বায়ুপাত
বায়ুপাত বা বায়ুপত্রক বলতে কোনও বিমানের পাখা, হেলিকপ্টারের ঘূর্ণকের ফলা, বা পালতোলা নৌকা বা জাহাজের পালের প্রস্থচ্ছেদের আকৃতিকে বোঝায়। একে মার্কিন ইংরেজিতে "এয়ারফয়েল" এবং ব্রিটিশ ইংরেজিতে "অ্যারোফয়েল" বলা হয়।
বায়ুর ভেতরে দিয়ে কোনও কঠিন বস্তু গমন করলে সেটির উপরে বায়ুগতীয় বলের সৃষ্টি হয়। বলের যে উপাংশটি বস্তুর গতির সাথে উল্লম্ব ও ঊর্ধাভিমুখী থাকে, উত্তোলক বল বলে। বলের যে উপাংশটি বস্তুর গতির সমান্তরাল ও বিপরীতমুখী থাকে, সেটিকে পিছুটান বল বলে। একটি বায়ুপাত এমন এক ধরনের প্রতিরোধ-ন্যূনকারক প্রবাহরেখায়িত আকৃতির হয়ে থাকে যাতে পিছুটান বলের সাপেক্ষে অনেক বেশি উত্তোলক বল উৎপন্ন হয়।[১] শব্দ অপেক্ষা ধীরগতির উড্ডয়নের ক্ষেত্রে বায়ুপাতগুলির একটি বিশিষ্ট আকৃতি থাকে। এগুলির অগ্রপ্রান্ত গোলাকৃতির হয়, অনুসরণকারী প্রান্তটি ধারালো বা সূঁচালো হয়, উপরিপৃষ্ঠ ও নিম্নপৃষ্ঠদ্বয়ের বক্রতা প্রায়শই প্রতিসম হয়ে থাকে। একই ধরনের পাত যখন তরল বা জলের মধ্য দিয়ে চলাচলের জন্য নকশা করা হয়, তখন সেগুলিকে জলপাত বলে।
বায়ুপাতের উপরে যে উত্তোলক বলটি প্রযুক্ত হয়, সেটি মূলত পাতটির আক্রমণ কোণের উপরে নির্ভর করে। যখন বায়ুপাতটি একটি সুবিধাজনক কোণে হেলানো থাকে, তখন সেটি আগুয়ান বায়ুপ্রবাহকে মোটামুটি নিচের দিয়ে ঠিকরে দেয়া বা প্রতিফলিত করে, যার ফলে বায়ুপাতটির উপরে এর বিপরীত দিকে একটি বল সৃষ্টি হয়, যার নাম বায়ুগতীয় বল। বায়ুগতীয় বলটির দুইটি উপাংশ থাকে: উত্তোলক বল এবং পিছুটান বল। বেশিরভাগ বায়ুপাতের আকৃতিতে উত্তোলক বল সৃষ্টি করতে আক্রমণের কোণটিকে ধনাত্মক হতে হয়। তবে স্বল্পোত্তল বায়ুপাতগুলি (Cambered airfoil) শূন্য আক্রমণ কোণেই উত্তোলক বল সৃষ্টি করতে পারে। বায়ুপ্রবাহের এই দিক পরিবর্তন বায়ুপাতের চারপাশে বক্র প্রবাহরেখার সৃষ্টি করে। এর ফলে বায়ুপাতের নিচে উচ্চ বায়ুচাপ ও উপরে নিম্ন বায়ুচাপের সৃষ্টি হয়। চাপের এই তারতম্যের সাথে বের্নুই-র মূলনীতি অনুসারে গতিবেগের তারতম্যও যুক্ত হয়। এর পরিণামে বায়ুপাতের আশেপাশে যে প্রবাহক্ষেত্রটির সৃষ্টি হয়, সেটির গড় গতিবেগ বায়ুপাতের উপরিতলে বেশি থাকে এবং নিম্নতলে কম থাকে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Clancy, L. J., Aerodynamics, Section 5.2