বিষয়বস্তুতে চলুন

ইঙ্গ-বর্মি যুদ্ধসমূহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তৃতীয় ইঙ্গ - বর্মা যুদ্ধ

ইংরেজ সৈন্যবাহিনী এবং বর্মা তথা ব্রহ্মদেশের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছিলো, যা "বর্মী যুদ্ধ" বা "ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধ" নামে ইতিহাসখ্যাত৷

যুক্তরাজ্যের সাথে যুদ্ধ এবং বর্মার পতন

[সম্পাদনা]

বর্মার সাম্রাজ্য বিস্তৃতির সাথে সাথে তার সীমান্ত পরিবর্তন হতে থাকে৷ সীমান্ত পরিবর্তনের ফলস্বরূপ তা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং পরে ব্রিটিশ ভারতের নিকটবর্তী হয়৷ ঐ সীমান্ত অঞ্চলগুলিতে জনসাধারণ ধন্দে পড়ে ফলে শরণার্থী সংখ্যা বাড়তে থাকে, শুধু তাই নয় অস্পষ্ট পরিবর্তনশীল অনির্ধারিত সীমানা উভয়পক্ষের সৈন্যদলকেও বিব্রত করে৷[]

প্রথম ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধ

[সম্পাদনা]

১৮২৪ থেকে ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ বাহিনী ও বর্মী সৈন্যদলের মধ্যে ঘটে যাওয়া প্রথম ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জয়লাভ করে৷ উভয়পক্ষের মধ্যে ইয়াণ্ডাবু সন্ধি সাক্ষর হয় ফলে বর্মার কব্জাকৃত আসাম, মণিপুর এবং আরাকান রাজ্য তাদের হাত ছাড়া হয় এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়৷[] ব্রিটিশ বাহিনী টেনাসেরিম বিভাগ|টেনাসেরিম পর্যন্ত একটি পদযাত্রা করে, এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো টেনাসেরিমকে একটি অন্তর্বর্তী অঞ্চল হিসাবে গণ্য করে ব্রহ্মদেশ (বর্মা) ও শ্যামদেশের (থাইল্যান্ড) সাথে ভবিষ্যৎ আলোচনার পথ খোলা রাখা৷[] শতাব্দী এগোনোর সাথে সাথে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বর্মার প্রাকৃৃতিক উৎস তথা বর্মার মূল ভুখণ্ডের ওপর নিজেদের প্রভাব ও একটি বৃৃহৎ সাম্রাজ্য বিস্তারের মনস্কামনা ব্যক্ত করে৷[]

দ্বিতীয় ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধ

[সম্পাদনা]

১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড ডালহৌসি বর্মার সাথে পূর্ব চুক্তির (ইয়াণ্ডাবুর সন্ধি) বিষয়ে ছোটোখাটো কিছু আলোচনা প্রসঙ্গে কম্যান্ডার ল্যাম্বার্টকে বর্মা প্রেরণ করেন৷[] বর্মীরা তৎক্ষণাৎ ব্রিটিশ গুপ্তচরকে বর্মা থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবী তোলেন৷ ঘটনাক্রমে এই সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ল্যাম্বার্ট নৌ পরিবহন সংক্রান্ত আলোচনার কথা তোলেন, যা ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়৷ ব্রিটিশ বাহিনীর দ্বারা দক্ষিণ বর্মার পেগু দখলের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে৷[] এই যুদ্ধের ফলে বর্মার রাজসিংহাসনে নবযুগ আসে, রাজা পাগান মিন (১৮৪৬-১৮৫২) এর পরে তার বৈমাত্রেয় ভাই মিন্দন মিন (১৮৫৩-১৮৭৮) বর্মার রাজসিংহাসন দখল করে৷[]

তৃতীয় ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধ

[সম্পাদনা]

রাজা মিন্দন ব্রিটিশ আক্রমণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে বর্মার দেশীয় রাজ্যগুলিকে আধুনিকীকরণ এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করার দিকে জোর দেন৷ তিনি তার নতুন রাজধানী মান্দালয়তে স্থানান্তরিত করেন ও নিজের শক্তিবৃৃদ্ধি শুরু করেন৷[][] এটা ব্রিটিশ আক্রমণ আটকানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো না কারণ মিন্দনের পুত্র এবং বর্মার পরবর্তী রাজা থিবৌ মিন (১৮৭৮-১৮৮৫) ছিলেন একজন অদূরদর্শী ও অপারক রাজা৷ তিনি ব্রিটিশ আক্রমণ আটকানোর জন্য ফ্রান্সের সাহায্য প্রার্থনা করেন৷[] ফলে তার দেশের ওপর থেকে তার আধিপত্য কমতে থাকে এবং তার রাজ্যের সীমান্তও অসুরক্ষিত হয়ে পড়ে৷ এমতাবস্থায় ব্রিটিশ বাহিনী দাবী করে যে, তিনি তার পিতার স্বাক্ষরিত চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছেন, যা অনভিপ্রেত৷[] ফলস্বরূপ ব্রিটিশ বাহিনী ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে আবার বর্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন৷ এভাবে তৃতীয় ইঙ্গ-বর্মা যুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ বাহিনী সমগ্র বর্মার ওপরই নিজের আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয় ও বর্মাকে নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করে৷[][]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. San Beck Org.
  2. Lt. Gen. Sir Arthur P. Phayre (১৯৬৭)। History of Burma (2 সংস্করণ)। London: Susil Gupta। পৃষ্ঠা 236–247। 
  3. D.G.E. Hall (১৯৬০)। Burma (পিডিএফ)। Hutchinson University Library। পৃষ্ঠা 109–113। ২০০৫-০৫-১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. Thant Myint-U (২০০৮)। The River of Lost Footsteps (1 paperback সংস্করণ)। USA: Farrar, Straus and Giroux। পৃষ্ঠা 113–127। 
  5. "German Language Institute"। ২০১৫-০১-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-০৭ 
  6. www.enotes.com
  7. Thant Myint-U (২০০৮)। The River of Lost Footsteps (1 paperback সংস্করণ)। USA: Farrar, Straus and Giroux। পৃষ্ঠা 161–162 + photo।