বিষয়বস্তুতে চলুন

বন্যপ্রাণী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাঘ

বন্যপ্রাণী (ইংরেজি: Wild Animals) ঐতিহ্যগতভাবে অগৃহপালিত প্রাণী প্রজাতিকে উল্লেখ করা হয়। যে প্রাণীগুলো মানুষ দ্বারা প্রভাবিত (চাষাবাদ/বংশবিস্তার) করা ছাড়াই বন্য এলাকায় জন্মায় বা বেঁচে থাকে তারা বন্যপ্রাণী।[] সভ্যতার একদম প্রথম থেকেই মানুষ বিভিন্ন উপায়ে এবং বিভিন্ন কারণে নিজেকে বন্যপ্রাণী থেকে দূরে রেখেছে। যদিও কিছু প্রাণী নিজেদের লোকালয়ের সাথে অভ্যস্ত করে নিতে সক্ষম হয়েছে। যেমন, গৃহপালিত কুকুর, বিড়াল,ছাগল,ভেড়া , গরু, মোষ ইত্যাদি। তাছাড়া কিছু প্রাণীকে বিভিন্ন ধর্মে পবিত্র এবং উপাসক হিসাবেও ঘোষণা দিয়েছে বহুকাল আগে থেকেই। অন্যদিকে নিত্যদিন বন ধ্বংসের কারণে এদের বিচরণক্ষেত্র কমে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এ নিয়ে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই উৎকণ্ঠা বিরাজমান।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭০ এবং ২০১৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ৫২% হ্রাস পেয়েছে।[]

ঔষধ, খাবার এবং প্রতিপালনে বন্যপ্রাণীর চাহিদা

[সম্পাদনা]

খাবার হিসাবে

[সম্পাদনা]
থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই বাজারের দৃশ্য এটি। গামলা ভর্তি ব্যাঙ নিয়ে পসরা সাজিয়ে রেখেছেন এক বিক্রেতা। স্ট্রে-ফ্রাই এবং থাই তরকারিতে ব্যাঙের মাংস খুবই জনপ্রিয়।

প্রস্তর যুগের মানুষ, শিকার করে বেঁচে থাকা আদিম মানুষ সবাই বন্যপ্রাণী বা বন্য প্রকৃতির নির্ভরশীল ছিল, বিশেষত খাদ্য হিসাবে গাছ এবং পশুপাখি ছিল অন্যতম। মানুষের শিকারের কিছু কিছু প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্তও হয়ে গেছে। এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে,খাবারের জন্য,মানুষ শিকার করে এবং মাছ ধরে। কিছু দেশে আবার এই শিকার আর মাছ ধরাকে বিনোদন হিসাবে গণ্য করা হয়। বন্যপ্রাণী শিকার করা সংক্রান্ত একটি খেলা বেশ জনপ্রিয়। এর নাম বুশমেট, যদিও এটি কোনো ঐতিহ্যগত খেলা নয়। পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে ঐতিহাসিক খাবার হিসাবে বন্যপ্রাণীর ব্যাপক চাহিদা আছে। যা খুব দ্রুত বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছি। অনেকক্ষেত্রেই এসব প্রাণী/মাছের মাংসকে যৌনদ্দীপক ওষুধ বা পানীয় বা খাবার হিসাবে গ্রহণ করা হয়। ওয়াইল্ডলাইফ ট্রেড মনিটরিং নেটয়ার্কের এক সংবাদে বলা হয়, ২০০৮ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ার বন্যপ্রাণী ও জাতীয় উদ্যান অধিদপ্তর প্রায় ৯০০ টি অপহৃত এবং "পাচার করার জন্য প্রস্তুত" পেঁচা এবং অন্যান্য বিলুপ্ত বন্যজীব প্রজাতি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ধারণা করা হয় চীনের বন্যপ্রাণীর মাংসের জন্য প্রসিদ্ধ রেস্তরায়েই এগুলো ধরা হয়েছিল।. বেশিরভাগগুলি সিআইটিইএস (বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের বিপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত কনভেনশন)এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যাতে এই জাতীয় বাণিজ্যকে নিষিদ্ধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

জীববিজ্ঞানী এবং লেখক স্যালি কিনিডেল, পিএইচডি ২০০৮ সালের নভেম্বরের একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও ধারণ করেন। যেখানে একটি মারমোসেটকে (বৃক্ষবাসী, বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী) ১.৬০ ডলার (৫ পেরুভিয়ান)নে আমাজন নদীর অববাহিকার এক বাজারে বিক্রি করতে দেখা যায়। এছাড়া আমাজনের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীকে নিত্যদিন খাবার হিসাবে খাওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে আছে কচ্ছপ, কচ্ছপের ডিম এনাকন্ডা সাপ, বিভিন্ন প্রজাতির হিরগিটি ইত্যাদি।

পোষা প্রাণী এবং ঔষধ হিসাবে

[সম্পাদনা]

বিভিন্ন অবৈধ বাজারে বানর, তোতা সহ নানা ধরনের চোরাই পশুপাখি কেনাবেচা হয়। এসব বন্যপ্রাণী মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করা হয়। আমাজনের অন্যান্য প্রাণীর শরীরের বিভিন্ন অংশন ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এগুলির দাম মূলত কুসংস্কারের উপর নির্ভর করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বন্যপ্রাণীর গুরুত্ব

[সম্পাদনা]

বন্যপ্রাণী সমষ্টিগতভাবে নির্দিষ্ট বনাঞ্চলের ইকোসিস্টেম অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। জীবিত বন্যপ্রাণীর বর্জ্যপদার্থ বনাঞ্চলের মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়।কোনো বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঘটলে ব্যাকটিরিয়ার প্রভাবে দেহের বিয়োজন ঘটার ফলে বিভিন্ন উপাদান মাটিতে ও বায়ুমণ্ডলে মেশে। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে। বন্যপ্রাণী ও প্রাণীর দেহে উৎপন্ন বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রয় করে দেশের অর্থনৈতিক লাভ হয়। এছাড়া গবেষণার কাজে ব্যাপকভাবে বন্যপ্রাণী ব্যবহার করা হয়।[]

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ

[সম্পাদনা]

যে পদ্ধতিতে বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক বসতি ঠিকমতো বজায় রেখে তাদের সুরক্ষা করা হয় তাকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বলে। নানা উপায়ে বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষণের উপায়গুলি হলো—সংরক্ষিত বন, অভয়ারণ্য, ন্যাশনাল পার্ক ইত্যাদি স্থাপন করে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা করে সেই পরিবেশে বন্যপ্রাণী স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখা। আইনের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী নিধন নিষিদ্ধ করা। বিশেষ করে প্রজনন ঋতুতে বিভিন্ন পশু-পাখির শিকার একদম বন্ধ করা। বন্যপ্রাণী যাতে সুষ্ঠুভাবে বসবাস করতে পারে সেজন্য বনজ উদ্ভিদ ও বনভূমির সংরক্ষণ করা যাতে বনাঞ্চলের মাটি, জল, বাতাস কোন কারণেই কলুষিত বা দূষিত না হয়। চোরা শিকারীরা যাতে বনের পশু-পাখি হত্যা করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।[]

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বন্যপ্রাণীর ভূমিকা

[সম্পাদনা]

কাক, শকুন ইত্যাদি পাখি নোংরা ময়লা, ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট, গলিত শবদেহ ইত্যাদি খেয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখে। সে কারণে এদের 'প্রকৃতির ঝড়ুদার' বলা হয়েছে। এইসব পাখি না থাকলে ময়লা জমে আকাশ-বাতাস দূষিত হত ও রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ আসত। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা মনে রেখেই আইন করে এইসব পাখির অকারণ হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এছাড়া পাখিরা পরোক্ষভাবেও মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষায় সহায়ক। এই প্রসঙ্গে একটি কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। একসময় কোনো এক অঞ্চলে শস্যক্ষেত্রে পাখির দৌরাত্ম্য বন্ধ করার উদ্দেশ্যে পক্ষী নিধনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। হাজার হাজার নানান জাতের পাখি হত্যা করা হয় দ্রুততার সঙ্গে। এর ফলে শস্য বাঁচল বটে কিন্তু সম্পূর্ণ নূতন এক বিপদ দেখা দিল। সেই অঞ্চলের মানুষ ও গবাদি পশুর মধ্যে নিত্যনূতন রোগের প্রকোপ দেখা দিল। ঐ সঙ্গে বহু ধনপ্রাণের ঘটল বিনষ্টি। এমন হল কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল যে, এর মূলে আছে সেই আদি ও অকৃত্রিম খাদ্য পরম্পরা বা 'ফুড-চেইন'। পাখিরা কেবল শস্য দানাই খেত এমন নয়, অধিকাংশই এমন সব কীট-পতঙ্গ খেয়ে উদরপূর্তি করত যেগুলি আবার ছিল নানান রোগ-জীবাণুর বাহক। ফলে পরোক্ষভাবে পাখিরা রোগ-জীবাণুর বৃদ্ধি বা বিস্তারে বাধা ঘটাত। এখন পাখির দল মারা পড়ায় সেই কাজ গেল বন্ধ হয়ে, যার ফলে জনস্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ল ও প্রাণহানিও ঘটল বিস্তর। এই ঘটনা থেকে প্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।[]

শস্যের ফলনে বন্যপ্রাণীর ভূমিকা

[সম্পাদনা]

কৃষির কাজে কেঁচো কেমন ভূমিকা নেয় তা আমরা জানি। মাটি ফুঁড়ে চলার সময় নিচের মাটি উপরে তুলে এনে আর মাটিকে আলগা করে এরা জমি চষার কাজ করে, যে কারণে কেঁচোকে 'কৃষির বন্ধু' বলা হয়েছে। প্রতি বছর টন টন মাটি এইভাবে এরা উপরে তুলে আনে ও শস্যের ফলনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেয়। মাটি আলগা হলে জল, বাতাস সহজে প্রবেশ করে। ফলে মাটি উর্বর হয়।

আজকাল আমাদের দেশ থেকে বিদেশে ব্যাঙ রপ্তানীর একটা ব্যাপক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, কেননা ইউরোপের অনেক দেশে কোলা-ব্যাঙের মাংস উপাদেয় খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এই সহজ পথটি যে অন্য দিক দিয়ে আমাদের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে সে কথা মনে করিয়ে দেবার সময় এসেছে। বনাঞ্চল ও শস্যক্ষেতের জলকাদায় কোলা-ব্যাঙের বাস। পোকামাকড় এদের খাদ্য ও নানান শস্যধ্বংসকারী কীট-পতঙ্গও আছে এদের খাদ্য তালিকায়। ফলে পরোক্ষভাবে এরা মাঠের ফসল রক্ষায় সাহায্য করে। এখন ক্রমাগত ব্যাঙ রপ্তানীর ফলে সত্যিই যদি কোনোদিন এদের সংখ্যা বিশেষ রকম হ্রাস পায়। তাহলে ভবিষ্যতে শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপর্যয় দেখা দিলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। একথা মনে রেখে এই নগণ্য প্রাণীটির সংরক্ষণেও আমাদের মনোযোগী হওয়া কর্তব্য।

পরিশেষে বন্য প্রাণী শস্যের ফলনে কিভাবে পরোক্ষ ভূমিকা নেয় তা দেখা যাক। বনের হিংস্র জন্তু-জানোয়ার, যেমন- বাঘ, চিতা, নেকড়ে, হায়না প্রভৃতির উপস্থিতির সঙ্গে মাঠে ফসল উৎপাদনের যে কোনোরকম যোগাযোগ থাকতে পারে তা কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু বাস্তবে সত্যিই এমন যোগাযোগ সম্ভব।

বনের মাংসাশী জন্তু-জানোয়ার খরগোস, গিনিপিগ, হরিণ প্রভৃতি শাকাশী প্রাণীদের শিকার করে জীবনধারণ করে। ঐ সব শাকাশী প্রাণী অতি দ্রুত হারে বংশবিস্তারে সক্ষম। এখন মাংসাশী প্রাণীরা আছে বলেই এদের সংখ্যাবৃদ্ধি ব্যাপারটা মাত্রা ছাড়িয়ে যায় না। কিন্তু মানুষের হস্তক্ষেপে মাংসাশী প্রাণীর বংশলোপ ঘটলে খরগোস, হরিণ প্রভৃতির সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এদের আক্রমণে বনের গাছপালার ধ্বংস সাধিত হবে ও নতুন চারাগাছ গজিয়ে ওঠার অবকাশ পাবে না। এর ফলে বনের পরিধি ক্রমে সংকুচিত হবে। আর বনভূমির পরিমাণ কমে গেলে তারা শস্যক্ষেত্রে এসে হানা দেবে। এর ফলে মানুষের প্রভূত ক্ষতি হবে। বনভূমি আবহাওয়া শীতল রাখা, মেঘ আকর্ষণ করা ও বৃষ্টিপাত ঘটানোর জন্যে কি পরিমাণে দায়ী তা আমরা জানি। বনভূমি সংকুচিত হলে বা তার পরিধি হ্রাস পেলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমতে বাধ্য ও এর ফলে কৃষির কাজ বিশেষ রকম ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা। কাজেই বনের হিংস্র জীবজন্তু সংরক্ষণের ব্যাপারটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। []

বন্যজীবন ধ্বংস

[সম্পাদনা]
মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ এর উপর ভিত্তি করে বানানো জনসংখ্যার জেনেটিক্স তথা মানব অভিবাসনের মানচিত্র

১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ স্তন্যপায়ী জীবজন্তু, পাখি, মাছ ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী ধ্বংসের পেছনে ভূমিকা রয়েছে মানুষের। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বন্যপ্রাণী ধ্বংস এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, মানব সভ্যতাও হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ড ফর নেচার (ডব্লিউডব্লিউএফ) সম্প্রতি নতুন এ রিপোর্টে এ হুঁশিয়ারি জানায়। এ রিপোর্ট তৈরির কাজে বিশ্বের নানা প্রান্তের ৫৯ জন বিজ্ঞানী সহযোগিতা করেন। প্রতি দুই বছর অন্তর লিভিং প্লানেট রিপোর্ট নামে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ গবেষণা পত্র প্রকাশ করে দ্য ডব্লিউডব্লিউএফ। এর মাধ্যমে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ও সংরক্ষণ বিষয়ে পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে।

২০১৮ সালে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হচ্ছে, বিশ্বের চার ভাগ অঞ্চলের মধ্যে মাত্র এক ভাগ অঞ্চলে মানবসৃষ্ট এ বিপর্যয় থেকে বন্যপ্রাণীরা নিরাপদ রয়েছে। তা ছাড়া বাকি তিন ভাগে তাদের জীবন চরমভাবে সঙ্কটাপন্ন। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের দশ ভাগের মধ্যে নয় ভাগ অঞ্চল বন্যপ্রাণী বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। নতুন এই রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্বের মানুষের ক্রমবর্ধমান খাদ্য ও সম্পদ চাহিদার কারণে বন্যপ্রাণীদের জীবনধারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ তাদের এ ধারা তৈরি হতে সময় লেগেছিল শত শত কোটি বছর। মানবসমাজ পরিষ্কার বাতাস, পানিসহ সব কিছুর জন্যই এর ওপর নির্ভরশীল। ডব্লিউডব্লিউএফের অন্যতম নির্বাহী পরিচালক মাইক ব্যারেট বলেন, আমরা এখন একটি খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছি। যেভাবে বন্যপ্রাণীর ৬০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, তেমনটি যদি মানুষের ক্ষেত্রে ঘটত তাহলে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ, চীন ও ওশেনিয়া মহাদেশ মানবশূন্য হয়ে পড়ত। আমরা যা করছি, তার প্রতিচ্ছায়া আসলে এ-ই। জার্মানির পোটসড্যাম ইনস্টিটিউট ফর কাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক জোহান রকস্ট্রম বলেন, আমরা খুব দ্রুত প্রান্তসীমার দিকে ধাবিত হচ্ছি। এ অবস্থায়ও শুধু প্রতিবেশ ও জলবায়ুকে কেন্দ্র করেই আমরা মানুষের জন্য পৃথিবীতে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করতে পারি। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সভ্যতার শুরু থেকে এ পর্যন্ত মানুষের হাতে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ৮৩ শতাংশ এবং অর্ধেক গাছপালা ধ্বংস হয়েছে। যদি এর ধারাবাহিকতায় বন্যপরিবেশ ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে এটি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন হবে ৫০-৭০ লাখ বছর। চার হাজার প্রজাতির ১৬ হাজার ৭০৪টি স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, মাছ, সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এসব প্রাণী ধ্বংসের হার ৬০ শতাংশ। চার বছর আগে যা ছিল ৫২ শতাংশ। ব্যারেট বলেন, এ ক্ষেত্রে নির্মম সত্যটি হচ্ছে, বন্যপ্রাণী ধ্বংসের এ কাজটি চলছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জলবায়ুবিষয়ক আরেক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অধ্যাপক বব ওয়াটসন বলেন,

দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় বন্যপ্রাণীরা সবচেয়ে বেশি সঙ্কটের মুখে পড়েছে। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে ১৯৭০ সালের তুলনায় ওই অঞ্চলে ৮৯ শতাংশ বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে। বর্তমানে প্রতি দুই মাসে বৃহত্তর লন্ডনের মতো বনাঞ্চল হ্রাস পাচ্ছে। রিপোর্ট বলছে, মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় শিকার স্বাদু পানির প্রাণীগুলো। এ ছাড়া বিভিন্ন নদী, লেকে বাঁধ ও ড্যাম নির্মাণের কারণ জলজপ্রাণীর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।[]

মিডিয়া জগতে বন্যপ্রাণী

[সম্পাদনা]

বহু আগে থেকেই বন্যপ্রাণী মিডিয়া এবং ফটোগ্রাফারদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির উদ্যোগে ১৯৬৫ সাল থেকেই বন্যপ্রাণী নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়ে আসছে। ১৯৬৩ সালে এনবিসি ওয়াইল্ড কিংডমের আত্মপ্রকাশ করে, প্রাণীবিদ মার্লিন পার্কিন্স এই জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন। বিবিসি (যুক্তরাজ্য) -এর ন্যাচারাল হিস্ট্রি ইউনিট, লুক নামে একটি টিভি শো শুরু করেন। এ যাত্রায় বিবিসিকে পথিকৃৎ বলা যেতে পারে। স্যার পিটার স্কট এর উপস্থাপনায়, স্টুডিও তে পোকামাকড় বিষয়ক এই শোটি ঐ সময়ে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। ডেভিড অ্যাটেনবারো যখন এই সিরিজে প্রথম আসেন, তখন একই সাথে যু কোয়েস্ট সিরিজটি শুরু হয়। সেই সময় তিনি এবং তার ক্যামেরাম্যান চার্লস লেগাস অনেক বিদেশী স্থানে গিয়েছিলেন অজানা বন্যপ্রাণীর সন্ধানে এবং চিত্রগ্রহণ করেছিলেন বেশ কিছু বিখ্যাত ছবি, যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল ইন্দোনেশিয়ায় কোমোডো ড্রাগন Komodo dragon এবং মাদাগাস্কারে লেমুরস। ১৯৮৪ সাল থেকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিসকভারি চ্যানেল এবং তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট, টেলিভিশানের প্রচারে একচেটিয়া রাজত্ব করে। অন্যদিকে পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস হিসাবে, ডব্লিউএনইটি-১৩ এর আয়োজনে নেচার- নিউইয়র্কে, ডাব্লুজিবিএইচ দ্বারা তৈরি নোভা বস্টিনে সম্প্রচার চালিয়েছিল। ওয়াইল্ড লাইফ চ্যানেল গুলো এখন যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, জাপান এবং কানাডা সহ অনেক দেশে এক একটি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের শিল্প প্রতিষ্ঠান।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Usher, M. B. (১৯৮৬)। Wildlife conservation evaluation: attributes, criteria and values। London, New York: Chapman and Hall। আইএসবিএন 978-94-010-8315-7 
  2. Naik, Gautam (৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪)। "Wildlife Numbers Drop by Half Since 1970, Report Says"। ২৯ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৮ – wsj.com-এর মাধ্যমে। 
  3. Shepherd, Chris R.; Thomas, R. (১২ নভেম্বর ২০০৮)। "Huge haul of dead owls and live lizards in Peninsular Malaysia"। Traffic। ১ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১২ 
  4. সংরক্ষণ, মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান- তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, ১৯৮৬, পৃষ্ঠা ১৬২-১৬৪
  5. সংরক্ষণ, মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান- তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, ১৯৮৬, পৃষ্ঠা ১৬২-১৬৩
  6. মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান -তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী শিরোনাম-সংরক্ষণ,প্রকাশক-শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা,১৯৮৬ পাতা-১৬৩
  7. মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান-তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী,শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা,১৯৮৬ পাতা-১৬৩,১৬৪
  8. https://www.dailynayadiganta.com/onnodiganta/361157/%E0%A7%AC%E0%A7%A6-%E0%A6%B6%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B6-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A7%80-%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%82%E0%A6%B8-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B7-