বুর্জ আল আরব
বুর্জ আল আরব برج العرب | |
---|---|
সাধারণ তথ্যাবলী | |
অবস্থা | সম্পূর্ণ |
ধরন | বিলাসবহুল হোটেল |
অবস্থান | দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত |
স্থানাঙ্ক | ২৫°০৮′৩১″ উত্তর ৫৫°১১′১০″ পূর্ব / ২৫.১৪১৯৭৫° উত্তর ৫৫.১৮৬১৪৭° পূর্ব |
নির্মাণ শুরু | ১৯৯৪ |
সম্পূর্ণ | ১৯৯৯ |
উন্মুক্ত হয়েছে | ডিসেম্বর, ১৯৯৯ |
নির্মাণব্যয় | ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার[১] |
Height | |
শীর্ষ তলা পর্যন্ত | ১৯৭.৫ মি (৬৪৮ ফু) |
কারিগরী বিবরণ | |
তলার সংখ্যা | ৫৬ (৩টি মাটির তলায়) |
লিফট/এলিভেটর | ১৮[২] |
নকশা ও নির্মাণ | |
স্থপতি | টম রাইট |
অন্যান্য তথ্য | |
কক্ষসংখ্যা | ২০২[২] |
Website | |
burj-al-arab.com | |
তথ্যসূত্র | |
[২][৩][৪][৫][৬] |
বুর্জ আল আরব (আরবি: برج العرب, আরবের স্তম্ভ) হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থিত একটি বিলাসবহুল হোটেল।[৭] এটি বিশ্বের ৭ম সুউচ্চ হোটেল, যদিও এর মোট উচ্চতার ৩৯% অংশ অব্যবহৃত।[৮][৯][১০] সমুদ্রের তীর থেকে ২৮০ মিটার সমদ্রের ভেতরে কৃত্রিম একটি দ্বীপের উপর এটি নির্মাণ করা হয়েছে। আরবের পুরনো পালতোলা জাহাজের কাঠামোর অনুকরণে বানানো ভবনটি আরবের ঐতিহ্যের প্রতিনিধি। আরববিশ্বের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি আরব আমিরাতের শাসক শেখ নাহিয়ানের পারিবারিক সম্পত্তি বুর্জ আল আরব। ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর বিলাসবহুল ভ্রমণ বিষয়ক ম্যাগাজিন,আলট্রা ট্রাভেল-এর পাঠকদের ভোটে “বুর্জ আল আরব” পৃথিবীর একটি বিলাস বহুল হোটেল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। হোটেলটি 'বেষ্ট হোটেল ইন দ্য ওয়ার্ল্ড' এবং বেষ্ট হোটেল ইন দ্য মিডল ইষ্ট' ক্যাটাগরিতে খুব সম্মানজনক দুটি পুরস্কার পেয়েছে। নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
নামকরণ
[সম্পাদনা]“বুর্জ আল আরব” এর অর্থ হচ্ছে আরবের সম্মান। অন্যভাবে, বুর্জ শব্দটার বাংলা অর্থ ‘স্তম্ভ’ কিংবা ইংরেজিতে ‘Tower’, বুর্জ আল আরব এর সম্পূর্ণ অর্থ দাঁড়ায় ‘আরবের স্তম্ভ’।
অবকাঠামো
[সম্পাদনা]ভবনটির স্থপতি ছিলেন টম রাইট। ভবনটির স্থাপত্য পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ছিল অ্যাটকিনস্, যা ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ ঠিকাদারী ছিল দক্ষিণ আফ্রিকান কন্ট্রাক্টর ম্যুরে এন্ড রবার্টস্। হোটেলটির ইন্টেরিয়র নকশা করেছেন কেএসি ইন্টারন্যাশনালের ডিজাইন প্রিন্সিপাল খুয়ান চিউ।
জুমেরিয়া বিচের পাশে সমুদ্রের মাঝে একটি কৃত্রিম দ্বীপের উপর হোটেলটির অবস্থান। বুর্জ আল আরবের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধন হয়। এটি ৩২১ মিঃ (১০৫৩ ফুট) লম্বা এবং ২৮ তলা বিশিষ্ট। এটির আয়তন ৭০,০০০ বর্গ মিঃ। আরবের ‘দাউ’ নামক নৌযানের মাস্তুলের সাথে সাদৃশ্য রেখে এর কাঠামো নকশা করা হয়। মূল মাস্তুল কাঠামো থেকে ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মত এর কাঠামো দু’পাশে বিস্তৃত। সব মিলিয়ে কাঠামোগুলোর আবদ্ধ স্থানটি ত্রিভূজাকৃতির, ত্রিভূজের তিনবাহুর মধ্যবর্তী স্থলে আছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ আট্রিয়াম। ভবনটি তে লেগেছে ৭০,০০০ ঘনমিটারেরও বেশি কংক্রীট এবং ৯,০০০ টন স্টীল। বুর্জ আল আরব হোটেলের সমুদ্রের তলদেশের ভিত্তি নির্মাণ করতে ৩ বছর সময় লেগেছে। সমুদ্রের মাঝখানে এর ভিত্তির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সমুদ্রের নিচের বালির মধ্যে ২৩০টি ৪০ ফুট দীর্ঘ কংক্রিটের খুঁটি প্রবেশ করানো হয়।
হোটেলটির ৮৭,০০০ স্কয়ার ফিট ২২ ক্যারেট সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো, প্রায় ৭২,০০০ স্কয়ার মিটার ৩০ ধরনের পাথর এবং মার্বেলে ঢাকা। লবিতে একটি ত্রিমাত্রিক কৃত্রিম ঝরনা স্থাপিত আছে যার আকৃতি ইসলামিক স্টারের মতো, এর একেকটি কোণা হোটেলটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থলের দিকনির্দেশ করে - তিনটি রেস্টুরেন্ট, গেস্টরুমের মধ্যকার করিডোর। পুরো ভবনটি বিশালাকৃতির হওয়া সত্ত্বেও এতে মাত্র ২৮ টি ফ্লোর আছে, প্রত্যেকটি ফ্লোর দোতলা। সবচেয়ে ছোট স্যুইট টির আকৃতি ১৮১৯ স্কয়ার ফিট এবং সবচেয়ে বড় স্যুইটটির আকৃতি ৮৩৯৬ স্কয়ার ফিট। হোটেলটিতে মোট ২০২টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি স্যুট প্রাচ্যের আভিজাত্য আর পাশ্চাত্যের প্রযুক্তির মিশেলে তৈরী। মার্বেলে মোড়ানো সাদা টুসকান কলাম এবং সর্পিলাকার সিঁড়ি গুলো ক্লাসিসিজম এবং আর্ট ন্যূভো’র অনন্য দৃষ্টান্ত। স্পা-কর্ণারের সমান একেকটি বাথরূম মোজাইক করা মেঝে আর দেয়াল আরবী জ্যামিতিক ফর্মের প্রভাবে পেয়েছে শিল্পনিপুণ ছোঁয়া, সে আরবী জ্যামিতি’র প্রভাব ভবনের অন্যসব কোণেও খুঁজে পাওয়া যায়। মেহমানকে দেয়া হয় একটি বিশেষ ধরনের কার্ড। কার্ডটি স্পর্শ করলেই সোনালী রঙের দরজাটি খুলে যায়। রিমোট কন্ট্রোলে চলে হোটেল স্যুটের ভেতরের দরজা, জানালার পর্দা খোলার কাজ। টিভি, টেলিফোন, ইন্টারনেট, লাইব্রেরীসহ হোটেলের ঘুমানোর জন্য খাটটিও ঘূর্ণায়মান। “বুর্জ আল আরব” এর প্রতিটি রুমে রয়েছে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের আইপ্যাড। হোটেলটির নানা তথ্যাদি সহ বিভিন্ন সেবাসমূহ আইপ্যাডে দেয়া থাকবে। হোটেল এর রেস্তোরাগুলোর খাবার মেনুসহ সব ধরনের সুবিধাদি আইপ্যাড থেকে একজন অতিথি জেনে নিতে পারবেন। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন এবং অতুলনীয় গুণগত মানের যা অতিথিদের সন্তুষ্ট করবে। যদি কোন অতিথি হোটেলে থাকাকালীন ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের আইপ্যাড নিজের করে পেতে চান তবে তাকে ডলার অতিরিক্ত গুণতে হবে। স্বর্ণের আইপ্যাড ছাড়াও স্বর্ণের আইপ্যাড মিনি, গোল্ড আইফোন ৫ এবং গোল্ড ব্ল্যাকবেরি কিউ টেনও কিনতে পারবেন বিলাসী অতিথীরা।
লবি
[সম্পাদনা]বুর্জ আল আরবে আছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ আট্রিয়াম বিশিষ্ট লবি, ১৮০ মিটার (৫৯০ ফিট উচ্চতায়)। আট্রিয়ামটির অবস্থান ভবনটির V আকৃতির কাঠামোর মাঝখানে। আট্রিয়ামটিকে ঘিরেই হোটেলটির সম্পূর্ণ ইন্টেরিয়র ডিজাইন বিকশিত হয়েছে এবং আট্রিয়ামের ফাঁকা স্থানেই ইন্টেরিয়রের এক-তৃতীয়াংশ স্থান ব্যয় হয়েছে।
রেষ্টুরেন্ট
[সম্পাদনা]বুর্জ আল-আরবে রয়েছে বিশ্বের সেরা কিছু রেষ্টুরেন্ট। এই হোটেলে ২টি রেষ্টুরেন্ট রয়েছে।
আল মাহারা রেষ্টুরেন্ট
[সম্পাদনা]‘আল মাহারা’, যার বাংলা অর্থ ঝিনুক। এই হোটেলটিতে যেতে হয় একটি সিমুলেটেড সাবমেরিন ভয়েজের মাধ্যমে। এটি মূলত একটি বিশাল সমুদ্রের পানির অ্যাকুরিয়াম, যেখানে প্রায় ৩৫,০০০ ঘন ফুট পানি আছে। পানির ট্যাঙ্কটি এক্রিলিক গ্লাসের তৈরী যেন তা ম্যাগনিফিকেশন এফেক্ট দূর করে, গ্লাসগুলোর পুরুত্ব ৭.৫ ইঞ্চি।
আল মুনতাহা রেষ্টুরেন্ট
[সম্পাদনা]‘আল মুনতাহা’, যার বাংলা অর্থ সর্বোচ্চ। এর অবস্থান পার্সিয়ান গালফের ২০০ মিটার উপরে। এটি একটি ক্যান্টিলিভারের উপরে স্থাপিত যেটি মাস্তুল থেকে ২৭ মিটার দূরে প্রসারিত, একটি প্যানারোমিক এলিভেটরে সেখানে যাওয়া যায়।
হেলিপ্যাড
[সম্পাদনা]ভবনের শীর্ষে ক্যান্টিলিভারের সহায়তায় একটি হেলিপ্যাড বসানো হয়েছে। এই হেলিপ্যাডে হোটেলটির ইতিহাসে স্মরনীয় কয়েকটি পাবলিক কর্মসুচি হয়েছে- আইরিশ গায়ক রোনান কিটিং তার মিউজিক ভিডিও’র শূটিং করেছেন এই হেলিপ্যাডে। ২০০৪ সালের মার্চ মাসে গল্ফার টাইগার উড এই হেলিপ্যাড থেকে পার্শিয়ান গালফ সাগরের দিকে বেশ কয়েকটি বল মেরেছেন। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে টেনিস তারকা আন্দ্রে আগাসি এবং রজার ফেদেরার এই হেলিপ্যাডে একটি ম্যাচ খেলেছেন। তখন অস্থায়ীভাবে হেলিপ্যাডটিকে একটি ঘাসবহুল টেনিস কোর্টে রূপান্তর করা হয়েছিল। হেলিপ্যাডে কোন সীমানা কিংবা বেড়া নেই, তাই টেনিস বল যদি একবার কোর্টের বাইরে চলে যায় তবে সেটি ফিরিয়ে আনার কোন উপায় নেই।
গ্যালারি
[সম্পাদনা]-
প্রবেশ পথ
-
হোটেলের ভিতরে
-
আল মুন্তাহা রেস্টুরেন্ট
-
পার্কিং
-
বুর্জ আল আরব থেকে আশেপাশের দৃশ্য
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Arabian Knight"। Forbes.com। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ ক খ গ "Burj Al Arab Hotel – The Skyscraper Center"। Council on Tall Buildings and Urban Habitat।
- ↑ ইম্পরিস এ বুর্জ আল আরব
- ↑ স্কাইস্ক্র্যাপারপেইজ -এ বুর্জ আল আরব
- ↑ স্ট্রাকচারে বুর্জ আল আরব (ইংরেজি)
- ↑ "Stay at Burj Al Arab"। Jumeirah। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১০।
- ↑ Eytan, Declan। "Milan: Inside the World's Only Certified 7 Star Hotel"। Forbes (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৮।
- ↑ "Vanity Height: the Use-less Space in Today's Tallest"। CTBUH। ১৭ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Study: Skyscrapers Topped by Wasted Space"। World Property Channel। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩। ১৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৩।
- ↑ Solon, Olivia (৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Report names and shames vanity skyscrapers with unnecessary spires"। Wired। ১৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৩।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Burj Al Arab official website
- Burj Al Arab Hotel on CTBUH Skyscraper Center
- Atkins, the designers and engineers behind Burj Al Arab
- Tom Wright Burj al Arab architect's official website
- Seven Stars Award Burj al Arab Seven Stars Award