বিষয়বস্তুতে চলুন

গেজ বোসন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মৌলিক কণার প্রমিত মডেল যেখানে লাল রঙের চতুর্থ কলামে রয়েছে গেজ বোসন

কণা পদার্থবিজ্ঞানে, গেজ বোসন হলো একটি বলের বাহক, একটি বোসনিক কণা যা মৌলিক মিথস্ক্রিয়ার বাহক, সাধারণ ভাষায় বল।[][] মৌলিক কণা, যাদের মিথস্ক্রিয়া গেজ তত্ত্বের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়, পরষ্পর গেজ বোসন-সাধারণত ভার্চুয়াল কণা হিসেবে, বিনিময়ের মাধ্যমে মিথস্ক্রিয়া সঙ্ঘটিত হয়।

সকল জ্ঞাত গেজ বোসনের স্পিন ১। কাজেই, সকল গেজ বোসন হলো ভেক্টর বোসন

অন্যন্য বোসন হতে গেজ বোসন ভিন্ন; প্রথমত, মৌলিক স্কেলার বোসন (হিগস বোসন); দ্বিতীয়ত, মেসন, যা কোয়ার্কের মাধ্যমে গঠিত যৌগিক বোসন; তৃতীয়ত, বৃহত্তর যৌগিক, বলের বাহক নয় এমন বোসন, যেমন কিছু নির্দিষ্ট পরমাণু

প্রমিত মডেলে গেজ বোসন

[সম্পাদনা]

কণা পদার্থবিদ্যার প্রমিত মডেলে চার ধরনের গেজ বোসন রয়েছে:

ফোটন, যা তড়িৎ-চৌম্বকীয় মিথস্ক্রিয়ার বাহক; ডব্লিউ ও জেড বোসন, যা দুর্বল মিথষ্ক্রিয়ার বাহক; এবং গ্লুয়ন, যা সবল মিথষ্ক্রিয়ার বাহক।[]

পৃথক গ্লুয়ন হয় না কেননা এরা রঙে-আহিত এবং রং বন্ধনের বিষয়।

গেজ বোসনের সংখ্যাধিক্য

[সম্পাদনা]

একটি কোয়ান্টাইজ্ড গেজ তত্ত্বে, গেজ বোসন হলো গেজ ক্ষেত্রের কোয়ান্টা। কাজেই, যেখানেই গেজ ক্ষেত্রের উৎপাদক থাকে সেখানেই সমান সংখ্যায় গেজ বোসন বিদ্যমান। কোয়ান্টাম তড়িৎ-গতিবিজ্ঞানে গেজ গোষ্ঠী হলো ইউ(১); এই সহজ ঘটনায় কেবল একটি গেজ বোসন বিদ্যমান আর তা হলো ফোটনকোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিক্সে, কিছু অধিক পরিমাণে জটিল গোষ্ঠী এসইউ(৩)-এ আটটি উৎপাদক এবং পাল্টা আটটি গেজ বোসন বিদ্যমান। তিনটি ডব্লিউ ও জেড বোসনের জন্য জিডব্লিউএস তত্ত্বের এসইউ(২) এর তিনটি উৎপাদক বিদ্যমান।

বৃহদায়তন গেজ বোসন

[সম্পাদনা]

গেজ নিত্যতা ঘটিত প্রায়গিক কারণে, গেজ বোসন গুলিকে গাণিতিকভাবে ভরহীন কণার ক্ষেত্র সমীকরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়। কাজেই, সরল তাত্ত্বিক শ্রেণিতে, সকল গেজ বোসন ভরহীন এবং তাদের দ্বারা বর্ণিত বল দূরপ্রসারী হওয়া আবশ্যক। তত্ত্ব এবং পরিক্ষা লব্ধ প্রমাণের মাঝে মত-বিরোধ রয়েছে কেননা সবল ও দুর্বল উভয় ধরনের মিথষ্ক্রিয়াই স্বল্পপ্রসারী আর এই কারণে তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে আরো অন্তর্দৃষ্টি প্রয়োজন।

প্রমিত মডেল অনুযায়ী, ডব্লিউ ও জেড বোসন হিগস পদ্ধতিতে ভর অর্জন করে। হিগস পদ্ধতিতে, সমন্বিত ইলেক্ট্রো-উইক মিথষ্ক্রিয়ার চারটি গেজ বোসন (SU(২)×U(১) প্রতিসাম্যের) হিগস ক্ষেত্রে একত্রিত হয়। এর মিথষ্ক্রিয়া বিভবের আকৃতির কারণে এই ক্ষেত্র স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিসাম্য ভাঙনের মধ্য দিয়ে যায়। ফলস্বরূপ, এই মহাবিশ্ব অশ্যূন্য হিগস ভিইভি কর্তৃক আশ্লিষ্ট। এই ভিইভি তিনটি ইলেক্ট্রো-উইক গেজ বোসনকে (ডব্লিউ ও জেড বোসন এবং গ্লুয়ন) একত্রিত করে এবং তাদের ভর দান করে। অবশিষ্ট গেজ বোসন (ফোটন) থাকে ভরহীন। তত্ত্বটি আরেকটা স্কেলার হিগস বোসনের অস্তিত্বের বর্ণনা দেয় যা এ লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার-এর একটি পরিক্ষায় বিলোকিত হয়।[]

প্রমিত মডেল বহির্ভূত গেজ বোসন

[সম্পাদনা]

মূখ্য একীকরণ তত্ত্বগুলি

[সম্পাদনা]

জর্জি-গ্লাশো তত্ত্ব, এক্স ও ওয়াই বোসন নামক দুইটি অতিরিক্ত গেজ বোসনের কথা বলে। এই প্রকল্পিত এক্স ও ওয়ই বোসন কোয়ার্কলেপটনের মাঝের মিথস্ক্রীয়ার মধ্যস্থতা করে, অতএব ব্যারিয়ন সংখ্যার নিত্যতা লঙ্ঘন করে এবং প্রোটন ক্ষয় ঘটায়। এধরনের বোসন প্রতিসাম্য ভাঙ্গনের কারণে ডব্লিউ ও জেড বোসনের চেয়েও বৃহদাকার হতে পারে। যদিও, সুপার-কামিয়কান্দে নিউট্রিনো আবিষ্কারকের মত উৎস হতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এক্স বা জেড বোসনের অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গ্র্যাভিটন

[সম্পাদনা]

হয়ত, চতূর্থ মৌলিক মিথস্ক্রিয়া, মহাকর্ষ বোসন কর্তৃক বাহিত হয় যা গ্র্যাভিটন নামে পরিচিত। এর অস্তিত্বের পরিক্ষামূলক প্রমাণের অভাব এবং গাণিতিক সামঞ্জস্যপূর্ণ কোয়ান্টাম মহাকর্ষ তত্ত্বের কারণে এটি এখনো অজানা যে এটি গেজ বোসন কিনা। সাধারণ আপেক্ষিকতায় গেজ তত্ত্ব গেজ নিত্যতার ভূমিকা একটি ভিন্ন প্রতিসাম্যতা কর্তৃক পালিত হয় যা ডিফেয়মরফিজম নিত্যতা হিসেবে পরিচিত।

ডব্লিউ' ও জেড' বোসন

[সম্পাদনা]

ডব্লিউ' ও জেড' বোসন হলো নতুন ধরনের প্রকল্পিত গেজ বোসন (প্রমিত মডেলের ডব্লিউ ও জেড বোসনের অনুরূপভানে নামকরণ করা)।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Gribbin, John (২০০০)। Q is for Quantum – An Encyclopedia of Particle Physicsবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Simon & Schuster। আইএসবিএন 0-684-85578-X 
  2. Clark, John, E.O. (২০০৪)। The Essential Dictionary of Science। Barnes & Noble। আইএসবিএন 0-7607-4616-8 
  3. Veltman, Martinus (২০০৩)। Facts and Mysteries in Elementary Particle Physicsবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। World Scientific। আইএসবিএন 981-238-149-X 
  4. "CERN and the Higgs boson"। CERN। ২৩ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৬