ফোর্ট উইলিয়াম, কলকাতা
ফোর্ট উইলিয়াম | |
---|---|
কলকাতা, ভারত | |
ধরন | দুর্গ, সেনানিবাস ও সুরক্ষিত সামরিক সদর |
ভবন/স্থাপনা/ক্ষেত্রের তথ্য | |
নিয়ন্ত্রক | ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, সিরাজদ্দৌলা, ভারতীয় সেনা |
ভবন/স্থাপনা/ক্ষেত্রের ইতিহাস | |
নির্মিত | ১৬৯৬ |
ব্যবহারকাল | ১৭৮১-বর্তমান |
যুদ্ধ | পলাশীর যুদ্ধ |
রক্ষীসেনা তথ্য | |
রক্ষীসেনা | পূর্ব কমান্ড |
ফোর্ট উইলিয়াম কলকাতা শহরে অবস্থিত একটি দুর্গ। প্রাচ্যে ব্রিটিশরাজের সামরিক শক্তির সবচেয়ে বড় নিদর্শন। অদ্যাবধি পূর্বভারতে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর দুর্গ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। বাস্তবে দুটি ফোর্ট উইলিয়ম ছিল: একটি পুরাতন, অন্যটি নতুন। পুরানো দুর্গটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সূচনাকালের সৃষ্টি। দুর্গপ্রাচীরের দক্ষিণ-পূর্বাংশ এবং তৎসংলগ্ন দেয়ালের নির্মাণকাজ শুরু করেন স্যার চার্লস আইয়ার। তার উত্তরসূরি জন বিয়ার্ড ১৭০১ সালে উত্তর-পূর্বাংশের দুর্গপ্রাচীর সংযোজন করেন। ১৭০২ সালে তিনি দুর্গের মধ্যভাগে ‘ফ্যাক্টরি’ (বাণিজ্যকুঠি) বা ‘গভর্নমেন্ট হাউস’ নির্মাণ শুরু করেন এবং ১৭০৬ সালে তা সম্পন্ন হয়। অতঃপর ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের সম্মানে দুর্গটির নামকরণ করা হয় ফোর্ট উইলিয়ম।[১] এটি কলকাতার উল্লেখযোগ্য স্থান।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]কলকাতার ইতিহাস |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
বর্তমানে যেখানে জেনারেল পোস্ট অফিস, ইস্টার্ন রেলওয়ে অফিস, কাস্টম হাউস এবং নিকটবর্তী সরকারি অফিসসমূহ গড়ে উঠেছে, সেখানেই ছিল দুর্গের প্রকৃত অবস্থান। কোম্পানির নিরাপত্তা বিধানের জন্য দুর্গটি তৈরি হলেও শুরু থেকেই এর কাঠামোটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। ১৭১৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স এই মন্তব্য করেন যে, ভবনসমূহের সুউচ্চ শৃঙ্গের কারণে নদীতীর থেকে দুর্গটিকে জমকাল দেখালেও প্রকৃত অর্থে এটি শক্তিশালী নয়। ১৭৫৬ সালে ফোর্ট উইলিয়মের গভর্নর রজার ড্রেক যখন নওয়াব সিরাজউদ্দৌলা কে কলকাতা আক্রমণে প্ররোচিত করেন, তখনই দুর্গের কার্যকারিতার পরীক্ষা হয়ে যায়। নওয়াব কলকাতা দখল করে দুর্গে প্রবেশ করেন এবং ১৭৫৬ সালের ১৯ জুন গভর্নর ড্রেক এবং তার সৈন্য-সামন্তকে দুর্গ ত্যাগে বাধ্য করেন। এখান থেকেই পুরাতন ফোর্ট-এর ধ্বংসের শুরু। পলাশী-উত্তর যুগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার রাজনীতিতে ভাগ্য নিয়ন্তারূপে আবির্ভূত হয়। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোম্পানি তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রকাশ ঘটাতে পারে এমন একটি দুর্গের প্রয়োজন অনুভব করে। প্রথমদিকে পুরানো দুর্গটিকেই নতুন করে নির্মাণ ও এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে জোরদার করার কথা ভাবে কোম্পানি। কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার জেনারেল বেনজামিন রবিন্স এবং তার মৃত্যুর পর কর্ণেল ফেÌডারিক স্কট এ নবায়ন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। কিন্তু পলাশী বিপ্লব সবকিছুকে পালটে দেয়। ইংরেজদের বণিক-সুলভ ভিক্ষাবৃত্তির দিন তখন নেই। ক্লাইভ সুপারিশ করেন বর্তমান অবস্থানে একটি নতুন দুর্গ নির্মাণ করা হোক। তদনুযায়ী ফোর্ট সেন্ট ডেভিড-এর [১] প্রকৌশলী জন ব্রহিয়ের নির্মাণকাজ তদারকি করতে কলকাতায় আসেন। ১৭৫৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কোম্পানির বাংলা কর্তৃপক্ষ মি. ব্রহিয়েরকে সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে বলেন। ব্রহিয়ের হিসাব করে দেখেন, দুর্গ নির্মাণে ব্যয় হবে ২১ থেকে ২২ লক্ষ টাকা। কোম্পানির পক্ষ থেকে উল্লিখিত পরিমাণ অর্থ অনুমোদিত হয় এবং ব্রহিয়ের-এর তদারকিতে নতুন দুর্গ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। অচিরে ব্রহিয়ের জালিয়াতির দায়ে গ্রেফতার হন। পরবর্তীকালে প্যারোলে [২] মুক্তি পেলেও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। এ বিপত্তি সত্ত্বেও নির্মাণকাজ এগিয়ে চলে। ১৭৬১ সালের গোড়ার দিকে বলা হয়, ‘প্রবেশপথ ছাড়া প্রায় পুরোটাই সম্পূর্ণ হয়েছে’। ১৭৮০ সাল নাগাদ দুর্গের অধিকাংশ কাজ শেষ হয়ে যায়। ওয়ারেন হেস্টিংস-এর সময় দুর্গটি ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠে। অবশ্য নতুন নতুন প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে আরও অনেক কাজে হাত দিতে হয়। প্রায় এক শতাব্দী পর ১৮৬০-এর দশকে দুর্গের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজে হাত দেওয়া হয় এবং তা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ অবধি চলতে থাকে। আধুনিক দুর্গ নির্মাণের স্বীকৃত নীতিমালার সংগে সংগতি রেখেই ফোর্ট উইলিয়ম নির্মিত হয়। এটি একটি অষ্টভুজাকৃতি দুর্গ। এর পাঁচ দিক স্থলভাগের দিকে এবং তিন দিক নদীর দিকে প্রসারিত। জলকপাটের সাহায্যে নদী থেকে আনা জলে পরিপূর্ণ একটি পরিখা দুর্গটিকে বেষ্টন করে আছে। দুর্গে প্রবেশের জন্য সাতটি প্রবেশদ্বার ছিল। গোড়ার দিকে নির্মিত ব্যারাকগুলি ছিল একতলা বিশিষ্ট। সেন্ট পিটারকে উৎসর্গ করা একটি গির্জা ছিল দুর্গের অভ্যন্তরে। শুরুতে সৈন্যদেরকে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো তার মধ্যে ছিল পর্যাপ্ত পানীয় জল ও যথাযথ পয়ঃনিষ্পাশন ব্যবস্থার অভাব এবং নানাধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব। অবশ্য ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে নতুন ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। তার সঙ্গে থাকে পর্যাপ্ত পানীয় জলের সরবরাহ এবং চিকিৎসা সুবিধা। দুর্গের নির্মাণ কাজ যখন সম্পূর্ণ হয়, তখন পূর্বভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সর্বোচ্চ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ফলে নবনির্মিত ফোর্ট উইলিয়ম সক্রিয় দুর্গের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। বস্তুতপক্ষে, ফোর্ট উইলিয়ম কখনও অবরোধের মুখোমুখি হয়নি; ফোর্ট উইলিয়মের প্রাচীরশীর্ষ থেকে কোন কামান বা বন্দুক শত্রুর উদ্দেশ্যে গোলাবর্ষণ করে নি। ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের গুরুগম্ভীর দর্শনীয় নিদর্শন হিসেবেই ফোর্ট উইলিয়মের অস্তিত্ব ছিল।
কাঠামো
[সম্পাদনা]দুর্গটি 5 কিমি 2 (1.9 বর্গ মাইল) আয়তনের একটি অনিয়মিত অষ্টভুজ আকারে ইট ও মর্টার দিয়ে নির্মিত। এর পাঁচটি দিক স্থলমুখী এবং তিনটি হুগলি নদীর দিকে। নকশাটি একটি স্টার ফোর্টের মতো, যা কামানের গুলি চালানোর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য উপযুক্ত, এবং বিস্ফোরক শেল আবির্ভাবের আগে থেকেই। 9 মিটার (30 ফুট) গভীর এবং 15 মিটার (49 ফুট) প্রশস্ত একটি শুকনো পরিখা দুর্গটিকে ঘিরে রেখেছে। পরিখা প্লাবিত হতে পারে তবে এটি এমন একটি এলাকা হিসাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেখানে দেয়ালে পৌঁছানো আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে এনফিলেড (বা ফ্ল্যাঙ্কিং) আগুন ব্যবহার করা যায়। ছয়টি গেট রয়েছে: চৌরঙ্গী, পলাশী, কলকাতা, ওয়াটার গেট, সেন্ট জর্জেস এবং ট্রেজারি গেট। কেরালার থ্যালাসেরির মতো জায়গায় একই রকম দুর্গ রয়েছে।
গ্যালারি
[সম্পাদনা]-
কলকাতার মানচিত্রে ফোর্ট উইলিয়াম, ১৮৪৪
-
সেন্ট পিটার চার্চ, ফোর্ট উইলিয়াম
-
সিমাফোর টাওয়ার, ফোর্ট উইলিয়াম
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Dutta, Krishna (২০০৩)। Calcutta: A Cultural and Literary History (ইংরেজি ভাষায়)। Signal Books। পৃষ্ঠা ৭১। আইএসবিএন 978-1-902669-59-5।