বাৎস্যায়ন
বাৎস্যায়ন | |
---|---|
জাতীয়তা | ভারতীয় |
যুগ | গুপ্তযুগ |
মল্লনাগ বাৎস্যায়ন (ইংরেজি: Vātsyāyana) ছিলেন বেদজ্ঞ ভারতীয় দার্শনিক। ধারণা করা হয় তিনি গুপ্তযুগে চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতাব্দী ভারতে বর্তমান ছিলেন।[১][২] কামসূত্র ও গোতমের ন্যায়সূ্ত্র গ্রন্থের টীকা ন্যায়সূত্রভাষ্য-এর রচয়িতা রূপে তার নাম পাওয়া যায়। তবে সম্ভবত, বাৎস্যায়ন নামক কোনো একক ব্যক্তি এই দুই গ্রন্থ রচনা করেননি।
তার সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায় না। তার প্রকৃত নাম ছিল মল্লিনাগ বা মৃল্লান। বাৎস্যায়ন ছিল তার বংশনাম বা পদবি। নিজ গ্রন্থের শেষে তিনি যে আত্মপরিচয় দান করেছেন তা নিম্নরূপ:
“ | বাভ্রব্য ও অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থকারদের রচনা পড়িয়া তদনুসারে এবং তাঁহাদিগের দ্বারা প্রদত্ত অর্থবিধান পর্যালোচনা করিবার পর পবিত্র আদেশানুসারে জগতের কল্যাণার্থে বারাণসীর চতুষ্পাঠীর ছাত্র ও দেবসেবক বাৎস্যায়ন কর্তৃক এই সন্দর্ভটি রচিত হইয়াছে। ইহা আমাদিগের কামনাবাসনা চরিতার্থ করিবার পুস্তক নহে। যে ব্যক্তি এই বিজ্ঞান সম্পর্কে সম্যক অবহিত, যিনি নিজ ধর্ম, অর্থ ও কাম রক্ষা করিয়া এবং লোকাঁচার মানিয়া চলেন, কেবল তিনিই তাঁর ইন্দ্রিয় জয়ে সক্ষম। সংক্ষেপে বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী ব্যক্তি ধর্ম ও অর্থের অধিকারী হইলে কামেরও অধিকারী হইবেন। তজ্জন্য তাঁহাকে তাঁহার কামনা বাসনার ক্রীতদাসত্ব করিতে হইবে না। তিনি যাহাই করিবেন তাহাতেই সাফল্য পাইবেন। | ” |
বাৎস্যায়নের জীবন বা রচনার সঠিক সময়কাল নির্ধারণ করা অসম্ভব। সম্ভবত খ্রিষ্টীয় প্রথম থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে তিনি বিদ্যমান ছিলেন। তার রচনায় আছে, কুন্তলরাজ সাতকর্ণী সাতবাহন কামান্ধ হয়ে কর্তারি নামক অস্ত্রের সাহায্যে নিজ পত্নী মাল্যবতীকে হত্যা করেন। এই ঘটনা উল্লেখ করে বাৎস্যায়ন সর্বসাধারণকে সতর্ক করে দেখিয়ে দেন যে কামান্ধ হয়ে নারীকে আঘাত করার মতো প্রাচীন প্রথা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। এই কুন্তলরাজ খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে বিদ্যমান ছিলেন। অর্থাৎ, বাৎস্যায়নের সময়কাল প্রথম শতাব্দীর পরে। আবার বরাহমিহির রচিত বৃহৎসংহিতা গ্রন্থের অষ্টাদশ অধ্যায়টি কামকলা সংক্রান্ত। এর বিষয়বস্তু মূলত বাৎস্যায়নের গ্রন্থ থেকে গৃহীত। বরাহমিহিরের সময়কাল খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী। অর্থাৎ, বাৎস্যায়ন যেহেতু বরাহমিহিরের পূর্বে তার গ্রন্থ রচনা করেন সেই হেতু তিনি প্রথম থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে বিদ্যমান ছিলেন।
বাৎস্যায়ন ছিলেন কোনো ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের সন্তান। কেউ কেউ মনে করেন তার বাল্যকাল কেটেছিল এক বেশ্যালয়ে যেখানে তার প্রিয় মাসি কাজ করতেন। এইখান থেকেই তিনি কামকলা সংক্রান্ত প্রথম জ্ঞান লাভ করেছিলেন।[৩]
বাৎস্যায়নের দেশ ও কাল
[সম্পাদনা]বাৎস্যায়নের কামসূত্র পড়লে বোঝা যায়, ঐ রূপ কাম বিলাস সম্পন্ন পুরুষ ও নারী দের যুগে তার আবির্ভাব হয়েছিল। কোথায় এবং কোন দেশে তিনি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তার ঐতিহাসিক বৃত্তান্ত বিশেষ পাওয়া যায় না। তবে মনে হয়, তিনি গুপ্ত সম্রাটদের সময়েই আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই গুপ্ত সম্রাটদের সময়েই মহাকবি কালিদাস, জ্যোতির্বিদ বরাহ মিহির ইত্যাদি মনীষা সম্পন্ন ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাৎস্যায়নের সাহিত্যের মতো তাদের সাহিত্যে ও অনেক অধুনা সমাজ বিরুদ্ধ ও তথা কথিত বর্তমান অশ্লীল আখ্যা বিশিষ্ট কবিতা ও লেখা দেখতে পাওয়া যায়। নাট্য লেখক শূদ্রক রাজা ও ঐসময়ে তার মৃচ্ছকটিক নামে সংস্কৃত নাটক লেখেন। তবে অনেকে বলেন বাৎস্যায়ন খ্রিষ্ট পূর্ব যুগে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন খ্রিষ্ট জন্মের পরবর্তী যুগে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন দাক্ষিণাত্য দেশে। এ বিষয়ে অনেক মতানৈক্য আছে। তবে আমরা একথা অনেকটা বিশ্বাস করি যে মহর্ষি বাৎস্যায়ন গুপ্ত রাজাদিগের সময়েই জন্মগ্রহণ করেছিলেণ। বহুদেশ-বিদেশ ঘুরে যৌন ক্রিয়ার বিভিন্ন প্রচলন দেখে জ্ঞান লাভ করে কামসূত্র নামে এইপুস্তক টি রচনা করেন। তার পুস্তক পড়লে বুঝতে পারা যায় যে, তিনি যখন জীবন যাপন করে ছিলেন, সেই সময় ভারতের অধিকাংশ লোক গীত বাদ্য ও নানা কামশাস্ত্রে ব্যুৎপন্ন ছিলেন।[৪]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ "Ascetic of Desire, Sudhir Kakar, Book - Barnes & Noble"। ১২ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০০৯।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৯ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- গুটেনবের্গ প্রকল্পে বাৎস্যায়ন-এর সাহিত্যকর্ম ও রচনাবলী (ইংরেজি)
- কর্তৃক কাজ বা সম্পর্কে তথ্য বাৎস্যায়ন ইন্টারনেট আর্কাইভে
- লিব্রিভক্সের পাবলিক ডোমেইন অডিওবুকসে বাৎস্যায়ন
- Vatsyayana Kamasutra - Complete translation in english
- Original introduction to Lars Martin Fosse's translation of the Kamasutra
ভারতীয় দার্শনিক বিষয়ক এই জীবনীটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |