বিষয়বস্তুতে চলুন

শুক্র গ্রহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার বর্তমান সংস্করণ, যা Kwamikagami (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৪:২৯, ২৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক।

(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
শুক্র গ্রহ ♀
শুক্র
বর্ণনা জন্য চিত্রের উপর ক্লিক করুন
বিবরণ
বিশেষণVenusian অথবা মাঝেমাঝে Cytherean
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য
যুগ জে২০০০
অপসূর১০৮,৯৪১,৮৪৯ কিমি
০.৭২৮ ২৩১ ২৮ এইউ
৬৭,৬৯৩,৪৮৮ মাইল
অনুসূর১০৭,৪৭৬,০০২ কিমি
০.৭১৮ ৪৩২ ৭০ এইউ
৬৬,৭৮২,৬৫১ মাইল
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ১০৮,২০৮,৯২৬ কিমি
০.৭২৩ ৩৩১ ৯৯ এইউ
৬৭,২৩৯,০৭০ মাইল
উৎকেন্দ্রিকতা০.০০৬ ৭৭৩ ২৩
যুতিকাল৫৮৩.৯২ দিন
গড় কক্ষীয় দ্রুতি৩৫.০২০ কিমি/সে
নতি৩.৩৯৪ ৭১°
(সৌর বিষুবের সাথে ৩.৮৬°)
উদ্বিন্দুর দ্রাঘিমা৭৬.৬৮০ ৬৯°
উপগ্রহসমূহনেই
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ
বিষুবীয় ব্যাসার্ধ৬,০৫১.৯ কিমি
(০.৯৫ পৃথিবী)
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল৪.৬০×১০ কিমি
(০.৯০২ পৃথিবী)
আয়তন৯.২৮×১০১১ কিমি³
(০.৮৫৭ পৃথিবী)
ভর৪.৮৬৮৫×১০২৪ কেজি
(০.৮১৫ পৃথিবী)
গড় ঘনত্ব৫.২০৪ গ্রাম/cm
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ৮.৮৭ মি/সে
(০.৯০৪ g)
মুক্তি বেগ১০.৩৬ কিমি/s
নাক্ষত্রিক ঘূর্ণনকাল−২৪৩.০১৮৫ দিন
বিষুবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণন বেগ৬.৫২ কিমি/ঘ (বিষুবে)
অক্ষীয় ঢাল২.৬৪°
উত্তর মেরুর বিষুবাংশ২৭২.৭৬° (১৮ ঘ ১১ মিন ২ সে)
উত্তর মেরুর বিষুবলম্ব৬৭.১৬°
প্রতিফলন অনুপাত০.৬৫
পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ন্যূন মধ্যক সর্বোচ্চ
পৃষ্ঠ তল ৭৩৭ কে
৪৬৪ C (৮৬৭ ফ)
৭৭৩ কে
৫০০ C (৯৩২ ফ)
Cloud tops ২২৮ কে
-৪৫ C (-৪৯ ফ)
বায়ুমণ্ডল
পৃষ্ঠের চাপ৯.২ মেগা প্যাসকেল
গঠন~৯৬.৫% কার্বন ডাই অক্সাইড
~৩.৫% নাইট্রোজেন
.০১৫% সালফার ডাই অক্সাইড
.০০৭% আর্গন
.০০২% বাষ্প
.০০১৭% কার্বন মনোক্সাইড
.০০১২% হিলিয়াম
.০০০৭% নিয়ন
trace কার্বনিল সালফাইড
trace হাইড্রোজেন ক্লোরাইড
trace হাইড্রোজেন ফ্লোরাইড

শুক্র গ্রহ (ইংরেজি: Venus) হল সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ। এই পার্থিব গ্রহটিকে অনেক সময় পৃথিবীর "বোন গ্রহ" বলে আখ্যায়িত করা হয়, কারণ পৃথিবী এবং শুক্রের মধ্যে গাঠনিক উপাদান এবং আচার-আচরণে বড় রকমের মিল রয়েছে। এই গ্রহটি যখন সকাল বেলায় পৃথিবীর আকাশে উদিত হয় তখন একে লুসিফার বা শয়তান নামেও ডাকা হয়ে থাকে। বাংলায় সকালের আকাশে একে শুকতারা এবং সন্ধ্যার আকাশে একে সন্ধ্যাতারা বলে ডাকা হয়ে থাকে। এর কোনও উপগ্রহ নাই।

শুক্র গ্রহের বাংলা নাম এসেছে অসুরদের গুরু ও রক্ষক শুক্রাচার্য থেকে, এবং শুক্রাচার্য এর দিন হিসেবে এসেছে শুক্রবার।

শুক্র গ্রহের লাতিন নামকরণ করা হয়েছে রোমান প্রেমের দেবী ভিনাস (Venus, লাতিনে: উয়েনুস্‌, ইংরেজিতে: ভীনাস্‌) নামানুসারে। পৌরাণিক কাহিনীতে ভেনাস (গ্রিকঃ এফ্রোদিতি, বাংলা শুক্র) ভালকানের স্ত্রী এবং দেবপুত্র কিউপিড ও দৈনিয়্যাসের মাতা। বর্তমানে শুক্রের বিশেষণ হিসেবে ইংরেজিতে ভেনুশিয়ান (Venusian) শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এর লাতিন বিশেষণ হচ্ছে উয়েনেরেয়াল্‌ (Venereal), ইংরেজি উচ্চারণে ভেনিরিয়্যাল্‌ যা আধুনিক ইংরেজি ভাষায় যৌনরোগ বোধক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই জন্য ভেনিরিয়্যাল শব্দটি এর বিশেষণ হিসেবে এখন ব্যবহৃত হয় না। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী এই গ্রহের নামের বিশেষণ হিসেবে সিথারিয়ান (Cytherean) শব্দটি ব্যবহার করেন যা গ্রিক পুরাণে উল্লেখিত দেবী আফ্রোদিতির অপর নাম সিথারিয়া থেকে এসেছে। এছাড়া আরও কয়েকটি বিশেষণ হচ্ছে: ভেনারিয়ান (Venerean, Venarian), ভেনারান (Veneran) ইত্যাদি।

চৈনিক, জাপানি, কোরিয় এবং ভিয়েতনামিজ সংস্কৃতিতে এই গ্রহের নাম বলা হয় ধাতব তারা (金星) যা পৃথিবী সৃষ্টিকারী পাঁচটি মৌলিক উপাদানের নাম থেকে উৎসারিত।

কক্ষীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ

[সম্পাদনা]

কক্ষপথ

[সম্পাদনা]

সব গ্রহের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার হলেও শুক্রের কক্ষপথ প্রায় গোলাকার। এর উৎকেন্দ্রিকতা শতকরা এক ভাগেরও কম। যেহেতু সূর্য থেকে শুক্রের দূরত্ব পৃথিবীর চেয়ে কম, সেহেতু পৃথিবীর দিক থেকে সূর্য উদিত হয় (সূর্যের বৃহত্তম প্রতান হচ্ছে ৪৭.৮ ডিগ্রী) শুক্রও প্রায় একই দিক থেকে উদিত হয়। এজন্য এই গ্রহটিকে কেবল সূর্যোদয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে এবং সূর্যাস্তের কয়েক ঘণ্টা পরে দেখা যায়। অবশ্য যখন শুক্র তার উজ্জ্বলতম অবস্থায় থাকে তখন দিনের বেলায়ও একে দেখা যায়। আসলে চাঁদ ছাড়া শুক্র গ্রহই একমাত্র জ্যোতিষ্ক যা পৃথিবীর আকাশ থেকে রাত এবং দিন উভয় সময়েই দেখা যায়। অবশ্য ক্ষেত্রবিশেষে কিছু নবতারা রাত ও দিন উভয় সময়ে দেখা যায়। যেমন, কাঁকড়া নীহারিকা সৃষ্টিকারী নবতারা। যাহোক অন্ধাকার আকাশে দৃশ্যমান শুক্র গ্রহ দেখাতে অনেকটাই তারার মত জ্বলজ্বলে হয়ে থাকে।

পরপর দুটি সর্বোচ্চ প্রতানের মধ্যবর্তী চক্রটির সময়কাল ৫৮৪ দিন। এই ৫৮৪ দিন পর শুক্র গ্রহকে পূর্বে যে অবস্থানে দেখা যেত তার সাথে ৭২ ডিগ্রী কোণ করে অবস্থান করতে দেখা যায়। যেহেতু ৫ * ৫৮৪ = ২৯২০ = ৮ * ৩৬৫ সেহেতু দেখা যাচ্ছে শুক্র গ্রহ প্রতি ৮ বছর পরপর (লীপ ইয়ারের দুই দিন বাদে) তার আগের অবস্থানে ফিরে আসে। এই চক্রটি প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় সোথিক্‌স চক্র নামে পরিচিত ছিল এবং মায়া সভ্যতার নিকটও তা সুপরিচিত ছিল। চাঁদের সাথেও এর একটি সম্পর্ক রয়েছে, যেমন: ২৯.৫ * ৯৯ = ২৯২০.৫; অর্থাৎ এই সময়কালটি প্রায় ৯৯ টি চন্দ্রমাসের সমান।

গ্রহটির অন্তঃসংযোগের সময় শুক্র অন্য যেকোন গ্রহের তুলনায় পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটে আসে; তখন এ থেকে পৃথিবীর দূরত্ব হয় চাঁদ থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্বের প্রায় ১০০ গুণ। ১৮০০ সালের পর থেকে শুক্র গ্রহ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে পৌঁছেছিল ১৮৫০ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে। তখন তাদের মধ্যে দূরত্ব ছিল: ০.২৬৪১৩৮৫৪ জ্যোতির্বিজ্ঞান একক = ৩৯,৫৪১,৮২৭ কিলোমিটার। ২১০১ সালের ডিসেম্বর ১৬ তারিখের পূর্ব পর্যন্ত এটিই হবে শুক্র থেকে পৃথিবীর সর্বনিম্ন দূরত্ব। উক্ত তারিখে গ্রহদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব দাড়াবে ০.২৬৪৩১৭৩৬ জ্যোতির্বিজ্ঞান একক = ৩৯,৫৪১,৫৭৮ কিলোমিটার।

ঘূর্ণন

[সম্পাদনা]

শুক্রের প্রতীপ গতি বেশ ধীর, এটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঘুরে যেখানে অন্যান্য অধিকাংশ গ্রহই পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘুরে থাকে। অবশ্য প্লুটো এবং ইউরেনাস গ্রহেরও প্রতীপ গতি রয়েছে। শুক্রের এই ধীর প্রতীপ গতির কারণ হিসেবে ধরা হয়, জোয়ার বল, ঘর্ষণ এবং শুক্রের পুরু পরিবেশ সূর্যের মাধ্যমে অতি উত্তপ্ত হওয়া। যদি শুক্র থেকে সূর্য দেখা যেত তবে শুক্রের আকাশে তা পশ্চিম দিকে উদিত হয়ে পূর্বে অস্ত যেত। এর আহ্নিক গতি হচ্ছে পৃথিবীর ১১৬.৭৫ দিনের সমান এবং একটি শুক্রীয় বছরের স্থায়িত্বকাল হচ্ছে ১.৯২ শুক্রীয় দিবস।

একবার সম্পূর্ণভাবে নিজের কক্ষপথ বেয়ে সূর্যকে পরিভ্রমণ করতে শুক্র গ্রহের সময় লাগে ২২৫ দিন। শুক্র তার নিজ অক্ষে ঘোরে খুব ধীরগতিতে। শুক্রের ব্যাস ১২,১০৪ কিলোমিটার এবং ঘনত্ব ৫.০৬। এর মুক্তিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৬.৫ মাইল। শুক্রগ্রহের উল্লেখযোগ্য কোনো চৌম্বকক্ষেত্র নেই। এই গ্রহের আবহমন্ডলের প্রায় সবটাই কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস। এখানে মাত্র ০.৪ ভাগ অক্সিজেন গ্যাস রয়েছে। শুক্র গ্রহে কিছু নাইট্রোজেন,হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া এবং নামমাত্র জলীয়বাষ্পের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

এখন পর্যন্ত শুক্রগ্রহের খবরাখবর জানার জন্য বহু মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে মহাকাশে। তাদের মধ্যে পাইওনিয়ার, ভেনাস-১ভেনাস-২ এবং ভেনেরা ১১ থেকে ১৪ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাইয়োনিয়ার মহাকাশযান শুক্রগ্রহের কাছ থেকে এমন সব ছবি তুলেছে যা থেকে শুক্রগ্রহে বিশাল পাহাড়, সমতলভূমি ও অনেক আগ্নেয়গিরি রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। শুক্র গ্রহের মোটামুটি একটা মানচিত্র পাইওনিয়ারের সূক্ষ জরিপের ফলে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।এছাড়া ভেনেরা-১১, শুক্র গ্রহের উপর নেমেছিল ১৯৭৮ সালর ২৫ ডিসেম্বর তারিখে। শুক্র গ্রহের অনেক ছবি পাঠিয়েছে এই মহাকাশযান। ভেনেরা-১৪ ও ১৫ শুক্র গ্রহে নেমে চমৎকার রঙিন ছবি পাঠিয়েছে পৃথিবীতে। অবশ্য এর আগে ১৯৬৬ সালের মার্চ মাসে ভেনাস-৩ শুক্রের উপরিভাগে বিধ্বস্ত হয়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন শুক্রগ্রহে প্রাণের কোনো অস্তিত্ব নেই।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]