নাইরোবি
নাইরোবি | |
---|---|
Consolidated city-county | |
নাইরোবি নগর ও কাউন্টি | |
ডাকনাম: "সূর্যতলে শ্যামল নগরী", "নাই","সিলিকন সাভানা" | |
কেনিয়াতে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ০১°১৭′১১″ দক্ষিণ ৩৬°৪৯′০২″ পূর্ব / ১.২৮৬৩৯° দক্ষিণ ৩৬.৮১৭২২° পূর্ব | |
দেশ | কেনিয়া |
কাউন্টি | নাইরোবি |
প্রতিষ্ঠা | ১৮৯৯ |
Constituencies | |
সরকার | |
• শাসক | Nairobi City County |
• Legislature | County Assembly |
• Governor | Vacant |
• Deputy Governor | Vacant |
আয়তন | |
• Consolidated city-county | ৬৯৬ বর্গকিমি (২৬৯ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১,৭৯৫ মিটার (৫,৮৮৯ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১৯)[১] | |
• Consolidated city-county | ৪৩,৯৭,০৭৩ |
• জনঘনত্ব | ৬,৩১৭.৬/বর্গকিমি (১৬,৩৬৩/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ৪৩,৯৭,০৭৩ |
• মহানগর | ৯৩,৫৪,৫৮০ |
বিশেষণ | Nairobian |
সময় অঞ্চল | পূআস (ইউটিসি+৩) |
এলাকা কোড | 020 |
মাউসূ (২০১৮) | ০.৬৪৪[২] মধ্যম |
স্থূঅউ (জিডিপি) (২০১৮) | ১ হাজার ৪৯০ কোটি মার্কিন ডলার[৩] |
ওয়েবসাইট | nairobi |
নাইরোবি (/naɪˈroʊbi/ ny-ROH-bee) কেনিয়ার রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। এটি কেনিয়ার দক্ষিণ-মধ্যভাগে, বিষুবরেখার ঠিক দক্ষিণ, আথি নদীর অববাহিকা অঞ্চলে, সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১৭৯৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। নাইরোবি নামটি মাসাই ভাষার একটি শব্দগুচ্ছ "এনকারে নাইরোবি" থেকে এসেছে, যার অর্থ "শীতল জলাশয়"; শব্দগুচ্ছটি শহরটির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে অবস্থিত একটি পশুদের খাবার পানির প্রাকৃতিক টোল বা গর্তকে নির্দেশ করেছে। নাইরোবিকে "সূর্যতলে শ্যামল নগরী" ডাকনামেও ডাকা হয়। মূল নাইরোবি নগরীর আয়তন প্রায় ৬৯৬ বর্গকিলোমিটার (ঢাকার আয়তনের আড়াই গুণ বা কলকাতার আয়তনের সাড়ে তিন গুণ)। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৪৪ লক্ষ অধিবাসী এবং বৃহত্তর নাইরোবি মহানগরীতে প্রায় ৯৪ লক্ষ লোক বাস করে, ফলে জনসংখ্যার বিচারে এটি পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম এবং সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম নগরী।
১৯শ শতকের শেষভাগে যুক্তরাজ্য পূর্ব আফ্রিকার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। ব্রিটিশ পূর্ব আফ্রিকা ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ ১৮৯৯ সালে উগান্ডা-মোম্বাসা রেলপথের উপরে একটি সুবিধাজনক অবস্থানে অবস্থিত অন্তর্বর্তী রেল পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে নাইরোবি লোকালয়টিকে প্রতিষ্ঠা করে। এটি দ্রুত বড় হয়ে ওঠে ও ১৯০৫ সালে মোম্বাসাকে পেছনে ফেলে ব্রিটিশ পূর্ব আফ্রিকার রাজধানীতে পরিণত হয়। সরকারী প্রশাসন ও বাণিজ্যের কেন্দ্র হবার সুবাদে কেনিয়ার গ্রামাঞ্চল থেকে বহু লোক এখানে অভিবাসী হয়ে বসতি স্থাপন করে, ফলে এটি আফ্রিকার অন্যতম বৃহত্তম শহরে পরিণত হয়। এসময় এটি উপনিবেশের কফি, চা ও সিসাল বৃক্ষের শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৯৬৩ সালে কেনিয়া স্বাধীনতা লাভ করলে এটি কেনিয়ার রাজধানীতে পরিণত হয় এবং নতুন সংবিধান অনুসারে এর আয়তন বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। নাইরোবি কেনিয়ার সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও শিল্পের প্রধান কেন্দ্র। এখানে পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, সিগারেট ও আসবাবপত্রের শিল্পকারখানা আছে। নগরীর রেলগাড়িতে বহির্বিশ্বে রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকৃত বহু পণ্য-মালামাল তুলে রেলপথে কেনিয়ার প্রধান সমুদ্রবন্দর মোম্বাসাতে প্রেরণ করা হয়। মাত্র এক শতাব্দীর ব্যবধানে নাইরোবি একটি অনাবাদী লবণাক্ত জলাভূমি থেকে সমৃদ্ধিশালী আধুনিক জাতীয় রাজধানী শহরে রূপান্তরিত হয়েছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে নগরীতে যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মাতাতু নামের ছোট ছোট ব্যক্তিগত ট্যাক্সিগুলি অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি করেছে। বন্যায় প্রায়ই সড়কের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে। সম্প্রতি ২০২০ সালে এসে একটি দ্রুতগামী বাস গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নাইরোবি শহরকেন্দ্র থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি অবস্থিত; এটি আফ্রিকার ৭ম ব্যস্ততম বিমানবন্দর। নাইরোবি থেকে আফ্রিকার ২য় সর্বোচ্চ পর্বত কেনিয়া পর্বত, ভারতীয় মহাসাগরীয় উপকূল ও ভিক্টোরিয়া হ্রদে রেল ও সড়কপথে পৌঁছানোর সুবন্দোবস্ত আছে। নগরীর বহু লোক এখনও রেল পরিবহন ব্যবস্থার কর্মচারী হিসেবে কাজ করে।
নাইরোবির পর্যটন খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয় ও কেনিয়ার জাতীয় জাদুঘর নগরীর দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। জাদুঘরটিতে কেনীয় শিল্পকলা, প্রাচীন হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, বন্যপ্রাণী ও প্রত্নতাত্ত্বিক হোমিনিড জীবাশ্মের প্রদর্শনী আছে। ঔপনিবেশিক আমলের ভবন ও স্থাপনাগুলির মধ্যে বিচার ভবন ও মহাগির্জাটি উল্লেখ্য। এছাড়া এখানে কেনিয়ার জাতীয় নাট্যশালাও অবস্থিত। নগরীতে বেশ কিছু সুউচ্চ গগনস্পর্শী অট্টালিকা আছে, যাদের মধ্যে ২৮ তলাবিশিষ্ট চোঙাকার কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ভবনটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আদিবাসী ঐতিহ্যবাহী বোমাস গ্রামগুলির প্রদর্শনী কেন্দ্র, জিরাফ কেন্দ্র, মাসাই বাজার, রেল জাদুঘর, ইত্যাদি আরও কিছু দর্শনীয় স্থান। আউট অভ আফ্রিকা রচয়িতা ক্যারেন ব্লিক্সেনের নামাঙ্কিত জাদুঘরটিও দর্শনীয়।
নাইরোবি শহরের খুবই কাছে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত নাইরোবি জাতীয় উদ্যানে বহু দর্শনার্থী ঘুরে বেড়াতে ভালবাসে। শহরকেন্দ্র থেকে মাত্র আধাঘণ্টা দূরত্বে ১১৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট ও সমভূমি, অরণ্য ও পাহাড়ে পূর্ণ বিরাট এই প্রাকৃতিক উদ্যানে বহুসংখ্যাক বন্যপ্রাণী, যেমন সিংহ, জিরাফ, উইল্ডেবিস্ট, কালো গণ্ডার, জেব্রা, চিতা ও বহু প্রজাতির পাখি সুরক্ষিত অবস্থায় বাস করে। উদ্যানের পাশেই একটি হাতি পালনকেন্দ্র আছে। এছাড়া নাইরোবি কেনিয়ার অন্যত্র অবস্থিত সাফারি উদ্যানগুলিতে ভ্রমণে যাওয়ার প্রবেশদ্বার হিসেবেও কাজ করে। এজন্য নাইরোবিকে আফ্রিকার "সাফারি রাজধানী" নামেও ডাকা হয়। শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এনগং পাহাড়ের ঢালে পিকনিক করতে করতে দূর থেকে দিগন্তবর্তী নাইরোবি শহরের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায়।
নাইরোবিতে কেনিয়ার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। নাইরোবির শেয়ার বা অংশীদারী বাজারটি আফ্রিকার ৪র্থ বৃহত্তম। এখানে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।
স্বাধীনতার আগে নাইরোবির জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ইউরোপ থেকে আগত শ্বেতাঙ্গ ও দক্ষিণ এশিয়া থেকে আগত ভারতীয়-পাকিস্তানি দিয়ে গঠিত ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পরে এদের সিংহভাগ কেনিয়া ত্যাগ করে। বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ স্থানীয় আফ্রিকান বিভিন্ন জাতির লোক, যাদের মধ্যে কিকুয়ু জাতির লোকেরা সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। লোকালয়ের আদিবাসী মাসাইয়েরা সংখ্যায় খুবই কম। সিংহভাগই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী, তবে উল্লেখ করার মতো মুসলমান সম্প্রদায় এবং অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ও বাস করে। নগরীর লোকেরা সোয়াহিলি ও ইংরেজি ভাষায় কথা বলে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "2019 Kenya Population and Housing Census Volume I: Population by County and Sub-County"। knbs.or.ke। ১৩ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ "Sub-national HDI – Area Database – Global Data Lab"। hdi.globaldatalab.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৩।
- ↑ "Gross County Product 2019"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
বহিসংযোগ
[সম্পাদনা]- নাইরোবি নগর পরিষদ ওয়েবসাইট
- কেনিয়ার পর্যটন সংস্থার ওয়েবসাইটে নাইরোবির উপরে ওয়েব পাতা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ জুন ২০২০ তারিখে