আয়ুর্বেদ
আয়ুর্বেদ হল একটি বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা যা ভারতীয় উপমহাদেশে উদ্ভুত হয়।[১] আয়ুর্বেদের তত্ত্ব এবং অনুশীলন ছদ্মবিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত।[২][৩][৪] আয়ু’ শব্দের অর্থ ‘জীবন’ এবং ‘বেদ’ শব্দের অর্থ ‘জ্ঞান’ বা ‘বিদ্যা’। ‘আয়ুর্বেদ’ শব্দের অর্থ জীবনজ্ঞান বা জীববিদ্যা।[৫] আয়ুর্বেদ চিকিত্সা মূলত ভেষজ বা উদ্ভিদের মাধ্যমে প্রচলিত চিকিত্সা পদ্ধতি। এই চিকিত্সা ৫০০০ বছরের পুরাতন। আদি যুগে গাছপালার মাধ্যমেই মানুষের রোগের চিকিৎসা করা হতো।[৬] এই চিকিত্সা বর্তমানে ‘হারবাল চিকিত্সা’ তথা ‘অলটারনেটিভ ট্রিটমেন্ট’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ক্যান্সারের চিকিৎসা বা নিরাময়ে আয়ুর্বেদ কার্যকরী এমন কোন ভালো প্রমাণ নেই।[৭] কিছু আয়ুর্বেদিক প্রস্তুতিতে সীসা, পারদ এবং আর্সেনিক রয়েছে, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর বলে পরিচিত।[৮]
ইতিহাস ও মিথ
[সম্পাদনা]মূল ধারণা
[সম্পাদনা]আয়ুর্বেদ হলো ভারতবর্ষের প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র। প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে ভারতবর্ষের মাটিতে এই চিকিৎসা পদ্ধতির উৎপত্তি হয়। আয়ুর্বেদ শব্দটি হলো দুটি সংস্কৃত শব্দের সংযোগে সৃষ্টি-যথা ‘আয়ুষ’, অর্থাৎ ‘জীবন’ এবং ‘বেদ’ অর্থাৎ ‘বিজ্ঞান’। যথাক্রমে আয়ুর্বেদ শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় ‘জীবনের বিজ্ঞান’। এটি এমনই এক চিকিৎসা পদ্ধতি যাতে রোগ নিরাময়ের চেয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার প্রতি বেশি জোর দেওয়া হয়। রোগ নিরাময় ব্যবস্থা করাই এর মূল লক্ষ্য।[৯][১০]
আয়ুর্বেদের মতে মানব দেহের চারটি মূল উপাদান হলো দোষ, ধাতু, মল এবং অগ্নি। আয়ুর্বেদে এগুলি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, তাই এগুলিকে ‘মূল সিদ্ধান্ত’ বা ‘আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মূল তত্ত্ব’ বলা হয়।
দোষ
[সম্পাদনা]‘দোষ’ এর তিনটি মৌলিক উপাদান হল বাত, পিত্ত এবং কফ, যেগুলি সব একসাথে শরীরের ক্যাটাবোলিক ও এ্যানাবোলিক রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এই তিনটি দোষগুলির প্রধান কাজ হল শরীরের হজম হওয়া পুষ্টির উপজাত দ্রব্য শরীরের সমস্ত স্থানে পৌঁছে কোষ পেশী ইত্যাদি তৈরীতে সাহায্য করা। এই দোষগুলির জন্য কোন গোলযোগ হলেই তা রোগের কারণ হয়।
ধাতু
[সম্পাদনা]ধাতু হল যা মানব দেহটিকে বহন করে। আমাদের দেহে সাতটি টিসু-সিস্টেম আছে, যথা রস, রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা ও শুক্র। ধাতু দেহের প্রধান পুষ্ঠি যোগায় এবং মানসিক বৃদ্ধি ও গঠনে সাহায্য করে।
মল
[সম্পাদনা]মল অর্থাৎ শরীরের নোংরা বর্জ্য পদার্থ বা আবর্জনা। এটা হল শরীরের ত্রয়ীর মধ্যে দোষ ও ধাতু ছাড়া তৃতীয়।মল প্রধানত তিন প্রকার-যথা মল, প্রস্রাব ও ঘাম। দেহের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য মলের বর্জ্য পদার্থ শরীরের বাইরে বেড়োনো অত্যন্ত জরুরী। মলের দুটি প্রধান দিক আছে-মল ও কিত্ত। মল হল শরীরের বর্জ্য পদার্থ এবং কিত্ত হল ধাতুর আবর্জনা।
অগ্নি
[সম্পাদনা]শরীরের সমস্ত রাসায়নিক ও পাকসংক্রান্ত কাজ হয় অগ্নি নামক দৈহিক আগুনের সাহায্যে -একে বলা হয় অগ্নি। আমাদের লিভার এবং টিস্যু কোষে উৎপন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ বিশেষকে অগ্নি নামকরণ করা হয়।
দৈহিক গঠন
[সম্পাদনা]আয়ুর্বেদে জীবনকে ভাবা হয় দেহ, অণুভূতি, মন এবং আত্মার সমন্বয়। জীবিত মানব দেহ হল এই সব উপাদান যেমন ত্রিদোষ (বাত, পিত্ত এবং কফ), সপ্তধাতু (রস, রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা এবং শুক্র), মল বা ঘাম- এসবের একত্রীভবন। দেহের বৃদ্ধি ও পচন পুরোটাই নির্ভর করে খাদ্যের উপর যা দোষ, ধাতু ও মল এ পরিবর্তিত হচ্ছে। হজম প্রক্রিয়া, শোষণ, পরিপাক প্রণালী ও খাদ্যের রাসায়নিক প্রক্রিয়ার উপর আমাদের স্বাস্থ্য ও ব্যাধি নির্ভর করে। আবার আমাদের শারীরিক সুস্থতার উপর মানসিক অবস্থা ও অগ্নির প্রভাবও আছে।
পঞ্চমহাভূত
[সম্পাদনা]আয়ুর্বেদের মতে মানব দেহ সহ এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের উপস্থিত সমস্ত পদার্থই পাঁচটি বিশেষ উপাদানের (পঞ্চমহাভূত)সমষ্টি-যেমন পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু এবং মহাশূন্য। শরীরের গঠন ও বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রয়োজন অনুযায়ী এই উপাদানগুলি বিভিন্ন মাত্রায় আমাদের দেহে উপস্থিত। শরীরের বৃদ্ধির জন্য যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি আমরা নিই, সেই খাদ্যের মধ্যেও এই উপাদানগুলি বিরাজমান, যা শরীরের অগ্নির সাহায্যে পরিপাক হয়ে পুষ্টির যোগান দিয়ে শারীরিক বিকাশ ঘটায়। শরীরের টিসুগুলি বাস্তবিক গঠন সংক্রান্ত ক্রিয়া চালায় এবং ধাতুগুলি হল পঞ্চমহাভূতের বিভিন্ন বিন্যাস দ্বারা গঠিত।
সুস্থতা এবং অসুস্থতা
[সম্পাদনা]মানব দেহের সুস্থতা এবং অসুস্থতা সম্পূর্ণ নির্ভর করে দেহে উপস্থিত উপাদানগুলির ভারসাম্য ও শারীরিক স্থিতির উপর। শরীরের অন্তর্নিহিত বা বাহ্যিক বিভিন্ন কারণের জন্য এই প্রয়োজনীয় ভারসাম্যে তারতম্য আসতে পারে যার ফলে অসুখ করে।[১১][১২] এই ভারসাম্যের অভাব ঘটতে পারে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের ভুলের জন্য বা ত্রুটিপূর্ণ জীবনযাপন বা দৈনন্দিন জীবনে কুঅভ্যাসের জন্য। ঋতুর অস্বাভাবিকতা, ভুলভাবে ব্যায়াম বা ইন্দ্রিয়ের যথেচ্ছ ব্যবহার এবং দেহ ও মনের অমিলপূর্ণ ব্যবহারও দেহ ও মনের ভারসাম্যের বিঘ্নতা ঘটায়। এর চিকিৎসা হল সঠিক খাদ্য, সু-জীবনযাত্রা ও স্বভাবের উন্নতির দ্বারা শরীর ও মনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা, ঔষধ গ্রহণ, নিরাময় পঞ্চকর্ম এবং রসায়ন চিকিৎসা দ্বারা নিরাময় সম্ভব।
রোগ নির্ণয়
[সম্পাদনা]আয়ুর্বেদে রোগীর শারীরিক ও মানসিক সম্পূর্ণ অবস্থার বিচার করে তবেই রোগ নির্ণয় করা হয়। চিকিৎসক আরো কিছু বিষয়ে ধ্যান দেন, যেমন রোগীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, হজমের ক্ষমতা, কোষ, পেশী ও ধাতু ইত্যাদি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও অণুধাবন করেন আক্রান্ত শারীরিক টিসুগুলি, ধাতু, কোন জায়গায় রোগ স্থিত, রোগীর রোধক্ষমতা, প্রাণশক্তি, দৈনন্দিন রুটিন এবং রোগীর ব্যক্তিগত, সামাজিক, ও অর্থনৈতিক জীবনযাত্রা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা। রোগ নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিতগুলির কয়েকটি পরীক্ষাও দরকার হয়:
- সাধারণভাবে শারীরিক পরীক্ষা
- নাড়ীর স্পন্দন পরীক্ষা
- মূত্র পরীক্ষা
- মল পরীক্ষা
- জিহ্বা এবং চোখ পরীক্ষা
- চামড়া এবং কান পরীক্ষা, স্পর্শেন্দ্রিয় এবং শ্রবনেন্দ্রিয় এর ক্রিয়াকলাপ পরীক্ষা
চিকিৎসা
[সম্পাদনা]আরোগ্য বিদ্যার মূল কথাই হল যে সেটাই সঠিক চিকিত্সা যা রোগীকে সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেয় এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক যিনি রোগীকে রোগমুক্ত করেন। আয়ুর্বেদের মূল উদ্দেশ্য হল স্বাস্থ্যরক্ষা ও তার উন্নতি, রোগরোধ ও তার সঠিক নিরাময়।[১০]
চিকিৎসার প্রধান বিষয় হল শরীরের পঞ্চকর্মের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যে ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে তার কারণ অণুসন্ধান করে, তার রোধ করে পূর্বাবস্থায় ফেরানো। ঔষধ, পুষ্টিকর খাদ্য, জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে শরীরে উপযুক্ত শক্তি যুগিয়ে এটা করা সম্ভব যাতে ভবিষ্যতেও রোগ প্রভাবিত করতে না পারে।
রোগের চিকিৎসা সাধারণত সঠিক ঔষধ, খাদ্য ও উপযুক্ত ক্রিয়াকলাপ দ্বারা করা হয়। উপরে তিনটির প্রয়োগ দুই রকমভাবে করা হয়। একটা পদ্ধতিতে উপায় তিনটি রোগের এটিওলোজিক্যাল বিষয়সমূহ এবং প্রকাশের বিরুদ্ধতা করে আক্রমণ করে। দ্বিতীয় পদ্ধতিটিতে ওষুধ, খাদ্য এবং ক্রিয়াকলাপকে ঐ তিনটি উপায়কেই এটিওলোজিক্যাল বিষয়সমূহ এবং প্রকাশের একই প্রভাবের জন্য লাগানো হয়। এই দুই ধরনকে বলা হয় ভিপ্রীতা এবং ভিপ্রীতার্থকারী চিকিৎসা।
সফল চিকিত্সা প্রদানের জন্য চারটি জিনিস অবশ্য প্রয়োজনীয়। ঐগুলো হচ্ছে:
- চিকিৎসক
- ঔষধ
- পরিসেবিকা
- রোগী
গুরুত্বের দিক দিয়ে প্রথম স্থান চিকিৎসকের। তার যথাযথ ব্যবহারিক ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, মানবিক বোধ ও সুদ্ধ মন অত্যন্ত জরুরী। তার চিকিৎসাবিদ্যাকে যথেষ্ট নম্রতা ও বিদগ্ধতার সাথে মনবজাতির কল্যাণে ব্যয় করা উচিত। খাদ্য ও ঔষধের গুরুত্ব এর পরেই আসে। এগুলি অতি উন্নত মানের, সঠিক পদ্ধতিতে তৈরী এবং সর্বসাধারণের জন্য, সর্বত্র পাওয়া যাওয়া উচিত। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের কে কবিরাজ বলা হয়।
সব সফল চিকিৎসার তৃতীয় উপাদান হল সেবাদানকারী লোকজনের যাদের সেবার ভাল জ্ঞান থাকা উচিত, তাদের কাজের দক্ষতা থাকা উচিত, পরিচ্ছন্ন ও প্রায়োগিক জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর পরে আসে রোগীর ভূমিকা, তাকে যথেষ্ট বাধ্য ও সহযোগিতাপূর্ণ হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মত চলা উচিত, রোগ সম্পর্কে বলতে পারা উচিত এবং চিকিৎসার জন্য যা সহায়তা দরকার দেওয়া উচিত।[৯][১৩][১৪] রোগ শুরুর বিভিন্ন উপসর্গ থেকে শুরু করে পুরোপুরি প্রকাশ পর্যন্ত নানা কারণগুলির বিশ্লেষণের জন্য আয়ুর্বেদের সুস্পষ্ট নিয়মাবলী বা বিবরণ আছে। এর মাধ্যমে রোগের গোপন উপসর্গের পূর্বাভাসের আগেই তার আবির্ভাব সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায় যেটা আয়ুর্বেদের বিশেষ সুবিধা। এর ফলে রোগের গোড়া থেকেই ঔষধের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করা বা পরে রোগের তীব্রতাকে রোধ করে যথাযথ আরোগ্য বিদ্যার প্রয়োগে পীড়ার প্রকোপকে সমূলে বিনাশ করা যায়।[১৫]
চিকিৎসার ধরণসমূহ
[সম্পাদনা]শোধন চিকিৎসা (বিশুদ্ধিকরণ চিকিৎসা)
[সম্পাদনা]এই চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণগুলি দুর করে চিকিত্সা করা হয়। এই পদ্ধতিতে শরীরের ভিতর ও বাহিরের শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। সাধারণ পদ্ধতিগুলি হল পঞ্চকর্ম(বমনকারক ঔষধ, বিরেচন, গুহ্যদেশে প্রক্ষিপ্ত তৈল ঔষধ, মলদ্বারে প্রবেশ করানো তরল ঔষধ এবং নাসিকার মধ্যে দিয়ে দেওয়ার ঔষধ।[৯][১৩] পঞ্চকর্মপূর্ব পদ্ধতিসমূহ (বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীন ওলিশন এবং কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত ঘামের মাধ্যমে চিকিত্সা)- পঞ্চকর্ম চিকিৎসায় শরীরের রাসায়ণিক প্রক্রিয়ার যথাযথ পরিচালনার মাধ্যমে চিকিত্সা করা হয়। প্রয়োজনীয় শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে আরোগ্য আনা হয়। স্নায়ুরোগের জন্য, অস্থি ও মাংসপেশীর অসুখে, কিছু ধমণী ও স্নায়ু-ধমণী সংক্রান্ত অবস্থায়, শ্বাস-প্রশ্বাস ও পাচন প্রক্রিয়ার অসুখে এই চিকিৎসা বিশেষ করে উপযোগী হয়।
শমন চিকিৎসা(প্রশমণকারী চিকিৎসা)
[সম্পাদনা]শমন চিকিৎসায় রোগে আক্রান্ত দোষগুলিকে দমন করা হয়। যে পদ্ধতিতে দূষিত ‘দোষ’ বা শরীরের ভারসাম্য নষ্ট না করে পূর্বাবস্থায় ফেরে তাকে শমণ চিকিৎসা বলে। ক্ষুধার উদ্রেক ও হজমের মাধ্যমে, ব্যয়াম ও আলো হাওয়ায় শরীরকে উজ্জীবিত করে এই চিকিত্সা করা হয়। এতে রোগ উপশমকারী ও বেদনা নাশক ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
পথ্য ব্যবস্থা (ক্রিয়াকলাপ এবং খাদ্যাভাসের নিয়মাবলী)
[সম্পাদনা]দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ক্রিয়াকর্ম, অভ্যাস ও আবেগজনিত অবস্থা সংক্রান্ত উচিত অণুচিৎ বিষয়ে ইঙ্গিতসমূহ পথ্য ব্যবস্থার অন্তর্গত। থেরাপেটিক পরিমাপ ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়াতে এবং প্যাথোজেনিক প্রক্রিয়াকে বাধা প্রদান করতে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়। দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের উপর নিষেধাবলী জারি করে অগ্নিকে উদ্দিপীত করা এবং খাদ্যবস্তুর ভালভাবে হজম করানোর মাধ্যমে কলাসমূহের শক্তি লাভই হল এই ব্যবস্থার লক্ষ্য।
নিদান পরিবর্জন(অসুখ হওয়া ও অসুখের বৃদ্ধিকারক কারণগুলির বর্জন)
[সম্পাদনা]নিদানবর্জন হল শরীর রোগগ্রস্ত হওয়ার যেসব কারণসমূহ দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় বর্তমান, সেগুলির পরিহার। যে সকল কারণে রোগগ্রস্ত শরীর আরো রোগগ্রস্ত হতে পারে, সেকারণগুলিকে পরিত্যাগ/পরিবর্তন করাও এর অন্তর্গত।
সত্ববজায়(মানসিক রোগের চিকিৎসা)
[সম্পাদনা]সত্ববজায় প্রধানত মানসিক অসুবিধায় বেশি কাজ করে। মনকে অস্বাস্থ্যকর বস্তুর কামনা থেকে মুক্ত রাখা, সাহস, স্মৃতিশক্তি, বিদ্যা ও মনোবিজ্ঞান চর্চা অনেক বিশদভাবে আয়ুর্বেদে বর্ণিত আছে এবং মানসিক রোগের চিকিৎসার অনেক বিভিন্ন পদ্ধতির উল্লেখ আছে।[১৬]
রসায়ন চিকিৎসা(আনাক্রম্যতা এবং পুনর্যৌবনপ্রাপ্তির ঔষধ)
[সম্পাদনা]রসায়ন চিকিৎসা মানবদেহে শক্তি ও প্রাণশক্তি আনয়নের চিকিৎসা। শারীরিক কাঠামোর দৃঢ়তা স্মৃতিশক্তির বৃদ্ধি, বুদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, যৌবনজ়্যোতি অক্ষুণ্ণ রাখা এবং শরীর ও ইন্দ্রীয় সমূহে পূর্ণমাত্রায় শক্তি সংরক্ষণ - রসায়ন চিকিত্সার অন্যতম উপকারিতা। অসময়ে শরীরের ক্ষয় প্রতিরোধ করা ও ব্যক্তিবিশেষের সামগ্রিক সুস্বাস্থ্য অর্জনে রসায়ন চিকিত্সা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
পথ্য ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা
[সম্পাদনা]আয়ুর্বেদে চিকিৎসা হিসাবে খাদ্যাভ্যাসের নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে মানব দেহকে খাদ্যের ফলস্বরূপ ধরা হয়। মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এবং মন মেজাজ সবই তার খাদ্যের মানের উপর নির্ভরশীল। মানব দেহে খাদ্য প্রথমে ‘চাইল’ বা ‘রস’ এ পরিবর্তিত হয় এবং তারপর যথাক্রমে বিভিন্ন প্রক্রিয়া দ্বারা রক্ত, পেশী, চর্বি, হাড়, হাড়ের মজ্জা, পুনর্জননের উপাদান এবং ওজাস এ রুপান্তরিত হয়। কাজেই খাদ্য হল দেহের সমস্ত রাসায়নিক প্রক্রিয়া এবং জীবনী শক্তির মূল। খাদ্যে পুষ্টির অভাব বা বেঠিক রুপান্তর অনেক রকম রোগের অবস্থার সৃষ্টি করে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]আধুনিক আয়ুর্বেদী উৎস্য অনুযায়ী, আয়ুর্বেদ এর উৎস্য শনাক্ত করা যায় প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৬,০০০ অব্দে।[১৭][১৮][১৯] তখন একটি মৌখিক রীতি হিসেবে এর উদ্ভব হয়েছিল। আয়ুর্বেদের কিছু ধারণা সিন্ধু সভ্যতার সময়েও ছিল।[২০][২১] আয়ুর্বেদের প্রথম নথিবদ্ধ আকার বিবর্তিত হয় বেদ থেকে।[১৯][২২] বৈদিক পরম্পরায় আয়ুর্বেদ হচ্ছে একটি উপবেদ (সহায়ক জ্ঞান)। অথর্ববেদে আয়ুর্বেদ এর উৎস্য পাওয়া যায়।[২৩] অথর্ববেদে আয়ুর্বেদ সংক্রান্ত ১১৪টি স্ত্রোত্র রয়েছে যেখানে রোগের যাদুবিদ্যাগত চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে। আয়ুর্বেদের উদ্ভব নিয়ে বিভিন্ন কিংবদন্তী রয়েছে, যেমন ধন্বন্তরী (বা দিবোদাস) ব্রহ্মার দ্বারা আয়ুর্বেদ লাভ করেন।[২৪][২৫][২৬] এই কিংবদন্তিও প্রচলিত যে, অগ্নিবেশ মুনির হারিয়ে যাওয়া রচনার এর অবদানে আয়ুর্বেদের উৎপত্তি।[২৭]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Meulenbeld, Gerrit Jan (১৯৯৯)। "Introduction"। A History of Indian Medical Literature। Groningen: Egbert Forsten। আইএসবিএন 978-90-6980-124-7।
- ↑ Beall, Jeffrey (২০১৮)। "Scientific soundness and the problem of predatory journals"। Kaufman, Allison B.; Kaufman, James C.। Pseudoscience: The Conspiracy Against Science। MIT Press। পৃষ্ঠা 293। আইএসবিএন 978-0-262-03742-6। ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০।
Ayurveda, a traditional Indian medicine, is the subject of more than a dozen, with some of these 'scholarly' journals devoted to Ayurveda alone..., others to Ayurveda and some other pseudoscience....Most current Ayurveda research can be classified as 'tooth fairy science,' research that accepts as its premise something not scientifically known to exist....Ayurveda is a long-standing system of beliefs and traditions, but its claimed effects have not been scientifically proven. Most Ayurveda researchers might as well be studying the tooth fairy. The German publisher Wolters Kluwer bought the Indian open-access publisher Medknow in 2011....It acquired its entire fleet of journals, including those devoted to pseudoscience topics such as An International Quarterly Journal of Research in Ayurveda.
- ↑ Semple D, Smyth R (২০১৯)। "Chapter 1: Thinking about psychiatry"। Oxford Handbook of Psychiatry (4th সংস্করণ)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 24। আইএসবিএন 978-0-19-879555-1। ডিওআই:10.1093/med/9780198795551.003.0001। ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০২০।
These pseudoscientific theories may...confuse metaphysical with empirical claims (e.g....Ayurvedic medicine)
(সদস্যতা প্রয়োজনীয়) - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Quack-2011
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Wells, John C. (২০০৯)। Longman Pronunciation Dictionary। London: Pearson Longman।
- ↑ Wujastyk (2003)
- ↑ "Ayurvedic medicine"। Cancer Research UK। ২৪ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০২২।
There is no scientific evidence to prove that Ayurvedic medicine can treat or cure cancer. Researchers have found that some Ayurvedic treatments can help relieve cancer symptoms. It can also improve quality of life.
- ↑ Miller, Kelli (মার্চ ২০, ২০২১)। "What Is Ayurveda?"। WebMD। Medically Reviewed by Melinda Ratini। ৪ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০২০।
- ↑ ক খ গ Saper, R. B.; Phillips, R. S.; ও অন্যান্য (২০০৮)। "Lead, Mercury, and Arsenic in US- and Indian-manufactured ayurvedic Medicines Sold via the Internet"। Journal of the American Medical Association। 300 (8): 915–923। ডিওআই:10.1001/jama.300.8.915। পিএমআইডি 18728265। পিএমসি 2755247 ।
- ↑ ক খ Valiathan, M. S. (২০০৬)। "Ayurveda: Putting the House in Order"। Current Science। Indian Academy of Sciences। 90 (1): 5–6।
- ↑ [১]
- ↑ http://iim.cmb.ac.lk/
- ↑ ক খ Ellin, Abby (সেপ্টেম্বর ১৭, ২০০৮)। "Skin Deep: Ancient, but How Safe?"। New York Times। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১৯, ২০০৮।
A report in the August 27 issue of The Journal of the American Medical Association found that nearly 21% of 193 ayurvedic herbal supplements bought online, produced in both India and the United States, contained lead, mercury or arsenic.
- ↑ Szabo, Liz (আগস্ট ২৬, ২০০৮)। "Study Finds Toxins in Some Herbal Medicines"। USA Today। McLean, VA: Gannett Co।
- ↑ Saper, R. B.; Kales, S. N.; Paquin, J.; ও অন্যান্য (২০০৪)। "Heavy Metal Content of Ayurveda Herbal Medicine Products"। Journal of the American Medical Association। 292 (23): 2868–2673। ডিওআই:10.1001/jama.292.23.2868। পিএমআইডি 15598918।
- ↑ Akhondzadeh, S. (২০০৩)। "Salvia officinalis Extract in the Treatment of Patients with Mild to Moderate Alzheimer's Disease: A Double Blind, Randomized and Placebo-controlled Trial"। Journal of Clinical Pharmacy and Therapeutics। 28 (1): 53–59। ডিওআই:10.1046/j.1365-2710.2003.00463.x। পিএমআইডি 12605619। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ Ernst, Edzard (২০০৭-০১-০১)। Complementary Therapies for Pain Management: An Evidence-based Approach। Elsevier Health Sciences। পৃষ্ঠা 108। আইএসবিএন 9780723434009।
Ayurveda evolved in India some 8000 years ago and is often quoted as the oldest medical system in the world
- ↑ Jagjit Singh Chopra; Sudesh Prabhakar (১৯৯৪)। The Oxford Medical Companion। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 586।
Ayurveda.... can be traced back about 8000 years
- ↑ ক খ Elizabeth R. Mackenzie; Birgit Rakel (২০০৬)। Complementary and Alternative Medicine for Older Adults: A Guide to Holistic Approaches to Healthy Aging। Springer। পৃষ্ঠা 215। আইএসবিএন 9780826138064।
- ↑ Issues in Pharmaceuticals by Disease, Disorder, or Organ System: 2011 Edition। ২০১২-০১-০৯। পৃষ্ঠা 9। আইএসবিএন 9781464967566।
- ↑ Robert Svoboda। Ayurveda: Life, Health and Longevity। Penguin।
- ↑ T.S.S. Dikshith (২০০৮)। Safe Use of Chemicals: A Practical Guide। CRC Press। পৃষ্ঠা 16। আইএসবিএন 9781420080513।
- ↑ Narayanaswamy, V (১৯৮১)। "Origin and Development of Ayurveda: (A Brief History)"। Ancient Science of Life। 1 (1): 1–7। পিএমআইডি 22556454। পিএমসি 3336651 ।
- ↑ Dhanvantari. (2010). In Encyclopædia Britannica. Retrieved 4 August 2010, from Encyclopædia Britannica Online: http://www.britannica.com/EBchecked/topic/160641/Dhanvantari
- ↑ Underwood & Rhodes (2008)
- ↑ Singh, Rana P. B.; Rana, Pravin S. (২০০২)। Banaras Region: A Spiritual and Cultural Guide। Varanasi, India: Indica Books। পৃষ্ঠা 31। আইএসবিএন 978-81-86569-24-5।
- ↑ Ṭhākara, Vināyaka Jayānanda (১৯৮৯)। Methodology of Research in Ayurveda। Jamnagar, India: Gujarat Ayurved University Press। পৃষ্ঠা 7।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- কার্লিতে আয়ুর্বেদ (ইংরেজি)
- National Library of Ayurveda Medicine
- Department of Ayurveda, Yoga & Naturopathy, Unani, Siddha and Homoeopathy (AYUSH)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] - National Portal of India