শিকারযোগ্য পাখি
যে সমস্ত বুনো পাখি খাদ্যের জন্য শিকার করা হয় বা শিকারের যোগ্য, তাদের শিকারযোগ্য পাখি বা গেম বার্ড বলে। বুনো এই অর্থে যে এরা গৃহপালিত নয়। এদের গেম বার্ড বলা হয় কারণ এদের শিকার করাটা অনেকসময় একধরনের বিনোদন হিসেবে গণ্য করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্য এবং বিনোদনের উদ্দেশ্যে পাখি শিকার করা হয়। অঞ্চল ভেদে কোন ধরনের পাখি শিকার করা যায় আর কোন ধরনের পাখি শিকার করা যায় না তা নির্ভর করে ঐ অঞ্চলে পাখির প্রাপ্যতা, বৈচিত্র্য, আঞ্চলিক স্বাদ, আবহাওয়া এবং শিকার আইনের ওপর। ইসলামে বলা হয়, যে সকল পাখি তার খাদ্য নখ দিয়ে ছিড়ে খায় সেইসব পাখি খাবার উপযুক্ত নয়। তবে যদি ছিড়ে না খেয়ে গিলে খায় তবে সেটা শিকার করার উপযুক্ত।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]প্রাচীন যুগে শিকার নির্ভর মানব সমাজে মানুষ পশুপাখি শিকার করে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। শেষ বরফ যুগের ইউরোপীয় গুহাচিত্রে হাঁস শিকারের চিত্র রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ১৯০০ অব্দের মিশরীয় ম্যুরালে হাঁস শিকারের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।[১] পরবর্তীকালে পাখির পালক অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। গৃহপালনের পর থেকে শিকারের গুরুত্ব কমে এসেছে। তবে আধুনিক যুগেও মানুষের মধ্যে শিকার স্বভাব রয়ে গেছে, মানুষ এখন শিকার করে আনন্দ উপভোগের জন্য। তবে এখনও মাংসের জন্য বা বিক্রি করার জন্য পাখি শিকার করা হয়। পালকের কিছু ব্যবহার এখনও আছে।
শিকার কৌশল
[সম্পাদনা]পাখি শিকার করার কৌশল নানা রকমের। জাল পেতে, ফাঁদ পেতে শিকার ধরা হয়। আবার বাজ, ঈগল ইত্যাদি শিকারী পাখি ব্যবহার করে শিকারযোগ্য পাখি জড়ো করে ব্যস্ত রাখা হয়। তারপর গুলি করে শিকার করা হয়। আলোর ফাঁদ, চলার পথে তার বেঁধে রেখে, নিক্ষেপণযোগ্য অস্ত্র নিক্ষেপ করেও শিকার ধরা যায়। এছাড়া পোষা পাখি দিয়ে বুনো পাখি ডেকে এনে শিকার করা হয়। কুকুর দিয়ে ভূচর পাখিদের শিকার করা যায়। নকল হাঁস দিয়েও হাঁস শিকার করা যায়।
বিভিন্ন প্রকার শিকারযোগ্য পাখি
[সম্পাদনা]হাঁসজাতীয় পাখিরা শিকারযোগ্য পাখিদের তালিকায় একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। এরা পরিযায়ী হয়ে এলে ঝাঁক বেঁধে আসে। ফলে জাল পেতে বা শটগানের ছররা দিয়ে একসাথে আনেক হাঁস ধরা যায়। এদের বাজারমূল্যও অনেক বেশি। অন্যান্য শিকারযোগ্য পাখিদের মধ্যে রয়েছে বনমোরগ, মথুরা, কোয়েল, তিতির, টার্কি, নাটাবটের ইত্যাদি। ফাঁদ, জাল পেতে বা গুলি করে এদের শিকার করা হয়। বুনো কবুতর, ঘুঘু ও হরিয়াল আকর্ষনীয় শিকার পাখি। এদের মাংস যথেষ্ট সুস্বাদু। এছাড়া পানকৌড়ি, বক, সারস, মানিকজোড় ইত্যাদিও শিকারযোগ্য পাখি। অন্যান্য জলচর পাখির মধ্যে কোড়া, জলমুরগি, ডাহুক, কালিম ইত্যাদি শিকার করা হয়। তবে পশ্চিমা বিশ্বে এরা শিকার পাখির অন্তর্ভুক্ত নয়। বেদে ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন প্যাঁচাসহ অন্যান্য পাখি শিকার করে খাদ্যের যোগান দেয়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Waterfowl Ecology and Management (1994) by Guy A. Baldassarre, Eric G. Bolen, D. Andrew Saunders, Pp. 3-6.
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- শিকারযোগ্য পাখির আলোকচিত্র, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
- The Game Bird List
- Game Birds, Natural England.
- Migratory Game Birds, IOWA Department of Natural Resources.