তরঙ্গের চৌম্বক ক্ষেত্র বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের সাথে লম্ব, এবং বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বক ক্ষেত্র বিকিরণের দিকের সাপেক্ষে ডান হাত নিয়মে ঘূর্ণায়মান।
একটি অ্যান্টেনা সমবর্তিত বেতার তরঙ্গ নির্গত করে, সমবর্তনের দিক ধাতব অ্যান্টেনার উপাদানগুলির দ্বারা নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ একটি ডাইপোল অ্যান্টেনা দুটি সমরেখ ধাতব রড নিয়ে গঠিত। যদি রডগুলি অনুভূমিক হয় তবে এটি অনুভূমিকভাবে সমবর্তিত রেডিও তরঙ্গ বিকিরণ করে, যখন রডগুলি উল্লম্ব হয় তবে এটি উল্লম্বভাবে সমবর্তিত তরঙ্গ বিকিরণ করে। রেডিও তরঙ্গ গ্রহণকারী একটি অ্যান্টেনার অবশ্যই ট্রান্সমিটিং অ্যান্টেনার মতো একই সমবর্তিত থাকতে হবে, নতুবা এটি গ্রহণের ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষয় ঘটতে পারে।
রেডিও তরঙ্গের সমবর্তনে ফোটনের একটি কোয়ান্টাম যান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত হয় যাকে তাদের স্পিন বলা হয়। একটি ফোটন স্পিন এর সম্ভাব্য দুটি মান হতে পারে; এটি গতির দিক সম্পর্কে ডান হাত নিয়মে বা বাম হাতের নিয়মে ঘোরাতে পারে। ডান বৃত্তাকার সমবর্তিত রেডিও তরঙ্গগুলি ডান হাতের নিয়মে বা দিকে ঘোরানো ফোটন নিয়ে গঠিত। বাম বৃত্তাকার মেরুকৃত রেডিও তরঙ্গ বাম হাতের নিয়মে ঘোরানো ফোটন নিয়ে গঠিত। সমতল পোলারাইজড রেডিও তরঙ্গ ডান এবং বাম হাতের স্পিন অবস্থার কোয়ান্টাম সুপারপজিশনে ফোটন নিয়ে গঠিত। বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রটি ডান এবং বাম ঘূর্ণন ক্ষেত্রগুলির একটি সুপারপজিশন নিয়ে গঠিত, যার ফলে একটি সমতল স্পন্দন হয়।
প্রচারবৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]বেতার তরঙ্গগুলি অন্যান্য তড়িৎচুম্বক তরঙ্গের তুলনায় যোগাযোগের জন্য বেশি ব্যবহৃত হয় প্রধানত তাদের চমৎকার প্রচারে বৈশিষ্ট্যের কারণে, তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বড় হয়[৪]। রেডিও তরঙ্গগুলির যে কোনও আবহাওয়া, এবং বেশিরভাগ নির্মাণ সামগ্রীর মধ্য দিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এবং বিচ্ছুরণের মাধ্যমে বাধাগুলির চারপাশে বাঁকানো যেতে পারে এবং অন্যান্য তড়িৎচুম্বক তরঙ্গগুলির যা করতে পারে না সেটি বেতার তরঙ্গ করে থাকে। এ তরঙ্গ তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে বড় বস্তু দ্বারা শোষিত হওয়ার পরিবর্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। বেতার প্রচারের অধ্যয়ন, কীভাবে রেডিও তরঙ্গগুলি মুক্ত স্থান এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপর চলে যায়, ব্যবহারিক রেডিও সিস্টেমের নকশায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাওয়া রেডিও তরঙ্গ প্রতিফলন, প্রতিসরণ, সমবর্তন, বিচ্ছুরণ এবং শোষিত হতে পারে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন কম্পাঙ্কের এই তরঙ্গগুলো বিভিন্ন সংমিশ্রণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট রেডিও ব্যান্ডগুলিকে অন্যদের তুলনায় নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে আরও কার্যকর করে তোলে। ব্যবহারিক রেডিও সিস্টেমগুলি প্রধানত যোগাযোগের জন্য রেডিও প্রচারের তিনটি ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে[৫]।
- দৃষ্টির রেখা: এটি রেডিও তরঙ্গকে বোঝায় যা প্রেরণকারী অ্যান্টেনা থেকে গ্রহণকারী অ্যান্টেনায় একটি সরল রেখায় ভ্রমণ করে। এটির জন্য পুরোপুরি একটি পরিষ্কার দৃষ্টি পথ প্রয়োজন হয় না; নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে রেডিও তরঙ্গ ভবন, পাতা এবং অন্যান্য বাধার মধ্য দিয়ে যেতে পারে। এটি 30 MHz এর উপরে ফ্রিকোয়েন্সিগুলিতে প্রচারের একমাত্র পদ্ধতি। পৃথিবীর পৃষ্ঠে, দৃষ্টির বিস্তারের রেখা চাক্ষুষ দিগন্ত দ্বারা প্রায় 64 কিমি (40 মাইল) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এটি সেল ফোন, এফএম, টেলিভিশন সম্প্রচার এবং রাডারে ব্যবহৃত হয়। মাইক্রোওয়েভের রশ্মি প্রেরণের জন্য ডিশ অ্যান্টেনা ব্যবহার করে, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মাইক্রোওয়েভ রিলে লিঙ্কগুলি দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত দীর্ঘ দূরত্বে টেলিফোন এবং টেলিভিশন সংকেত প্রেরণ করে। গ্রাউন্ড স্টেশনগুলি পৃথিবী থেকে বিলিয়ন মাইল দূরে স্যাটেলাইট এবং মহাকাশযানের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
- পরোক্ষ প্রচার: রেডিও তরঙ্গ বিচ্ছুরণ এবং প্রতিফলনের মাধ্যমে দৃষ্টি রেখার বাইরে বিন্দুতে পৌঁছাতে পারে। বিচ্ছুরণ এর মাধ্যমে একটি বিল্ডিং এর প্রান্ত, একটি যান এর মতো বাধার পাশে দিয়ে বেঁকে যেতে পারে। বেতার তরঙ্গগুলি দেয়াল, মেঝে, ছাদ, যানবাহন এবং মাটির মতো পৃষ্ঠ থেকেও আংশিকভাবে প্রতিফলিত হয়। এই প্রচার পদ্ধতিগুলি স্বল্প পরিসরের রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন সেল ফোন, কর্ডলেস ফোন, ওয়াকি-টকি এবং ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কগুলিতে ঘটে। এই মোডের একটি ত্রুটি হল মাল্টিপাথ প্রচার, যেখানে রেডিও তরঙ্গগুলি একাধিক পথের মাধ্যমে ট্রান্সমিটিং থেকে রিসিভিং অ্যান্টেনায় ভ্রমণ করে। তরঙ্গগুলি হস্তক্ষেপ করে, প্রায়শই বিবর্ণ হওয়া(fading) বা অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
- স্থল তরঙ্গ: 2 মেগাহার্টজ এর নিচের ফ্রিকোয়েন্সিতে, মাঝারি তরঙ্গ এবং দীর্ঘতরঙ্গ ব্যান্ডে, বিচ্ছুরণের কারণে উল্লম্বভাবে সমবর্তিত রেডিও তরঙ্গগুলি পাহাড় এবং পর্বতমালার উপর বাঁকতে পারে এবং দিগন্তের বাইরে প্রচার করতে পারে, পৃষ্ঠ তরঙ্গ হিসাবে ভ্রমণ করে যা পৃথিবীর সীমারেখা অনুসরণ করে। এটি মধ্যমতরঙ্গ এবং দীর্ঘতরঙ্গ ব্রডকাস্টিং স্টেশনগুলির জন্য দিগন্তের বাইরে, শত শত মাইল পর্যন্ত এলাকা আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব করে তোলে। কম্পাঙ্ক কমে যাওয়ার সাথে সাথে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস পায় এবং অর্জনযোগ্য পরিসীমা বৃদ্ধি পায়। মিলিটারি খুব কম ফ্রিকোয়েন্সি (VLF) এবং অত্যন্ত কম ফ্রিকোয়েন্সি (ELF) যোগাযোগ ব্যবস্থা সাহায্যে পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশে যোগাযোগ করতে পারে এবং সাবমেরিনের সাথে শত শত মিটার পানির নিচে সহজেই যোগাযোগ করে থাকে।
- আকাশতরঙ্গঃ মাঝারি তরঙ্গ এবং স্বল্পতরঙ্গ তরঙ্গদৈর্ঘ্যে, রেডিও তরঙ্গ আয়নোস্ফিয়ার নামক বায়ুমণ্ডলের একটি অংশে চার্জযুক্ত কণার (আয়ন) পরিবাহী স্তরগুলিতে প্রতিফলিত হয়। তাই আকাশের একটি কোণে আপতিত বেতার তরঙ্গ দিগন্ত ছাড়িয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে; একে বলা হয় "এড়িয়ে যাওয়া"(skip) বা "আকাশতরঙ্গ" প্রচার। একাধিক স্কিপ ব্যবহার করে আন্তঃমহাদেশীয় দূরত্বে যোগাযোগ করা সম্ভব। আকাশতরঙ্গ প্রচার পরিবর্তনশীল এবং বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার উপর নির্ভরশীল; এটি রাতে এবং শীতকালে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। 20 শতকের প্রথমার্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, এর অবিশ্বস্ততার কারণে আকাশ তরঙ্গ যোগাযোগ বেশিরভাগই পরিত্যক্ত হয়েছে। অবশিষ্ট ব্যবহারগুলি হল মিলিটারি ওভার-দ্য-হরাইজন (ওটিএইচ) রাডার সিস্টেম, কিছু স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম, রেডিও অপেশাদারদের দ্বারা এবং অন্যান্য দেশে সম্প্রচার করার জন্য শর্টওয়েভ সম্প্রচার কেন্দ্রগুলির দ্বারা। মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সিতে, বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাসগুলি রেডিও তরঙ্গ শোষণ করতে শুরু করে, তাই ব্যবহারিক রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিসর ক্রমবর্ধমান ফ্রিকোয়েন্সির সাথে হ্রাস পায়। প্রায় 20 গিগাহার্টজ বায়ুমণ্ডলীয় ক্ষরণ মূলত জলীয় বাষ্পের কারণে হয়ে থাকে। 20 GHz এর উপরে, মিলিমিটার ওয়েভ ব্যান্ডে, অন্যান্য বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাস তরঙ্গ শোষণ করতে শুরু করে, ব্যবহাররিক দূরত্বকে এক কিলোমিটার বা তার কম পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করে। 300 GHz-এর উপরে, টেরাহার্টজ ব্যান্ডে, কার্যত সমস্ত শক্তি কয়েক মিটারের মধ্যে শোষিত হয়।
রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থায়, রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য স্থানান্তর করা হয়। পাঠানোর শেষে, একটি সময়-পরিবর্তী বৈদ্যুতিক সংকেত আকারে পাঠানো তথ্য একটি রেডিও ট্রান্সমিটারে প্রয়োগ করা হয়। তথ্য, যাকে মড্যুলেশন সিগন্যাল বলা হয়, হতে পারে একটি অডিও সংকেত যা একটি মাইক্রোফোন থেকে শব্দের প্রতিনিধিত্ব করে, একটি ভিডিও সংকেত যা একটি ভিডিও ক্যামেরা থেকে চলমান চিত্রগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে, অথবা একটি কম্পিউটার থেকে ডেটা উপস্থাপন করে একটি ডিজিটাল সংকেত। ট্রান্সমিটারে, একটি ইলেকট্রনিক অসিলেটর একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে একটি বিকল্প প্রবাহ তৈরি করে, যাকে বাহক তরঙ্গ বলা হয় কারণ এটি বেতার তরঙ্গ তৈরি করে যা বাতাসের মাধ্যমে তথ্য "বহন" করে। তথ্য সংকেত বাহককে মডিউল করতে, এর কিছু দিক পরিবর্তন করে, বাহকের তথ্য "পিগিব্যাকিং" করতে ব্যবহৃত হয়। মডুলেটেড ক্যারিয়ারটি প্রশস্ত করা হয় এবং একটি অ্যান্টেনায় প্রয়োগ করা হয়। স্পন্দনশীল প্রবাহ অ্যান্টেনার ইলেকট্রনকে সামনে পিছনে ঠেলে দেয়, স্পন্দনশীল বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা অ্যান্টেনা থেকে শক্তিকে বেতার তরঙ্গ হিসেবে বিকিরণ করে। রেডিও তরঙ্গ তথ্য গ্রহণকারীর অবস্থানে নিয়ে যায়।
রিসিভারে আগত বেতার তরঙ্গের দোদুল্যমান বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি গ্রহণকারী অ্যান্টেনার ইলেকট্রনগুলিকে সামনে পিছনে ঠেলে দেয়, একটি ক্ষুদ্র দোদুল্যমান ভোল্টেজ তৈরি করে যা প্রেরণকারী অ্যান্টেনায় কারেন্টের একটি দুর্বল প্রতিরূপ। এই ভোল্টেজটি রেডিও রিসিভারে প্রয়োগ করা হয়, যা তথ্য সংকেত বের করে। রিসিভার প্রথমে একটি ব্যান্ডপাস ফিল্টার ব্যবহার করে পছন্দসই রেডিও স্টেশনের রেডিও সিগন্যালকে অ্যান্টেনা দ্বারা তোলা অন্য সমস্ত রেডিও সিগন্যাল থেকে আলাদা করে, তারপর সিগন্যালকে প্রসারিত করে যাতে এটি শক্তিশালী হয়, তারপর অবশেষে একটি ডিমডুলেটরে তথ্য-বহনকারী মডুলেশন সিগন্যাল বের করে। উদ্ধার করা সংকেত একটি লাউডস্পিকার বা ইয়ারফোনে শব্দ তৈরি করতে, বা একটি দৃশ্যমান চিত্র তৈরি করতে একটি টেলিভিশন ডিসপ্লে স্ক্রীন বা অন্যান্য ডিভাইসে পাঠানো হয়। একটি ডিজিটাল ডেটা সংকেত একটি কম্পিউটার বা মাইক্রোপ্রসেসরে প্রয়োগ করা হয়, যা একটি মানব ব্যবহারকারীর সাথে যোগাযোগ করে।
অনেক ট্রান্সমিটার থেকে রেডিও তরঙ্গ একে অপরের সাথে হস্তক্ষেপ না করে একই সাথে বাতাসের মধ্য দিয়ে যায়। এগুলিকে রিসিভারে আলাদা করা যেতে পারে কারণ প্রতিটি ট্রান্সমিটারের রেডিও তরঙ্গ একটি ভিন্ন হারে দোলা দেয়, অন্য কথায় প্রতিটি ট্রান্সমিটারের আলাদা কম্পাঙ্ক থাকে, যা কিলোহার্টজ (kHz), মেগাহার্টজ (MHz) বা গিগাহার্টজ (GHz) এ পরিমাপ করা হয়। রিসিভারের ব্যান্ডপাস ফিল্টারটি একটি টিউনড সার্কিট নিয়ে গঠিত যা একটি অনুরণনকারীর মতো কাজ করে, যেমন একটি টিউনিং ফর্কের মতো। এটির একটি প্রাকৃতিক অনুরণন কম্পাঙ্ক আছে। অনুরণিত কম্পাঙ্ক পছন্দসই রেডিও স্টেশনের কম্পাঙ্কের সমান সেট করা হয়। কাঙ্খিত স্টেশন থেকে দোদুল্যমান বা স্পন্দনরত রেডিও সংকেত টিউন করা সার্কিটটিকে একই হারে স্পন্দিত করে, এবং এটি বাকি রিসিভারে সংকেত প্রেরণ করে। অন্যান্য কম্পাঙ্কতে রেডিও সংকেত টিউন করা সার্কিট দ্বারা অবরুদ্ধ করা হয় এবং পাস করা হয় না।
জীব ও পরিবেশের উপর প্রভাব
[সম্পাদনা]বেতার তরঙ্গ হল আয়নিত নয় এমন ধরনের বিকিরণ, যার মানে তাদের পরমাণু বা অণু থেকে ইলেকট্রনকে আলাদা করতে, তাদের আয়নিত করতে বা রাসায়নিক বন্ধন ভেঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া বা ডিএনএ ক্ষতির জন্য যথেষ্ট শক্তি নেই। পদার্থ দ্বারা রেডিও তরঙ্গ শোষণের প্রধান প্রভাব হল সেগুলিকে উত্তপ্ত করা, যেমন স্পেস হিটার বা কাঠের আগুনের মতো তাপের উৎস দ্বারা বিকিরণ করা ইনফ্রারেড তরঙ্গগুলির মতো। তরঙ্গের দোদুল্যমান বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র পোলার অণুগুলিকে সামনে পিছনে কম্পিত করে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে; এইভাবে একটি মাইক্রোওয়েভ ওভেন খাবার রান্না করে। অবলোহিত তরঙ্গ প্রধানত বস্তুর পৃষ্ঠে শোষিত হয় এবং পৃষ্ঠের উত্তাপ সৃষ্টি করে, কিন্তু বেতার তরঙ্গগুলি পৃষ্ঠের মধ্যে প্রবেশ করতে এবং পদার্থ এবং জৈবিক টিস্যুর ভিতরে তাদের শক্তি জমা করতে সক্ষম হয়। বেতার তরঙ্গগুলি যে গভীরতায় প্রবেশ করে তা তাদের কম্পাঙ্কের সাথে হ্রাস পায় এবং উপাদানটির প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ভেদনযোগ্যতার উপরও নির্ভর করে; ত্বকের গভীরতা নামক একটি প্যারামিটার দ্বারা এটি নির্ধারিত হয়, সেই গভীরতা মধ্যে 63% শক্তি জমা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি মাইক্রোওয়েভ ওভেনে 2.45 GHz রেডিও তরঙ্গ (মাইক্রোওয়েভ) বেশিরভাগ খাবারে প্রায় 2.5 থেকে 3.8 সেমি (1 থেকে 1.5 ইঞ্চি) প্রবেশ করে।
শরীরের টিস্যু গভীরভাবে উত্তপ্ত করার জন্য ডায়াথার্মির চিকিৎসা থেরাপিতে 100 বছর ধরে শরীরে রেডিও তরঙ্গ প্রয়োগ করা হয়েছে, রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং নিরাময়কে উন্নীত করতে। অতি সম্প্রতি হাইপারথার্মিয়া চিকিৎসায় উচ্চ তাপমাত্রা তৈরি করতে এবং ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। কাছাকাছি পরিসরে রেডিও তরঙ্গের উৎসের দিকে তাকানো (যেমন একটি কর্মক্ষম রেডিও ট্রান্সমিটারের ওয়েভগাইড) এর ফলে চোখের লেন্সের ক্ষতি হতে পারে। রেডিও তরঙ্গের একটি শক্তিশালী রশ্মি চোখের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে এবং লেন্সকে যথেষ্ট পরিমাণে উত্তপ্ত করার ফলে চোখে ছানি পড়তে পারে।
যেহেতু উত্তপ্ত করার প্রভাব প্রকৃতপক্ষে তাপের অন্যান্য উৎস থেকে আলাদা নয়, তাই রেডিও তরঙ্গের সংস্পর্শে আসার সম্ভাব্য স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে বেশিরভাগ গবেষণা "অতাপীয়" প্রভাবের উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে- রেডিও তরঙ্গ উত্তাপের কারণে সৃষ্ট ছাড়াও টিস্যুতে কোনো প্রভাব ফেলে কিনা। বেতার তরঙ্গকে আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা ইনিস্টিউট(IARC) মানুষ ও প্রাণীর উপর এর প্রভাবের জন্য "সীমিত প্রমাণ" হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। মোবাইল টেলিফোন থেকে RF-EMF-এর ব্যক্তিগত এক্সপোজারের মাধ্যমে ক্যান্সারের ঝুঁকির দুর্বল যান্ত্রিক প্রমাণ রয়েছে। রেডিও তরঙ্গ একটি পরিবাহী ধাতব শীট বা পর্দা দ্বারা রক্ষা করা যেতে পারে, শীট বা পর্দার একটি ঘেরকে একটি ফ্যারাডে খাঁচা বলা হয়। একটি ধাতব পর্দা বেতার তরঙ্গ থেকে একটি কঠিন শীটকে রক্ষা করে যতক্ষণ না পর্দার গর্তগুলি তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের 1⁄20 থেকে ছোট হয়।
পরিমাপ
[সম্পাদনা]যেহেতু বেতার তরঙ্গের বিকিরণে একটি বৈদ্যুতিক এবং একটি চৌম্বকীয় উপাদান উভয়ই থাকে, তাই প্রতিটি উপাদানের জন্য নির্দিষ্ট এককের পরিপ্রেক্ষিতে বিকিরণ ক্ষেত্রের তীব্রতা প্রকাশ করা প্রায়ই সুবিধাজনক। মিটার প্রতি একক ভোল্ট (V/m) বৈদ্যুতিক উপাদানের জন্য ব্যবহৃত হয়, এবং চৌম্বকীয় উপাদানের জন্য মিটার প্রতি একক অ্যাম্পিয়ার (A/m) ব্যবহৃত হয়। কেউ একটি তড়িৎচুম্বক ক্ষেত্র সম্পর্কে বলতে চাইলে এই এককগুলি একটি পরিমাপের অবস্থানে বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তির মাত্রা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে ব্যবহৃত করে।
বেতারকম্পাঙ্কের তড়িৎচুম্বক ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করার জন্য আরেকটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত একক হল শক্তি ঘনত্ব। শক্তি ঘনত্ব সবচেয়ে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় যখন পরিমাপের বিন্দু রেডিওতরঙ্গ নির্গমনকারী থেকে যথেষ্ট দূরে অবস্থিত যা বিকিরণ প্যাটার্নের দূরবর্তী ক্ষেত্র অঞ্চল হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ট্রান্সমিটারের কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ, "নিকট ক্ষেত্র" অঞ্চলে, ক্ষেত্রের বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বকীয় উপাদানগুলির মধ্যে সম্পর্ক জটিল হতে পারে এবং উপরে আলোচিত ক্ষেত্রের শক্তি ইউনিটগুলি ব্যবহার করা ভাল। বিদ্যুতের ঘনত্ব প্রতি বর্গএকক এলাকায় শক্তির পরিপ্রেক্ষিতে পরিমাপ করা হয়, উদাহরণস্বরূপ, মিলিওয়াট প্রতি বর্গ সেন্টিমিটার (mW/cm2)। মাইক্রোওয়েভ পরিসর এবং উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সিগুলির ক্ষেত্রে, শক্তির ঘনত্ব সাধারণত তীব্রতা এককে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয় কারণ এক্সপোজারগুলি দূরের ক্ষেত্রের অঞ্চলে হতে পারে হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Ch. 1: Terminology and technical characteristics – Terms and definitions". Radio Regulations (PDF). Geneva, CH: ITU. 2016. p. 7. ISBN 9789261191214.।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য); - ↑ Harman, P. M. (২০০১)। The natural philosophy of James Clerk Maxwell (1st pbk. ed সংস্করণ)। Cambridge, UK: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-00585-X। ওসিএলসি 48014525।
- ↑ "Heinrich Hertz and electromagnetic radiation | American Association for the Advancement of Science"। www.aaas.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-০৯।
- ↑ Ellingson, Steven W. (2016). Radio Systems Engineering. Cambridge University Press. pp. 16–17. ISBN 978-1316785164.
- ↑ Seybold, John S. (2005). "1.2 Modes of Propagation". Introduction to RF Propagation. John Wiley and Sons. pp. 3–10. ISBN 0471743682.
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- "Radio Waves"। Science Mission Directorate। NASA।