গুপ্ত সাম্রাজ্য
গুপ্ত সাম্রাজ্য | |||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
২৮০ খ্রিষ্টাব্দ–খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী | |||||||||||||||||||||||
সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের অধীনে গুপ্ত সাম্রাজ্য (৩৭৫-৪১৫ খ্রিষ্টাব্দ) | |||||||||||||||||||||||
অবস্থা | সাম্রাজ্য | ||||||||||||||||||||||
রাজধানী | পাটলিপুত্র উজ্জয়িনী অযোধ্যা[১][২] | ||||||||||||||||||||||
প্রচলিত ভাষা | সংস্কৃত (সাহিত্যিক এবং একাডেমিক), প্রাকৃত (আঞ্চলিক ভাষা) | ||||||||||||||||||||||
ধর্ম | |||||||||||||||||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||||||||||||||||
মহারাজাধিরাজ | |||||||||||||||||||||||
• আনু. 240-280 খ্রিস্টাব্দ | শ্রী গুপ্ত (প্রথম) | ||||||||||||||||||||||
• আনু. ২৮০-৩১৯ খ্রিস্টাব্দ | ঘটোৎকচ | ||||||||||||||||||||||
• আনু. 319-335 খ্রিস্টাব্দ | প্রথম চন্দ্রগুপ্ত | ||||||||||||||||||||||
• আনু. 335-375 খ্রিস্টাব্দ | সমুদ্রগুপ্ত | ||||||||||||||||||||||
• আনু. 375-415 খ্রিস্টাব্দ | দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত | ||||||||||||||||||||||
• আনু. ৪১৫-৪৫৫ খ্রিস্টাব্দ | প্রথম কুমারগুপ্ত | ||||||||||||||||||||||
• আনু. ৪৫৫-৪৬৭ খ্রিস্টাব্দ | স্কন্দগুপ্ত | ||||||||||||||||||||||
• আনু. ৫৪০-৫৫০ খ্রিস্টাব্দ | বিষ্ণুগুপ্ত (শেষ) | ||||||||||||||||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | প্রাচীন কাল | ||||||||||||||||||||||
• প্রতিষ্ঠা | ২৮০ খ্রিষ্টাব্দ | ||||||||||||||||||||||
• বিলুপ্ত | খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী | ||||||||||||||||||||||
আয়তন | |||||||||||||||||||||||
৪০০ আনুমানিক[৪] (শিখর এলাকার উচ্চ শেষ অনুমান) | ৩৫,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১৪,০০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||||||||||||||||
৪৪০ আনুমানিক[৫] (শিখর এলাকার নিম্ন প্রান্ত অনুমান) | ১৭,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৬,৬০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||||||||||||||||
মুদ্রা | দিনারা (স্বর্ণমুদ্রা), রূপক (রৌপ্য মুদ্রা), কার্শপনা (তাম্রমুদ্রা), কড়ি | ||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ |
গুপ্ত সাম্রাজ্য ৩২০ খ্রিস্টাব্দ – ৫৫০ খ্রিস্টাব্দ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
|
||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভারতের ইতিহাস |
---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ |
গুপ্ত সাম্রাজ্য (সংস্কৃত: गुप्त राजवंश, Gupta Rājavaṃśa) ছিল একটি প্রাচীন ভারতীয় সাম্রাজ্য। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় ৩২০ থেকে ৫৫০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে এই সাম্রাজ্য প্রসারিত ছিল।[৬] মহারাজ শ্রীগুপ্ত ধ্রুপদি সভ্যতা-র আদর্শে এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।[৭] গুপ্ত শাসকদের সময়/শাসনামলে ভারতে যে শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থাপিত হয়েছিল, তার ফলশ্রুতিতে দেশ বৈজ্ঞানিক ও শিল্পক্ষেত্রে বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করতে সক্ষম হয়। গুপ্তযুগকে বলা হয় ভারতের স্বর্ণযুগ।[৮] এই যুগ ছিল আবিষ্কার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাস্তুবিদ্যা, শিল্প, ন্যায়শাস্ত্র, সাহিত্য, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ধর্ম ও দর্শনের বিশেষ উৎকর্ষের যুগ; বর্তমান হিন্দু সংস্কৃতি মূলত এই যুগেরই ফসল।[৯] গুপ্ত যুুগের আমলে অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি যেমন কালিদাস, আর্যভট্ট, বরাহমিহির, বিষ্ণু শর্মা -এর অবির্ভাব হয়েছিলো। প্রথম চন্দ্রগুপ্ত, সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ সম্রাট। তার সাম্রাজ্য সীমা দক্ষিণ ভারতেও প্রসার লাভ করে ।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]প্রারম্ভিক শাসকরা
[সম্পাদনা]বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত রাজত্বের শুরুর তারিখ বিভিন্নভাবে উল্লেখ করেছেন। গুপ্ত , গুপ্ত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন গ. 240 -280 CE, এবং তার পুত্র ঘটোৎকচা দ্বারা উত্তরাধিকারী হন । 280 -319 CE, তারপর ঘটোৎকচের পুত্র, চন্দ্রগুপ্ত প্রথম , c. 319 -335 CE। "চে-লি-কি-টু", সপ্তম শতাব্দীর চীনা বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ইজিং দ্বারা উল্লিখিত একজন রাজার নাম, " শ্রী -গুপ্ত" ( IAST : শ্রীগুপ্ত), "শ্রী" সত্তার প্রতিলিপি বলে মনে করা হয়। একটি সম্মানজনক উপসর্গ।
এলাহাবাদ স্তম্ভের শিলালিপিতে , গুপ্ত এবং তার উত্তরসূরি ঘটোৎকচকে মহারাজা ("মহান রাজা") হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে , যখন পরবর্তী রাজা চন্দ্রগুপ্ত প্রথমকে মহারাজাধিরাজা ("মহারাজাদের রাজা") বলা হয়। পরবর্তী সময়ে, মহারাজা উপাধিটি সামন্ত শাসকদের দ্বারা ব্যবহার করা হয়েছিল, যার ফলে গুপ্ত এবং ঘটোৎকচ প্রজাপতি ছিলেন (সম্ভবত কুষাণ সাম্রাজ্যের )। যাইহোক, গুপ্ত-পূর্ব এবং গুপ্ত-উত্তর উভয় যুগেই মহারাজা উপাধি ব্যবহার করে সর্বোপরি সার্বভৌমদের বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে , তাই এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এতে কোন সন্দেহ নেই যে গুপ্ত ও ঘটোৎকচের মর্যাদা কম ছিল এবং তারা প্রথম চন্দ্রগুপ্তের চেয়ে কম শক্তিশালী ছিলেন।
চন্দ্রগুপ্ত প্রথম লিচ্ছাভি রাজকুমারী কুমারদেবীকে বিয়ে করেছিলেন , যা তাকে তার রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং আধিপত্য বিস্তার করতে সাহায্য করেছিল, তাকে সাম্রাজ্যিক উপাধি মহারাধিরাজ গ্রহণ করতে সক্ষম করেছিল । রাজবংশের সরকারী নথি অনুসারে, তার পুত্র সমুদ্রগুপ্ত তার স্থলাভিষিক্ত হন । যাইহোক, কচা নামে একজন গুপ্ত শাসকের জারি করা মুদ্রার আবিষ্কার এই বিষয়ে কিছু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে: একটি তত্ত্ব অনুসারে, সমুদ্রগুপ্তের অপর নাম ছিল কচা; আরেকটি সম্ভাবনা হল কাচা সিংহাসনের প্রতিদ্বন্দ্বী দাবিদার।
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত "বিক্রমাদিত্য"
[সম্পাদনা]গুপ্তের নথি অনুসারে, তাঁর পুত্রদের মধ্যে সমুদ্রগুপ্ত রাজকুমার দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তকে মনোনীত করেছিলেন, যিনি রানী দত্তদেবীর জন্ম , তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত, বিক্রমাদিত্য (সূর্যের বিজয়), 375 থেকে 415 সাল পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। তিনি কুন্তলা এবং নাগা বংশের কদম্ব রাজকন্যা ( নাগাকুলোত্পান্না ), কুবেরনাগাকে বিয়ে করেছিলেন। এই নাগা রাণীর তার কন্যা প্রভাবতীগুপ্ত দাক্ষিণাত্যের ভাকাটক শাসক দ্বিতীয় রুদ্রসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । তার পুত্র কুমারগুপ্ত প্রথম কর্ণাটক অঞ্চলের একজন কদম্ব রাজকুমারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। 409 সাল পর্যন্ত চলা অভিযানে মালওয়া , গুজরাট এবং সৌরাষ্ট্রের সাকা পশ্চিম ক্ষত্রপদের পরাজিত করে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত তার রাজ্য পশ্চিম দিকে প্রসারিত করেন। তার প্রধান প্রতিপক্ষ রুদ্রসিংহ তৃতীয় 395 সালে পরাজিত হন এবং তিনি বাংলার প্রধান শাসনকে চূর্ণ করেন। এটি উপকূল থেকে উপকূল পর্যন্ত তার নিয়ন্ত্রণ প্রসারিত করে, উজ্জয়িনে একটি দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করে এবং এটি সাম্রাজ্যের উচ্চ বিন্দু ছিল। কুন্তলার শিলালিপিগুলি ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের কুন্তলা অঞ্চলে চন্দ্রগুপ্তের শাসনের ইঙ্গিত দেয় । হুঞ্জার শিলালিপি থেকেও বোঝা যায় যে চন্দ্রগুপ্ত উত্তর-পশ্চিম ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং বলখ জয় করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন , যদিও কিছু পণ্ডিত গুপ্ত রাজার পরিচয় নিয়েও বিতর্ক করেছেন। চালুক্য শাসক ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য (আর. ১০৭৬ – ১১২৬ খ্রি.) চন্দ্রগুপ্তকে তার উপাধি দিয়ে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন "কেন রাজা বিক্রমাদিত্য ও নন্দের গৌরব আর বাধা হয়ে দাঁড়াবে? তিনি জোরে আদেশ দিয়ে তা বাতিল করেছিলেন ( যুগ), যার সাকার নাম রয়েছে, এবং সেই (যুগ) তৈরি করেছেন যার চালুক্য গণনা রয়েছে"।
যুদ্ধের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও, রাজত্বটি হিন্দু শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানের অত্যন্ত প্রভাবশালী শৈলীর জন্য বিশেষ করে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে স্মরণ করা হয়। হিন্দু শিল্পের কিছু চমৎকার কাজ যেমন দেওগড়ের দশাবতার মন্দিরের প্যানেল গুপ্ত শিল্পের মহিমাকে চিত্রিত করে। সর্বোপরি, এটি উপাদানগুলির সংশ্লেষণ যা গুপ্ত শিল্পকে এর স্বতন্ত্র স্বাদ দিয়েছে। এই সময়কালে, গুপ্তরা বৌদ্ধ ও জৈন সংস্কৃতির বিকাশেরও সমর্থক ছিল এবং এই কারণে, অ-হিন্দু গুপ্ত যুগের শিল্পেরও একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে । বিশেষ করে, গুপ্ত যুগের বৌদ্ধ শিল্প পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলে প্রভাবশালী ছিল। অনেক অগ্রগতি চীনা পণ্ডিত এবং ভ্রমণকারী ফ্যাক্সিয়ান তার ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন এবং পরে প্রকাশিত হয়েছিল।
গুপ্ত রাজবংশের শাসকগণ
[সম্পাদনা]প্রায় ৩২০ থেকে ৫৫০ অবধি,গুপ্ত বংশের প্রধান শাখা ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্য শাসন করেছিলেন। এই সাম্রাজ্য শ্রীগুপ্ত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শাসকগণ:
- শ্রী গুপ্ত
- ঘটোৎকচ
- প্রথম চন্দ্রগুপ্ত
- সমুদ্রগুপ্ত
- রামগুপ্ত
- দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত
- প্রথম কুমারগুপ্ত
- স্কন্দগুপ্ত
- পুরুগুপ্ত
- দ্বিতীয় কুমারগুপ্ত
- বুধগুপ্ত
- নরসিংহগুপ্ত বালাদিত্য
- তৃতীয় কুমারগুপ্ত
- বিষ্ণুগুপ্ত
- বৈন্যগুপ্ত
- ভানুগুপ্ত
সাহিত্য
[সম্পাদনা]জনৈক ইয়োরোপীয় পণ্ডিত যথার্থই বলিয়াছেন যে "গ্রীসের ইতিহাসে পেরিক্লীষ যুগ (Periclean Age) যে স্থান লাভ করিয়াছে, 'ক্ল্যাসিকাল' ভারতের ইতিহাসে গুপ্ত যুগ তদ্রুপ স্থান অধিকার করিযা আছে।” প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে গুপ্ত যুগের স্থান নিঃসন্দেহে অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই যুগে জাতীয় মনীষা ও কল্পনা শক্তির যে বিস্ময়কর প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়, তাহা অংশতঃ রাজনৈতিক ঐক্য ও বৈষয়িক সমৃদ্ধির জন্য, এবং অংশতঃ গুপ্ত সম্রাটদের আনুকূল্যে, সম্ভব হইয়াছিল। সমুদ্র গুপ্ত কেবল পাণ্ডিত্যের পৃষ্ঠপোষক মাত্র ছিলেন না, তিনি নিজেও ছিলেন একজন 'কবিরাজ'। দ্বিতীয় চন্দ্র গুপ্তকে যদি কিংবদন্তীর বিক্রমাদিত্য বলিয়া গণ্য করা হয়, তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে তিনি ছিলেন ভারতের ইতিহাসে সুপরিচিত বিদ্যোৎসাহী ও সাহিত্যে উৎসাহী রাজ গণের মধ্যে অন্যতম প্রধান।
ইউরোপীয় ঐতিহাসিকের আর একটি মন্তব্য এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলিয়াছেন, "গুপ্ত যুগে ধী-শক্তির যে বিস্ময়কর বিকাশ দেখা যায়, তাহা নিঃসন্দেহে প্রধানতঃ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্তোর দেশগুলির সহিত অবিরাম মত ও চিন্তাধারা বিনিময়ের ফলেই সম্ভব হইয়াছিল।" এই সময়ে পূর্বে চীন ও পশ্চিমে রোমান সাম্রাজ্যের সহিত ভারতীয় সংস্কৃতির সংযোগের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় না। তবু ঐ সংযোগ নিঃসন্দেহে বুদ্ধিবৃত্তির উদ্দীপক ও প্রেরণার উৎস হিসাবে কাজ করিয়াছে।
গুপ্ত যুগে সংস্কৃত ছিল সাহিত্যের ভাষা। সংস্কৃত ভাষার পুনরুজ্জীবন হইয়াছিল একথা বলিলে ভুল হইবে, কারণ ঐ ভাষা কখনও মুক্ত বা মৃতকল্প হয় নাই। মৌর্য যুগে সংস্কৃত সরকারী ভাষা ছিল না; অশোকের অনুশাসন 'সহজে বোধগম্য বিভিন্ন দেশজ ভাষায়' লিখিত হইয়াছিল। কিন্তু বহু পণ্ডিত মনে করেন যে কৌটিল্যের 'অর্থশাস্ত্র' চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বকালে রচিত হইয়াছিল। পতঞ্জলির মহৎ কীর্তি, 'মহাভার', পুরামিত্র শুঙ্গের রাজত্বকালে রচিত হইয়া- ছিল। জুনাগড়ে প্রাপ্ত রুদ্রদামনের প্রসিদ্ধ শিলালিপি সম্পূর্ণ সংস্কৃত ভাষায় রচিত। অশ্বঘোষ ও চরক সম্ভবতঃ কণিকের সমসাময়িক ছিলেন এবং তাঁহার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করিয়াছিলেন। তাঁহাদের সমগ্র রচনাবলীই সংস্কৃত ভাষায় লিখিত। ইহাও উল্লেখযোগ্য যে মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম সংস্কৃত ভাষাকেই সাহিত্য ও দর্শন সংক্রান্ত ভাবপ্রকাশের বাহন রূপে গ্রহণ করিয়াছিল। গুপ্ত সম্রাটগণ সেই ধারাকে অক্ষুন্ন রাখিয়াছিলেন এবং পৃষ্ঠপোষকতা দ্বারা উহাতে নূতন শক্তি সঞ্চার করিয়াছিলেন তাঁহাদের অধিকাংশ শিলালিপিই সংস্কৃত ভাষায় সুন্দর কাব্যছন্দে রচিত। হরিষেণের প্রশস্তি বর্ণনামূলক কাব্যের একটি চমৎকার নিদর্শন। গুপ্ত সম্রাটগণের মুদ্রাগুলিতেও সংস্কৃত লিপি উৎকীর্ণ।
প্রাচীন ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি কালিদাস সম্ভবতঃ দ্বিতীয় চন্দ্র গুপ্ত বিক্রমাদিত্য, অথবা তাঁহার পুত্র প্রথম কুমার গুপ্ত, অথবা উভয়েরই সমসাময়িক ছিলেন। কিংবদন্তী অনুসারে তিনি বিক্রমাদিত্যের রাজসভার 'নব রত্বে'র অন্যতম রত্ন ছিলেন। তিনি সম্ভবতঃ মালবের অধিবাসী ছিলেন। তাঁহার রচনায় 'ধ্বনি ও অনুভূতির সুকুমার সংযোগ, শব্দ ও অর্থের যুক্তিযুক্ত মিলন' দেখা যায়। তাঁহার প্রসিদ্ধ মহাকাব্য, 'রঘুবংশম্'-এ সম্ভবতঃ সমুদ্র গুপ্ত অথবা দ্বিতীয় চন্দ্র গুপ্তের বিজয় অভিযানের সামান্য ইঙ্গিত আছে। তাঁহার অপর মহাকাব্য 'কুমার সম্ভবম্'-এ শিবের প্রতি গুপ্ত যুগের সশ্রদ্ধ মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁহার 'মেঘদূতম্' হুকুমার সৌন্দর্যমণ্ডিত এক অপরূপ গীতিকাব্য। কাব্য ও নাটক-সাহিত্যের উভয় ক্ষেত্রেই তাঁহার প্রতিভা সমান দীপ্তিমান। 'অভিজ্ঞান-শকুন্তলম্'কে পাশ্চাত্য পণ্ডিত ও সমালোচকগণও পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক রূপে গণ্য করিয়াছেন। 'মালবিকাগ্নিমিত্রম্' নাটকটিতে পুষ্যমিত্র শুক্ষের পুত্র অগ্নিমিত্রের কাহিনী বর্ণিত হইয়াছে। সম্ভবতঃ ইহাতে ইতিহাসের দিক হইতে মূল্যবান কিছু তথ্য আছে।
গুপ্ত যুগে বহু খ্যাতিমান সাহিত্যকলাকুশলী, দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিকের আবির্ভাব ঘটিয়াছিল। ইহাদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক নাটক 'মুদ্রারাক্ষসম্'-এর রচয়িতা বিশাখদত্ত, কৌতূহলোদ্দীপক নাটক 'মৃচ্ছ- কটিকস্'-এর রচয়িতা শূদ্রক, বিখ্যাত শব্দকোষ রচয়িতা অমরসিংহ, প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ লেখক বঙ্গবন্ধু ও দিও নাগ, এবং প্রসিদ্ধ তিন জন জ্যোতির্বিদ-আর্যভট (জন্ম ৪৭৬ খ্রীস্টাব্দ), বরাহমিহির (৫০৫-৫৮ খ্রীস্টাব্দ) ও ব্রহ্মগুপ্ত (জন্ম ৫১৮ খ্রীস্টাব্দ)। আর্যভট ও বরাহমিহির গ্রীক বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যার সহিত পরিচিত ছিলেন। তাঁহাদের রচনায় গ্রীক প্রভাব পরিষ্কারভাবে প্রস্ফুট।
মহাভারত ও রামায়ণ-এই দুইটি 'মহাকাব্য' বহু পরিবর্তনের ফলে সম্ভবতঃ গুপ্ত যুগেই তাহাদের বর্তমান রূপ লাভ করিয়াছিল।
আমাদের বিপুলকায় পৌরাণিক সাহিত্য কিংবদন্তী, কাহিনী, উপকথা দার্শনিক তত্ত্ব, ধর্মাচরণের বিধি, নৈতিক বিধি এবং ধর্মীয় ও দার্শনিক মূলনীতি দ্বারা পরিপূর্ণ। অনেক পূর্বে এই পৌরাণিক সাহিত্যের উৎপত্তি হইলেও সম্ভবত: গুপ্ত যুগেই ইহা বর্তমান আকার পরিগ্রহ করে। ব্রাহ্মণগণ প্রাচীন পুরাণের ধারার সহিত নূতন যুগের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রয়োজনের সামঞ্জস্য বিধান করেন। পুরাণগুলিকে নূতন রূপ দিয়া তাঁহারা উহাদের সহজ সংস্কৃত ভাষায় লিপিবদ্ধ করেন। কয়েকটি পুরাণ-যেমন বিষ্ণুপুরাণ, গরুড়পুরাণ ও স্কন্দপুরাণ-কিছু পরিমাণে সম্প্রদায়গত; গুপ্ত যুগে যে সকল নূতন দেবদেবীর পূজা প্রচলিত হইতেছিল তাঁহাদের গৌরব বর্ধনের জন্য এবং নব-ব্রাহ্মণ্য হিন্দু- ধর্মের রীতিনীতি বর্ণনার জন্ম এইগুলি রচিত হইয়াছিল।
'প্রাচীন ধর্মশাস্ত্র বা স্মৃতিশাস্ত্রের ক্ষেত্রেও অনুরূপ পরিবর্তন দেখা যায়। মনু, যাজ্ঞবক্ষ্য ও পরাশর প্রভৃতির রচিত প্রাচীন স্মৃতিগুলি নবরূপ লাভ করে। কাত্যায়ন, দেবল এবং ব্যাস নূতন স্মৃতিশাস্ত্র রচনা করেন। এই রচনাগুলিতে সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিফলন এবং আইন ও বিচার-ব্যবস্থার বর্ণনা দেখা যায়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Bakker, Hans (১৯৮৪), Ayodhya, Part 1: The History of Ayodhya from the seventh century BC to the middle of the 18th century, Groningen: Egbert Forsten, পৃষ্ঠা 12, আইএসবিএন 90-6980-007-1
- ↑ * Hans T. Bakker (১৯৮২)। "The rise of Ayodhya as a place of pilgrimage"। Indo-Iranian Journal। 24 (2): 105। এসটুসিআইডি 161957449। ডিওআই:10.1163/000000082790081267।
During the reign of either the emperor Kumāragupta or, more probably, that of his successor Skandagupta (AD 455–467), the capital of the empire was moved from Pāțaliputra to Ayodhyā...
- ↑ pg.17 : Gupta Empire at its height (5th-6th centuries) connected with the development of Mahayana Buddhism with the development of Tantric Buddhism.Ganeri, Anita (২০০৭)। Buddhism। Internet Archive। London : Franklin Watts। পৃষ্ঠা 17। আইএসবিএন 978-0-7496-6979-9।
- ↑ Turchin, Peter; Adams, Jonathan M.; Hall, Thomas D (ডিসেম্বর ২০০৬)। "East-West Orientation of Historical Empires"। Journal of World-Systems Research। 12 (2): 223। আইএসএসএন 1076-156X। ডিওআই:10.5195/JWSR.2006.369 ।
- ↑ Taagepera, Rein (১৯৭৯)। "Size and Duration of Empires: Growth-Decline Curves, 600 B.C. to 600 A.D"। Social Science History। 3 (3/4): 121। জেস্টোর 1170959। ডিওআই:10.2307/1170959।
- ↑ "Gupta Dynasty - MSN Encarta"। ২০০৯-১১-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১৫।
- ↑ http://www.fsmitha.com/h1/ch28gup.htm
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১০।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১০।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |