বিষয়বস্তুতে চলুন

প্রতীক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

প্রতীক হলো এমন কিছু, যা তার নিজ রূপের আড়ালে অন্য আলাদা কিছু, অন্য আলাদা সত্তার ইশারা করে।

কিছু ধর্মীয় প্রতীক

শাব্দিক উৎপত্তি

[সম্পাদনা]

ইংরেজি symbol শব্দটির বাংলা পারিভাষিক প্রতিশব্দ হলো প্রতীক। ইংরেজি শব্দটি এসেছে গ্রিক ক্রিয়াপদ ‘সিম্বালেঈন’ (অর্থ: একত্রে ছুঁড়ে মারা) এবং বিশেষ্য ‘সিম্বলোন’ (অর্থ: চিহ্ন; প্রতীক; টোকেন বা নিদর্শন) থেকে।[] এছাড়া বাংলায় ‘প্রতীক’ শব্দটির অর্থ চিহ্ন; নিদর্শন; সংকেত। বাংলা প্রতীক শব্দটি সংস্কৃত ‘প্রতি+√ই+ঈক’ যোগে গঠিত।[]

প্রতিশব্দ

[সম্পাদনা]

বাংলায় প্রতীক শব্দটি এক এবং অভিন্ন। তবে একাধিক শব্দ রয়েছে, যা প্রকারান্তরে প্রতীক-কে নির্দেশ করে। যেমন: চিহ্ন, সংকেত, নির্দেশনা ইত্যাদি। ইংরেজিতে symbol ছাড়াও sign, emblem, token, logo, monogram ইত্যাদি শব্দ দ্বারা প্রতীককেই ইশারা করা হয়।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

প্রতীকের জন্ম হয়েছে বহু বহু আগে। ধারণা করতে পারি, মানুষের চিত্রণ ক্ষমতার বিকাশ থেকেই প্রতীকের বিকাশ শুরু। কেননা মানুষের প্রথম দিককার চিত্রগুলো ছিলো যথেষ্টই প্রতীক নির্ভর। তখন মানুষ গুহার গায়ে যেসব ছবি আঁকতো, সেখানে ফুটে উঠতো কোনো পশু, পাখি, মানুষ, যুদ্ধকৌশল কিংবা নিজেদের অস্ত্র। সেখানে প্রাণী তার প্রকৃত কাঠামোতে বেরিয়ে না এলেও প্রাণীর কাঠামোর আদল বেরিয়ে আসতো। ফলে সেই আদল দেখেই আমরা বুঝে নিতাম এটা অমুক প্রাণী। সময় বদলালো, মানুষের কৃতকর্মের বিকাশের পাশাপাশি চিত্রণ ক্ষমতারও বিকাশ ঘটলো। মানুষের চিত্র-ভাষায় বৈচিত্র্য আসতে শুরু করলো চিত্রলিপির (pictogram) স্তরে। এই স্তরে মানুষ চিত্র দিয়ে অনেক কথাই বলতে চেষ্টা করতে থাকলো, যেখানে প্রতীকের উপস্থাপনা লক্ষ্যণীয়। মানুষের এসব প্রতীকই ধীরে ধীরে বিবর্তিত হলো। তারপর মানুষ প্রবেশ করলো ভাবলিপির (logogram) স্তরে। তখন স্বাভাবিক চিত্রগুলোই বিশেষ ভাবময়তায় প্রস্ফুটিত হতে লাগলো। যেমন: [প্রাচীন যুগের] স্মারক চিত্রপ্রতীক স্তরে চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়াকে বোঝাতো কান্না, ভাবলিপিতে তা হয়ে উঠে দুঃখ। ভাবলিপির স্তরে অর্ধবৃত্তের নিচে তারা এঁকে রাত্রি এবং অর্ধবৃত্তের নিচে সূর্য বসিয়ে বোঝানো হতো দিন।[] এভাবেই মানুষের চিহ্ন, সংকেতগুলো ভাবমন্ডিত হয়ে উঠতে লাগলো। মানুষের ভাবময় অর্থবোধক চিহ্ন, সংকেতগুলোই [বিপুল অর্থদ্যোতনায়] হয়ে উঠলো প্রতীক। এভাবেই মানুষ যথেষ্ট সভ্য হয়েও, এবং বিবর্তিত ধ্বনিলিপি বা বর্ণমালা (alphabet) পেয়েও সংক্ষেপে অনেক কথা বলতে যুগ যুগ ধরে প্রতীকের ব্যবহার করে আসছে এবং আজও প্রতীকের বিশাল রাজ্যে বসবাস করছে।

বিস্তারিত

[সম্পাদনা]

প্রতীক বলতে শুধু ছবিজাতীয় চিহ্নই বোঝায় না। আবার ব্যবহারের সাথে সাথে বদলে যায় প্রতীকের নামও: ব্যবসায়ে হয়ে যায় ট্রেডমার্ক; সংগঠনে লগো (ক্ষেত্রবিশেষে মনোগ্রাম); ভাষাতত্ত্বে লিপি (বর্ণ, অক্ষর); সংগীতে নোট; রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে পতাকা, জাতীয় সংগীত; ধর্মে প্রতিমা; চিত্রশিল্পে আঁচড়; শিল্পকর্মে ধাঁচ; রাস্তায় সাইনবোর্ড; সাহিত্যে রূপক; নিঃশব্দতায় ইঙ্গিত; বাস বা টয়লেটের আঁকাআকিতে দেয়ালচিত্র (graffito); গণিতশাস্ত্রে অঙ্ক, চিহ্ন -এরকম আরো কত কী। প্রতীক কতো রকম যে হতে পারে, তার ইয়ত্তা নেই। মানুষ কথা বলার সময় মুখের পেশিতে যে পরিবর্তন হয়, বা যে পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে মানুষ তার মুখের ভাষাকে বোধগম্য করে তুলে ধরে, তা হলো সেই ভাষার প্রাথমিক প্রতীক। ভাষার অন্য প্রতীকটি হলো ভাষার ধ্বনি এবং অক্ষর বা বর্ণ।

প্রতীক বিদ্যা

[সম্পাদনা]

প্রতীক নিয়ে আলোচনার শাস্ত্রকে প্রতীক বিদ্যা বা প্রতীক শাস্ত্র (ইংরেজি: Symbology) বলে। প্রতীক বিদ্যার ধারণাটি সত্তুরের দশকের মাঝামাঝিতে প্রথম উপস্থাপন করেন ভিক্টর টার্নার। তিনি সমাজের আচরিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতির প্রাসঙ্গিকতায় প্রতীকের রূপ দেখতে পান। আর টার্নারের বদৌলতে প্রতীক বিদ্যা নৃতত্ত্বে 'তুলনামূলক প্রতীক বিদ্যা' (comparative symbology) নামে আখ্যা পায়। সিম্বলজি বা প্রতীক বিদ্যা মূলত বিজ্ঞান বা জ্ঞানের কোনো পৃথক শাখা নয়; তাই পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রতীক বিদ্যার আলাদা অনুষদ নেই। এই প্রতীক বিদ্যা যখন জ্ঞানের যে শাখার প্রতীক নিয়ে আলোচনা করবে, সেই শাখার সাথে নিজের নাম জড়িয়ে নিবে; যেমন: প্রতীক বিদ্যা যখন পুরাতত্ত্বের প্রতীক নিয়ে আলোচনা করবে, তখন তা 'পুরাতাত্ত্বিক প্রতীক বিদ্যা', ধর্মীয় প্রতীক নিয়ে আলোচনা করলে 'ধর্মতাত্ত্বিক প্রতীক বিদ্যা' ইত্যাদি।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Dictionary of Literary Terms and Literary Theory (আইএসবিএন ০-১৪-০৫১২২৭-৬); 1999 publication; Fourth Edition; Penguin Books, England.
  2. বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (পরিমার্জিত সংস্করণ) (আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪২২২-১); জানুয়ারি ২০০২ সংস্করণ; বাংলা একাডেমী, ঢাকা, বাংলাদেশ।
  3. ফরহাদ খান, হারিয়ে যাওয়া হরফের কাহিনী (আইএসবিএন ৯৮৪-৪৮৩-১৭৯-২); ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সংস্করণ; দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, বাংলাদেশ।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]