বিষয়বস্তুতে চলুন

বলকান অঞ্চল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বলকান অঞ্চলের বর্তমান রাজনৈতিক মানচিত্র। যে দেশগুলিকে বলকানের মূল অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়, সেগুলি সবুজ রঙে এবং যেগুলিকে কখনো কখনো বলকানের অংশ মনে করা হয়, সেগুলি হালকা সবুজে চিহ্নিত।

বলকান অঞ্চল (ইংরেজি: The Balkans) বলতে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি ঐতিহাসিক অঞ্চলকে বোঝায়। এর পূর্বে কৃষ্ণ সাগর, পশ্চিমে অ্যাড্রিয়াটিক সাগর, দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর। দানিউব, সাভা ও কুপা নদীগুলি অঞ্চলটির উত্তর সীমানা নির্ধারণ করেছে। বুলগেরিয়া থেকে পূর্ব সার্বিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বলকান পর্বতমালার নামে অঞ্চলটির নাম এসেছে। বলকান অঞ্চলের আয়তন প্রায় ৫,৫০,০০০ বর্গকিলোমিটার। এ অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি লোকের বাস।

ঐতিহাসিকভাবে বলকান ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইউরোপীয় অংশটি।

নিচের দেশগুলিকে বলকান অঞ্চলের অন্তর্গত বলে মনে করা হয়:

ব্যুত্পত্তি

[সম্পাদনা]

"বলকান" শব্দটি অটোমান তুর্কীর বালকানের বনাবৃত পাহাড়ের একটি শৃঙ্খল থেকে এসেছে;[][] এই শব্দের সম্পর্কিত কিছু শব্দও তুর্কি ভাষায় পাওয়া যায়।[] তুর্কী শব্দটির উৎপত্তি অস্পষ্ট; এটি সম্পর্কিত হতে পারে ফার্সি শব্দ বালক যার অর্থ "কাদা" এবং তুর্কি উপসর্গটি একটি, তুষারগোলক বনকে উল্লেখ করে [] বা ফার্সি শব্দ বালা-খানা-এর আর্থ হল বড় উচ্চ বাড়ী[][]

ঐতিহাসিক নাম

[সম্পাদনা]

শাস্ত্রীয় প্রাচীনত্ব এবং প্রথম দিকের মধ্যযুগ

[সম্পাদনা]

মধ্যযুগের মাঝামাঝি সময়ে প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে বলকান পর্বতমালাকে স্থানীয় থ্রিসিয়ান[] নামে নামকরণ করা হয় হেমাস[] গ্রিক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, থ্রিসিয়ান রাজা হেমাসকে জিউসের দ্বারা একটি পাহাড়ে রূপান্তরিত করা হয় এবং তার নামে রাখা হয়েছে পাহাড়ের নাম। এছাড়াও একটি বিপরীত নাম এই পাহাড়ের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। ডি. ডিচভ মনে করেন যে হেমাস (Αἷμος) একটি থ্রিসিয়ান শব্দ 'সাইমন,' পর্বত 'থেকে উদ্ভূত হয়েছে।[] তৃতীয় সম্ভাবনা হল "হেমাস" (Αἵμος) গ্রিক শব্দ "হেমা" (αἷμα) থেকে এসেছে যার অর্থ 'রক্ত'। কল্পকাহীনিতে বলা হয় এই নাম করণ হল জিউস এবং দৈত্য/টাইটান টাইফনের মধ্যে একটি যুদ্ধ সম্পর্কিত। জিউস একটি বজ্রধ্বনি বোল্ট দ্বারা ঝলসে টাইফনকে আহত করে এবং টাইফনের রক্ত ঝরে পরে পর্বতমালার উপর যা থেকে তারা পাহাড়ের নাম পেয়েছে।[১০]

সংজ্ঞা এবং সীমানা

[সম্পাদনা]

বলকান উপদ্বীপ

[সম্পাদনা]
সোকা- ভিপাভা - ক্রকা - সাভা - দানিউব নদী দ্বারা বলাকান উপদ্বীপের সীমানা সংজ্ঞায়িত।

বলকান উপদ্বীপের পশ্চিম দিকে অ্যাড্রিয়াটিক সাগর, ভূমধ্যসাগর (আইওনীয় এবং ইজেন সমুদ্রসীমা সহ) এবং দক্ষিণে মার্মারা সাগর এবং পূর্ব দিকের কৃষ্ণ সাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর উত্তর সীমানা প্রায়ই দানিউব, সাভা এবং কুফা নদী দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।[১১][১২] বলকান উপদ্বীপ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪,৭০,০০০ বর্গ কিলোমিটারের (১,৮১,০০০ বর্গ মাইল) (স্পেনের চেয়ে আয়তনে সামান্য কম) একটি মিলিত এলাকা। এই অঞ্চলি সারা বিশ্বের কাছে কম বেশি দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ হিসাবে পরিচিত।[১৩][১৪][১৫]

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্যন্ত ইথারিয়া এবং ডালম্যাটিয়ান এলাকার কিছু অংশ ইতালির মধ্যে (যেমন জারা, আজকের জারদার) অন্তর্ভুক্ত ছিল, এই অন্তর্ভুক্ত এলাকাই বলকান উপদ্বীপের সাধারণ সংজ্ঞা। ইতালির দ্বার অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলটি বর্তমানে বলকান উপদ্বীপের ত্রিয়েস্তের চারপাশে কেবল ছোট একটি এলাকা হিসাবে দেখা যায়। যাইহোক, ত্রিপেন ও ইশিরিয়া অঞ্চল সাধারণত বলকানের অংশবিশেষ হিসাবে ইতালীয় ভূগোলবিদদের দ্বারা বিবেচনা করা হয় না, বলকান অঞ্চল তাদের সংজ্ঞা অনুসারে পশ্চিম দিকে কুফা নদী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা হয়।[১৬]

বলকানস

[সম্পাদনা]
উপদ্বীপের সবচেয়ে বিস্তৃত সংজ্ঞা হল- অঞ্চলটির তিন দিক সমুদ্র দ্বারা চিহ্নিত এবং উত্তর-পশ্চিমদিক একটি সীমা রেখা (নদী) দ্বারা চিহ্নিত।

উপদ্বীপের ভৌগোলিক সীমারেখার বিপরীতে "দ্য বলকানস" শব্দটি বলাকান অঞ্চল রচনাকারী রাজ্যের রাজনৈতিক সীমানা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। শব্দটি দ্বারা বলকান উপদ্বীপের বর্ণনা অথবা বৈপরীত্যের বাইরের অবস্থিত ইতালির অংশ, যা সবসময় বলকানস থেকে বাদ দেওয়া হয় এবং সামগ্রিকতা হিসাবে সাধারণত পশ্চিম ইউরোপের অংশ হিসাবে গৃহীত হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Balkan"Encarta World English Dictionary। Microsoft Corporation। ৩১ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০০৮ 
  2. "balkan"Büyük Türkçe Sözlük (Turkish ভাষায়)। Türk Dil Kurumu। ২৫ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। Sarp ve ormanlık sıradağ 
  3. Oxford English Dictionary, 2013, s.v.
  4. Current Trends in Altaic Linguistics; European Balkan(s), Turkic bal(yk) and the Problem of Their Original Meanings, Marek Stachowski, Jagiellonian University, p. 618.
  5. Todorova, Maria N. (১৯৯৭)। Imagining the Balkans। New York: Oxford University Press, Inc.। পৃষ্ঠা 27। আইএসবিএন 9780195087512 
  6. Тодорова, Мария Николаева; Todorova, Marii͡a Nikolaeva (১৯৯৭)। Imagining the Balkans (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। আইএসবিএন 9780195087512 
  7. "Bulgaria"Hemus – a Thracian name। Indiana University। পৃষ্ঠা 54। 
  8. Balkan Studies। ১৯৮৬। 
  9. Decev, D (১৯৮৬)। Balkan Studies। University of Michigan। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৫ 
  10. "Gods and Heroes of the Greeks: The Library of Apollodorus"Google Books। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  11. Jelavich 1983a, পৃ. 1।
  12. "britannica.com"Encyclopædia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  13. Hajdú, Zoltán (২০০৭)। Southeast-Europe: State Borders, Cross-border Relations, Spatial StructuresPécs, Hungary: Hungarian Academy of Sciencesআইএসবিএন 978-963-9052-65-9। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১৫ 
  14. Lampe, John R. (২০১৪)। Balkans Into Southeastern Europe, 1914–2014: A Century of War and TransitionLondon, United Kingdom: Palgrave Macmillanআইএসবিএন 978-1-137-01907-3। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  15. Švob-Ðokic, Nada, সম্পাদক (২০০১)। Redefining Cultural Identities: Southeastern Europe (পিডিএফ)Zagreb, Croatia: National and University Library in Zagrebআইএসবিএন 953-6096-22-6। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১৫ 
  16. Istituto Geografico De Agostini, L'Enciclopedia Geografica – Vol.I – Italia, 2004, Ed. De Agostini p.78

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]