বিষয়বস্তুতে চলুন

বাঙাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাঙাল শব্দটি অখণ্ড বাংলার পূর্ব প্রান্তের বাঙালিদের বর্ণনার জন্য ব্যবহৃত হয়, যাদের ঘটিদের তুলনায় কিছুটা আলাদা বাংলা উচ্চারণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। সাধারণত এটি ধারণা করা হয় যে হুগলি নদীর পূর্ব থেকে ব্রহ্মপুত্র-পদ্মা নদী হল অখণ্ড বাংলার এলাকা। ব্রহ্মপুত্র-পদ্মা নদীর পূর্বের অঞ্চলগুলি ঐতিহ্যগতভাবে বাঙালদের আদিভূমি হিসাবে ধারণ করা হয়। যথাযথ সংজ্ঞা অনুসারে, বাঙালরা হলেন সেই লোকেরা যাদের পূর্ব পুরুষরা পূর্ববঙ্গের মাটির সাথে সম্পৃক্ত।[][]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

১৯০৫ সালে প্রথম অখন্ড বাংলাকে "বঙ্গ" ও "পূর্ববঙ্গ ও আসাম" এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ১৯১১ সালে আবার দুই বঙ্গকে এক করে দেয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় পূর্ববঙ্গ থেকে কিছু লোক প্রধানত হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। পশ্চিমবঙ্গের আদি জনগোষ্ঠী এই শরণার্থীদেরই মাঝে মাঝে বাঙাল বলে অভিহিত করত। এই হিসাবে, ঘটি ও বাঙাল শব্দটি পশ্চিমবঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যদিও বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত অভিবাসীদের তুলনামূলক বেশি সংখ্যক অঞ্চল ছাড়া এই শব্দের ব্যবহার বিরল। আধুনিক যুগে, উচ্চ বর্ণের বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে, "বাঙাল" এবং "ঘটি" সামাজিক উপ-গোষ্ঠী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। দেশ বিভাগের সময় যাদের পরিবার পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছিল তারা হল বাঙাল এবং যাদের পরিবার সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছিলেন তারা হলেন ঘটি। একইভাবে, ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার আগে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্ববঙ্গে আগত লোকেরা ঘটি নামেও পরিচিত, যেহেতু তারা স্বাধীনতার সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছিল। এখানে ব্যবহৃত শব্দটির প্রকৃত ভূগোলের সাথে খুব কম সম্পর্ক রয়েছে। যেহেতু এই গোষ্ঠীর বেশিরভাগ সদস্যই এখন ভারতে বাস করছেন। ঐতিহাসিকভাবে, তাদের বর্ণের মধ্যে বিবাহ করার পাশাপাশি, এই গোষ্ঠীর লোকেরাও বাঙাল বা ঘটি যাই হোক না কেন, এই গোষ্ঠীর মধ্যেই বিবাহ পছন্দ করত। ইস্টবেঙ্গল (বাঙালদের) এবং মোহনবাগান (ঘটিদের) এই দুটি ফুটবল ক্লাবকে তাদের নিজ নিজ সমর্থনের মাধ্যমে বাঙাল এবং ঘটিরা তাদের সাংস্কৃতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রেখেছে। এছাড়াও তারা স্ব স্ব রান্না এবং বিশেষত নদী-ভিত্তিক স্বাদযুক্ত খাবারের আধিপত্যের দাবির মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও লালন করে। যথা: চিংড়ি ঘটিদের জন্য এবং ইলিশ বাঙালদের জন্য।

বাঙাল বনাম ঘটি

[সম্পাদনা]

বৃহত্তর বাঙালি সমাজে বাঙাল এবং ঘটিদের মধ্যে কিছু সামাজিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

  1. বিভাজনটা নদীর হিসেবে, সীমান্ত নয়।

ঘটি = পদ্মার পশ্চিম পাড়ের মানুষ, এবং তার মধ্যে খুলনা, যশোর ও আছে।

বাঙাল = পদ্মার পূর্ব পাড়ের মানুষ, তবে তার মধ্যে বরিশাল ও ফরিদপুর ও আছে।

  1. ঘটিরা দীপাবলির দিন লক্ষ্মী পুজো করে আর বাঙালরা কালী পুজো করে।
  1. বাঙালরা সাধারণত খাবারে ঝাল পছন্দ করে আর বিপরীতে ঘটিরা খাবারে মিষ্টি বেশি পছন্দ করে।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]


তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "East Bengal Vs Mohun Bagan: The 'Ghoti' – 'Bangal' Rivalry"News18 (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। ৩ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  2. Ghoshal, Somak (২০২০-০২-১৫)। "The 'ghoti' versus 'bangal' rivalry in Bengali cinema"mint (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-০৩ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]