মানব প্রজনন
প্রজনন প্রক্রিয়া হচ্ছে একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যা দ্বারা মূলত যৌনআনন্দ বা প্রজনন বা উভয় ক্রিয়ার জন্য একজন পুরুষের উত্থিত শিশ্ন একজন নারীর যোনিপথে প্রবেশ করানো ও সঞ্চালনা করাকে বোঝায়। অন্যান্য অন্তর্ভেদী যৌনসঙ্গমের মধ্যে রয়েছে পায়ুসঙ্গম (লিঙ্গ দ্বারা মলদ্বার প্রবেশ), মুখমৈথুন, অঙ্গুলিসঞ্চালন (আঙ্গুল দ্বারা যৌন প্রবেশ), যৌনখেলনা ব্যবহার দ্বারা প্রবেশ (বন্ধনীযুক্ত কৃত্রিম শিশ্ন)। এই সকল কার্যক্রম মূলত মানবজাতি কর্তৃক দুই বা ততোধিকের মধ্যেকার শারীরিক ও মানসিক অন্তরঙ্গতা জনিত পরিতোষ লাভের জন্য এবং সাধারণত মানব বন্ধনে ভূমিকা রাখতে সম্পাদিত হয়ে থাকে। মানব প্রজনন হল যৌন প্রজননের একটি রূপ যাতে কোন পুরুষের সঙ্গে কোন নারীর যৌনসঙ্গমের ফলে মানব শুক্রাণু ও ডিম্বাণুরনিষেক ঘটে। যৌনসঙ্গমের সময়, পুরুষ ও নারী প্রজনন তন্ত্রের মাঝে পারস্পারিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলে নারীর ডিম্বাণু পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়। এগুলো হল গ্যামেট নামক বিশেষ প্রজনন কোষ, যেগুলো মিয়োসিস নামক প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়। যেখানে সাধারণ কোষে ২৩ জোড়া অর্থাৎ ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে, সেখানে গ্যামেট কোষে শুধুমাত্র ২৩টি ক্রোমোজোম থাকে, এবং যখন দুটি গ্যামেট একত্রিত হয়ে জাইগোট বা ভ্রূণ গঠন করে তখন দুটি গ্যামেটের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ ঘটে যাকে জেনেটিক রিকম্বিনেশন বলে, এবং নতুন ভ্রূণে মাতা পিতা উভয়ের কাছ থেকে আসা ২৩টি ক্রোমোজোম একত্রিত হয়ে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম গঠন করে। একটি নির্দিষ্টকালীন গর্ভধারণ পর্যায়ের পর (সাধারণত নয় মাস), প্রসবের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হয়। বিভিন্ন কৃত্রিম শুক্রাণুপ্রদান প্রক্রিয়াতেও ডিম্বাণু নিষিক্ত করা যায়, যেখানে যৌনসঙ্গমের কোন প্রয়োজন পড়ে না।
শারীরস্থান
[সম্পাদনা]মানব পুরুষ
[সম্পাদনা]পুরুষ প্রজননতন্ত্রে দুটি প্রধান অংশ থাকে: একটি হল শুক্রাশয় যাতে শুক্রাণু তৈরি হয়, অপরটি হল শিশ্ন। মানব প্রজাতিতে, উভয় অঙ্গই উদরীয় গহ্বরের বাইরে থাকে। শুক্রাশয় উদরের বাইরে থাকার কারণে, তাতে শুক্রাণুর বেঁচে থাকার জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়, যা নিয়মিত শারীরিক তাপমাত্রা থেকে ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।[১] শুক্রাশয় যদি শরীরের খুব বেশি কাছাকাছি থাকে, তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে শুক্রাণু উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এবং নিষেকের সম্ভাবনা কমে যাবে। এ কারণেই শুক্রাশয় উদরগহ্বরের বাইরে শুক্রথলি নামক একটি বাহ্যিক থলিতে অবস্থান করে, এবং একারণে তা শারীরিক তাপমাত্রা হতে সামান্য শীতল থাকে, যা শুক্রাণু উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
মানব নারী
[সম্পাদনা]মানুষের স্ত্রী প্রজনন তন্ত্র দুটি প্রধান অংশের সমন্বয়ে গঠিতঃ প্রথমত, জরায়ু, যেখানে ফিটাস বিকশিত হয়, যোনীয় ও জরায়ুজ ক্ষরণ উৎপন্ন হয় এবং পুরুষের শুক্রাণু ফেলোপিয়ান নালিতে পরিবহন করে নিয়ে যায়; এবং দ্বিতীয় প্রধান অংশ হচ্ছে ডিম্বাশয়, যা ডিম্বাণু উৎপন্ন করে। এ সবই শরীরের অভ্যন্তরীন অংশ। যোনি শরীরের বাইরে ভালভার সাথে যুক্ত যা লেবিয়া, ক্লিটোরিস, এবং মূত্রনালী নিয়ে গঠিত। যোনি, জরায়ুর সাথে সারভিক্স দ্বারা সংযুক্ত; ডিম্বাশয়, উভয় পাশে দুই ফেলোপিয়ান নালির মাধ্যমে জরায়ুর সাথে সংযুক্ত। নির্দিষ্ট সময়ে ডিম্বাশয়, ডিম্বাণু ক্ষরণ করে যা ফেলোপিয়ান নালি হয়ে জরায়ুতে এসে পৌঁছে।
যৌনমিলনের সময় যোনিপথে সারভিক্স হয়ে আসার সময় শুক্রাণু, ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় এবং ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে। এই নিষেক প্রক্রিয়া সচরাচর ওভিডাক্টে ঘটে, কিন্তু এটি জরায়ুতেও ঘটতে পারে। এরপর জাইগোট জরায়ুর দেয়ালে অবস্থান নেয় এবং এরপরপরই এমব্রায়োজেনেসিস ও মরফোজেনেসিসের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফেটাস গর্ভের বাইরে বেচে থাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে বেড়ে ওঠার পর জরায়ুমুখ প্রসারিত হয় এবং জরায়ুর সংকোচন তাকে জরায়ুর দিকে ঠেলে দেয় যাকে বার্থ ক্যানাল বা প্রসব নালী বলা হয়।
ডিম্বাণু, বা স্ত্রী জনন কোষ, শুক্রাণু হতে অপেক্ষাকৃত বড় এবং সাধারণত তা জন্মের আগে নারীর জরায়ুর ডিম্বাশয়ে উৎপন্ন হয়।
প্রক্রিয়া
[সম্পাদনা]মানব প্রজনন সাধারণত যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে শুরু হয়, যার ফলে নয় মাস গর্ভধারণের পর প্রসবের মাধ্যমে নবজাতক শিশুর জন্ম হয়; তবে চাইলে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় বীর্যপ্রদানের মাধ্যমেও গর্ভধারণ করা যায়। মানব শিশু স্বনির্ভর হওয়ার আগ পর্যন্ত বহুবছর ধরে মাতাপিতা প্রদত্ত যত্নের প্রয়োজন হয়, যা সাধারণত বারো থেকে আঠারো বছর অথবা তারও বেশি। পুরুষ কনডম অথবা নারী কনডমের মত জন্মনিরোধক ব্যাবহারের মাধ্যমে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করা যায়।
যৌনসঙ্গম
[সম্পাদনা]যৌন প্রজননের মাধ্যমে আন্তঃনিষেক প্রক্রিয়ায় মানব প্রজনন সংঘটিত হয়। এই প্রক্রিয়ায়, পুরুষ তার উত্থিত শিশ্ন নারীর যোনিতে প্রবেশ করায়, এরপর সঙ্গীদ্বয়ের যে কোন একজন বা উভয়ই ছন্দোময় পেলভিক ধাক্কা পরিচালনা করতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত পুরুষ তার নারী সঙ্গীর জরায়ুনালীতে শুক্রাণুযুক্ত বীর্যপাত ঘটায়। এই প্রক্রিয়াকে সঙ্গম, সহবাস বা যৌনমিলনও বলা হয়। শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু গ্যামেট নামে পরিচিত (যার প্রতিটিতে মাতাপিতার অর্ধেক জেনেটিক তথ্য থাকে, এবং এই কোষগুলো মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়।)। শুক্রাণুটি (যা পুরুষের প্রতিবার বীর্যপাতের ২৫ কোটি শুক্রাণুর মাঝে শুধু একটি মাত্র) যোনিপথে পরিভ্রমণ করে ফেলোপিয়ান নালী বা জরায়ুতে পৌঁছে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে একটি জাইগোট গঠন করে। নিষেক ও গর্ভে নিষিক্ত ডিম্বাণু স্থাপনের পর নারীর জরায়ুতে ফেটাসের বৃদ্ধিপ্রক্রিয়া চলতে থাকে।
গর্ভধারণ
[সম্পাদনা]গর্ভধারণ হল সেই সময়ের পরিক্রমা যে সময় ব্যাপী নারীদেহে ফেটাস বা ভ্রূণ মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজনের মাধ্যমে বেড়ে ওঠে। এই সময়ে, ফেটাস তার সকল পুষ্টি এবং অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্ত তার মায়ের কাছ থেকে অমরার মাধ্যমে পায়, যা একটি নালিকাঢ় (নাড়ি) মাধ্যমে ফেটাসের পেটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। পুষ্টি উপাদানের এই আন্তঃপরিবহন নারীর জন্য কিছুটা কষ্টকর, এবং একারণে তাকে কিছু অধিক খাবার গ্রহণ করতে হয়। পাশাপাশি, কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও সভাবিকের তুলনায় অধিক পরিমাণে দরকার হয়, যা প্রায়শই অস্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলে। মানব জাতিতে গর্ভধারণ পর্যায় আনুমানিক ২৬৬ দিন। জরায়ুতে, শিশু প্রথমে একটি সংক্ষিপ্ত জাইগোট দশায় থাকে, এরপর থাকে ভ্রুনীয় দশায়, যাতে শিশুর দেহের প্রধান অঙ্গ প্রত্যঙ্গসমূহ তৈরি হয় এবং তা আট সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নেয়, এরপর আসে জরায়ুজ দশা, যাতে হাড়ের কোষগুলো তৈরি হয় এবং ফেটাস আকারে আরও বড় হয়। [২]
জন্ম
[সম্পাদনা]ফেটাস যথেষ্ট পরিমাণে বেড়ে ওঠার পর, রাসায়নিক সঙ্কেত বিনিময়ের মাধ্যমে জন্মের প্রক্রিয়া শুরু হয়, এ প্রক্রিয়ায় ফেটাস প্রসব নালিকা দিয়ে বাইরে বের হয়। নবজাতক, যা মানবজাতিতে মানব শিশু নামে আখ্যায়িত, তাকে জন্মের অব্যবহিত পরেই শ্বাসপ্রশ্বাস শুরু করতে হয়। অনতিবিলম্বে, অমরা তার অবস্থান থেকে আপনা-আপনি খসে পড়ে। যিনি প্রসব করান, তিনি নিজেও চাইলে অমরার নাড়িটি কেটে ফেলে দিতে পারেন।
সন্তানপালন
[সম্পাদনা]মানব শিশু প্রায় অসহায় এবং বাড়ন্ত শিশুর জন্য বহুবছর ধরে পিতামাতার সাহায্য সহযোগিতার দরকার হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাটি হল মাতৃদুগ্ধ প্রদান, অর্থাৎ মায়ের স্তনের দুগ্ধগ্রন্থি হতে উৎপন্ন দুধ শিশুকে খাওয়ানো।[৩]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- প্রজননবাদ
- অপ্রজননবাদ
- যৌন প্রজননের বিবর্তন
- নারীর প্রজনন অক্ষমতা
- পুরুষের প্রজনন অক্ষমতা
- প্রজনন
- প্রজনন তন্ত্র
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Baltz, Lewis। Benezit Dictionary of Artists। Oxford University Press। ২০১১-১০-৩১।
- ↑ Feist, Gregory J.; Rosenberg, Erika L. (২০১২)। Psychology: Perspectives and Connections (Second সংস্করণ)। McGraw Hill। পৃষ্ঠা (171–172)। আইএসবিএন 978-0-07-803520-3।
- ↑ Sexual Reproduction in Humans. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে 2006. John W. Kimball. Kimball's Biology Pages, and online textbook.
৪. http://lakhokantho.com/content/237 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ জুন ২০২১ তারিখে