ক্বআ
ক্বআ হচ্ছে ছাদযুক্ত অভ্যর্থনা কক্ষ যা ইসলামী বিশ্বের গৃহ স্থাপত্যকলায় পরিলক্ষিত হয়। মধ্যযুগের ইসলামী গৃহস্থাপত্যে এটা সাধারণ হলরুম ধরনের ছিলো। ক্বআ এর পরিকল্পনা সম্ভবত ধর্মীয় ভবনের চতুষ্কোণ নকশা থেকে এসেছে। এগুলো পুরুষ অতিথিদের অভ্যর্থনা কাজে ব্যবহৃত হয় যেখানে তারা উঁচু স্থানের উপর বসতে পারে।
গঠন
[সম্পাদনা]সাধারণত ধনী লোক যেমন ব্যবসায়ী অথবা স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের গৃহে ক্ব'আ দেখতে পাওয়া যায়। নীচতলায় অথবা প্রথমতলায় ক্ব'আ নির্মাণ করা হয়। ক্ব'আর প্রবেশপথ সাধারণত গৃহের অর্ধ-ব্যক্তিগত উঠোনের দিকে মুখকরা থাকে।
ক্ব'আ কে বর্ণনা করা যেতে পারে উঠোন এবং ইয়ান এর সন্নিবেশ। ক্ব'আর অংশ সমূহের মধ্যে আছে দূরক্ব'আ নামে কেন্দ্রের নিচু অংশ যেখানে অতিথিরা খোলাপথ দিয়ে প্রথমে আসে, এবং তাযার নামক উঁচু বসার জায়গা যেখানে অতিথিরা তাদের জুতা খুলে দিওয়ানে বসেন যা দেয়ালের পাশ ঘেষে মেঝের উপর রাখা একটি বসার স্থান। তাযার একধরনের ইওয়ানের মধ্যে বসানো থাকে। সাধারণত ক্ব'আ এর মধ্যে দুটি ইওয়ান পরষ্পর মুখোমুখি করে বসানো থাকে।[১]
দূরক্ব'আ এর আক্ষরিক অর্থ ক্ব'আর প্রবেশপথ। অনেক সময় দূরক্ব'আর দুপাশে দুটি তাযার থাকে। দূরক্ব'আ অংশে শীতলীকরণ ঝর্ণা বা ফাউন্টেন ফাসকিয়া বসানো হয়, যা ইসলামী স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ। ফাসকিয়া ঘরের মধ্যে একটি শব্দ তৈরি করে।[২]
বসার উঁচু স্থানের নাম তাযার যা ইওয়ান অংশে অবস্থিত। ক্ব'আর পরিপূর্ণ গঠনে দুটো ইওয়ান থাকে। তাযারে পুরুষ অতিথিরা বসেন যেখানে ভৃত্যেরা খাবার অথবা কফি পরিবেশন করেন। কিছু কিছু স্থানে তাযারের কাছে একটি অতিরিক্ত প্রবেশপথ দেখা যায় যার মাধ্যমে ভৃত্যেরা ফল পানীয় ইত্যাদি পরিবেশন করে থাকে। তাযাজের পাশের দেয়ালে তাক দেখতে পাওয়া যায় যেখানে সিরামিক পাত্র, খোঁদাই করা ধাতবকর্ম কিংবা বই সাজিয়ে রাখা হয়।[২] দেয়াল সাজানোয় ব্যবহৃত হয় আরবি ক্যালিগ্রাফি, কবিতা কিংবা ইসলামী বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কোন শিল্প ইত্যাদি। ইওয়ানদুটির দেয়ালের পাশ সাজাতে অনেক সময় মাশ্রাবিয়া ব্যবহৃত হয়। অনেকসময় মসব নামক সুসজ্জিত কুলুঙ্গি দেখা যায়। এ ধরনের কুলুঙ্গি মসজিদে দেখা যায়। কুলুঙ্গির উপরের ছাদ মুকারনাস মিনিয়েচার দিয়ে সাজানো হয়।[৩][২]
ইওয়ানের ছাদ সাধারণত দুরক্বআর ছাদ থেকে নিচু হয়ে থাকে। প্রথমদিকের ক্ব'আ তে ইওয়ানসমূহে সাধারণত ব্যারেলের মত হতো যেমন কায়রোর আল-দারদির গৃহের ক্ব'আ।[৪] মামলুক ক্ব'আর একটি ইওয়ানে জানালা (মালকাফ বা বাধাহাঞ্জ) থাকতো যার মাধ্যমে বাতাস চলাচল করতে পারে[২]। দূরক্ব'আর উঁচু ছাদে ষড়ভুজাকৃতির শুখশিখা নামক আকাশআলোর ব্যবস্থা থাকে যার দ্বারা ভেতরে আলো আসে কিংবা এটা লণ্ঠন দিয়ে সাজানো হয়।
অভ্যন্তরীণ সজ্জা
[সম্পাদনা]ক্বআ তে প্রচুর উজ্জ্বল রঙ আর জটিল বিন্যাসের নকশা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রুমের নকশার প্রকাশে অনেকসময় গৃহকর্তা নিজের জাঁকজমক দেখিয়ে থাকে। অবস্থানভেদে ক্বআ তে বিভিন্নশৈলীর নকশা দেখা যায়।[৩]
ক্বআর দেয়াল সাধারণত সাইপ্রাস, পপলার কিংবা মালবেরি কাঠের প্যানেল দিয়ে তৈরি করা হয়। আজামি শৈলীর ক্বআতে কাঠের দেয়ালের সংগে জিপসাম মিশ্রণ ব্যবহার করে পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ানো হয়, ধাতব পাতা (টিন, রূপা, সোনা) দিয়ে সাজানো হয় এবং এরপরে ছবি আঁকা হয়। পুরো দেয়াল পলিশ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে পুরাতন ক্ব'আর দেয়াল অনুজ্বল দেখালে একদা এগুলোতে প্রচুর উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করা হতো। অনেক নতুন গৃহে যেমন দামেস্কর ঘরবাড়িতে উজ্জ্বল সবুজ, নীল এবং বেগুনী রঙের ব্যবহার দেখা যায়।[৩] মেঝে পাথর কেটে তৈরি করা হতো।[৩]
ব্যবহার
[সম্পাদনা]ক্বআ হচ্ছে আধুনিক দিনের অতিথিদের বসার জায়গার এবং থাকার জায়গার একটি ইসলামী সংস্করণ। মিশরীয়, অটোমান এবং অন্যান্য ইসলামী বিশ্ব যেমন সিরিয়ায় গৃহ স্থাপত্যে ক্বআ দেখতে পাওয়া যায়। ক্বআর জন্যে নির্দিষ্ট কোন আসবাব ব্যবহৃত হয় না। প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন আসবাব ব্যবহার করা হয়। গৃহউঠোনের উত্তরদিকে ক্বআ নির্মাণ করা হয় ফলে শীতকালে সূর্যালোকের সুবিধা পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালের ক্বআ ব্যবহারের জন্যে এতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়। ক্বআ ঘুমানোর কক্ষ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এরকম ক্ষেত্রে ঘুমানোর কাজে ব্যবহৃত বিছানাপত্র এবং কার্পেট রাখার জন্য বড় আকারের কুলুঙ্গি থাকে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Ragette 2003, পৃ. 9।
- ↑ ক খ গ ঘ Ragette 2003, পৃ. 145।
- ↑ ক খ গ ঘ Harris ও Zucker 2013।
- ↑ "AGA KHAN PROGRAM FOR ISLAMIC ARCHITECTURE - 7-Palaces, Houses, and Halls types between the 9th and 12th Century"। AGA KHAN PROGRAM FOR ISLAMIC ARCHITECTURE। Aga Khan। Department of Architecture, Massachusetts Institute of Technology। ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১২, ২০১৭।
উদ্ধৃত কর্ম
[সম্পাদনা]- Duda, Dorothea (১৯৭১)। "Innenarchitektur syrischer Stadthäuser des 16. bis 18. Jahrhunderts"। www.perspectivia.net। FRANZ STEINER VERLAG। পৃষ্ঠা 35, 90-1, 108। ২০১৮-০২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-২৭।
- Harris, Beth; Zucker, Steven (২০১৩)। "Qa'a: The Damascus room"। Khan Academy। Khan Academ। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১২, ২০১৭।
- Metropolitan Museum of Art (২০১২)। The Metropolitan Museum of Art Guide। New Haven and London: Yale University Press। আইএসবিএন 9781588394552।
- Ragette, Friedrich (২০০৩)। Traditional Domestic Architecture of the Arab Region। Edition Axel Menges। আইএসবিএন 9783932565304।
- Williams, Caroline (২০০২)। Islamic Monument in Cairo। Cairo: Cairo Press। আইএসবিএন 9789774246951।