বিষয়বস্তুতে চলুন

ফরাসি বিপ্লব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফরাসি বিপ্লব
French Revolution
আটলান্টিক বিপ্লবেরের অংশ
বাস্তিলের বিক্ষোভ, ১৪ জুলাই ১৭৮৯
তারিখ৫ মে ১৭৮৯ – ৯ নভেম্বর ১৭৯৯ (১৭৮৯-০৫-০৫ – ১৭৯৯-১১-০৯)
(১০ বছর, ৬ মাস ও ৪ দিন)
অবস্থানফরাসি রাজতন্ত্র
ফলাফল
  • একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং তারপরে ফরাসি রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ও কার্যকরকরণ
  • ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা যা ক্রমশ কর্তৃত্বপন্থী ও সামরিকবাদী হয়ে ওঠে
  • উদারনীতিবাদ এবং অন্যান্য আলোকিতকরণ নীতির উপর ভিত্তি করে মূল সামাজিক পরিবর্তন ঘটে
  • নেপোলিয়ন বোনাপার্টের উত্থান
  • ইউরোপের অন্যান্য দেশের সাথে সশস্ত্র সংঘাত

ফরাসি বিপ্লব ( ফরাসি: Révolution Française; ১৭৮৯–১৭৯৯ ) হলো ইউরোপ এবং পশ্চিমা সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে প্রজাতান্ত্রিক আদর্শের অগ্রযাত্রা শুরু হয় এবং তারই সাথে দেশটির রোমান ক্যাথলিক চার্চ নিজেদের সকল গোঁড়ামী ত্যাগ করে নিজেকে পুনর্গঠন করতে বাধ্য হয়। এই বিপ্লবকে পশ্চিমা গণতন্ত্রের ইতিহাসের একটি জটিল সন্ধিক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যার মাধ্যমে পশ্চিমা সভ্যতা নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্র থেকে নাগরিকত্বের যুগে পদার্পণ করে। ঐতিহাসিকরা এই বিপ্লবকে মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করেন।[][][]

ফরাসি বিপ্লবের মূলনীতি ছিল: "Liberté, égalité, fraternité, ou la mort!" অর্থাৎ "স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী"। এ শ্লোগানটি বিপ্লবের চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলো, যার মাধ্যমে সামরিক ও অহিংস উভয়বিধ পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে গোটা পশ্চিমাবিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এ শ্লোগানটি তখন সকল কর্মীর প্রাণের কথায় পরিণত হয়েছিল।

কারণসমূহ

[সম্পাদনা]

ইতিহাসবিদরা বিপ্লবের দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সময়ের অনেক ঘটনা ও কারণের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বৃদ্ধি[][] আলোকায়ন থেকে উদ্ভূত নতুন রাজনৈতিক ধারণা,[] অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, পরিবেশগত কারণগুলি কৃষির ব্যর্থতার দিকে পরিচালিত করে, নিয়ন্ত্রণহীন জাতীয় ঋণ,[] রাজা ষষ্ঠদশ লুইয়ের পক্ষ থেকে এবং রাজনৈতিক অব্যবস্থাপনা সবই কিছুকেই বিপ্লবের ভিত্তিপ্রস্তর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।[][][১০][১১]

ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক বৈপ্লবিক প্রকৃতিকে ইতিহাসবিদরা একটি ধারণায় এনে বিশ্লেষণ করেন: বিপ্লবপূর্ব সরকারের প্রাচীন অভিজাত নীতি ও আইনসমূহ একটি উদীয়মান বুর্জোয়াতন্ত্রের উচ্চাভিলাষের খোরাক যোগাতে শুরু করে যা আলোকসম্পাতের দ্বারা ছিলো ব্যাপকভাবে আক্রান্ত। এই বুর্জোয়ারা শহরের বিশেষত প্যারিস এবং লিওনের চাকুরিজীবী এবং অত্যাচারিত চাষী শ্রেণীর সাথে মিত্রতা সৃষ্টি করে। আরেকটি ধারণা অনুসারে অনেক বুর্জোয়া এবং অভিজাত মহল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের চেষ্টা করতে থাকে যা পরবর্তীতে চাকুরিজীবী শ্রেণীর আন্দোলনগুলোর সাথে একাত্ম হয়ে যায়। এর সাথে এক হয় প্রাদেশিক চাষীদের আন্দোলন। এই ধারণা অনুসারে তাদের মধ্যে কোন মেলবন্ধন কেবল ঘটনাক্রমে হয়েছে, তা পরিকল্পিত ছিলোনা।

যে ধারণাকেই ধরা হোক না কেন, অ্যানসিয়েন সরকারের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিলো যা বিপ্লবের মূল হিসেবে পরিগণিক হতে পারে। একদিক দিয়ে সেগুলো ছিলো অর্থনৈতিক কারণ:

  • নিম্নমানের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং বল্গাহীন জাতীয় ঋণ। এর মূল কারণ ছিল অসম করারোপণ যার বোঝা মোটেই বহনযোগ্য ছিলনা, সম্রাট লুই ১৬-এর অত্যধিক খরচ এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর বিভিন্ন যুদ্ধসমূহ।
  • বেকারত্বের উচ্চহার এবং খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য।
  • বিপ্লবের ঠিক আগের মাসগুলোতে বিরাজমান খাদ্য সংকট

অপর দিকে এর পিছেন কিছু সামাজিক এবং রাজনৈতিক কারণ ছিল। আলোকিত সমাজ এই কারণগুলোকে কেন্দ্র করেই তাদের আন্দোলন শুরু করে যারা ছিল আলোকসম্পাতের যুগ দ্বারা প্রভাবিত। এই কারণগুলো হল:

  • রাজপরিবারের অতিরিক্ত খরচে রাজকোষ শূন্য হয়
  • নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের পুনঃস্থাপন যা রাজত্বের পক্ষে ছিল ক্ষতিকর।
  • সমাজের একটি বিশেষ পেশাদার শ্রেণি এবং উঁচুশ্রেণির লোকদের ব্যাপক সুবিধা দেয়া হচ্ছিলো যা জনসাধারণের জীবনকে নিজের প্রভাবাধীনে রাখতে শুরু করেছিলো।
  • প্রচুর নারী নির্যাতন
  • কৃষক, চাকুরিজীবী শ্রেণি এবং কিছু পরিমাণ বুর্জোয়া কর্তৃক জমিদারতন্ত্রের উচ্ছেদের পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়।
  • বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য, যাজকশ্রেণির ভোগ-বিলাস চরমে উঠে। অপরদিকে ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে একটি জোয়ার সৃষ্টি হয়।
  • স্বাধীনতা এবং প্রজাতান্ত্রিক আদর্শের অনুপ্রেরণা।

সবশেষে যে কারণ সম্বন্ধে বলতে হয় তা হল এই সমস্যাগুলোর যেকোনটির সমাধানে সম্রাট লুই ১৬-এর চূড়ান্ত ব্যর্থতা।

রাজকীয় অর্থ সংকট

[সম্পাদনা]
অ্যান্টোইন-ফ্রাঁসোয়া ক্যালেট; ফ্রান্সের ষোড়শ লুই। ফ্রান্সের রাজা ও নাভারে (১৭৫৪-১৭৯৩)। ১৭৭৯ সালে তিনি রাজকীয় পোশাক পরেছিলেন। ( গুগল আর্ট প্রজেক্ট)

ফ্রান্সের সম্রাট লুই ১৬ (রাজত্বকাল:১৭৭৪ - ১৭৯২) যখন রাজকীয় অর্থের সংকটে পড়েন তখনই বৈপ্লবিক সংকটকাল শুরু হয়।[১২] অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে বলতে হয় ফরাসি রাজের শোধক্ষমতা (solvency) ছিল ফরাসি রাষ্ট্রের শোধক্ষমতার সমমানের। ফরাসি রাজ বিপুল পরিমাণ ঋণের ফাঁদে পড়েছিলো যা তদানীন্তন অর্থ সংকটের সৃষ্টি করে।

লুই ১৫ (রাজত্বকাল:১৭১৫ - ১৭৭৪) এবং লুই ১৬-এর শাসনকালে মূলত অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সিদ্ধান্ত রাজকীয় অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য গৃহীত হয়েছিলো। মন্ত্রীদের মধ্যে মূল হিসেবে বলা যায় Baron de Laune Anne Robert Jacques Turgot (অর্থ বিভাগের মহানিয়ন্ত্রক:১৭৭৪ - ১৭৭৬) এবং জ্যাক নেকারের (অর্থ বিভাগের মহানিয়ন্ত্রক:১৭৭৭ - ১৭৮১) নাম। তারা বারবার অর্থ সমস্যার সমাধানের জন্য ফরাসি করারোপণ পদ্ধতিকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব করেন যা কোন সফলতার মুখ দেখেনি। আর এ ধরনের উদ্যোগ সংসদ থেকে ব্যাপক বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। সংসদ তখন ছিলো Robe Nobility-দের করায়ত্তে যারা নিজেদেরকে জাতির অভিভাবক জ্ঞান করতেন। এর ফলশ্রুতিতে দুজন মন্ত্রীই পদচ্যুত হন। চার্লস আলেকজান্ডার দ্য ক্যালোঁ, যিনি ১৭৮৩ সালে অর্থ বিভাগের মহানিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পান, বিশিষ্ট ব্যয়সমূহের জন্য একটি নতুন নীতিমালা হাতে নেন যার মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রের প্রধান ঋণদাতাদের বুঝানোর চেষ্টা চালান।[১৩]

১৭৮৯-এর এস্টেট্‌স-জেনারেল

[সম্পাদনা]

এস্টেটস-জেনারেলকে তিনটি এস্টেটস-এ সংগঠিত করা হয়েছিল: পুরোহিত, অভিজাতবর্গ এবং বাকী ফ্রান্সের জনগণ। এটি সর্বশেষ ১৬১৪ সালে দেখা গিয়েছিল। ১৭৮৯ সালের বসন্তে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল; তৃতীয় এস্টেটের জন্য ভোটাধিকারের আবশ্যিক শর্ত ধরা হয়েছিল ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ফরাসী-বংশোদ্ভূত বা প্রকৃতিকৃত পুরুষ হতে হবে, যারা ভোট গ্রহণের জায়গাটি বসবাস করবেন এবং যারা কর প্রদান করেন।

রাজ্যসভা

[সম্পাদনা]
জ্যাক-লুই ডেভিডের অঙ্কিত চিত্রে রাজ্যসভার টিনিস কোর্ট শপথ গ্রহণ।

জুন ১০, ১৭৮৯ তারিখে Abbé Sieyès প্রস্তাব করে যে তৃতীয় এস্টেট তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে এগুবে এবং অন্য দুইটি এস্টেটকে আমন্ত্রণ জানাবে, কিন্তু ইক্ত এস্টেটদ্বয় তৃতীয় এস্টেটের জন্য অপেক্ষা করবেনা।

বাস্তিলের বিক্ষোভ

[সম্পাদনা]

১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্স রাজ্যের প্যারিস কুখ্যাত বাস্তিলে বিক্ষোভ (ফরাসি: Prise de la Bastille [pʁiz də la bastij]) হয়। এই বাস্তিল দুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এই বিপ্লব ছিল তদানীন্তন ফ্রান্সের শত শত বছর ধরে নির্যাতিত ও বঞ্চিত "থার্ড স্টেট" বা সাধারন মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ । এই বিপ্লবের আগে সমগ্র ফ্রান্সের ৯৫ শতাংশ সম্পত্তির মালিক ছিল মাত্র ৫ ভাগ মানুষ। অথচ সেই ৫ ভাগ মানুষই যত আয়কর দিত না। যারা আয়কর দিত তারা তেমন কোন সুবিধা ভোগ করতে পারত না। এবং এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করত তাদেরকে এই বাস্তিল দুর্গে বন্দী করে নির্যাতন করা হত। বাস্তিল দুর্গ ছিল স্বৈরাচারী সরকারের নির্যাতন ও জুলুমের প্রতীক। একবার কোন বন্দী সেখানে প্রবেশ করলে জীবন নিয়ে আর ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকত না । কারাগারের ভিতরেই মেরে ফেলা হত অসংখ্য বন্দীদের। ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই নির্বাচিত প্রতিনিধি, রক্ষী বাহিনির সদস্য এবং বাস্তিল দুর্গের আশেপাশের বিক্ষুব্ধ মানুষ বাস্তিল দুর্গ অভিমুখে রওনা হয়। রক্তক্ষয় এড়াতে প্রতিনিধিরা দুর্গের প্রধান দ্য লোনের কাছে আলোচনার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব ছিল বাস্তিলে ৭ জন রাজবন্দীকে মুক্তি দেয়া। দ্য লোন সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে বিক্ষুব্ধ জনতার ঢেউ বাস্তিল দুর্গে ঝাঁপিয়ে পরে। দুর্গের সৈন্যরাও ভিতর থেকে কামান দাগাতে থাকে। প্রায় দুইশো বিপ্লবী মানুষ হতাহত হয় । এরপর চারিদিক থেকে উত্তেজিত বিক্ষুব্ধ জনতা বাস্তিল দুর্গ ধ্বংস করে। জয় হয় সাম্য, মৈত্রী এবং স্বাধীনতার। এই ঘটনাটি ফ্রান্সের জাতীয় উৎসব বলে পালন করা হয়।

বাস্তিল বিক্ষোভ, জুলাই ১৪, ১৭৮৯

‘নাগরিক গার্ড’ রাজতন্ত্রের অহংকার বাস্তিল দুর্গ পতনে কার্যকরী ভুমিকা রেখেছিল। বিশেষ করে ১৭৮৯ সালের ১১ জুলাই জনপ্রিয় মন্ত্রী নেকারকে পদচ্যুত করা হলে তৃতীয় সম্প্রদায় ‘নাগরিক গার্ড’ নামক একটি সামরিক বাহিনী গঠন করে। ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই বিদ্রোহীরা অস্ত্রাগার লুটের সময় বাস্তিল দুর্গের দিকে নজর দেয়। এ দুর্গটি ছিল ঐতিহ্যগতভাবে ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের প্রতীক। এ দুর্গে রাজবন্দী এবং বিপুলসংখ্যক রাজকীয় সৈন্য অবস্থান করত। কয়েক ঘণ্টা সংঘর্ষের পর বিকালে বিদ্রোহীরা এ দুর্গ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। এ যেন পুরো রাজতন্ত্রের পতনের সাক্ষী। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৯৮ জন বিদ্রোহী এবং ৮ জন রাজকীয় সিপাহি নিহত হন। আধুনিক ফ্রান্সের জনগণ এ দিনটিকে প্রতি বছর জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করে।

জাতীয় সভার আহ্বান ও বুর্জোয়াদের সাফল্যে প্যারিস ভার্সাইয়ের জনতার মধ্যে প্রভূত উল্লাস দেখা যায়। তৃতীয় সম্প্রদায়ের দাবি মেনে নিলেও ষোড়শ লুই খুশি ছিলেন না। আন্দোলন দমনের জন্য তিনি প্যারিস ও ভার্সাইয়ে সৈন্য মোতায়েন করেন। ২২ শে জুন তিনি জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী নেকারকে পদচ্যুত করলে গণ অসন্তোষের ঘৃতাহুতি পড়ে। খাদ্যের দাবিতে হাজার হাজার নিরন্ন মানুষ গ্রাম থেকে প্যারিসে এসে সর্বহারা মানুষদের সঙ্গে যোগ দেয়। খাদ্যের দাবিতে প্যারিস উত্তাল হয়ে ওঠে। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে ওঠে --অস্ত্রের সন্ধানে লুণ্ঠিত হয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

[সম্পাদনা]

ফরাসী বিপ্লব ইউরোপ এবং নতুন বিশ্বের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল, মানব ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তনের নির্ণায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল।[১৪][১৫] এটি সামন্তবাদের অবসান ঘটায় এবং পৃথকভাবে সংজ্ঞায়িত ব্যক্তিগত মুক্তির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করেছিল।[][][]

বিপ্লববাদ ও সমাজতন্ত্র

[সম্পাদনা]

প্রাচীন রোমের বিপ্লবী গ্রাকাসের নাম গ্রহণ করেছিলেন ফ্রঁসোয়া নোয়েল ব্যাবুফ। গ্রাকাস ব্যাবুফ, দার্থে, সিলভা মারেশাল ও আরো কয়েকজন একত্রে একটি ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করেন যা ‘সমানপন্থিদের ষড়যন্ত্র' নামে পরিচিত হয়েছে। অবশ্য ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল। ব্যাবুফ দার্থে এবং আরো অনেকে পরের বছর এসব কারণে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের মূল লক্ষ্য সমাজতন্ত্র ছিলো না যদিও সাম্যবাদসমাজতন্ত্রের সূতিকাগার ছিলো সেটিই। ভোগের সাম্য এবং উৎপাদনের সাম্য, দুই ধরনের চিন্তাই ফরাসি বিপ্লবে দেখা যায়।[১৬] জ্যাকবিনের কারণটি মার্কসবাদীরা উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গ্রহণ করেছিলেন এবং বিশ্বজুড়ে কমিউনিস্ট চিন্তার উপাদান হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে "গ্রাক্কাস" ব্যাবুফ নায়ক হিসাবে গণ্য করা হত।[১৭]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

[সম্পাদনা]

ফরাসি বিপ্লব আমেরিকান রাজনীতিকে গভীরভাবে মেরুকৃত করেছিল এবং এই মেরুকরণের ফলে প্রথম পার্টি সিস্টেম তৈরি হয়েছিল। ১৭৯৩ সালে, ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে টমাস জেফারসনের নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টি ফ্রান্সের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং ১৭৭৮ সালে সম্পাদিত চুক্তিটি সম্পর্কে ইঙ্গিত করেছিলেন যে সেটি তখনও কার্যকর ছিল। জেফারসনসহ জর্জ ওয়াশিংটন এবং তার মন্ত্রিসভা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে এই চুক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে প্রবেশের জন্য আবদ্ধ করে না।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Linda S. Frey and Marsha L. Frey, The French Revolution (2004), Foreword.
  2. R.R. Palmer and Joel Colton, A History of the Modern World (5th ed. 1978), p. 341
  3. Ferenc Fehér, The French Revolution and the Birth of Modernity, (1990) pp. 117–30
  4. Marshall, Thomas H. Citizenship and social class. Vol. 11. Cambridge, 1950.
  5. Lichbach, Mark Irving. "An evaluation of 'does economic inequality breed political conflict?' studies". World Politics 41.04 (1989): 431–70.
  6. Gordon, Daniel. Citizens without Sovereignty: Equality and sociability in French thought, 1670–1789. Princeton: Princeton University Press, 1994.
  7. Sargent, Thomas J., and Francois R. Velde. "Macroeconomic features of the French Revolution." Journal of Political Economy (1995): 474–518.
  8. Hardman, John. French politics 1774–1789: from the accession of Louis XVI to the fall of the Bastille. Addison-Wesley, 1995.
  9. Baker, Keith Michael. "French political thought at the accession of Louis XVI". The Journal of Modern History (1978): 279–303.
  10. David P. Jordan (২০০৪)। The King's Trial: The French Revolution Vs. Louis XVI। University of California Press। পৃষ্ঠা 11–। আইএসবিএন 978-0-520-23697-4 
  11. Campbell, Peter Robert, ed. The origins of the French revolution. Palgrave Macmillan, 2006.
  12. Frey, p. 3
  13. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Hib35 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  14. R.R. Palmer, The Age of the Democratic Revolution: The Struggle, Volume II: The Struggle (1970)
  15. Klaits, Joseph; Haltzel, Michael H.; Haltzel, Michael (২০০২)। Global Ramifications of the French Revolution। Cambridge UP। আইএসবিএন 978-0-521-52447-6 
  16. সাদি, অনুপ (২০১৫)। "ফরাসি বিপ্লবে সমানপন্থীদের ষড়যন্ত্র"। সমাজতন্ত্র (১ সংস্করণ)। ভাষাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৮২-৮৩। 
  17. Kołakowski, Leszek (১৯৭৮)। Main Currents of Marxism: The Founders, the Golden Age, the Breakdown। W.W. Norton। পৃষ্ঠা 152–54। আইএসবিএন 978-0-393-06054-6 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]