বিষয়বস্তুতে চলুন

আইয়ুবীয় রাজবংশ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

الأيوبيون
ئەیووبی
Eyûbî
১১৭১–১২৬০/১৩৪১
আইয়ুবীয়ের জাতীয় পতাকা
বামে: আইয়ুবীয় রাজবংশের পতাকা
ডানে: সালাহউদ্দিনের ব্যক্তিগত নিশানার সম্পাদিত চিত্র
সালাহউদ্দিনের মৃত্যুর সময়ে ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে আইয়ুবীয় মিশরের সালতানাত (গোলাপী রঙ)
সালাহউদ্দিনের মৃত্যুর সময়ে ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে আইয়ুবীয় মিশরের সালতানাত (গোলাপী রঙ)
অবস্থাসার্বভৌম রাষ্ট্র
(১১৭১–১২৬০)
রাজধানী
প্রচলিত ভাষা
ধর্ম
[]
সরকারআব্বাসীয় খিলাফতের অধীনে সালতানাত (রাজকীয় মৈত্রী)[]
সুলতান 
• ১১৭৪–১১৯৩
সালাহউদ্দিন (প্রথম)
• ১১৯৩–১১৯৮
আজিজ
• ১১৯৮–১২০০
মানসুর
• ১২০০–১২১৮
প্রথম আদিল
• ১২১৮–১২৩৮
কামিল
• ১২৩৮–১২৪০
দ্বিতীয় আদিল
• ১২৪০–১২৪৯
সালিহ আইয়ুব
• ১২৫০–১২৫০
শাজারাতুদ দুর
• ১২৫০–১২৫৪
আশরাফ
ইতিহাস 
• প্রতিষ্ঠা
১১৭১
• বিলুপ্ত
১২৬০/১৩৪১
আয়তন
১১৯০ প্রায়.[]২০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৭,৭০,০০০ বর্গমাইল)
১২০০ প্রায়[]১৭,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৬,৬০,০০০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা
• ১২শ শতক
৭,২০০,০০০ (প্রায়)
মুদ্রাদিনার
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
ফাতিমীয় খিলাফত
জেনগি রাজবংশ
জেরুজালেম রাজ্য
জুরাইদ
জর্জিয়া রাজ্য
আর্মেনীয় শাহ
আরতুকিদ
মামলুক সালতানাত (কায়রো)
রাসূলীয় রাজবংশ
হাসানকাইফ আমিরাত
দনবলি রাজত্ব
সিরওয়ান আমিরাত
কিলিস আমরিাত
বিঙ্গুল আমিরাত
বর্তমানে যার অংশ
আইয়ুবীয় রাজবংশের একটি শাখা হিসন কাইফাতে ১৬শ শতক পর্যন্ত শাসন করেছে।

আইয়ুবি শাসকদের ভাষাসমূহের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে নিচে ধর্ম, ভাষা এবং জাতিতত্ত্ব অনুচ্ছেদ দেখুন।
আইয়ুবি সাম্রাজ্যের পূর্ণ অঞ্চলের জনসংখ্যা অজ্ঞাত। এই জনসংখ্যার হিসাবে শুধুমাত্র মিশর, সিরিয়া, উত্তর ইরাক, ফিলিস্তিন আর পূর্ব জর্ডান অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য আইয়ুবি সাম্রাজ্যের অঞ্চল ইয়েমেন, হিজায, নুবিয়া এবং পূর্ব লিবিয়া অন্তর্ভুক্ত নয়।

আইয়ুবীয় রাজবংশ (আরবি: الأيوبيون al-Ayyūbīyūn; কুর্দি: ئەیووبیەکان ,Eyûbiyan) সালাহুদ্দিন মিশরে ১১৭১ খ্রিস্টাব্দে মিসরের ফাতিমীয় খিলাফতকে বিলুপ্ত করে মধ্যযুগীয় মিসরের সালতানাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেটি মূলতঃ কুর্দি জাতির[][][১০][১১] একটি সুন্নি মুসলিম জনগোষ্ঠী।

পটভূমি

[সম্পাদনা]

সালাহুদ্দিন মূলতঃ সিরিয়ার নুরুদ্দিনের অধীনে চাকরি করতেন। নুরুদ্দিনের সৈন্যদলকে ফাতিমীয় মিসরে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে তিনি উজির হিসেবে পদোন্নতি পান। নুরুদ্দিনের মৃত্যুর পর সালাহুদ্দিন নিজেকে প্রথম মিসরের সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। নিজেকে সুলতান ঘোষণা করে তিনি দ্রুতগতিতে নিজের সালতানাতের সীমানা বৃদ্ধি করতে থাকেন। মিসরের সীমান্ত পেরিয়ে পূর্বসুরী নুরুদ্দিনের ভূমিসহ লেভান্ত, হিজায, ইয়েমেন, উত্তর নুবিয়া, তারাবুলুস, বারকাহ, দক্ষিণ আনাতোলিয়া, কুর্দীদের জাতীয় ভূমি উত্তর ইরাক পর্যন্ত প্রসারিত করেন। নিজের সালতানাতকে হিজাযের অন্তর্ভুক্ত করায় তিনিই সর্বপ্রথম খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন উপাধিটি ধারণ করেন।[১২][১৩] (মক্কা ও মদিনার উভয় মসজিদ হিজাযের অন্তভুক্ত।) ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে আরব মুসলিম ভূমিগুলো একত্রিত করার জন্য সালাহউদ্দীনের নিজ শাসনের প্রথম দশ বছরে পরিচালনা করা সামরিক অভিযানগুলো তার সালতানাতের সাড়ে তিন শতাব্দীর জন্য সাধারণ সীমানা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি তৈরী করে দেয়। জেরুজালেম রাজ্যসহ অধিকাংশ ক্রুসেডার রাষ্ট্রসমূহ সালাহুদ্দিনের হাতেই ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে হিত্তিনের যুদ্ধে পরাস্ত হয়েছিল। যদিও ক্রুসেডাররা ১১৯০ এর দশকে ফিলিস্তিনের উপকূল পুনরায় দখল করে নিয়েছিল।

১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে সালাহুদ্দিনের মৃত্যুর পর তার সন্তানের সালতানাতের ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। কিন্তু সালাহুদ্দিনের ভাই প্রথম আদিল ১২০০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান হন। পরবর্তী সকল আইয়ুবীয় সুলতানরা তারই বংশধর ছিলেন। ১২৩০ এর দশকে সিরিয়ার আমিররা মিসর এবং আইয়ুবীয় রাজত্ব থেকে স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ১২৪৭ খ্রিস্টাব্দে সালিহ আইয়ুব আলেপ্পো ব্যতীত সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকা দখল করে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে ততদিনে ইয়েমেন, হিজায আর মেসোপটেমিয়ার কিছু অংশের স্থানীয় রাজবংশের লোকেরা সেসব অঞ্চল থেকে আইয়ুবীয়দের ক্ষমতা লুপ্ত করেছিল। ১২৪৯ খ্রিস্টাব্দে সালিহ আইয়ুবের মৃত্যুর পর তার সন্তান মুয়াজ্জম তুরানশাহ তার উত্তরসূরী নির্বাচিত হন। কিন্তু সামান্য কিছুদিন পরেই তাকে তার মামলুক জেনারেলরা উৎখাত করেন। তারা তখন নীল বদ্বীপে ক্রুসেডারদের আক্রমণকে প্রতিহত করেছিল। এই ঘটনা মিশরের কার্যকরী আইয়ুবীয় ক্ষমতা শেষ করে দেয়। আলেপ্পোর আমির নাসির ইউসুফের নেতৃত্বে সিরিয়ার আমিরদের একটি দল মিশরকে আইয়ুবীয়দের অধীনে রাখার চেষ্টা করলেও সেটা ব্যর্থ হয়। ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গোলরা আলেপ্পো দখল করে নেয় এবং খুব দ্রুতই আইয়ুবীয়দের বাকি থাকা অঞ্চলগুলোও দখলে নিয়ে নেয়। কিন্তু খুব দ্রুতই মামলুকরা সেসব অঞ্চল মঙ্গোলদের হাত থেকে ফিরিয়ে নেয়। শুধুমাত্র হামায় ১৩৪১ খ্রিস্টাব্দে আইয়ুবীয়দের পদত্যাগের আগপর্যন্ত সেখানে মামলুক কর্তৃক আইয়ুবীয়দের ক্ষমতা বজায় থাকে।

খুব কম সময় রাজত্ব করলেও আইয়ুবীয়রা এই অঞ্চলে খুব পরিবর্তনমূলক প্রভাব ফেলেছিল। তাদের রাজত্বের পূর্বে মিশর ফাতেমীয়দের অধীনে শিয়াদের খিলাফত হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কর্তৃত্বে ছিল। কিন্তু আইয়ুবীয়দের ক্ষমতাগ্রহণের পরে মিশর প্রভাবশালী সুন্নী রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে গড়ে উঠে। এছাড়া পুরো আরবের, বরং মুসলিম সাম্রাজ্যসমূহে এটি অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে যায়। আইয়ুবীয় শাসন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির যুগের সূচনা করে। তাদের প্রদত্ত সুযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় সুন্নী মুসলিমদের বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকলাপের পুনরায় উত্থানের সূচনা হয়। এই সংক্ষিপ্ত সময়েই তাদের প্রধান শহরগুলোতে অসংখ্য মাদরাসা নির্মাণের মাধ্যমে তারা এই অঞ্চলে সু্ন্নী মুসলিমদের আধিপত্যকে জোরালোভাবে শক্তিশালী করে। তারা এমন সম্মানের একটি জায়গা হিসেবে মিশরকে প্রতিষ্ঠা করেছিল যে, মামলুকদের হাতে তাদের পতনের পরও তাদের সীমানা করে দেয়া সালতানাত আরো ২৬৭ বছর মিশর, লেভান্ত, হিজায এবং ইয়েমেনে মিশর সালতানাতের ক্ষমতা বজায় থাকে। শেষপর্যন্ত ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয়দের হাতে মামলুকদের পতন ঘটলে মিশর তার প্রাধান্য হারায়।

সালাহুদ্দিন জেরুজালেম পুনরুদ্ধারে প্রধান কৃতিত্ব রাখেন। ক্রুসেডাররা এই বিজয়ের ৯৯ বছর পূর্বে খোদ মিশর শহর পর্যন্ত দখল করে ফেলেছিল। এত শক্তিশালী রাজ্যকে বিজয় করার জন্য সালাহউদ্দীনকে তার সালতানাতের অধীন ছিল এমন বর্তমান দেশগুলোতে বর্তমান সময়েও জাতীয় বীর হিসেবেই পরিচিত। বিশেষতঃ মিশর, সিরিয়া, ফিলিস্তিন আর তার জন্মভূমি ইরাকে। সিরিয়া বাদে উল্লেখিত প্রতিটি দেশই তার আভিজাতিক ঈগলকে তাদের জাতীয় কোট অব আর্মস হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

উদ্ভব

[সম্পাদনা]
সালাহুদ্দিনের আসল ঈগলের পরিলেখ। কায়রো দূর্গে, মিশর

আইয়ুবীয় রাজবংশের পূর্বপুরুষ নাজমুদ্দিন আইয়ুবের পিতা শাযী কুর্দী রাওয়াদিয়া গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। রাওয়াদিয়া গোত্র হাযাবানি গোত্রের অন্তর্গত ছিল।[১৪] আইয়ুবের পূর্বপুরষরা উত্তর আর্মেনিয়ার দাবিল বা দিভিন শহরে বসতি স্থাপন করেছিলেন।[]রাওয়াদিয়ারা দিভিন শহরে প্রভাবশালী কুর্দী গোষ্ঠী হিসেবেই প্রসিদ্ধ ছিল। তারা রাজনৈতিক ও সামরিক অভিজাতদের অংশ ছিল। তুর্কী জেনারেলরা দিভিন শহর কুর্দী রাজা থেকে দখলে নিয়ে নিলে শহরের পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যায়। শাযী তার পুত্র আইয়ুব ও আসাদুদ্দীন শিরকুহকে সাথে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন।[১৫] সেলজুকদের পক্ষ থেকে উত্তর মেসোপটেমিয়ার সামরিক শাসক মুজাহিদুদ্দীন বেহরোজ তার বন্ধু ছিলেন। তিনি শাযীকে আমন্ত্রণ করেন এবং তিকরিতের শাসক হিসেবে নিয়োগ দেন। শাযীর মৃত্যুর পর তার সন্তান আইয়ুব শহরের শাসনে তার উত্তরাধিকার হিসেবে নিযুক্ত হন, আর তার ভাই শিরকুহ তার সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান। তারা দুই ভাই মিলে শহরের বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে সমাধান করেন। এরফলে তারা খুব দ্রুতই শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।[১৬] এরমধ্যে একটি যুদ্ধে মসুলের শাসক ইমাদউদ্দিন জেনগি আব্বাসীয় খলীফা মুসতারশিদ ও বেহরুজের কাছে পরাজিত হন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পশ্চাদপসরণের সময়ে জেনগি তিকরিত হয়ে মসুল পৌঁছার চিন্তা করেন। তিনি আইয়ুবের কাছে এইকাজে সহায়তা ও নিরাপত্তা চান। আইয়ুব তাকে সহায়তা করেন এবং দজলা নদীতে নৌকায় করে তাকে নিরাপদে মসুল পৌঁছে দেন।[১৭]

জেনগিকে সহায়তা করার অভিযোগে আব্বাসীয় কর্তৃপক্ষ আইয়ুবের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করে। এদিকে আরেকটি ভিন্ন ঘটনায় বেহরুজের সাথেও তার ভাইয়ের শত্রুতা সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি এমন, বেহরুজের একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি একজন মহিলাকে যৌন নির্যাতন করেছিল। যার ফলে শিরকুহ তাকে হত্যা করেন। এই উভয় ঘটনার প্রভাবে আব্বাসীয় দরবার থেকে আইয়ুব এবং শিরকুহ উভয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু তারা গ্রেফতার হবার আগেই তিকরিত থেকে পলায়ন করে মসুল চলে যান। এই ঘটনা ১১৩৮ খ্রিস্টাব্দের।[১৮] তারা মসুল পৌঁছলে জেনগি তাদের সকল বন্দোবস্ত করে দেন। তাদেরকে নিজের কাজে নিযুক্ত করে দেন। আইয়ুব বালবেকের সেনাপতি নিযুক্ত হন আর শিরকুহকে জেনগির পুত্র নুরউদ্দিনের বাহিনীতে যুক্ত করা হয়। ইতিহাসবিদ আবদুল আলীর মতে, জেনগি পরিবারের তত্ত্বাবধান ও পৃষ্ঠপোষকতার ফলেই আইয়ুবীয় পরিবার প্রসিদ্ধি লাভ করে।[১৮]

মিশরে প্রতিষ্ঠা

[সম্পাদনা]
সালাহুদ্দিনের চিত্র অঙ্কিত একটি দিরহাম। আনু. ১১৮৯ খ্রি.

১১৬৪ খ্রিস্টাব্দে নুরউদ্দিন নৈরাজ্যপূর্ণ মিশরে ক্রুসেডারদের শক্ত অবস্থান তৈরিতে বাঁধা দেয়ার জন্য শিরকুহকে একটি বাহিনীসহ প্রেরণ করেন। শিরকুহ তখন আইয়ুবপুত্র সালাহুদ্দিনকে একজন কমান্ডিং অফিসার হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন।[১৯] তারা সফলভাবে মিশরের উজির দিরগামকে পরাজিত করেন এবং তার পূর্বসূরী শাওয়ারকে পুনঃস্থাপিত করেন। শাওয়ার শিরকুহকে সেনাবাহিনী নিয়ে মিশর ছেড়ে যেতে বলেন। কিন্তু শিরকুহ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, যতক্ষণ নুরউদ্দিন চাইবেন তিনি অবস্থান করবেন।[২০] এইকারণে পরবর্তী কয়েক বছরে শিরকুহ এবং সালাহুদ্দিনকে ক্রুসেডার ও শাওয়ারের সংযুক্ত বাহিনীর মুখোমুখি হতে হয়। প্রথমে বিলবাইসে, তারপর গিজার নিকটবর্তী একটি ভূমিতে এরপর আলেকজান্দ্রিয়ায় তারা উভয় বাহিনীকে পরাজিত করেন। শিরকুহ মিশরের নিম্নভূমিতে ক্রুসেডারদের প্রতিহত করতে গিয়েছিলেন, যখন সালাহুদ্দিন তাকে রক্ষা করতে আলেকজান্দ্রিয়ায় লড়াই করেন।[২১]

শাওয়ার ১১৬৯ সালে মারা যান এবং শিরকুহ উজির হন, কিন্তু তিনিও সেই বছর পরে মারা যান।[২২] মধ্যযুগীয় মুসলিম ইতিহাসবিদ ইবনুল আসিরের মতে, শিরকুহের মৃত্যুর পর, ফাতেমীয় খলিফা আল-আদিদ সালাহুদ্দিনকে উজির নিযুক্ত করেছিলেন কারণ সালাহুদ্দিনের চেয়ে "দুর্বল বা ছোট কেউ ছিল না" এবং "একজনও আমির তাকে মান্য করেনি বা তার সেবা করেনি"।[২৩] সালাহুদ্দিন তার কর্মজীবনে শীঘ্রই নিজেকে আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীন মনে করেন, অনেকটা নুরুদ্দিনের জন্য হতাশার কারণ যিনি মিশরের ঘটনাগুলোকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সালাহুদ্দিনের বড় ভাই তুরান শাহকে আইয়ুবীয় পরিবারের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে এবং এইভাবে মিশরে তার অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করার জন্য সালাহুদ্দিনের তত্ত্বাবধানের অনুমতি দেন। নুরুদ্দিন সালাহুদ্দিনের অনুরোধে সন্তুষ্ট হন যে, তিনি তার পিতা আইয়ুবকে তার সাথে যোগ দিতে অনুমতি দেন। যাইহোক, আইয়ুবকে প্রাথমিকভাবে মিশরে আব্বাসিদের আধিপত্য ঘোষণা করা হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য পাঠানো হয়েছিল, যেটি ফাতেমিদের উজির হিসাবে তার অবস্থানের কারণে সালাহুদ্দিন গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। যদিও নুরুদ্দিন আইয়ুবীয়দের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বর্ধিত আইয়ুবীয় পরিবারের কারণে উস্কে দিতে ব্যর্থ হন। তবে সিরিয়ার স্থানীয় গভর্নররা সালাহুদ্দিনকে পুরোপুরি সমর্থন করেননি।[২৪]

তুরান শাহকে ফাতেমীয় সেনাবাহিনীর পঞ্চাশ হাজার শক্তিশালী নুবিয়ান রেজিমেন্ট দ্বারা পরিচালিত কায়রোতে বিদ্রোহ দমন করার জন্য আদেশ দিয়ে সালাহুদ্দিন মিশরে তার নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করেন। এই সাফল্যের পর সালাহুদ্দিন তার পরিবারের সদস্যদের দেশে উচ্চ-পদস্থ পদ প্রদান করা শুরু করেন এবং শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত কায়রোতে সুন্নি মুসলিম প্রভাব বৃদ্ধি করেন। শহরে সুন্নি ইসলামের আইনশাস্ত্রের মালিকি মাযহাবের জন্য একটি মাদরাসা নির্মাণের আদেশ দেন, এবং আরেকটি ফুসতাতে শাফিঈ মাযহাবের জন্য মাদরাসা নির্মাণ করেন। তিনি নিজে শাফিঈ ছিলেন। ১১৭১ সালে আল আদিদ মারা যান এবং সালাহুদ্দিন এই ক্ষমতার শূন্যতার সুযোগ নিয়ে কার্যকরভাবে দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। ক্ষমতা দখলের পর তিনি বাগদাদ-ভিত্তিক আব্বাসীয় খিলাফতের প্রতি মিশরের আনুগত্য পরিবর্তন করেন যেটি সুন্নি ইসলামকে মেনে চলে।[২৫]

প্রসারণ

[সম্পাদনা]

উত্তর আফ্রিকা ও নুবিয়া বিজয়

[সম্পাদনা]

সালাহুদ্দিন ১১৭১-৭২ সালে আলেকজান্দ্রিয়ায় গিয়েছিলেন এবং শহরে অনেক সমর্থক, কিন্তু সামান্য অর্থের কারণে নিজেকে সঙ্কটের সম্মুখীন হতে দেখেছিলেন। মিশরের আইয়ুবী আমীরদের দ্বারা সেখানে একটি পারিবারিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সালাহুদ্দিনের ভ্রাতুষ্পুত্র মুযাফফর তাকিউদ্দিন উমর ৫০০ সৈন্য নিয়ে মিশরের পশ্চিমে বারকা (সাইরেনিকা) উপকূলীয় অঞ্চলের বিরুদ্ধে একটি অভিযান শুরু করবেন। অশ্বারোহী অভিযানের ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য বারকার বেদুইন উপজাতিদের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছি।, তাদের যাত্রীদের ডাকাতির জন্য তাদের তিরস্কার করা হয়েছিল এবং তাদের কর (যাকাত) প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে সেটি তাদের পশুসম্পদ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।[২৬]

১১৭২ সালের শেষের দিকে নুবিয়ার প্রাক্তন ফাতিমি সৈন্যদের দ্বারা আসওয়ান অবরোধ করা হয়েছিল এবং শহরের গভর্নর কানযুদ্দৌলা; যিনি একজন প্রাক্তন ফাতিমীয় অনুগত ছিলেন, তিনি সালাহুদ্দিনের নিকট শক্তিবৃদ্ধির অনুরোধ করেছিলেন। সালাহুদ্দিন তার অনুরোধ গ্রহণ করেন। নুবিয়ানরা আসওয়ান ত্যাগ করার পরে শক্তিবৃদ্ধি এসেছিল, কিন্তু তুরান শাহের নেতৃত্বে আইয়ুবীয় বাহিনী ইব্রিম শহর দখল করার পরে উত্তর নুবিয়ার দিকে অগ্রসর হয় এবং সেটি জয় করে। তুরান শাহ এবং তার কুর্দি সৈন্যরা সেখানে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করে। ইব্রিম থেকে তারা আশেপাশের অঞ্চলে অভিযান চালায়। ডঙ্গোলা-ভিত্তিক নুবিয়ান রাজার কাছ থেকে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পেশ করার পরে তাদের অভিযান কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। যদিও তুরান-শাহ-এর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল যুদ্ধ বন্ধ করার বিরোধী। কিন্তু পরে তিনি ডোঙ্গোলায় একজন দূত পাঠান, যিনি ফিরে তুরান-শাহকে সাধারণভাবে শহর এবং নুবিয়ার দারিদ্র্যের বর্ণনা দেন। ফলস্বরূপ আইয়ুবীয়রা তাদের ফাতেমীয় পূর্বসূরিদের মত এই অঞ্চলের দারিদ্র্যতার কারণে নুবিয়ার আরও দক্ষিণমুখী অভিযান থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছিল। কিন্তু আসওয়ান এবং উচ্চ মিশরের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে নুবিয়ার প্রয়োজন ছিল।[২৭] ১১৭৫ সালে ইব্রিমের আইয়ুবীয় গ্যারিসন মিশরে প্রত্যাহার করে।[২৮]

১১৭৪ সালে মুযাফফর উমরের অধীনে একজন সেনাপতি শরফুদ্দিন কারাকুশ তুর্কি ও বেদুইনদের একটি সেনাবাহিনী নিয়ে নরম্যানদের কাছ থেকে ত্রিপোলি জয় করেন।[২৬][২৯] পরবর্তীকালে যখন কিছু আইয়ুবী বাহিনী শামে ক্রুসেডারদের সাথে যুদ্ধ করেছিল, তখন তাদের আরেকটি বাহিনী শরফুদ্দিনের অধীনে ১১৮৮ সালে আলমোহাদদের কাছ থেকে কাইরুয়ানের নিয়ন্ত্রণ দখল করে।[২৬]

আরব বিজয়

[সম্পাদনা]

১১৭৩ সালে, সালাহুদ্দিন তুরান শাহকে ইয়েমেন এবং হেজাজ জয় করতে পাঠান। মুসলিম লেখক ইবনুল আসির এবং পরবর্তীকালে মাকরিজি লিখেছেন যে, ইয়েমেন বিজয়ের পিছনে যুক্তি ছিল একটি আইয়ুবীয়দের ভয় ছিল যে মিশর যদি নুরুদ্দিনের হাতে পড়ে, তাদেরকে দূরবর্তী অঞ্চলে আশ্রয় নিতে হতে পারে। ১১৭৪ সালের মে মাসে তুরান শাহ জাবিদ জয় করেন এবং সেই বছরই এডেন দখল করেন।[৩০] এডেন ভারত মহাসাগরে রাজবংশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর এবং ইয়েমেনের প্রধান শহর হয়ে ওঠে,[৩১] যদিও আইয়ুবীয় ইয়েমেনের সরকারী রাজধানী ছিল তাইজ।[৩২] আইয়ুবীয়দের আবির্ভাব শহরে নতুন করে সমৃদ্ধির সময়কালের সূচনা করে যা এর বাণিজ্যিক অবকাঠামোর উন্নতি, নতুন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা এবং নিজস্ব মুদ্রা তৈরি করে।[৩১] এই সমৃদ্ধির পরে আইয়ুবীরা একটি নতুন কর কার্যকর করে যা গ্যালি নৌকা দ্বারা সংগ্রহ করা হয়েছিল।[৩৩]

তুরান শাহ ১১৭৫ সালে সানার পাহাড়ী শহর জয় করে বাকি থাকা হামদানী শাসকদের তাড়িয়ে দেন।[৩০] ইয়েমেন বিজয়ের সাথে সাথে আইয়ুবীয়রা একটি উপকূলীয় নৌবহর তৈরি করেছিল। আসাকিরুল বাহরিয়া নামে, যেটি তারা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সমুদ্র উপকূলগুলোকে পাহারা দিতে এবং জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করেছিল।[৩৪] ইয়েমেন বিজয় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল কারণ আইয়ুবীয়রা পূর্ববর্তী তিনটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রকে (জাবিদ, এডেন এবং সানা) একক শক্তির অধীনে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছিল। যাইহোক, যখন তুরান শাহকে ১১৭৬ সালে ইয়েমেনে তার গভর্নর পদ থেকে বদলি করা হয়, তখন এই অঞ্চলে বিদ্রোহ শুরু হয় এবং ১১৮২ সাল পর্যন্ত এই বিদ্রোহ প্রশমিত হয়নি। অবশেষে ১১৮২ সালে সালাহুদ্দিন তার অন্য ভাই তুগতেকিন সাইফুল ইসলামকে ইয়েমেনের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত করার পর বিদ্রোহের নিষ্পত্তি হয়।[৩০] ইয়েমেনের আইয়ুবীয় নায়েব (ডেপুটি গভর্নর) উসমান জান্দজিলি তুরান শাহ ইয়েমেনে ফিরে আসার পর ১১৮০ সালে হাদরামাউতের বৃহত্তর অংশ জয় করেন।[৩৫]

ইয়েমেন থেকে, আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে মিশর থেকে, আইয়ুবীয়দের লক্ষ্য ছিল লোহিত সাগরের বাণিজ্য পথগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করা যার উপর মিশর নির্ভর করে এবং তাই হেজাজের উপর তাদের দখল শক্ত করার চেষ্টা করেছিল, যেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যবন্দর ইয়ানবু অবস্থিত ছিল।[৩৬] লোহিত সাগরের দিকে বাণিজ্যে সুবিধা করতে, আইয়ুবীরা বণিকদের সাথে লোহিত সাগর-ভারত মহাসাগরের বাণিজ্য রুট বরাবর সুবিধা তৈরি করেছিল।[৩৭] আইয়ুবীয়রা ইসলামের পবিত্র শহর মক্কামদিনার উপরও সার্বভৌমত্বের মাধ্যমে খিলাফতের মধ্যে বৈধতার দাবিকে সমর্থন করতে চেয়েছিল।[৩৬] সালাহুদ্দিন কর্তৃক গৃহীত বিজয় এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি কার্যকরভাবে এই অঞ্চলে মিশরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।[৩৭]

সিরিয়া ও মেসোপটেমিয়া বিজয়

[সম্পাদনা]

যদিও তখনও নুরুদ্দিনের একজন সামন্ত ছিলেন, কিন্তু সালাহুদ্দিন একটি ক্রমবর্ধমান স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করেছিলেন। ১১৭৪ সালে নুরুদ্দিনের মৃত্যুর পর এই স্বাধীনতা আরও প্রকাশ্যে উচ্চারিত হয়।[৩৮] এরপরেই সালাহুদ্দিন জেনগিদের কাছ থেকে সিরিয়া জয় করতে রওনা হন এবং ২৩ নভেম্বর তাকে শহরের গভর্নর দামেস্কে স্বাগত জানান। ১১৭৫ সাল নাগাদ তিনি হামা এবং হিমসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন, কিন্তু আলেপ্পো অবরোধ করার পর দখল করতে ব্যর্থ হন।[৩৯] হিমসের নিয়ন্ত্রণ ১১৭৯ সালে শিরকুহের বংশধরদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল এবং হামা সালাহুদ্দিনের ভ্রাতুষ্পুত্র মুযাফফর উমরকে দেওয়া হয়েছিল।[৪০] সালাহুদ্দিনের সাফল্য সে সময় জেনগিদের প্রধান মসুলের আমির সাইফুদ্দিনকে শঙ্কিত করেছিল, যিনি সিরিয়াকে তার পরিবারের সম্পত্তি হিসাবে বিবেচনা করতেন। তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে, সিরিয়া নুরুদ্দিনের একজন প্রাক্তন কর্মচারী দ্বারা দখল করা হচ্ছে। হামার কাছে সালাহুদ্দিনের মোকাবিলা করার জন্য তিনি একটি বাহিনী প্রস্তুত করেন। যদিও তার সৈন্যদল সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল, কিন্তু সালাহুদ্দিন এবং তার প্রবীণ সৈন্যরা সিদ্ধান্তমূলকভাবে জেনগিদের পরাজিত করেছিল।[৩৯] বিজয়ের পর সালাহুদ্দিন নিজেকে রাজা ঘোষণা করেন এবং জুমার নামাজে এবং ইসলামি মুদ্রায় সালিহ ইসমাইল মালিক (নুরুদ্দিনের কিশোর পুত্র) নামের পরিবর্তে তার নিজের নাম দ্বারা প্রতিস্থাপন করেন। আব্বাসীয় খলিফা আল মুস্তাদি সদয়ভাবে সালাহুদ্দিনের ক্ষমতা গ্রহণকে স্বাগত জানান এবং তাকে "মিশর ও সিরিয়ার সুলতান" উপাধি দেন।[৪১]

১১৭৬ সালের বসন্তে জেনগি এবং আইয়ুবীয়দের মধ্যে আরেকটি বড় সংঘর্ষ ঘটে। এবার সুলতান পর্বতের কাছাকাছি একটি গ্রামে, যেটি আলেপ্পো থেকে ১৫ কিলোমিটার (৯.৩ মা) দূরে। সালাহুদ্দিন আবারও বিজয়ী হন, কিন্তু সাইফুদ্দিন গাজি অল্পের জন্য পালাতে সক্ষম হন। আইয়ুবীয়রা উত্তরে সিরিয়ার অন্যান্য শহর যেমন মারাতুন নুমান, আজাজ, বুজা এবং মানবিজ জয় করতে অগ্রসর হয়েছিল, কিন্তু দ্বিতীয় অবরোধের সময় আলেপ্পো দখল করতে ব্যর্থ হয়েছিল। যদিও একটি চুক্তি করা হয়েছিল। যেখানে আলেপ্পোর গভর্নর গুমুশতিগিন এবং হিসনে কাইফা এবং মারদিনে তার সহযোগীরা সালাহুদ্দিনকে সিরিয়ায় আইবীয়দের রাজত্বের সার্বভৌম হিসাবে স্বীকৃতি দেবে। চুক্তি মোতাবেক সালাহুদ্দিন গুমুশতিগিন এবং সালিহ মালিককে আলেপ্পোতে তাদের শাসন অব্যাহত রাখতে অনুমতি দিয়েছিলেন।[৪২]

সালাহুদ্দিন সিরিয়ায় থাকাকালীন তার ভ্রাতা আদিল মিশর শাসন করছিলেন।[৪৩] ১১৭৪-৭৫ সালে আসওয়ানের কানযুদ দাওলা ফাতিমীয় শাসন পুনরুদ্ধারের চিন্তায় আইয়ুবীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তার পিছনে শক্তির যোগান দিচ্ছিল স্থানীয় বেদুঈন ও নুবিয়ানরা৷ এছাড়াও তারা আর্মেনীয়সহ অন্যান্য অনেক গোষ্ঠীর সহায়তা পেয়েছিল। কাকতালীয়ভাবে বা সম্ভবত সমন্বয় করেই আব্বাস বিন শাদি একইসময়ে নীলনদের পাশে কুস শহরের পুরোভাগে বিদ্রোহ শুরু করেন। কিন্তু আদিল উভয় বিদ্রোহই পর্যদুস্ত করেন।[৪৪] সেই বছরের বাকি সময় এবং ১১৭৬ সালের গোড়ার দিকে, কারাকুশ পশ্চিম উত্তর আফ্রিকায় তার অভিযান চালিয়ে যান, যা মাগরেব শাসনকারী মুওয়াহহিদিনদের সাথে আইয়ুবীয়দের সংঘাতের মধ্যে নিয়ে আসে।[২৬]

১১৭৭ সালে সালাহুদ্দিন প্রায় ২৬,০০০ সৈন্যের একটি বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ক্রুসেডার ঐতিহাসিক উইলিয়াম অফ টায়ারের মতে, জেরুজালেমের রাজ্যের বেশিরভাগ সৈন্যরা আলেপ্পোর পশ্চিমে সিরিয়ার হারেম অবরোধ করছে শুনে সালাহুদ্দিন তার সেনাবাহিনীকে দক্ষিণ ফিলিস্তিনে নিয়ে আসেন। রমলার কাছে জেরুজালেমের চতুর্থ বাল্ডউইনের অধীনে টেম্পলারদের দ্বারা আকস্মিক আক্রমণে আইয়ুবীয় সেনাবাহিনী মন্টগিসার্ডের যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং তাদের বেশিরভাগ সৈন্য নিহত হয়। পরের বছর সালাহুদ্দিন হিমসে শিবির স্থাপন করেন এবং ফররুখ শাহের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সাথে ক্রুসেডারদের বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ হয়।[৪৫] নিরুৎসাহিত হয়ে, সালাহুদ্দিন পশ্চিম থেকে ক্রুসেডার রাজ্যগুলিতে আক্রমণ করেছিলেন এবং ১১৭৯ সালে মারজ আইয়ুনের যুদ্ধে বাল্ডউইনকে পরাজিত করেছিলেন। পরের বছর, তিনি জ্যাকবের ফোর্ডের যুদ্ধে চ্যাস্টলেটের নবনির্মিত ক্রুসেডার দুর্গ ধ্বংস করেন। ১১৮২ সালের যুদ্ধের অভিযানে, কাওকাবুল হাওয়াতে বেলভোয়ার দুর্গের অনিয়মিত যুদ্ধে তিনি আবার বাল্ডউইনের সাথে লড়াই করেছিলেন।[৪৬]

১১৮২ সালের মে মাসে সালাহুদ্দিন একটি সংক্ষিপ্ত অবরোধের পর আলেপ্পো দখল করেন। শহরের তৎকালীন নতুন গভর্নর দ্বিতীয় ঈমাদুদ্দিন জেনগি তার প্রজাদের কাছে অজনপ্রিয় ছিলেন। তিনি আলেপ্পো সমর্পণ করেন যখন সালাহদিন সিনজার, রাক্কা এবং নুসাইবিনের উপর দ্বিতীয় জেনগির পূর্বের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে সম্মত হন। জেনগির এলাকাগুলো পরবর্তীতে আইয়ুবীয়দের অধীনস্থ অঞ্চল হিসাবে কাজ করে।[৪৭] আলেপ্পো আনুষ্ঠানিকভাবে ১২ জুন আইয়ুবীয়দের দখলে আসে। পরের দিন, সালাহুদ্দিন ক্রুসেডার-নিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিওকের কাছে হারিমের দিকে অগ্রসর হন এবং শহরটি দখল করেন। হারিমের গ্যারিসন তাদের নেতা সুরহাককে জোরপূর্বক বহিষ্কার করে, যাকে তখন মুযাফফরর উমর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আটক করে ছেড়ে দেন।[৪৮] আলেপ্পোর আত্মসমর্পণ এবং দ্বিতীয় জেনগির সালাহুদ্দিনের প্রতি আনুগত্যের পর মসুলের ইযযুদ্দিন মাসউদ আইয়ুবীয়দের একমাত্র প্রধান মুসলিম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাকি থাকেন। ১১৮২ সালের শরৎকালে মসুল একটি সংক্ষিপ্ত অবরোধের শিকার হয়েছিল, কিন্তু আব্বাসীয় খলিফা নাসিরের মধ্যস্থতার পর, সালাহুদ্দিন তার বাহিনী প্রত্যাহার করে নেন। মাসউদ নিজেকে মার্দিনের আর্তুকিদের সাথে সারিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। আর্তুকিদরা মাসউদের পরিবর্তে সালাহুদ্দিনের মিত্র হয়েছিলেন। ১১৮৩ সালে আরবিলও আইয়ুবীয়দের প্রতি আনুগত্য পরিবর্তন করে। মাসউদ তখন আজারবাইজানের গভর্নর পাহলাওয়ান ইবনে মুহাম্মদের সমর্থন চেয়েছিলেন এবং যদিও তিনি সাধারণত এই অঞ্চলে হস্তক্ষেপ করেন না, পাহলাওয়ানের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা সালাহুদ্দিনকে মসুলের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণ শুরু করার বিষয়ে সতর্ক করে তোলে।[৪৯]

আদিল আলেপ্পো সালাহুদ্দিনের ছেলে আফযালের নামে আর মুযাফফর উমর মিশর সালাহুদ্দিনের অন্য ছেলে আজিজ উসমানের নামে এই শর্তের সাথে শাসন করেন যে, দুই ছেলের বয়স হলে তারা দুই অঞ্চলের ক্ষমতা গ্রহণ করবে, কিন্তু কেউ মারা গেলে সালাহুদ্দিনের ভাইদের একজন তাদের জায়গা নেবে।[৫০] ১১৮৩ সালের গ্রীষ্মে, পূর্ব গালীলে ধ্বংসযজ্ঞের পর, সেখানে সালাহুদ্দিনের অভিযানের সমাপ্তি ঘটে জেজরিল উপত্যকায় আল-ফুলের যুদ্ধে তার এবং লুসিগনানের গাইয়ের অধীনস্থ ক্রুসেডারদের মধ্যে। বেশিরভাগ হাতে হাতে লড়াই সিদ্ধান্তহীনতায় শেষ হয়েছিল। দুই বাহিনী একে অপরের থেকে এক মাইল দূরে সরে যায় এবং ক্রুসেডাররা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা করার সময়, সালাহুদ্দিন গোলান মালভূমি দখল করে, ক্রুসেডারদের তাদের প্রধান সরবরাহের উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন করে। ১১৮৩ সালের অক্টোবরে এবং তারপর ১৩ আগস্ট ১১৮৪ সালে সালাহুদ্দিন এবং আদিল ক্রুসেডার-নিয়ন্ত্রিত কারাক অবরোধ করেন, কিন্তু তা দখল করতে পারেননি। পরবর্তীতে, আইয়ুবিদরা শমরিয়া আক্রমণ করেন, নাবলুস পুড়িয়ে দেন। সালাহুদ্দিন ১১৮৪ সালের সেপ্টেম্বরে দামেস্কে ফিরে আসেন এবং পরবর্তীকালে ১১৮৪-১১৮৫ সালে ক্রুসেডার রাজ্য এবং আইয়ুবী সাম্রাজ্যের মধ্যে একটি আপেক্ষিক শান্তিচুক্তি ঘটে।[৫১]

সালাহুদ্দিন ১১৮৫ সালের শেষের দিকে মসুলের বিরুদ্ধে তার শেষ আক্রমণ শুরু করেন, সম্ভবতঃ নিরাশ মাসউদের বিরুদ্ধে সহজ জয়ের আশায়। কিন্তু শহরের অপ্রত্যাশিতভাবে কঠোর প্রতিরোধ এবং একটি গুরুতর অসুস্থতার কারণে ব্যর্থ হন; যার কারণে সালাহুদ্দিন হারানে ফিরে যান। আব্বাসিদের উৎসাহে সালাহুদ্দিন এবং মাসউদ ১১৮৬ সালের মার্চ মাসে একটি চুক্তিতে আলোচনা করেন যার ফলে মসুল জেনগিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, কিন্তু অনুরোধ করা হলে আইয়ুবীয়দের সামরিক সহায়তা প্রদানের বাধ্যবাধকতা ছিল।[৫২]

ফিলিস্তিন এবং ট্রান্সজর্ডান বিজয়

[সম্পাদনা]
১১৮৭ সালে হাত্তিনের যুদ্ধে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে বিজয়ের পর কার্যত পুরো জেরুজালেম রাজ্য আইয়ুবীয়দের হাতে চলে যায়; তুর্কি এবং অন্যান্য বিদেশী সারাসেন এবং মুরদের বিরুদ্ধে ফরাসী দ্বারা বিদেশী প্যাসেজদের অঙ্কন, আনু. ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দ।

৩ জুলাই ১১৮৭ সালে সালাহুদ্দিন পূর্ব গালীলে তিবিরিয়া অবরোধ করেন এবং ক্রুসেডার সেনাবাহিনী কাফর কান্নার মাধ্যমে আইয়ুবীয়দের আক্রমণ করার চেষ্টা করে। ক্রুসেডারদের মার্চের কথা শোনার পর, সালাহুদ্দিন তার প্রহরীদের নিয়ে কাফর সাবতে তাদের প্রধান শিবিরে ফিরে যান, তিবিরিয়ায় একটি ছোট দল রেখে যান। ক্রুসেডার সেনাবাহিনীর ব্যাপারে স্পষ্টভাবে জ্ঞাত হয়ে সালাহুদ্দিন মুজাফফর উমরকে লুবিয়ার কাছে অবস্থান নিয়ে হাত্তিন থেকে ক্রুসেডারদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার নির্দেশ দেন, যখন গোকবোরি এবং তার সৈন্যরা শাজারার কাছে একটি পাহাড়ে অবস্থান করে। ৪ জুলাই ক্রুসেডাররা হর্ন অফ হাত্তিনের দিকে অগ্রসর হয় এবং মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ করে, কিন্তু তারা অভিভূত হয় এবং চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয় । যুদ্ধের চার দিন পর সালাহুদ্দিন আদিলকে ফিলিস্তিন, গালীলে এবং লেবাননের উপকূল পুনরুদ্ধারে তার সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। ৮ জুলাই ক্রুসেডারের দুর্গ সালাহুদ্দিনের হাতে দখল করা হয়, যখন তার বাহিনী নাসরৎ এবং সাফুরিয়া দখল করে; অন্যান্য ব্রিগেডরা হাইফা, সিজারিয়া, সেবাস্তিয়া এবং নাবলুস দখল করে। আর আদিল মিরাবেল এবং জাফা জয় করেন। ২৬ জুলাই সালাহুদ্দিন উপকূলে ফিরে আসেন এবং সারেপ্টা, সিডন, বৈরুত এবং জাবলেহ আত্মসমর্পণ করে।[৫৩] আগস্টে আইয়ুবীয়রা রমলা, দারুম, গাজা, বায়েত জিবরিন এবং লাতরুন জয় করে। আসকালন দখলে নেওয়া হয়েছিল ৪ সেপ্টেম্বরে।[৫৪] সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১১৮৭ সালে আইবেলিনের বালিয়ানের সাথে আলোচনার পর, আইয়ুবীয়রা জেরুজালেম অবরোধ করে এবং ২ অক্টোবর এটি দখল করে।[৫৫]

ট্রান্সজর্ডানে কারাক এবং মন্ট রিয়ালের খুব দ্রুতই পতন ঘটে, তারপর উত্তর-পূর্ব গালীলে সাফাদ পড়ে। ১১৮৭ সালের শেষের দিকে আইয়ুবীয়রা মন্টফেরাটের কনরাডের অধীনে থাকা টায়ার বাদে লেভান্টের কার্যত সমগ্র ক্রুসেডার সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছিল। ১১৮৭ সালের ডিসেম্বরে আলেপ্পো, হামা এবং মিশরের সালাহুদ্দিন এবং তার ভাইদের গ্যারিসন নিয়ে গঠিত একটি আইয়ুবী সেনাবাহিনী টায়ার অবরোধ করে। ২৯ ডিসেম্বর কনরাডের বাহিনী দ্বারা মুসলিম নৌ বহরের অর্ধেক দখল করা হয়, তারপরে শহরের উপকূলে আইয়ুবীয়দের পরাজয় ঘটে। ১১৮৮ সালের ১ জানুয়ারি, সালাহুদ্দিন একটি যুদ্ধ পরিষদের আয়োজন করেন যেখানে ত্রিপোলি থেকে প্রত্যাহারের বিষয়ে সম্মত হয়।[৫৬]

তৃতীয় ক্রুসেড

[সম্পাদনা]

পোপ অষ্টম গ্রেগরি ১১৮৯ সালের প্রথম দিকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে তৃতীয় ক্রুসেডের ডাক দেন। পবিত্র রোম সাম্রাজ্যের ফ্রেডেরিক বারবারোসা, ফ্রান্সের ফিলিপ অগাস্টাস এবং ইংল্যান্ডের রিচার্ড দ্য লায়নহার্ট জেরুজালেম পুনর্দখল করার জন্য একটি জোট গঠন করেন। এদিকে ক্রুসেডাররা এবং আইয়ুবীয়রা সেই বছর আক্কার কাছে যুদ্ধ করেছিল এবং ইউরোপ থেকে শক্তিবৃদ্ধি যোগদান করেছিল। ১১৮৯ থেকে ১১৯১ সাল পর্যন্ত, আক্কা ক্রুসেডারদের দ্বারা অবরুদ্ধ ছিল এবং প্রাথমিক মুসলিম সাফল্য সত্ত্বেও, এটি ক্রুসেডার বাহিনীর হাতে থেকে যায়। ২,৭০০ জন মুসলিম যুদ্ধবন্দীর গণহত্যা শুরু হয় এবং ক্রুসেডাররা তখন দক্ষিণে আসকালন দখল করার পরিকল্পনা করে।[৫৭]

ক্রুসেডাররা এই ক্রুসেডে রিচার্ডের একীভূত কমান্ডের অধীনে চলে যায়। রিচার্ড আরসুফের যুদ্ধে সালাহুদ্দিনকে পরাজিত করেন, যা ক্রুসেডারদের জাফা এবং উপকূলীয় ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ বিজয়ের অনুমতি দিয়েছিল, কিন্তু তারা অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। এরপর রিচার্ড ১১৯২ সালে সালাহুদ্দিনের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার মাধ্যমে জেরুজালেম রাজ্যকে জাফা এবং বৈরুতের মধ্যে একটি উপকূলীয় রেখা পুনরুদ্ধার করেন। এটি ছিল সালাহুদ্দিনের কর্মজীবনের শেষ বড় যুদ্ধের প্রচেষ্টা, কারণ তিনি পরের বছর ১১৯৩ সালে মারা যান।

সালতানাত নিয়ে ঝগড়া

[সম্পাদনা]

একটি কেন্দ্রীভূত সালতানাত প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে সালাহুদ্দিন তার সালতানাতে বংশীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সালতানাতকে তার আত্মীয়দের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলেন, পরিবারের সদস্যরা অর্ধ-স্বায়ত্তশাসিতভাবে বিভিন্ন এলাকা শাসন করেন এবং সুলতান পুরো সালতানাতের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।[৫৮] যদিও এই আমিররা আইয়ুবীয় সুলতানের প্রতি আনুগত্য করেছিলেন, কিন্তু তারা তাদের নিজস্ব অঞ্চলে আপেক্ষিক স্বাধীনতা বজায় রেখেছিলেন।[৫৯] সালাহুদ্দিনের মৃত্যুর পর, নীতিমালা অনুযায়ী যাহির আদিল থেকে আলেপ্পো গ্রহণ করেন এবং আজিজ উসমান কায়রো গ্রহণ করেন, আর সালাহুদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্র আফযাল দামেস্ক ধরে রাখেন;[৬০] যার মধ্যে ফিলিস্তিন এবং লেবাননের বেশিরভাগ অংশও অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৬১] এদিকে আদিল আল-জাজিরা (উচ্চ মেসোপটেমিয়া) অধিগ্রহণ করেন, যেখানে তিনি মসুলের জেনগিদের উপসাগরে আটকে রেখেছিলেন। ১১৯৩ সালে মসুলের মাসউদ সিনজারের দ্বিতীয় জেনগির সাথে বাহিনীতে যোগ দেন এবং জেনগি জোট আল-জাজিরা জয় করতে অভিযান শুরু করে। যাইহোক, কোন বড় ফলাফল অর্জন করার আগে মাসউদ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মসুলে ফিরে আসেন। আদিল তখন জেনগিদের অঞ্চলে আইয়ুবীদের ক্ষতি করার আগেই জেনগিকে দ্রুত শান্তি স্থাপন করতে বাধ্য করেন।[৬২] আদিলের পুত্র মুয়াযযাম কারাক এবং ট্রান্সজর্ডান দখল করে নেন।[৬০]

কিন্তু কিছুকালের মধ্যেই সালাহুদ্দিনের ছেলেরা সালতানাতের বিভাজন নিয়ে ঝগড়া শুরু করে। সালাহুদ্দিন আফযালকে দামেস্কের গভর্নর পদে নিযুক্ত করেছিলেন এই অভিপ্রায়ে যে, তার ছেলে ক্রুসেডার রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে জিহাদের প্রাধান্যের উপর জোর দেওয়ার জন্য শহরটিকে তার প্রধান আবাসস্থল হিসাবে গ্রহণ করবে। কিন্তু আফযাল মনে করেন যে দামেস্কের সাথে তার সংযুক্তি তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে ভূমিকা রেখেছে। তার পিতার অনেক অধস্তন আমির কায়রোর উদ্দেশ্যে তাকে অনভিজ্ঞ বলে দাবি করে উসমানের সঙ্গ দিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার তদবির করার জন্য শহর ছেড়েছিলেন এবং আইয়ুবীয়দের পুরানো ক্ষমতাশালীকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করেছিলেন। আদিল উসমানকে আরও উৎসাহিত করেন যাতে আফযালের অযোগ্যতা আইয়ুবীয় সালতানাতকে বিপদে ফেলতে না পারে। এইভাবে, ১১৯৪ সালে উসমান খোলাখুলিভাবে সালতানাতের দাবি করেন। ১১৯৬ সালে দামেস্কে ধারাবাহিক আক্রমণের মাধ্যমে উসমানের সিংহাসনের দাবির নিষ্পত্তি হয়েছিল, আফযালকে সালখাদে একটি নিম্ন পদের জন্য চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। আদিল উসমানের একজন লেফটেন্যান্ট হিসেবে দামেস্কে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, কিন্তু সালতানাতের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।[৬১]

কায়রোর কাছে একটি শিকার দুর্ঘটনায় উসমান মারা গেলে আফযালকে আবার সুলতান করা হয় (যদিও উসমানের পুত্র মানসুর ছিলেন মিশরের নামমাত্র শাসক), আদিল উত্তর-পূর্বে একটি অভিযানের জন্য অনুপস্থিত ছিলেন। আদিল ফিরে আসেন এবং দামেস্কের দুর্গ দখল করতে সক্ষম হন, কিন্তু তারপর আফযাল এবং আলেপ্পোর তার ভাই যাহিরের সম্মিলিত বাহিনীর একটি শক্তিশালী আক্রমণের সম্মুখীন হন। এই বাহিনী আফযালের নেতৃত্বে ভেঙে পড়ে এবং ১২০০ সালে আদিল তার আক্রমণ আবার শুরু করেন।[৬৩] উসমানের মৃত্যুর পর মামলুকদের (দাস সৈন্য) দুটি গোষ্ঠী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তারা ছিল আসাদিয়া ও সালাহিয়া, যা শিরকুহ ও সালাহুদ্দিন ক্রয় করেছিলেন। সালাহিয়া আফযালের বিরুদ্ধের সংগ্রামে আদিলকে সমর্থন করেছিল। তাদের সমর্থনে, আদিল ১২০০ সালে কায়রো জয় করেন,[৬৪] এবং আফযালকে অভ্যন্তরীণ নির্বাসন গ্রহণ করতে বাধ্য করেন।[৬৩] পরে তিনি নিজেকে মিশর ও সিরিয়ার সুলতান ঘোষণা করেন এবং দামেস্কের শাসনভার মুয়াযযামের হাতে এবং আল-জাজিরাকে তাঁর অপর পুত্র কামিলের হাতে অর্পণ করেন।[৬৪] এছাড়াও ১২০০ সালের দিকে, একজন শরীফ (ইসলামী নবী মুহাম্মদের সাথে সম্পর্কিত উপজাতীয় প্রধান), কাতাদা ইবনে ইদ্রিস, মক্কার ক্ষমতা দখল করেন এবং আদিল শহরের আমির হিসাবে স্বীকৃত হন।[৬৫]

আফযাল দামেস্ক দখল করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। আদিল ১২০১ সালে বিজয়ী হয়ে শহরে প্রবেশ করেন।[৬৩] এরপর থেকে সালাহুদ্দিনের বংশধারার পরিবর্তে আদিলের বংশধর পরবর্তী ৫০ বছর আইয়ুবীয় শাসনে আধিপত্য বিস্তার করে।[৬৩] যাইহোক, যাহির তখনও আলেপ্পো দখলে রেখেছিলেন এবং আফযালকে আনাতোলিয়া অঞ্চল দেওয়া হয়েছিল।[৬৪] আদিল তার পুত্রদের মধ্যে তার সম্পত্তি পুনঃবন্টন করেছিলেন। কামিল মিশরে তার উত্তরাধিকারী ছিলেন, আশরাফ জাজিরা পেয়েছিলেন এবং আওহাদকে দিয়ার বকর দেওয়া হয়েছিল। আওহাদ মারা গেলে আশরাফকে দিয়ার বকর দেয়া হয়েছিল।[৬৪]

আদিল ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জোরদার না হওয়ার ফলে দামেস্কের হাম্বলি ধারার ব্যক্তিরা প্রকাশ্য শত্রুতা শুরু করেন। কারণ, তিনি তাদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র একটি অভিযান শুরু করেছিলেন। আদিল বিশ্বাস করতেন যে সরাসরি যুদ্ধে ক্রুসেডার বাহিনীকে পরাজিত করা যাবে না। দীর্ঘ অভিযানে একটি সুসংগত মুসলিম জোট বজায় রাখার আবশ্যকতাও ছিল, যা ছিল সে সময়ে বেশ সমস্যাসঙ্কুল। আদিলের সময়কালে আল-জাজিরা ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে আইয়ুবিদের কর্তৃত্ব সম্প্রসারণ এবং শাহ-আরমেন অঞ্চলগুলি (পূর্ব আনাতোলিয়ায়) অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে সালতানাতের স্থিরতা বৃদ্ধি করার প্রবণতা অধিক ছিল। আব্বাসীয়রা অবশেষে ১২০৭ সালে আদিলের সুলতানের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেয়।[৬৬]

১২০৮ সালের মধ্যে জর্জিয়া রাজ্য পূর্ব আনাতোলিয়ায় আইয়ুবীয়দের শাসনকে চ্যালেঞ্জ করে এবং খিলাত (আওহাদের সম্পত্তি) অবরোধ করে । জবাবে আদিল সৈন্য একত্রিত করেন এবং ব্যক্তিগতভাবে বৃহৎ মুসলিম সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন যার মধ্যে হিমস, হামা এবং বালবেকের আমিরদের পাশাপাশি আওহাদকে সমর্থন করার জন্য অন্যান্য আইয়ুবীয় প্রদেশের দলগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল। অবরোধের সময়, জর্জীয় জেনারেল ইভান মাখারগার্ডজেলি ঘটনাক্রমে খিলাতের উপকণ্ঠে আওহাদের হাতে ধরা পড়ে এবং ১২১০ সালে জর্জীয়রা ত্রিশ বছরের যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করার পরেই মুক্তি পায়। যুদ্ধবিরতি আইয়ুবীয় আর্মেনিয়ার জন্য জর্জীয় হুমকির অবসান ঘটায়[৬৭] এবং ভান হ্রদ অঞ্চলটি দামেস্কের আয়ুবীয়দের কাছে চলে যায়।

ক্রুসেডাররা ১২১৭ সালের ৩রা নভেম্বরে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। তারা ট্রান্সজর্ডানের দিকে আক্রমণ করে। মুয়াযযাম আদিলকে পাল্টা আক্রমণ চালানোর আহ্বান জানান, কিন্তু তিনি তার ছেলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।[৬৮] ১২১৮ সালে নীল বদ্বীপের দমইয়াত দুর্গ ক্রুসেডাররা অবরোধ করেছিল। দুটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর দুর্গটি অবশেষে ২৫ আগস্ট আত্মসমর্পণ করে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়াতেই সম্ভবত এর মাত্র ছয় দিন পরই আদিল ইন্তেকাল করেন ।[৬৯]

কামিল নিজেকে কায়রোতে সুলতান ঘোষণা করেছিলেন। একই সময়ে তার ভাই মুয়াযযাম দামেস্কে সিংহাসন দাবি করেছিলেন। কামিল দমইয়াত পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্রিয়েনের জন তাকে পিছু হটতে বাধ্য করেন। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা জানার পর তিনি মিশরীয় সেনাবাহিনীকে নেতৃত্বহীন রেখেই পালিয়ে যান। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও মুয়াযযামের সাহায্যে কামিল তার বাহিনীকে পুনরায় সংগঠিত করেন। ততক্ষণে ক্রুসেডাররা তার শিবির দখল করে নেয়। আইয়ুবীয়রা শাওবাক এবং কারাকের দুর্গ বাদ দিয়ে বাকি ফিলিস্তিন অঞ্চলগুলি জেরুজালেম রাজ্যকে দেয়ার বিনিময়ে দমইয়াত থেকে ক্রুসেডার সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয়।[৭০] প্রস্তাবটি পঞ্চম ক্রুসেডের নেতা, আলবানোর পেলাগিয়াস প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং ১২২১ সালে মানসুরায় আইয়ুবীয়দের বিজয়ের পর ক্রুসেডারদের নীল নদ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল।[৭১]

বিচ্ছিন্নতা

[সম্পাদনা]

অঞ্চল হারানো এবং জেরুজালেম হাতছাড়া

[সম্পাদনা]
কামিল (ডানদিকে) এবং দ্বিতীয় ফ্রেডেরিক দশ বছরের জন্য ক্রুসেডারদের কাছে জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন; নুভা ক্রোনিকা থেকে, ১৪ শতকের মাঝামাঝি

পূর্বদিকে জালালুদ্দিন খোয়ারেজম শাহর অধীনে খোয়ারেজেমিরা আশরাফের কাছ থেকে খিলাত শহর দখল করে।[৭২] আর এদিকে পূর্বে অনুগত রাসুলিরা আরবে আইয়ুবীয়দের অঞ্চল দখল করতে শুরু করে। ১২২২ সালে আইয়ুবিরা রাসুলিদের নেতা আলি ইবনে রাসুলকে মক্কার গভর্নর নিযুক্ত করে। ইয়েমেনে এবং হেজাজে আইয়ুবীয়দের শাসন পতন ঘটছিল এবং ১২২৩ সালে ইয়েমেনের আইয়ুবীয় গভর্নর মাসুদ ইবনে কামিল মিশরে চলে যেতে বাধ্য হন। তিনি অনুপস্থিত থাকাকালীন সময়ে নুরুদ্দিন উমরকে তার ডেপুটি গভর্নর নিযুক্ত করেন।[৭৩] ১২২৪ সালে একটি স্থানীয় রাজবংশ আইয়ুবীয়দের কাছ থেকে হাজরামাউতের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, যার নিয়ন্ত্রণ ইয়েমেনে তাদের সমস্যাযুক্ত পরিস্থিতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে।[৭৪] ১২২৯ সালে মাসুদ ইবনে কামিলের মৃত্যুর পর নুরুদ্দিন উমর স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং মিশরে আইয়ুবিদের বার্ষিক করপ্রদান বন্ধ করে দেন।[৭৩]

মিশরের কামিল এবং সিরিয়ার মুয়াযযামের মধ্যে চলমান বিরোধকে পুঁজি করে দ্বিতীয় ফ্রেডরিকের অধীনে ষষ্ঠ ক্রুসেড শুরু হয়েছিল।[৭৫] পরবর্তীকালে কামিল মিশরে সিরিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য ফ্রেডরিককে জেরুজালেমের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু ফ্রেডরিক প্রত্যাখ্যান করেন। কামিলের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছিল যখন মুয়াযযাম ১২২৭ সালে মারা যান এবং তার পুত্র নাসির দাউদ তার স্থলাভিষিক্ত হন। কামিল ১২২৮ সালে আক্কায় ফ্রেডরিকের সাথে আলোচনা চালিয়ে যান, যার ফলে ১২২৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটি ক্রুসেডারদের দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি দুর্ভাগা জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ দেয়, তবে শহরের ইসলামি পবিত্র স্থানগুলির উপর মুসলিম নিয়ন্ত্রণের নিশ্চয়তা দেয়।[৭৬] যদিও চুক্তিটি তেমন সামরিক তাৎপর্য রাখেনা, নাসির দাউদ এটিকে সিরিয়ার বাসিন্দাদের আবেগকে উস্কে দেওয়ার অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। উমাইয়া মসজিদে একজন জনপ্রিয় আলিম শুক্রবারের খুতবায় এই বিষয় উত্থাপন করার পর জনতার ক্রন্দনের কারণে তার বক্তৃতা শোনা যাচ্ছিল না।[৭৭]

ক্রুসেডারদের সাথে বন্দোবস্তের সাথে আইয়ুবীয়দের রাজত্বের একটি প্রস্তাবিত পুনঃবন্টন ছিল যেখানে দামেস্ক এবং এর অঞ্চলগুলি আশরাফ দ্বারা শাসিত হবে, যিনি কামিলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। নাসির দাউদ প্রতিরোধ করেছিলেন, আইয়ুবীয়-ক্রুসেডার যুদ্ধবিরতিতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।[৭৭] ১২২৯ সালের মে মাসে প্রস্তাবিত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কামিলের বাহিনী দামেস্কে পৌঁছেছিল। পরবর্তী অবরোধের ফলে অধিবাসীদের উপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি হয়, কিন্তু তারা তার পিতার স্থিতিশীল শাসনের সমর্থক এবং ফ্রেডরিকের সাথে চুক্তিতে ক্ষুব্ধ হয়ে নাসির দাউদের কাছে সমাবেশ করে। এক মাস পর নাসির দাউদ শান্তির জন্য আবেদন করেন এবং কারাককে কেন্দ্র করে তাকে একটি নতুন সীমানাবিশিষ্ট অঞ্চল দেওয়া হয়, আর দিয়ার বকরের গভর্নর আশরাফ দামেস্কের গভর্নর পদ গ্রহণ করেন।[৭৮]

এদিকে সেলজুকরা জাজিরার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।[৭৯] কাতাদা ইবনে ইদ্রিসের বংশধররা মক্কায় আইয়ুবীয় শাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। হেজাজে আইয়ুবীদের আধিপত্যের অবসান ঘটাতে এবং এই অঞ্চলটিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য রাসুলিরা এর সুযোগ নিয়েছিল, যা তারা ১২৩৮ সালে সম্পন্ন করেছিল যখন নুরুদ্দিন উমর মক্কা দখল করেছিলেন।[৮০][৭৩]

সিরীয়-মিশরীয় বিভাজন

[সম্পাদনা]
আইয়ুবীয় সুলতান দ্বিতীয় আদিলের গামলা, সিরিয়া, ১২৩৮-১২৪০, যুদ্ধের দৃশ্য।[৮১]

দামেস্কে আশরাফের শাসন স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু তিনি এবং সিরিয়ার অন্যান্য আমিররা কায়রো থেকে তাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। এই উত্তেজনার মধ্যেই আশরাফ চার মাসের অসুস্থতার পর ১২৩৭ সালের আগস্টে মারা যান এবং তার ভাই সালিহ ইসমাইল তার স্থলাভিষিক্ত হন। দুই মাস পরে কামিলের মিশরীয় সেনাবাহিনী এসে দামেস্ককে ঘেরাও করে, কিন্তু কামিলের বাহিনীর অবস্থানকে কঠিন করার জন্য সালিহ ইসমাইল শহরের উপকণ্ঠ ধ্বংস করে দিয়েছিল।[৮২] ১২৩২ সালে কামিল তার বড় ছেলে সালিহ আইয়ুবকে হিসন কাইফাকে শাসন করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু ১২৩৮ সালে কামিলের মৃত্যুর পর সালিহ আইয়ুব ছোট ভাই দ্বিতীয় আদিলকে কায়রোতে সুলতান হিসাবে ঘোষণা করার বিষয়ে বিতর্ক করেছিলেন। সালিহ আইয়ুব অবশেষে ১২৩৮ সালের ডিসেম্বরে দামেস্ক দখল করেন, কিন্তু তার চাচা ইসমাইল ১২৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে শহরটি পুনরুদ্ধার করেন। ইসমাইলের চাচাতো ভাই নাসির দাউদ দ্বিতীয় আদিল দ্বারা ইসমাইলের গ্রেপ্তার রোধ করার জন্য ইসমাইলকে কারাক থেকে আটক করেছিলেন। ইসমাইল দাউদের সাথে একটি মৈত্রীতে প্রবেশ করেন যিনি পরের বছর তাকে মুক্তি দেন। এই মৈত্রীর ফলে তিনি ১২৪০ সালের মে মাসে দ্বিতীয় আদিলের জায়গায় নিজেকে সুলতান ঘোষণা করেন।

১২৪০-এর দশকের গোড়ার দিকে সালিহ আইয়ুব তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছিলেন যারা দ্বিতীয় আদিলকে সমর্থন করেছিল এবং তারপরে তিনি নাসির দাউদের সাথে ঝগড়া করেছিলেন যিনি দামেস্কের সালিহ ইসমাইলের সাথে পুনর্মিলন করেছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী সুলতান সালিহ আইয়ুব এবং ইসমাইল অন্যের বিরুদ্ধে ক্রুসেডারদের সাথে মিত্রতার চেষ্টা করেছিলেন।[৮৩] ১২৪৪ সালে সিরিয়ার বিচ্ছিন্ন আইয়ুবীয়রা ক্রুসেডারদের সাথে মিত্রতা করে এবং গাজার নিকটবর্তী হিরবিয়াতে সালিহ আইয়ুব এবং খোয়ারিজমিদের জোটের মুখোমুখি হয়। একটি বৃহৎ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে সালিহ আইয়ুব একটি বড় বিজয় পান এবং জেরুজালেম রাজ্যের কার্যত পতন ঘটে।[৮৪]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Magill 1998, পৃ. 809
  2. France 1998, পৃ. 84
  3. Ahmed, Rumee (২৫ অক্টোবর ২০১৮)। The Oxford Handbook of Islamic Law। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 311। আইএসবিএন 978-0-19-166826-5। ৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২২ 
  4. Eliade, Mircea (১৯৮৭)। "Kalam"The Encyclopedia of Religion8: 238। আইএসবিএন 978-0-02-909790-8 
  5. Jackson 1996, p. 36
  6. Turchin, Adams এবং Hall 2006, পৃ. 223
  7. Taagepera 1997, পৃ. 495।
  8. Humphreys 1987
  9. Özoğlu 2004, পৃ. 46
  10. Bosworth 1996, পৃ. 73
  11. Jackson 1996, পৃ. 36।
  12. Fakkar, Galal (২৭ জানুয়ারি ২০১৫)। "Story behind the king's title"Arab NewsJeddah। ৪ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৬ 
  13. Eiselen 1907, পৃ. 89
  14. The biographer Ibn Khallikan wrote, "Historians agree in stating that [Saladin's] father and family belonged to Duwin. … They were Kurds and belonged to the Rawādiya [sic], which is a branch of the great tribe al-Hadāniya": Minorsky (1953), p. 124.
  15. Humphreys 1987
  16. Ali 1996, পৃ. 27
  17. Ali 1996, পৃ. 28
  18. Ali 1996, পৃ. 28
  19. Shillington 2005, পৃ. 438
  20. Lyons ও Jackson 1982, পৃ. 8
  21. Lyons ও Jackson 1982, পৃ. 14
  22. Lyons ও Jackson 1982, পৃ. 25
  23. Lyons ও Jackson 1982, পৃ. 28
  24. Lev 1999, পৃ. 96–97
  25. Shillington 2005, পৃ. 438
  26. Lev 1999, পৃ. 101
  27. Lev 1999, পৃ. 100
  28. Fage 1978, পৃ. 583
  29. Lane-Poole 1894, পৃ. 75
  30. Houtsma ও Wensinck 1993, পৃ. 884
  31. Margariti 2007, পৃ. 29
  32. McLaughlin 2008, পৃ. 131
  33. Lofgren 1960, পৃ. 181
  34. Dumper ও Stanley 2007, পৃ. 10
  35. Brice 1981, পৃ. 338
  36. Salibi 1998, পৃ. 55
  37. Daly ও Petry 1998, পৃ. 217–218
  38. Shillington 2005, পৃ. 438
  39. Lane-Poole 1906, পৃ. 141
  40. Lane-Poole 1894, পৃ. 76
  41. Lane-Poole 1906, পৃ. 142–146
  42. Lane-Poole 1906, পৃ. 146–148
  43. Lev 1999, পৃ. 22
  44. Lev 1999, পৃ. 100–101
  45. Lane-Poole 1906
  46. Smail 1995
  47. Lyons ও Jackson 1982
  48. Lyons ও Jackson 1982
  49. Humphreys 1991
  50. Lyons ও Jackson 1982
  51. Lane-Poole 1906
  52. Humphreys 1991
  53. Lane-Poole 1906
  54. Lane-Poole 1906
  55. Lane-Poole 1906
  56. Lane-Poole 1906
  57. Lane-Poole 1906
  58. Shillington 2005
  59. Meri ও Bacharach 2006
  60. Richard ও Birrell 1999
  61. Burns 2005
  62. Humphreys 1991
  63. Burns 2005
  64. Richard ও Birrell 1999
  65. Salibi 1998
  66. Burns 2005
  67. Humphreys 1977.
  68. Richard ও Birrell 1999
  69. Richard ও Birrell 1999
  70. Richard ও Birrell 1999
  71. Shillington 2005
  72. Richard ও Birrell 1999
  73. Ali 1996
  74. Brice 1981
  75. Shillington 2005
  76. Meri ও Bacharach 2006
  77. Burns 2005
  78. Burns 2005
  79. Richard ও Birrell 1999
  80. Salibi 1998
  81. al-Mawsili, Ahmad ibn 'Umar al-Dhaki (১২৩৮)। "Bassin au nom du sultan al-'Adil II Abu Bakr"। Louvre Museum। 
  82. Burns 2005
  83. Richard ও Birrell 1999
  84. Richard ও Birrell 1999

উদ্ধৃত এবং সাধারণ তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]
আইয়ুবীয় রাজবংশ
পূর্বসূরী
ফাতেমীয় রাজবংশ
মিশরের রাজবংশ
১১৭১–১২৫৪
আব্বাসীদের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত
উত্তরসূরী
বাহরি রাজবংশ