অ্যান্টার্কটিকার ইতিহাস
অ্যান্টার্কটিকার ইতিহাসের সূচনা প্রাচীন পশ্চিমা তত্ত্বের এক বিস্তীর্ণ মহাদেশের অস্তিত্বের বর্ণনা থেকে। এতে এই মহাদেশটি টেরা অস্ট্রালিস নামে পরিচিত, যা বিশ্বের সুদূর দক্ষিণে অবস্থিত বলে মনে করা হয়। আন্টার্কটিক শব্দটি খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দিতে টায়ার এর মারিনাস সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন যার অর্থ "আর্কটিক বা সুমেরুবৃত্তের বিপরীত"।
পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে কেপ অফ গুড হোপ এবং কেপ হর্ন এর বৃত্তান্ত প্রমাণ করে যে যদি টেরা অস্ট্রালিস ইনকোনিটিটা ("অজানা দক্ষিণাঞ্চলীয় ভূমি") বলে কোন স্থানের অস্তিত্ব থাকে, তবে এটি একটি স্বতন্ত্র মহাদেশ হবে। ১৭৭৩ সালে জেমস কুক এবং তার নাবিকদল সর্বপ্রথম অ্যান্টার্কটিক সার্কেল বা কুমেরুবৃত্ত অতিক্রম করেন ও এর নিকটবর্তী দ্বীপগুলি আবিষ্কার করেন। তবে তারা অ্যান্টার্কটিকার মূল ভূখণ্ড দেখতে পাননি। ধারণা করা হয় যে তারা মূল ভূখণ্ডের প্রায় ২৪০ কি.মি.(১৫০ মাইল) দূরে অবস্থান করছিলেন।
১৮১৯ সালে ৭৪ টি কামান বিশিষ্ট সান তেলমো জাহাজের ৬৪৪ জন নাবিকের মধ্যে কয়েকজন সম্ভবত হাইপোথার্মিয়ায় মৃত্যুবরণ করার পূর্বে অ্যান্টার্কটিকায় প্রথম পা রাখেন। যদিও এ ঘটনার কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না। এর এক বছর পর ১৮২০ সালের ২৭শে জানুয়ারি, ফাবিয়ান গোতলিয়েব ফন বেলিংশসন ও মিখাইল লাযারেভ এর নেতৃত্বে পরিচালিত এক অভিযানে তারা প্রিন্সেস মার্থা উপকূলের সাথে সংযুক্ত একটি বরফের চাঁই এর তাক বা আইস শেলফ আবিষ্কার করেন যা পরবর্তীতে ফিম্বুল আইস শেলফ নামে পরিচিত হয়। বেলিংশসন ও লাযারেভ আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যান্টার্কটিকার মূল ভূখণ্ড দর্শনকারী ও আবিষ্কারকরূপে পরিচিত হন। এর তিনদিন পর ১৮২০ সালের ৩০শে জানুয়ারী, এডওয়ার্ড বার্নসফিল্ডের নেতৃত্বে এক ব্রিটিশ অভিযাত্রীদল ট্রিনিটি পেনিনসুলা দেখতে পান, এবং এর দশ মাস পরে ১৭ই নভেম্বর, ১৮২০ তারিখে আমেরিকান সীল-শিকারী নাথানিয়েল পামার অ্যান্টার্কটিকা দেখতে পান। প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যান্টার্কটিকায় মানুষের পদার্পণ ঘটে সম্ভবত মাত্র এক বছর পরে যখন ক্যাপ্টেন জন ডেভিস নামে একজন আমেরিকান সীল-শিকারী সেখানে বরফের উপর পা রাখেন।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিককে "অ্যান্টার্কটিক অভিযানের স্বর্ণযুগ" আখ্যা দেয়া হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি অভিযাত্রীদল দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছাতে চেষ্টা করেছিল। এদের মধ্যে অনেকেই আহত হন ও মৃত্যুবরণ করেন। নরওয়ের রুয়াল আমুনসেন ব্রিটনের রবার্ট ফ্যালকন স্কটের সাথে এক নাটকীয় প্রতিযোগিতার পর ১৩ই ডিদিসেম্বর১৯১১ সালে অ্যান্টার্কটিকায় পৌঁছেছিলেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধান
[সম্পাদনা]টেরা অস্ট্রালিস ইনকোনিটিটা ("অজানা দক্ষিণাঞ্চলীয় ভূমি") এর খোঁজে অনুসন্ধান
[সম্পাদনা]অ্যারিস্টটল অনুমান করেছিলেন, "এখন যেহেতু দক্ষিণ মেরুর সাথে একই রকম সম্পর্কযুক্ত একটি অঞ্চল থাকতে হবে যেমনটা আমাদের বাসভূমির সাথে আমাদের মেরুর রয়েছে... " । [১]
১৪১৮ সালে প্রিন্স হেনরি দ্য নেভিগেটর কর্তৃক আফ্রিকা পরিভ্রমণের মাধ্যমে ভারত পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করার আগ পর্যন্ত ইউরোপীয়ানরা ট্রপিক্যাল অঞ্চল অতিক্রম করে দক্ষিণে গোলার্ধের অনুসন্ধান শুরু করেনি। [২] ১৪৭৩ সালে পর্তুগীজ নাবিক লোপেস গনকাভস প্রমাণ করেছিলেন যে নিরক্ষরেখা অতিক্রম করা সম্ভব এবং মানচিত্রকার ও নাবিকরা পরিচিত বিশ্বের দক্ষিণে আরেকটি নাতিশীতোষ্ণ মহাদেশের অস্তিত্ব অনুমান করতে আরম্ভ করেছিলেন।
১৪৮৭ সালে বারটোলোমিউ ডায়াসের কেপ অফ গুড হোপের দ্বৈত্ব অভিযাত্রীদের প্রথম অ্যান্টার্কটিক শৈত্যের সংস্পর্শে নিয়ে আসে এবং প্রমাণ হয় যে আফ্রিকা এবং অ্যান্টার্কটিক স্থলভূমিকে পৃথককারী একটি মহাসাগরের অস্তিত্ব থাকতে পারে। [২]
ফার্ডিনান্ড ম্যাগেলান, যিনি ১৫২০ সালে ম্যাজেলান প্রণালী অতিক্রম করেন, মনে করেছিলেন দক্ষিণের তিয়েরা দেল ফুয়েগো দ্বীপগুলি অজানা দক্ষিণ অঞ্চলের একটি বর্ধিত অংশ। অরটেলিয়াসের একটি মানচিত্রেও এটিকে সেরকম ভাবেই উপস্থাপন করা হয়: "Terra australis recenter inventa sed nondum plene cognita" (দক্ষিণ ভূমি সম্প্রতি আবিষ্কৃত কিন্তু এখনও সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত নয়)। [৩]
সুমেরুবৃত্ত
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Meteorologica Book II 5"। ২৭ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৯।
- ↑ ক খ One or more of the preceding sentences একটি প্রকাশন থেকে অন্তর্ভুক্ত পাঠ্য যা বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনে: Mill, Hugh Robert (১৯১১)। "Polar Regions#Antarctic_Region"। চিসাম, হিউ। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।
- ↑ Barr, William (২০১৪)। "Review of OF MAPS AND MEN: THE MYSTERIOUS DISCOVERY OF ANTARCTICA": 410–411। জেস্টোর 24363785।