দিলীপকুমার গুপ্ত
দিলীপকুমার গুপ্ত | |
---|---|
জন্ম | ঢাকা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ) | এপ্রিল ১৯১৮
মৃত্যু | ৭ জুন ১৯৭৭ কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত | (বয়স ৫৯)
ভাষা | বাংলা |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | সেন্ট জেভিয়ার'স কলেজ, কলকাতা |
দাম্পত্যসঙ্গী | নন্দিনী গুপ্ত |
সন্তান | ইন্দ্রাণী দত্ত (কন্যা) |
দিলীপকুমার গুপ্ত (এপ্রিল ১৯১৮ - ৭ জুন ১৯৭৭) ছিলেন বাংলার বিজ্ঞাপন জগতে একজন বুদ্ধিদীপ্ত, সৃজনশীল ও শিল্পসম্মত অলংকরণের এবং বাংলা প্রকাশনশিল্পে আধুনিকতার প্রবর্তক। [১] বিজ্ঞাপন ও প্রকাশনার জগতে তিনি ডি.কে নামে পরিচিত ছিলেন। [২]
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]দিলীপকুমার গুপ্তর জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ঢাকায়। তার ডাকনাম ছিল খোকন। বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে কলকাতায় আসেন উচ্চ শিক্ষার্থে। কলকাতার ভবানীপুরের রামময় রোডে থেকে পড়াশোনা করছিলেন। তিনি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ও বুদ্ধদেব বসুর ছাত্র ছিলেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন। ছাত্রাবস্থায় এক বন্ধুর সঙ্গে প্রকাশনার কাজ করতেন এবং এক সিনেমা পত্রিকার সম্পাদনার কাজও করতেন। [২]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিজ্ঞাপন কোম্পানি ডি জে কিমারে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। সে সময়ে ডি জে কিমারে অ্যাকাউন্টস অফিসার ছিলেন নীলিমা গুহঠাকুরতা। বিজ্ঞাপন জগতে কাজ করার সুবাদে দিলীপকুমারের প্রকাশনা সংস্থা গড়ার আগ্রহ হয়। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে নীলিমা গুহঠাকুরতা (১৯০৩ - ১৯৮২) তার কন্যা নন্দিনীর সঙ্গে দিলীপকুমারের বিবাহ দেন এবং জামাতার ইচ্ছানুসারে তার ১০/২, এলগিন রোডের বাড়িতে বাংলা প্রকাশনা সংস্থা সিগনেট প্রেস অ্যান্ড পাবলিশার্সের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে নীলিমা গুহঠাকুরতার আনুকূল্যে ও প্রশাসনিক দায়িত্বে।[২] এই প্রেসের মাধ্যমে ডি.কে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করে আন্দোলনের সূচনা করেন এবং সেই সঙ্গে বাংলা প্রকাশনা শিল্পে মান ও উৎকর্ষের পথপ্রদর্শক হন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিজ্ঞাপন ও গ্রাফিক আর্ট শিখতে ইউরোপ যান। কিন্তু পঞ্চাশের দশকে ডি জে কিমার বন্ধ হলে, ডি কে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে বাটা সু কোম্পানিতে বিজ্ঞাপন ম্যানেজার হন এবং ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির পাবলিসিটি ম্যানেজার হন। কিন্তু তার প্রকাশনা সংস্থা সিগনেট প্রেস ছিল সবচেয়ে বড় কীর্তি।[১] জওহরলাল নেহরুর ভগিনী বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত ছিলেন নীলিমা গুহঠাকুরতা'র বান্ধবী। তার সুপারিশে সিগনেট প্রেস সত্যজিৎ রায়ের আঁকা প্রচ্ছদসহ দ্য ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া প্রকাশ করে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে। তিনি নিজেও প্রকাশ করতে দেন তাঁর প্রিজন ডে'জ। বাংলার খ্যাতনামা লেখকদের সেরা রচনা সম্ভার প্রকাশ করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে ডি.কের প্রকাশনা সংস্থাটি। [২] সিগনেট প্রেস সেসময় সাহিত্যের খবর সংবলিত "টুকরো কথা" বিনামূল্যে পাঠকদের বিলি করত। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম কবি সম্মেলনের আয়োজন করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন থেকে কবিপক্ষ কথাটির উদ্ভাবনা ছিল তারই। আর সেই কবিপক্ষে সিগনেট প্রেস প্রকাশ করত কবিতার বই। "সারস্বত" পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি এবং বহু বছর ধরে "চতুরঙ্গ" পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। বাংলা লেখার ক্ষেত্রে তার দক্ষতা ছিল। পথের পাঁচালীর শিশু সংস্করণ "আম আঁটির ভেঁপু" তার লেখা। কৃষ্ণা নেহেরু হাতিসিং-এর “উইথ নো রিগ্রেটস অ্যান অটোবায়োগ্রাফি” বাংলায় অনুবাদ করেন "কোন খেদ নাই" নামে। বিজ্ঞাপন জগতে তিনি প্রবাদতুল্য বাক্য ব্যবহার করতেন।
জীবনাবসান
[সম্পাদনা]কঠিন পরিশ্রমে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে দিলীপকুমারের শরীর ভেঙ্গে পড়েছিল। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুন কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ২৮৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ ক খ গ ঘ "সিগনেটের ম্যাডাম"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২৮।