মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার ধারণা 'স্বপ্ন' নাকি এখন 'সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা'

বৃহত্তর ইসরায়েল

ছবির উৎস, twitter/mepei.com

ছবির ক্যাপশান, বৃহত্তর ইসরায়েল
  • Author, মুনাজ্জা আনোয়ার
  • Role, বিবিসি উর্দু, ইসলামাবাদ

"এমন এক দিন আসবে যেদিন আমাদের সীমানা লেবানন থেকে সৌদি আরবের বিশাল মরুভূমি, ভূমধ্যসাগর থেকে ফোরাত নদী (ইরাক) পর্যন্ত বিস্তৃত হবে"।

চলতি বছরের (২০২৪) জানুয়ারিতে, ইসরায়েলি লেখক আভি লিপকিনের একটি সাক্ষাৎকার বেশ ভাইরাল হয়, সেখানে তিনি বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণা সম্পর্কে এই কথা বলেছিলেন।

তিনি বলেন, "ফোরাত নদীর ওপারে যে কুর্দিরা আছেন, তারা আমাদের বন্ধু। আমাদের পিছনে ভূমধ্যসাগর এবং সামনে কুর্দিস্তান। লেবাননের ইসরায়েলের সুরক্ষা প্রয়োজন এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা মক্কা, মদিনা এবং সিনাইও দখল করব এবং এই স্থানগুলোকে শুদ্ধ করব"।

গাজায় হামলার পর লেবাননে ইসরায়েলের চলমান অভিযানের পর থেকে 'বৃহত্তর ইসরায়েল'-এর ধারণাটি আবারও সামনে এসেছে।

এর একটি কারণ হল গাজায় স্থল অভিযানের সময় কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছিল যে কিছু ইসরায়েলি সৈন্য তাদের ইউনিফর্মে 'বৃহত্তর ইসরায়েল' মানচিত্রযুক্ত ব্যাজ পরেছিল।

অন্যদিকে উগ্র ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীরাও অতীতে এই ধারণাটির কথা উল্লেখ করেছিলেন।

আরব দেশগুলোর সোশ্যাল মিডিয়া ইউজাররা এ বিষয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কারণ 'দ্য প্রমিজড ল্যান্ড' (প্রতিশ্রুত ভূখণ্ড) এর মানচিত্রে জর্ডান, ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং মিশরের অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইসরায়েলি তৎপরতা দিন দিন বাড়ছে। গত কয়েক মাস ধরে ইরান, সিরিয়া এবং লেবাননের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে তারা।

যুদ্ধবিরতি ডাকার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ ও সংস্থা ব্যর্থ হওয়ায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

আরও পড়তে পারেন
ইসরায়েল ফিলিস্তিন ম্যাপ
ইসরায়েল ফিলিস্তিন ম্যাপ
ইসরায়েল ফিলিস্তিন ম্যাপ

দ্য প্রমিজড ল্যান্ড'-এর ধারণা

ইসরায়েলের অনেক ইহুদি বিশেষ করে উগ্র ইহুদিবাদীরা এই অঞ্চলটিকে 'এরিটজ ইসরায়েল' বা 'ইসরায়েলের পবিত্র ভূমি' বলে মনে করে, যা কিনা ইসরায়েলের বর্তমান সীমানা থেকেও অনেক বড় একটি ভৌগলিক এলাকা।

বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণাটি নতুন নয়, তবে এই ধারণাটি কোথা থেকে এসেছে এবং 'দ্য প্রমিজড ল্যান্ড'-এর মধ্যে কোন এলাকাগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তা জানতে আমাদের কয়েকশ বছর পিছনে যেতে হবে।

ইহুদীবাদের প্রতিষ্ঠাতা থিওডোর হার্জলের মতে, 'প্রমিজড ল্যান্ড' বা বৃহত্তর ইসরায়েলের মানচিত্রে মিশরের নীল নদ থেকে ইরাকের ফোরাত নদী পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত।

অর্থাৎ ফিলিস্তিন, লেবানন, জর্ডান, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, মিসর, তুরস্ক এবং সৌদি আরবও বৃহত্তর ইসরায়েলের অংশ হবে।

১৯৪৭ সালে ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ মেন্ডেট শেষ হওয়ার পর, তৎকালীন লীগ অব নেশনস (বর্তমান জাতিসংঘ) ফিলিস্তিনকে ভাগ করার প্রস্তাব আনে।

ওই প্রস্তাবে একটি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল এবং একটি আরব রাষ্ট্র ফিলিস্তিন এবং মাঝে জেরুজালেমকে একটি আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল করার সুপারিশ করা হয়।

এ নিয়ে ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিন বলেন, ‘ফিলিস্তিনের এই বিভাজন ছিল অবৈধ'।

তার মতে, "জেরুজালেম সবসময় আমাদের (ইহুদি) রাজধানী ছিল এবং থাকবে সেইসাথে এরিটজ ইজরায়েলের সীমানা চিরতরে পুনরুদ্ধার করা হবে"।

ইসরায়েলি দখলদারিত্ব

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, ইসরায়েলি দখলদারিত্ব

এ প্রসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণকারী ওয়াশিংটনভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাকি নুসিরাত বলেন, বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণাটি ইসরায়েলি সমাজে গেঁথে আছে এবং ইসরায়েলি সমাজে সরকার থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী পর্যন্ত সবাই এই ধারণাকে সমর্থন করে।

বিবিসির সাথে কথা বলার সময়, তাকি নুসিরাত বলেছেন যে, ইসরায়েলিরা বিশ্বাস করে যে ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিকভাবে এই ভূখণ্ডের ওপর তাদের অধিকার রয়েছে।

এই ভূখণ্ড কেবল নদী থেকে সমুদ্রের দূরত্বে নয় বরং 'নদী থেকে নদী পর্যন্ত' বিস্তৃত, অর্থাৎ ফোরাত নদী থেকে নীল নদ পর্যন্ত এবং এর মধ্যবর্তী পুরো এলাকা ইসরায়েলি ভূখণ্ডের আওতাভুক্ত হবে।

বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণার সূচনা এখান থেকেই হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

তবে আজকের ইসরায়েলের বাস্তবতা হল তারা নিজেদের সীমানার বাইরের অঞ্চলগুলোকেও তাদের ভূখণ্ডের অংশ করেছে। তারা বহু আগেই পশ্চিম তীর, গাজা এবং গোলান হাইটস দখল করেছে।"

অবশ্য যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও কিং ফয়সাল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজের সহযোগী ফেলো ওমার করিম বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণাকে "শুধুমাত্র একটি মিথ" বা কল্পকাহিনী বলে মনে করেন।

বিবিসির সাথে কথা বলার সময় ওমার করিম বলেন, ইহুদি ধর্ম অনুযায়ী বৃহত্তর ইসরায়েল বলতে মধ্যপ্রাচ্যের সেই সব প্রাচীন এলাকাকে বোঝানো হয় যেগুলো একসময় অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল এবং যেখানে ইহুদিরা বসবাস করত।

জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিরা ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের সময় ইহুদি অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।

ছবির উৎস, FRANCE PRESSE VOIR/AFP VIA GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান, জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিরা ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের সময় ইহুদি অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, "যখন ইসরায়েলের সন্তানরা মিশর থেকে বেরিয়ে আসে, তখন তাদের কেন্দ্র ছিল ফিলিস্তিন, যেখানে তারা বসতি স্থাপন করেছিল। তখন সেখানে ইহুদিরাও বসবাস করত।"

ওমর বিশ্বাস করেন যে বৃহত্তর ইসরায়েল কেবলই একটি কল্পনা যা বাস্তবসম্মত নয় "কিন্তু এটি ইহুদিদের তুলনায় ইহুদিবাদী রাজনীতিতে বেশি বলাবলি করা হয়" ।

তারা গাজাকে নিজেদের অংশ হিসাবে বিবেচনা করে, তবে এটি শুধুমাত্র একটি 'কল্পনা' বলে তিনি মনে করেন।

বৃহত্তর ইসরায়েল আরবের বিভিন্ন অংশ মিলে গঠিত। এর মধ্যে আরব উপদ্বীপের কিছু অংশ অর্থাৎ আজকের সৌদি আরব, ইরাক, জর্ডান এবং মিশরের কিছু অঞ্চল রয়েছে।

'দ্যা প্রমিজড ল্যান্ড' সম্পর্কে ওমার করিম ব্যাখ্যা করেছেন যে, হজরত ইউসুফের সময়ে ইহুদিরা যখন মিশরে বসতি স্থাপন করেছিল, তখন তাদের শাসন ফিলিস্তিন থেকে বালাদ-ই-শাম (আজকের সিরিয়া) এবং ফোরাতের কিছু অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এবং সেখানে কোনো আরব ছিল না।

এই কারণে, তাদের প্রভাব অনেক অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত ছিল। বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণা মূলত এখান থেকেই এসেছে যে 'যেসব অঞ্চলে ইসরায়েলের সন্তানরা বড় হয়েছে সেসব অঞ্চল আমাদের দেশের অংশ হওয়া উচিত।'

তবে ওমার করিমের মতে এই ধারণাকে বাস্তব রূপ দেয়া সম্ভব নয় এবং বৃহত্তর ইসরায়েল বলতে এখন কেবলমাত্র দখলকৃত অঞ্চল বোঝায়, যার মধ্যে ফিলিস্তিনের দখলকৃত অঞ্চলসহ অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং গাজা অন্তর্ভুক্ত।

ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে।

বৃহত্তর ইসরায়েল কেন আবার বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠলো, ইসরায়েল কি এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে?

২০২৩ সালে ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রী বেজালেল স্মুট্রিচ প্যারিসে বক্তৃতার সময় 'বৃহত্তর ইসরায়েল'-এর একটি মানচিত্র সামনে আনেন।

সেখানে জর্ডানকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর থেকে নানা কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

প্যারিসে তার সেই বক্তৃতার কথা স্মরণ করে তাকি নুসিরাত জানান, "ইসরায়েলি মন্ত্রী বৃহত্তর ইসরায়েলের একটি মানচিত্র উপস্থাপন করেছিলেন যাতে জর্ডান এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছিল"।

দুই দেশের মধ্যে শান্তি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে জর্ডান বেজালেলের এমন দাবির তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

"বাস্তবতা হল, বেজালেল বা বেন গুর এই দুই কট্টোর ডানপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ, বৃহত্তর ইসরায়েলের এই ধারণাকে ইসরায়েলের বৈধ ভবিষ্যত হিসাবেই দেখে," বলেন তাকি নুসিরাত৷

নেতানিয়াহুর বর্তমান সরকার অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের অস্ত্র, সমর্থন এবং সুরক্ষা দেয়ার মাধ্যমে এই ধারণাকে বাস্তব রূপ দিতে চাইছে।

তাকি নুসিরাত বলেছেন যে এই অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা জোরপূর্বক ফিলিস্তিনের জলপাই গাছগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিল, তাদেরকে নিজেদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করেছিল।

নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে স্থানীয় বাসিন্দারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় এবং পশ্চিম তীরে নতুন করে ইহুদি বসতি স্থাপনের কাজ শুরু হয়।

তাকি নুসিরাত বিশ্বাস করেন যে অবৈধ অস্ত্রে সজ্জিত ইসরায়েলি দখলদার বা বসতি স্থাপনকারীরা ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলের উপর হামাসের হামলার পর থেকে উল্লেখযোগ্য প্রভাব এবং ক্ষমতা অর্জন করেছে।

এবং তারা বলতে গেলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) এবং নেতানিয়াহুর সুরক্ষায় একই এজেন্ডায় কাজ করছে।

তাদেরকে প্রায়ই 'নন-স্টেট অ্যাক্টর' বলা হয় তবে আপনি যেভাবেই ডাকেন না কেন, তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরাসরি সমর্থন রয়েছে।

ইসরায়েল ফিলিস্তিন ম্যাপ
ইসরায়েল ফিলিস্তিন ম্যাপ

নেতানিয়াহু এই বছরের জুলাই মাসে ইসরায়েলের দখলকৃত ভূখণ্ডে আরো পাঁচ হাজার তিনশটি নতুন বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছেন।

যাইহোক, ওমার করিম বিশ্বাস করেন যে "যেকোনো দেশের চরমপন্থিরা ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী ইহুদিবাদীদের মতো একই স্বপ্ন দেখে।"

তার মতে, ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ইহুদিরা তাদের ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের ধারণা ফিরে পায়। কারণ ইহুদিরা হয় সংখ্যালঘু অথবা তারা যেখানে বসতি স্থাপন করেছিল সেখানকার নাগরিক ছিল।

ওমার করিম বলেন ইহুদিরা প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের মতো একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে ধারণা পান, যেখানে আপনার ধর্মই আপনার জাতীয়তার ভিত্তি।

মূলত 'এখান থেকেই বিতর্কের জন্ম হয় যে আমরা যেহেতু আমাদের ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছি তাই এখন আমি এখানে আমাদের ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করবো।'

ওমার বলেছেন, আজকের ইসরায়েলে খুব কম মানুষ বিশেষ করে "যারা চরম সংখ্যালঘু" তারাই বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণায় বিশ্বাস রাখে।

তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে এই ধারণা কার্যকর করা অসম্ভব। কেননা জর্ডানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে।

তিনি বলেছেন যে, ইসরায়েল আরব আমিরাত এবং উপসাগরীয় দেশগুলির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং সৌদি আরবের সাথেও তাদের সম্পর্ক ভালো।

তবে গোলান মালভূমি নিয়ে সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের কিছু বিরোধ রয়েছে, এর বাইরে দুই দেশের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই।

ওমার করিম বলেছেন যে রাজনৈতিক এবং কার্যতভাবে, বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আলোচনা কেবলই একটি কল্পনা এবং ইসরায়েলের রাজনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকরা কখনই এ নিয়ে কথা বলে না।

তবে এই কল্পনা অবশ্যই সেই শ্রেণীর মধ্যে আছে যারা কোনো না কোনোভাবে বিশ্বজুড়ে ইহুদিদের নবজাগরণে বিশ্বাস রাখে।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলে ইহুদি বসতি স্থাপন।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলে ইহুদি বসতি স্থাপন।

বৃহত্তর ইসরায়েলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইলে পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে?

ইসরাইল যদি বৃহত্তর ইসরায়েলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়, তাহলে পশ্চিমারা তাতে কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে? এ প্রসঙ্গে তাকি নুসিরাত বলেন, এখন পর্যন্ত পশ্চিমারা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণের ব্যাপারে দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

তিনি বলেছেন যে এই বছরের শুরুতে, যখন ইসরায়েল কিছু সহিংস মানুষদের বসতি স্থাপনের অনুমতি দেয় তখন, "বাইডেন প্রশাসন তাদের খুব সূক্ষ্মভাবে নিন্দা জানায়।"

তাকি নুসিরাতের মতে, ইসরায়েলকে সমর্থনকারী পশ্চিমা দেশগুলো তাদের এসবপদক্ষেপের ব্যাপারে কোনও বড় ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। পশ্চিমা দেশগুলো মূলত এভাবেই 'বৃহত্তর ইসরায়েল'-এর স্বপ্ন পূরণে ইসরায়েলকে সহায়তা করে আসছে।"

এ ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলো সবুজ সংকেত দিয়েছে এবং এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছে বিপুল সংখ্যক প্রভাবশালী ইসরায়েলি নেতা।

তবে ওমার করিম বলেছেন, বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা পশ্চিম বা পশ্চিমে বসবাসকারী ইহুদিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে যখন ইহুদিদের জন্য এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তখন মনে করা হয়েছিল যে তারা সারা বিশ্বে শোষণের সম্মুখীন হচ্ছে, তাই তাদের এমন একটি পৃথক দেশ খুঁজে বের করা উচিত যেখানে তারা সমস্ত পশ্চিমা দেশগুলো থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।

১৯৩৮ সালের এই ছবিতে দেখা যায় ইহুদি পুলিশ ফিলিস্তিনের একটি বসতি ছেড়ে যাচ্ছে।

ছবির উৎস, KLUGER ZOLTAN/GPO/AFP VIA GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান, ১৯৩৮ সালের এই ছবিতে দেখা যায় ইহুদি পুলিশ ফিলিস্তিনের একটি বসতি ছেড়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের চার্টার এখনও পশ্চিম তীর এবং গাজাকে অধিকৃত অঞ্চল বলে অভিহিত করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনও তাই মনে করে।

এছাড়া ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল যে গোলান হাইটস দখল করেছিল, পশ্চিমা দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি একে দখলকৃত অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করে।

ওমর করিম বিশ্বাস করেন যে বৃহত্তর ইসরায়েলের কোন আইনগত মর্যাদা নেই এবং ভবিষ্যতে এ জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মতো ইসরায়েলের যথেষ্ট সামরিক সক্ষমতা নেই।

তবে ইসরায়েল যদি এমন কোন প্রচেষ্টা চালাতে চায় তবে পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনৈতিক এবং সামরিক সমর্থন ছাড়া তা সম্ভব নয়।

ওমার করিমের ধারণা, বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণা শুধুই একটি কল্পনা। এটি চরমপন্থি গোষ্ঠীর জন্য কেবল একটি রাজনৈতিক লাইফলাইনের মতো কাজ করে, যেন তারা তাদের মতাদর্শকে উজ্জীবিত রাখতে পারে এবং সমাজে তাদের গুরুত্ব থাকে।

যেমন পাকিস্তানের কিছু মানুষ খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বকে শাসন করার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে।