বিষয়বস্তুতে চলুন

বিষ্ণু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষ্ণু
পালনকর্তা ঈশ্বর []
ত্রিমূর্তি গোষ্ঠীর সদস্য
হিন্দু
অন্যান্য নাম
দেবনাগরীविष्णु
অন্তর্ভুক্তি
আবাসবৈকুণ্ঠ, ক্ষীর সাগর, কারণ সমুদ্র
মন্ত্রॐ नमो नारायणाय
ওঁ নমঃ নারায়ণায়
ওঁ নমঃ ভগবতে বাসুদেবায়
হরি ওঁ
অস্ত্রপাঞ্চজন্য শঙ্খ, সুদর্শন চক্র, কৌমোদকী গদা ও পদ্ম, শার্ঙ্গধনু, নন্দক তলোয়ার। এছাড়াও নারায়ণাস্ত্র, বৈষ্ণবাস্ত্র[]
প্রতীকসমূহশালিগ্রাম শিলা, পদ্ম, সুদর্শন চক্র, শঙ্খ
দিবসবুধবার
বাহনগরুড় (ঋষি কশ্যপ এবং বিনতার পুত্র), আদিশেষ[]
উৎসবহোলি, রাম নবমী, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, নরসিংহ জয়ন্তী, দীপাবলি, ওণম্, বিভা পঞ্চমী, বিষু, বিজয়া দশমী, কার্তিক পূর্ণিমা, তুলসী বিবাহ, অনন্ত চতুর্দশী, শয়নী একাদশী, প্রবোধিনী একাদশী, বৈকুণ্ঠ একাদশী এবং অন্যান্য একাদশী []
ব্যক্তিগত তথ্য
সহোদরদুর্গা যোগমায়া (ঐষ্টিক ভগ্নী)[][১০]
সঙ্গীলক্ষ্মী এবং তার অন্যান্য রূপ
সন্তান

বিষ্ণু (সংস্কৃত: विष्णु, আক্ষরিক অর্থে সর্বব্যাপ্ত) হলেন হিন্দুধর্মের দেবতাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান দেবতা এবং ত্রিমূর্তির অন্যতম সদস্য। তিনি নারায়ণ এবং হরি নামেও ভক্তমহলে সমধিক পরিচিত। সমসাময়িক অন্যতম হিন্দু সম্প্রদায়, বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের তিনি সর্বোচ্চ সত্তা। আদি শঙ্কর প্রমুখ পণ্ডিতদের মতে, বিষ্ণু ঈশ্বরের পাঁচটি প্রধান রূপের অন্যতম।[১১][১২]

বিষ্ণু সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা ত্রিদেবতাদের মধ্যে "পালনকর্তা" হিসেবে পরিচিত এবং ত্রিদেবতার অন্য দুই দেবতা ব্রহ্মা হলেন সৃষ্টিকর্তা এবং শিব হলেন প্রলয়কর্তা।[১৩] বৈষ্ণব মতে, বিষ্ণু হলেন পুরুষোত্তম সত্তা যিনি এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেন, রক্ষা করেন এবং রূপান্তরিত করেন। শাক্ত মতে, দেবী বা আদি শক্তিকে পরম পরব্রহ্ম হিসেবে বর্ণনা করা হলেও, আরো বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি জগতের সৃষ্টি, পালন এবং প্রলয় কর্তা হিসেবে ত্রিদেবতা- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে সৃষ্টি করেছেন। শাক্ত মতে, ত্রিদেবী হলো ত্রিদেবতা বা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবের অবিচ্ছেদ্য শক্তিস্বরূপা এবং বিষ্ণুর সহধর্মিনী হলেন দেবী লক্ষ্মী[১৪]

বৈষ্ণবমত অনুসারে, ঈশ্বরের সর্বোচ্চ রূপ বা সগুণ ব্রহ্ম হলো বিষ্ণু এবং তিনি অসীম, অতীন্দ্রিয় এবং অপরিবর্তনীয় পরম ব্রহ্ম এবং মহাবিশ্বের আদি আত্মা বা পরমাত্মা।[১৫] ভগবান বিষ্ণুর শান্ত এবং ভয়ঙ্কর উভয় রূপের বহু বর্ণনা রয়েছে। তিনি শান্ত অবস্থায় সর্বজ্ঞ, অজর, অমর সত্তারূপে তাঁর সহধর্মিনী দেবী লক্ষ্মী সহ অনন্ত সমুদ্র ক্ষীর সাগরে আদিশেষ বা অনন্ত নাগশয্যায় শায়িত থাকেন। এখানে আদিশেষ বা অনন্ত নাগ হলো স্বয়ং কাল বা সময়।[১৬]

যখন পৃথিবীতে অধর্ম, বিশৃঙ্খলা এবং আসুরিক শক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তখন বিষ্ণু জগতে ধর্ম ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা, অধর্মের বিনাশ ও শিষ্টজনদের রক্ষার জন্য অবতাররূপে অবতীর্ণ হন। বিষ্ণুর অসংখ্য অবতারদের মধ্যে প্রধান হলো ১০ জন বা দশাবতার। এই অবতারদের মধ্যে শ্রীরামশ্রীকৃষ্ণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবতার।[১৭]

নামব্যুৎপত্তি

[সম্পাদনা]

বিষ্ণু (সংস্কৃত: विष्णु) শব্দের অর্থ হলো "সর্বব্যাপ্ত"[১৮] এবং মেধাতিথি (১০০০ অব্দ) এর মতে, বিষ্ণু অর্থ 'যিনি সবকিছু এবং সবকিছুর ভিতরে পরিব্যাপ্ত আছেন'।[১৯] বেদাঙ্গ বিশারদ মহর্ষি যাস্ক (খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতক) তাঁর নিরুক্ত গ্রন্থে বলেছেন- "বিষ্ণুর্ বিষ্বাতার বা ব্যাষ্ণোতার বা" অর্থাৎ যিনি সর্বত্র সমভাবে বিরাজমান তিনিই বিষ্ণু। তিনি আরো বলে‌ছেন- "অথ যদ্বিষিতো ভবতি তদ্ বিষ্ণুর্ভবতি।‌‌‌‌‌‌।" অর্থাৎ যিনি মায়া ও মোহ মুক্ত তিনিই বিষ্ণু।[২০]

পদ্মপুরাণের (৪র্থ-১৫দশ শতক) দশম অধ্যায়ে উল্লেখিত হয়েছে যে, ভীমের পুত্র এবং বিদর্ভদেশের রাজা দন্ত, অষ্টোত্তর শতনামে বিষ্ণু স্তুতি করে। এই অষ্টোত্তর শতনামে বিষ্ণুর প্রধান দশাবতার সহ বিষ্ণু বা ঈশ্বরের গুণ, মহিমা, লীলা বর্ণিত হয়েছে।[২১]

গরুড় পুরাণের পঞ্চদশ অধ্যায়ে এবং মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বিষ্ণুর ১০০০ নামের একটি করে স্তোত্র রয়েছে। এটি বিষ্ণু সহস্রনাম নামে ব্যাপক প্রচলিত। বিষ্ণু সহস্রনামে বিষ্ণু বা ঈশ্বরের গুণ, মহিমা, মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। এখানে বিষ্ণু বলতে সর্বব্যাপক, সর্বব্যাপ্ত পরমেশ্বরকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বিষ্ণু সহস্রনামে বিষ্ণুর অন্যান্য যে নাম গুলো উল্লেখিত হয়েছে সেগুলো হলো:-

মূর্তিবিদ্যা

[সম্পাদনা]
সালার জং মিউজিয়াম-এ বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর ক্ষুদ্রচিত্র, ১৮১০
সালার জং মিউজিয়াম-এ বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর ক্ষুদ্রচিত্র, ১৮১০

বিষ্ণু মূর্তিচিত্র তাকে গাঢ় নীল, নীল-ধূসর বা কালো রঙের ত্বক এবং সুসজ্জিত রত্ন পরিহিত পুরুষ হিসেবে দেখায়। তাকে সাধারণত চারটি বাহু দিয়ে দেখানো হয়, তবে শিল্পকর্মের উপর হিন্দু গ্রন্থে তার দুই বাহুবিশিষ্ট সশস্ত্র উপস্থাপনাও পাওয়া যায়। [২২] [২৩]

তার মূর্তিটি ঐতিহাসিক শনাক্তকারীর মধ্যে রয়েছে। তিনি তার এক হাতের প্রথম দুই আঙ্গুলের মধ্যে একটি শঙ্খ ( পাঞ্চজন্য নামে শঙ্খ ) ধারণ করেন, আরেকটিতে (ডানে পিছনে) একটি যুদ্ধ চাকতি ( সুদর্শন নামক চক্র ) ধারণ করেন। শঙ্খ খোলটি সর্পিল যা সমস্ত আন্তঃসংযুক্ত সর্পিল চক্রীয় অস্তিত্বের প্রতীক, চক্র হলো এমন একটি প্রতীক যা চিহ্নিত করে যে, মহাজাগতিক ভারসাম্য মন্দ দ্বারা অভিভূত হলে প্রয়োজনে যুদ্ধের মাধ্যমে ধর্মকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। [২২] তিনি তার বাহুতে মাঝে মাঝে একটি গদা ( কৌমোদকি নামক গদা ) বহন করেন যা জ্ঞানের কর্তৃত্ব এবং শক্তির প্রতীক। [২২] চতুর্থ বাহুতে, তিনি পদ্ম ফুল ( পদ্ম ) ধারণ করেন যা বিশুদ্ধতা এবং উৎকর্ষের প্রতীক। [২২] [২৩] [২৪] তিনি বিভিন্ন হাতে যে বস্তুগুলো ধারণ করেন তা পরিবর্তিত হয়, যা মূর্তিবিদ্যার চব্বিশটি সংমিশ্রণের জন্ম দেয়, প্রতিটি সংমিশ্রণ বিষ্ণুর একটি বিশেষ রূপের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। অগ্নি পুরাণ এবং পদ্ম পুরাণের মতো গ্রন্থে এই বিশেষ রূপগুলির প্রত্যেকটিকে একটি বিশেষ নাম দেওয়া হয়েছে। তবে এই গ্রন্থগুলি অসঙ্গতিপূর্ণ । কদাচিৎ, বিষ্ণুকে ধনুক শার্ঙ্গ বা তলোয়ার নন্দক ধারণকারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। তাকে গলায় কৌস্তুভ রত্ন এবং বৈজয়ন্তী, বনের ফুলের মালা পরিহিতাবস্থায় চিত্রিত করা হয়েছে। শ্রীবৎস চিহ্নটি তার বুকে চুলের কোঁকড়ানো আকারে চিত্রিত হয়েছে। তিনি সাধারণত হলুদ বস্ত্র পরিধান করেন। তিনি কিরীটমুকুট নামে একটি মুকুট ধারণ করেন। [২৫]

বিষ্ণু মূর্তিবিদ্যা তাকে দাঁড়ানো ভঙ্গিতে, যোগ ভঙ্গিতে উপবিষ্ট বা হেলানো অবস্থায় দেখায়। [২৩] বিষ্ণুর একটি ঐতিহ্যবাহী চিত্র নারায়ণরূপে তিনি ঐশ্বরিক সাগর ক্ষীর সাগরের উপর ভাসমান সর্প শেষের কুণ্ডলীর উপর হেলান দিয়ে, তার সহধর্মিণী লক্ষ্মীর সাথে বিরাজমান, এবং তিনি "মহাবিশ্বকে বাস্তবে স্বপ্ন দেখেন।" [২৬] তাঁর আবাসকে বৈকুণ্ঠ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাঁর বাহন হল পক্ষীরাজ গরুড়[২৭]

বিষ্ণু সূর্যের সাথে যুক্ত ছিলেন কারণ তিনি "একজন ক্ষুদ্র সৌর দেবতা। কিন্তু পরবর্তী শতাব্দীতে গুরুত্ব পেয়েছিলেন।" [২৮]

ত্রিমূর্তি

[সম্পাদনা]
শিব (বামে), বিষ্ণু (মাঝখানে), এবং ব্রহ্মা (ডানে)।

বিশেষ করে বৈষ্ণবধর্মে, ত্রিমূর্তি ( হিন্দু ত্রয়ী বা মহান ত্রিত্ব নামেও পরিচিত) [২৯] [৩০] তিনটি মৌলিক শক্তির ( গুণ ) প্রতিনিধিত্বকারী যার মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং চক্রাকারে ধ্বংস হয়। এই শক্তিগুলির প্রতিটি একজন হিন্দু দেবতা দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করে থাকে: [৩১] [৩২]

ত্রিমূর্তিরা নিজেরাই তিন গুণের ঊর্ধ্বে এবং ত্রিগুণের দ্বারা প্রভাবিত হয় না। [৩৩]

হিন্দু ঐতিহ্যে, ত্রয়ীকে প্রায়শই ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। সবকটিতেই ত্রয়ীর একই অর্থ আছে; একই পরম সত্তার বিভিন্ন রূপ বা প্রকাশ। [৩৪]

বেদে বিষ্ণু

[সম্পাদনা]

ঋগ্বেদে একাধিকবার বিষ্ণুর উল্লেখ রয়েছে। যেমন:

বিষ্ণোর্নু কং বীর্যাণি প্র বীচং যঃ পার্থিবানি বিমমে রজাংসি ।
যো অস্কভায়দুত্তরং সধস্থংবিচক্রমাণস্ত্রেধোরুগায়ঃ।। ১।।


আমি বিষ্ণুর বীর কর্ম শ্রীঘ্রই কীর্তন করি। তিনি পার্থিব লোক পরিমাপ করেছেন। তিনি উপরিস্থ জগৎ স্তম্ভিত করেছেন! তিনি তিনবার পদবিক্ষেপ করছেন। লোকে তার প্রভূত স্তুতি করে।

— ঋগ্বেদ, ১/১৫৪/১ [৩৫]

বিষ্ণুর পরিচয়

  • সপ্ত রশ্মি অর্ধ বৎসর পর্যন্ত গর্ভ ধারণ করে (অর্থাৎ বৃষ্টি উৎপাদন করে) এবং ভুবনে রেতঃস্বরূপ হয়ে (অর্থাৎ বৃষ্টি প্রদান করে) বিষ্ণুর কার্যে নিযুক্ত রয়েছে। তা বিপশ্চিৎ ও সর্বতোব্যাপি। তারা প্রজ্ঞাদ্বারা মনে মনে সমস্ত জগৎ ব্যাপ্ত করেছে।[৩৬]
  • আমি এই কি না, তা আমি জানি না। কারণ আমি মূঢ়চিত্ত হয়ে বিচরণ করি। জ্ঞানের যখন প্রথম উন্মেষ হয়, তখনই আমি বাক্যের অর্থ বুঝতে পারি। [৩৭]
  • একেই মেধাবীগণ, ইন্দ্র, মিত্ৰ বরুণ ও অগ্নি বলে থাকেন। ইনি স্বর্গীয়, পক্ষ বিশিষ্ট ও সুন্দর গমনশীল । ইনি এক হলেও ইহাকে বহু বলে বর্ণনা করে। একে অগ্নি, যম ও মাতরিশ্বা বলে।| [৩৮]

—ঋগ্বেদ, প্রথম মণ্ডল, একশো চৌষট্টিতম সুক্ত, ৩৬,৩৭ ও ৪৬ ঋক্। অনুবাদকঃ রমেশচন্দ্র দত্ত।

সায়ণাচার্যের মতে, বেদের বিষ্ণু মূলত সূর্য বা সবিতা। তাই সূর্যদেবকে সূর্যনারায়ণ ও বলা হয়। সূর্যের সাথে এই সংযুক্তিটি মিত্র এবং অগ্নি নামক সহকর্মী বৈদিক দেবতাদের সাথে বিষ্ণুর বৈশিষ্ট্যকে অন্তর্ভুক্ত করে। বেদের বিভিন্ন স্তোত্রের মাধ্যমে জানা যায় এই দেবগণ "মানুষকে একত্রিত করে" এবং সমস্ত জীবকে জেগে ওঠতে, তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন করতে অনুপ্রাণিত করে। সূর্যদেবের বার রবিবার হলো বিষ্ণুবার। বৈদিক স্তোত্রগুলিতে বিষ্ণুকে অন্যান্য দেবতা যেমন ইন্দ্রের সহিত আহ্বান করা হয়, বিষ্ণু ইন্দ্রকে বৃত্র নামক অশুভ অসুরকে হত্যা করতে সাহায্য করেন । সায়ণাচার্যের মতে, বেদে তাঁর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল সূর্যরশ্মির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। ঋঙ্মন্ডল ৭- এর দুটি ঋগ্বেদীয় স্তোত্র বিষ্ণুকে নির্দেশ করে। ঋগ্বেদের ৭/৯৯ সুক্তে বিষ্ণুকে দেবতা বলে সম্বোধন করা হয়েছে যিনি স্বর্গ ও পৃথিবীকে ধারণ করেন, এবং বিষ্ণুকে ইন্দ্রের সাথে স্তব করা হয় ।

প্রণাম মন্ত্র

[সম্পাদনা]

বিষ্ণুদেবের প্রণাম মন্ত্র:

"ওঁ নমো ব্রহ্মণ্যদেবায়
গোব্রাহ্মণ হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায়
গোবিন্দায় নমো নমঃ।।"

পুরাণে বিষ্ণু

[সম্পাদনা]

বিষ্ণুর প্রণাম মন্ত্র

[সম্পাদনা]

ওঁ ত্রৈলোক্য পূজিত শ্রীমন্ সদা বিজয় বর্দ্ধন।
শান্তিং কুরু গদাপাণে নারায়ণায় নমোঽস্তুতে।।

অবতার

[সম্পাদনা]

হিন্দুধর্মের মধ্যে অবতার (বা প্রকাশ) ধারণাটি প্রায়শই হিন্দু ত্রিমূর্তিতে ঈশ্বরের সংরক্ষক বা ধারক রূপ বিষ্ণুর সাথে জড়িত। বিষ্ণুর অবতারগণ ধর্মকে শক্তিশালী করতে এবং অধর্মকে ধ্বংস করতে অবতীর্ণ হন, যার ফলে ধর্ম পুনরুদ্ধার হয় এবং পৃথিবীর ভার লাঘব হয়। ভগবদ গীতার প্রায়শই উদ্ধৃত একটি অংশ বিষ্ণুর অবতারের সাধারণ ভূমিকা বর্ণনা করে থাকে।

যখনই ধর্ম হ্রাস পায় এবং অধর্ম বৃদ্ধি পায় তখনই আমি নিজেকে প্রকাশ করি।
সৎদের রক্ষা ও অসৎদের বিনাশের জন্য,
এবং ধার্মিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য,
যুগের পর যুগ আমি নিজেকে সৃজন করি।

— ভগবদগীতা ৪/৭–৮

বৈদিক সাহিত্য, বিশেষ করে পুরাণ (প্রাচীন; বিশ্বকোষের অনুরূপ) এবং ইতিহাস (ঘটনাপঞ্জী, ইতিহাস, কিংবদন্তী), বিষ্ণুর অসংখ্য অবতারের বর্ণনা করে থাকে। এই অবতারগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন কৃষ্ণ ( বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত পুরাণ এবং মহাভারতে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রদর্শিত; পরবর্তীতে ভগবদ্গীতায় অন্তর্ভুক্ত), এবং রাম (সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে রামায়ণে প্রদর্শিত)। বিশেষ করে বৈষ্ণবধর্মে কৃষ্ণকে বিষ্ণুর মতো অন্যান্য দেবদেবী ও দেবতাসহ সকল অস্তিত্বের চূড়ান্ত, আদি, অতীন্দ্রিয় উৎস হিসেবে পূজা করা হয়।

মহাভারত

[সম্পাদনা]

মহাভারতে, বিষ্ণু ( নারায়ণ হিসাবে) নারদকে বলেছেন যে তিনি নিম্নলিখিত দশটি অবতারে আবির্ভূত হবেন:

রাজহাঁস ( হংস ) , কূর্ম, মৎস্য রূপে আবির্ভূত হব, হে পুনরুত্থিতদের মধ্যে অগ্রগণ্য, আমি তখন নিজেকে বরাহ রূপে, তারপর মনুষ্য-সিংহ (নৃসিংহ ) রূপে, তারপর বামন, তারপর ভৃগু বংশের রাম, তারপরে রাম হিসেবে দশরথের পুত্ররূপে, তারপর কৃষ্ণরূপে সত্ত্ব জাতির বংশধর হিসেবে, এবং সবশেষে কল্কি হিসেবে প্রদর্শন করাব।

— বই ১২, শান্তি পর্ব, অধ্যায় ৩৪০, কিশোরী মোহন গাঙ্গুলির অনুবাদ, ১৮৮৩–১৮৯৬[৩৯]

পুরাণ

[সম্পাদনা]

নিচের সারণীতে কিছু পুরাণের বিপরীতে বিষ্ণুর নির্দিষ্ট অবতার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া, এবং তালিকাগুলি সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা কম কারণ:

  • সমস্ত পুরাণই অবতারের তালিকা দেয় না (যেমন অগ্নি পুরাণের সমগ্র অধ্যায়গুলির মধ্যে কিছু অধ্যায়ে অবতারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে)
  • একটি তালিকা এক জায়গায় দেওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত অবতারগুলি অন্যত্র উল্লেখ করা যেতে পারে (যেমন ভাগবত পুরাণ স্কন্ধ ১ এ ২২জন অবতারের তালিকা করেছে, তবে অন্য কোথাও উল্লেখ করা হয়েছে)
  • মানব পুরাণ উপপুরাণে বিষ্ণুর ৪২জন অবতারের তালিকা রয়েছে।
  • একটি পুরাণে একক ব্যক্তিত্বকে অন্য পুরাণে অবতার হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে (যেমন নারদকে মৎস্য পুরাণে অবতার হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি তবে ভাগবত পুরাণে করা হয়েছে)
  • কিছু অবতার একক অবতারের বিভিন্ন দিক হিসাবে বিবেচিত দুই বা ততোধিক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত (যেমন নর-নারায়ণ, রাম এবং তার তিন ভাই)
পুরাণ অবতার নাম / বর্ণনা (অধ্যায় এবং শ্লোক সহ) – দশাবতার তালিকাগুলি গাঢ় আকারে রয়েছে
অগ্নি [৪০] ১২ মৎস্য (২), কূর্ম (৩), ধন্বন্তরী (৩/১১), মোহিনী (৩/১২), বরাহ (৪), নরসিংহ (৪/৩-৪), বামন (৪/৫-১১), পরশুরাম (৪/১২-২০), রাম (৫-১১; বিষ্ণুর 'চারটি রূপ' এর মধ্যে একটি, অন্যরা তাঁর ভাই ভরত, লক্ষ্মণ এবং শত্রুঘ্ন ), কৃষ্ণ (১২), বুদ্ধ (১৬), কল্কি (১৬)
১০ মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নরসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বুদ্ধ এবং কল্কি (অধ্যায় ৪৯)
ভাগবত ২২ [৪১] কুমার, বরাহ, নারদ, নর-নারায়ণ, কপিল, দত্তাত্রেয়, যজ্ঞ, ঋষভ, পৃথু, মৎস্য, কূর্ম, ধন্বন্তরী, মোহিনী, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, ব্যাসদেব, রাম, বলরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ এবং কল্কি ( ১ম স্কন্ধ অধ্যায় ৩)।
২০ [৪২] বরাহ, সুযজ্ঞ (হরি), কপিল, দত্তাত্রেয়, চার কুমার, নর-নারায়ণ, পৃথু, ঋষভ, হয়গ্রীব, মৎস্য, কূর্ম, নৃসিংহ, বামন, মনু, ধন্বন্তরী, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, এবং কল্কি (২য় স্কন্ধ অধ্যায় ৭)
ব্রহ্ম [৪৩] ১৫ মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নরসিংহ, বামন, হয়গ্রীব, বুদ্ধ, রাম, কল্কি, অনন্ত, অচ্যুত, জামদগ্ন্য ( পরশুরাম ), বরুণ, ইন্দ্র এবং যম (খণ্ড ৪: ৫২.৬৮-৭৩)
গরুড় [৪৪] ২০ কুমার, বরাহ, নারদ, নর-নারায়ণ, কপিল, দত্ত (দত্তাত্রেয়), যজ্ঞ, উরুক্রম, পৃথু, মৎস্য, কূর্ম, ধন্বন্তরী, মোহিনী, নরসিংহ, বামন, পরশুরাম, ব্যাসদেব, বলরাম, কৃষ্ণ এবং কল্কি (খণ্ড ১: অধ্যায় ১)
১০ মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ এবং কল্কি (খণ্ড ১, অধ্যায় ৮৬, শ্লোক ১০-১১)
১০ [৪৫] মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, রাম, পরশুরাম, কৃষ্ণ, বলরাম, বুদ্ধ এবং কল্কি (খণ্ড ৩, অধ্যায় ৩০, শ্লোক ৩৭)
লিঙ্গ [৪৬] ১০ মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, রাম, পরশুরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ এবং কল্কি (ভাগ ২, অধ্যায় ৪৮, শ্লোক ৩১-৩২)
মৎস্য [৪৭] ১০ ধর্ম, নৃসিংহ এবং বামনের ৩ স্বর্গীয় অবতার; এবং দত্তাত্রেয়, মান্ধত্র, পরশুরাম, রাম, বেদব্যাস (ব্যাস), বুদ্ধ এবং কল্কির ৭ টি মানব অবতার (খণ্ড ১: অধ্যায় ৪৭)
নারদ [৪৮] ১০ মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নরসিংহ, ত্রিবিক্রম (বামন), পরশুরাম, শ্রী-রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, কল্কি (৪র্থ পাদ, অধ্যায় ১১৯, শ্লোক ১৪-১৯), এবং কপিল [৪৯]
পদ্ম [৫০] [৫১] ১০ অংশ ৭: যম (৬৬/৪৪-৫৪) এবং ব্রহ্মা (৭১.২৩-২৯) নাম 'মৎস্য, কূর্ম এবং বরাহ। নরসিংহ ও বামন, (পরশু-)রাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ এবং কল্কি'; অংশ ৯: এই তালিকাটি শিব (২২৯/৪০-৪৪) দ্বারা পুনরাবৃত্ত করা হয়েছে; কপিল [৪৯]
শিব [৫২] ১০ মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, 'রাম ত্রয়ী' [রাম, পরশুরাম, বলরাম], কৃষ্ণ, কল্কি (পর্ব ৪: বায়বীয় সংহিতা: অধ্যায় ৩০, শ্লোক ৫৬-৫৮ এবং অধ্যায় ৩১, শ্লোক ১৩৪-১৩৬)
স্কন্দ ১৪ [৫৩] বরাহ, মৎস্য, কূর্ম, নৃসিংহ, বামন, কপিল, দত্ত, ঋষভ, ভার্গব রাম (পরশুরাম), দাশরথি রাম, কৃষ্ণ, কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন (ব্যাস), বুদ্ধ, এবং কল্কি (অংশ ৭: বাসুদেব-মাহাত্ম্য: অধ্যায় ১৮)
১০ [৫৪] মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নরসিংহ, ত্রিবিক্রম (বামন), পরশুরাম, শ্রী-রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ এবং কল্কি (অংশ ১৫: রেবা খণ্ড: অধ্যায় ১৫১, শ্লোক ১-৭)
মানব ৪২ আদি পুরুষ, কুমার, নারদ, কপিল, যজ্ঞ, দত্তাত্রেয়, নর-নারায়ণ, বিভু, সত্যসেন, হরি, বৈকুণ্ঠ, অজিত, শালিগ্রাম, সার্বভৌম, বৃষভ, বিষ্বকসেন, সুধামা (কৃষ্ণের বন্ধু সুদামা নয়), ধর্মসেতু, যোগেশ্বর, বৃহদ্ভানু, হংস,হয়গ্রীব, ব্যাস, পৃথু, বৃষভ দেব, মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, বেঙ্কটেশ্বর, জ্ঞানেশ্বর, চৈতন্য, কল্কি
বরাহ [৫৫] [৫৬] ১০ মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ এবং কল্কি (অধ্যায় ৪, শ্লোক ২-৩; অধ্যায় ৪৮, শ্লোক ১৭-২২; এবং অধ্যায় ২১১, শ্লোক ৬৯)

বিষ্ণুর দশ মুখ্য অবতারের সমষ্টিগত নামই দশাবতার। এই দশাবতারের কথা জানা যায় গরুড় পুরাণ থেকে।[৫৭] এই দশ অবতার মানব সমাজে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির ভিত্তিতে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হন। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, প্রথম চার অবতারের আবির্ভাবকাল সত্যযুগ। পরবর্তী তিন অবতার ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন। অষ্টম ও নবম অবতারের আবির্ভাবকাল যথাক্রমে দ্বাপরযুগকলিযুগ। দশম অবতার কল্কির আবির্ভাব ৪২৭,০০০ বছর পর কলিযুগের অন্তিম পর্বে ঘটবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।[৫৮] বিষ্ণুর দশ অবতারগুলো হচ্ছে:

১. মৎস্য - মাছরূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
২. কূর্ম - কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৩. বরাহ - বন্য শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৪. নৃসিংহ - অর্ধনরসিংহরূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৫. বামন - খর্বকায় বামনের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৬. পরশুরাম - পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৭. রাম - অযোধ্যার যুবরাজ ও রাজা রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৮. কৃষ্ণ - দ্বাপরযুগে জ্যেষ্ঠভ্রাতা বলরাম সাথে অবতীর্ণ। ভাগবত পুরাণ অনুসারে দ্বাপরযুগে অনন্ত নাগের অবতার বলরাম রূপে কৃষ্ণের সঙ্গে অবতীর্ণ হন। অধিকাংশ বৈষ্ণব শাখাসম্প্রদায় বলরামকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করেন। যে সকল সূত্রে বুদ্ধের কোনো উল্লেখ নেই সেখানে বলরামকেই বিষ্ণুর নবম অবতার রূপে দশাবতারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৯. বুদ্ধ - কলিযুগে বিষ্ণুর নবম অবতার হিসেবে অবতীর্ণ।
১০. কল্কি - এই ভবিষ্যৎ অবতার কলিযুগের শেষ পর্বে অবতীর্ণ হবেন বলে হিন্দুরা মনে করেন।
দশাবতার (পুথিচিত্র): (বামদিক থেকে) মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, বুদ্ধ, কল্কি।
হিন্দু দেবতা বিষ্ণু (মাঝে) তার অবতার দ্বারা বেষ্টিত (ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে, বাম-উপর থেকে: মৎস্য ; কুর্ম ; বরাহ ; নরসিংহ ; বামন ; পরশুরাম ; রাম ; কৃষ্ণ ; বুদ্ধ এবং কল্কি ), রাজা রবি বর্মার ১৯শ শতাব্দীর ওলিওগ্রাফ

অগ্নি পুরাণ, বরাহ পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, লিঙ্গ পুরাণ, নারদ পুরাণ, গরুড় পুরাণ, এবং স্কন্দ পুরাণ সবেতেই বিষ্ণুর বিভব বা ১০ [প্রাথমিক] অবতারগুলির মিলিত তালিকা প্রদান করা হয়েছে। গরুড় পুরাণ সরোদ্ধারেও একই বিভব পাওয়া যায়, গরুড় পুরাণ সম্পর্কে নবনিধিরামের লেখা একটি ভাষ্য বা 'নির্মিত সারমর্ম' :

মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, এবং কল্কি: এই দশটি নাম সর্বদা জ্ঞানীদের ধ্যান করা উচিত। যারা রোগাক্রান্তের কাছে এগুলি পাঠ করে তাদের আত্মীয় বলা হয়।

— নবনিধিরাম, গরুড় পুরাণ সারোদ্ধার, অধ্যায় ৮, শ্লোক ১০–১১, ই. উড এবং এস.ভি সুব্রহ্মণ্যমের অনুবাদ [৫৯][৬০]

দশাবরারে বুদ্ধ বা বলরামের স্থান নির্ধারণের বিষয়ে আপাত মতবিরোধ শিব পুরাণের দশাবরার তালিকা থেকে দেখা যায় (গরুড় পুরাণে বলরাম সহ দশ অবতারের একমাত্র অন্য তালিকাটি বামনকে প্রতিস্থাপন করে, বুদ্ধ নয়)। নির্বিশেষে, দশাবরার উভয় সংস্করণেরই প্রামাণিক বৈদিক সাহিত্যের অনুশাসনে একটি শাস্ত্রীয় ভিত্তি রয়েছে (কিন্তু গরুড় পুরাণ সরোদ্ধার থেকে নয়)।

পেরুমাল - বিষ্ণুর দক্ষিণভারতীয় রূপ

[সম্পাদনা]
পেরুমাল বা বিষ্ণুর একটি অনন্যরূপ বেঙ্কটেশ্বর

পেরুমাল (তামিল: பெருமாள்) বা তিরুমাল (তামিল: திருமால்) অথবা মায়ন (তামিল সাহিত্য উল্লিখিত) হলেন তামিলনাড়ু এবং তামিলভাষী ও তামিল-অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহের তামিল হিন্দুদের প্রধানতম এবং প্রসিদ্ধ দেবতা। মূলধারার হিন্দুধর্মের সাথে দক্ষিণ ভারতীয় হিন্দুদেবতাদের সমন্বয় প্রক্রিয়ায় পেরুমাল হলেন ভগবান বিষ্ণুর দক্ষিণভারতীয় রূপভেদ।[৬১][৬২] হিন্দুধর্মের অন্যতম বৈষ্ণব সম্প্রদায় শ্রী সম্প্রদায়ের অনুসারীরা পেরুমালকে তিরুপতিতে, বেঙ্কটেশ্বর[৬৩] এবং শ্রীরঙ্গমে শ্রীরঙ্গনাথস্বামী হিসেবে আরাধনা ও পূজা করে।[৬৪]

বৈষ্ণব সম্প্রদায়

[সম্পাদনা]

যারা বিষ্ণুর উপাসনা করেন, তাদেরকে বৈষ্ণব বলা হয়। শ্রীচৈতন্য বঙ্গদেশে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তন করেন। সাহিত্য, চিত্রকলা, ভাস্কর্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিষ্ণু সুবিদিত। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন মন্দির ও জাদুঘরে বিষ্ণুর অনেক মূর্তি আছে।[৬৫]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]
  • Translation by Richard W. Lariviere (১৯৮৯)। The Nāradasmr̥ti। University of Philadelphia। 
  • Patrick Olivelle. "The Date and Provenance of the Viṣṇnu Smṛti." Indologica Taurinensia, 33 (2007): 149-163.

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Encyclopedia of World Religions। Encyclopaedia Britannica, Inc.। ২০০৮। পৃষ্ঠা 445–448। আইএসবিএন 978-1-59339-491-2 
  2. Wendy Doniger (১৯৯৯)। Merriam-Webster's Encyclopedia of World Religionsবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Merriam-Webster। পৃষ্ঠা 1134আইএসবিএন 978-0-87779-044-0 
  3. Soifer 1991, পৃ. 85।
  4. Doniger, Wendy; O'Flaherty, Wendy Doniger (১ জানুয়ারি ১৯৮০)। Karma and Rebirth in Classical Indian Traditions। University of California Press। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ – Internet Archive-এর মাধ্যমে। 
  5. Indian Civilization and Culture। M.D. Publications Pvt.। ১৯৯৮। আইএসবিএন 9788175330832। ২৬ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০২৩ 
  6. Constance Jones; James D. Ryan (২০০৬)। Encyclopedia of Hinduism। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 491–492। আইএসবিএন 978-0-8160-7564-5 
  7. Muriel Marion Underhill (১৯৯১)। The Hindu Religious Year। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 75–91। আইএসবিএন 978-81-206-0523-7 
  8. Debroy, Bibek (২০০৫)। The History of Puranas (ইংরেজি ভাষায়)। Bharatiya Kala Prakashan। আইএসবিএন 978-81-8090-062-4 
  9. Williams, George M. (২০০৮-০৩-২৭)। Handbook of Hindu Mythology (ইংরেজি ভাষায়)। OUP USA। আইএসবিএন 978-0-19-533261-2 
  10. "Śb 10.4.12"vedabase.io/en/ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  11. Kedar Nath Tiwari (1987). Comparative Religion. Motilal Banarsidass Publications. p. 38. ISBN 9788120802933.
  12. Pratapaditya Pal (1986). Indian Sculpture: Circa 500 BCE- 700 CE. University of California Press. pp. 24–25. ISBN 978-0-520-05991-7.
  13. Orlando O. Espín; James B. Nickoloff (2007). An Introductory Dictionary of Theology and Religious Studies. Liturgical Press. p. 539. ISBN 978-0-8146-5856-7.
  14. David Leeming (17 November 2005). The Oxford Companion to World Mythology. Oxford University Press. p. 236. ISBN 978-0190288884.
  15. Edwin Bryant; Maria Ekstrand (23 June 2004). The Hare Krishna Movement: The Postcharismatic Fate of a Religious Transplant. Columbia University Press. p. 16. ISBN 978-0231508438.
  16. Vanamali (20 March 2018). In the Lost City of Sri Krishna: The Story of Ancient Dwaraka. Simon and Schuster. p. 737. ISBN 978-1620556825.
  17. Zimmer, Heinrich Robert (1972). Myths and Symbols in Indian Art and Civilization. Princeton University Press. p. 124. ISBN 978-0-691-01778-5.
  18. Vishnu Sahasranāma, translated by Swami Chinmayananda. Central Chinmaya Mission Trust. pp. 16–17.
  19. Klaus K. Klostermaier (2000). Hinduism: A Short History. Oneworld. pp. 83–84. ISBN 978-1-85168-213-3.
  20. Adluri, Vishwa; Joydeep Bagchee (February 2012). "From Poetic Immortality to Salvation: Ruru and Orpheus in Indic and Greek Myth". History of Religions. 51 (3): 245–246. doi:10.1086/662191. JSTOR 10.1086/662191. S2CID 56331632.
  21. N.A. (1956). THE PADMA-PURANA PART.10. MOTILAL BANARSIDASS PUBLISHERS PVT. DELHI. pp. 3471–3473.
  22. Steven Kossak; Edith Whitney Watts (২০০১)। The Art of South and Southeast Asia: A Resource for Educators। Metropolitan Museum of Art। পৃষ্ঠা 30–31, 16, 25, 40–41, 74–78, 106–108। আইএসবিএন 978-0-87099-992-5 
  23. T. A. Gopinatha Rao (১৯৯৩)। Elements of Hindu iconography। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 73–115। আইএসবিএন 978-81-208-0878-2। ১১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৭ 
  24. James G. Lochtefeld (২০০২)। The Illustrated Encyclopedia of Hinduism। The Rosen Publishing Group। পৃষ্ঠা 137, 231 (Vol. 1), 624 (Vol. 2)। 
  25. Blurton, T. Richard (১৯৯৩)। Hindu Art (ইংরেজি ভাষায়)। Harvard University Press। পৃষ্ঠা 114। আইএসবিএন 978-0-674-39189-5। ২৬ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  26. Fred S. Kleiner (২০০৭)। Gardner's Art through the Ages: Non-Western Perspectives। Cengage Learning। পৃষ্ঠা 22। আইএসবিএন 978-0495573678 
  27. "Vishnu | Hindu deity | Britannica"www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৫-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-১৭ 
  28. Stevenson 2000, পৃ. 57।
  29. See Apte, p. 485, for a definition of Trimurti as 'the unified form' of Brahmā, Viṣṇu and Śiva, as well as the use of phrase "Hindu triad."
  30. See: Jansen, p. 83, for the term "Great Trinity" in relation to the Trimurti.
  31. For quotation defining the Trimurti see: Matchett, Freda.
  32. For the Trimurti system having Brahma as the creator, Vishnu as the maintainer or preserver, and Shiva as the transformer or destroyer see Zimmer (1972) p. 124.
  33. "Shiva: The Auspicious One"ISKCON News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৮-০৩-০৬। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১২ 
  34. "Srimad Bhagavatam Canto 1 Chapter 2 Verse 23"। Vedabase.net। ২৩ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-৩০ 
  35. ঋগ্বেদ সংহিতা (রমেশচন্দ্র দত্ত), প্রথম মণ্ডল, ঋগ্বেদ ১৫৪ সুক্ত, ১ম ঋক্।
  36. ঋগ্বেদ সংহিতা (রমেশচন্দ্র দত্ত), প্রথম মণ্ডল, ১৬৪ সুক্ত, ঋক্ ছত্রিশ।
  37. ঋগ্বেদ সংহিতা (রমেশচন্দ্র দত্ত), প্রথম মণ্ডল, ১৬৪ সুক্ত, ঋক্ সাঁইত্রিশ।
  38. ঋগ্বেদ সংহিতা (রমেশচন্দ্র দত্ত), প্রথম মণ্ডল, ১৬৪ সুক্ত, ঋক্ ছেচল্লিশ।
  39. "The Mahabharata, Book 12: Santi Parva: Section CCCXL"sacred-texts.com। ২০ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১২ 
  40. J. L. Shastri, G. P. Bhatt (১৯৯৮-০১-০১)। Agni Purana Unabridged English Motilal (vol 1.)। পৃষ্ঠা 1–38। 
  41. "CHAPTER THREE"vedabase.io (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-৩১ 
  42. "CHAPTER SEVEN"vedabase.io (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-৩১ 
  43. N.A. (১৯৫৭)। BRAHMA PURANA PART. 4। MOTILAL BANARSIDASS PUBLISHERS PVT. DELHI। পৃষ্ঠা 970 
  44. N.A. (১৯৫৭)। THE GARUDA-PURANA PART. 1। MOTILAL BANARSIDASS PUBLISHERS PVT. DELHI। পৃষ্ঠা 1–6। 
  45. N.A (১৯৫৭)। THE GARUDA-PURANA PART. 3। MOTILAL BANARSIDASS PUBLISHERS PVT. LTD, DELHI। 
  46. J.L.Shastri (১৯৫১)। Linga Purana – English Translation – Part 2 of 2। পৃষ্ঠা 774 
  47. Basu, B. D. (১৯১৬)। The Matsya Puranam। পৃষ্ঠা 137–138। 
  48. N.A (১৯৫২)। The Narada-Purana Part. 4। MOTILAL BANARSIDASS PUBLISHERS PVT. LTD, DELHI। পৃষ্ঠা 1486 
  49. Jacobsen, Knut A. (২০০৮)। Kapila, Founder of Sāṃkhya and Avatāra of Viṣṇu: With a Translation of KapilāsurisaṃvādaMunshiram Manoharlal। পৃষ্ঠা 9–25। আইএসবিএন 978-81-215-1194-0 
  50. N.A (১৯৫২)। THE PADMA-PURANA PART. 7। MOTILAL BANARSIDASS PUBLISHERS PVT. LTD, DELHI। 
  51. N.A (১৯৫৬)। THE PADMA-PURANA PART. 9। MOTILAL BANARSIDASS PUBLISHERS PVT. LTD, DELHI। 
  52. J.L.Shastri (১৯৫০)। Siva Purana – English Translation – Part 4 of 4 
  53. N.A (১৯৫১)। THE SKANDA-PURANA PART. 7। MOTILAL BANARSIDASS PUBLISHERS PVT. LTD, DELHI। পৃষ্ঠা 285–288। 
  54. N.A. (১৯৫৭)। THE SKANDA-PURANA PART.15। MOTILAL BANARSIDASS PUBLISHERS PVT. DELHI। 
  55. N.A (১৯৬০)। THE VARAHA PURANA PART. 1। MOTILAL BANARSIDASS, DELHI। পৃষ্ঠা 13 
  56. N.A (১৯৬০)। THE VARAHA PURANA PART. 2। MOTILAL BANARSIDASS, DELHI। পৃষ্ঠা 652 
  57. গরুড় পুরাণ (১।৮৬।১০,১১)
  58. B-Gita 8.17 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে "And finally in Kal-yuga (the yuga we have now been experiencing over the past 5,000 years) there is an abundance of strife, ignorance, irreligion and vice, true virtue being practically nonexistent, and this yuga lasts 432,000 years. In Kali-yuga vice increases to such a point that at the termination of the yuga the Supreme Lord Himself appears as the Kalki avatara"
  59. Subrahmanyam, S. V. (১৯১১)। The Garuda Purana। পৃষ্ঠা 62 
  60. "The Garuda Purana: Chapter VIII. An Account of the Gifts for the Dying"sacred-texts.com। ২০ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-৩১ 
  61. "Devotion to Mal (Mayon)". University of Cumbria, Division of Religion and Philosophy. Retrieved 10 May 2019.
  62. Sykes, Egerton (4 February 2014). Who's who in non-classical mythology. Kendall, Alan, 1939- (2nd ed.). London. ISBN 9781136414442. OCLC 872991268.
  63. Krishna, Nanditha (2000). Balaji-Venkateshwara, Lord of Tirumala-Tirupati: An Introduction. Vakils, Feffer, and Simons. p. 56. ISBN 978-81-87111-46-7
  64. Ayyar, P. V. Jagadisa (1982). South Indian Shrines: Illustrated. Asian Educational Services. p. 453. ISBN 978-81-206-0151-2.
  65. http://bn.banglapedia.org/index.php?title=বিষ্ণু

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]