লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ
লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ কণ্ণনূর দ্বীপপুঞ্জ | |
---|---|
দ্বীপপুঞ্জ | |
রাষ্ট্র | ভারত |
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল | লাক্ষাদ্বীপ |
জেলা | লাক্ষাদ্বীপ |
আয়তন | |
• মোট | ১৭.৫ বর্গকিমি (৬.৮ বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• দাপ্তরিক | মালয়ালম |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৬৮২ ৫৫১, ৫৫৩, ৫৫৫, ৫৫৭ |
যানবাহন নিবন্ধন | LD (এলইডি) |
লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ বা কণ্ণনূর দ্বীপপুঞ্জ হলো ভারতের লাক্ষাদ্বীপ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তিনটি মূল শ্রেণীর দ্বীপপুঞ্জের একটি৷ এটি লাক্ষাদ্বীপের কেন্দ্রীয় শ্রেণী, যা আমিনদিভি থেকে উত্তর দিকে মোটামুটি ভাবে ১১তম উত্তর অক্ষাংশ দ্বারা এবং মিনিকয় প্রবাল দ্বীপ থেকে দক্ষিণ দিকে ৯ম উত্তর অক্ষাংশ বা মামালা প্রণালী দ্বারা পৃথকীকৃত। [১]
লাক্ষাদ্বীপ নামে পরিচিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি পূর্বে লাক্ষা, মিনিকয় ও আমিনদিভি দ্বীপপুঞ্জনামে পরিচিত ছিল,[২] তবে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় আইনসভায় পেশ করা একটি অ্যাক্ট অনুসারে এটির নাম পরিবর্তন করে লাক্ষাদ্বীপ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।[৩]
লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ শ্রেণীর দ্বীপগুলি উপকূলবর্তী শহর কন্নুরের (পূর্ব নাম কণ্ণনূর) অনুসারে "কণ্ণনূর দ্বীপপুঞ্জ"[৪] নামেও পরিচিত ছিল। এই নামের পিছনে একটি ইতিহাস রয়েছে। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই দ্বীপপুঞ্জ গুলির উত্তর দিকে অবস্থিত আমিনদিভি দ্বীপপুঞ্জ উত্তর কেরালার কণ্ণনূর সাম্রাজ্যের (আরক্কাল) সামন্ত রাজ্যে পরিণত হয় এবং মহীশূর সাম্রাজ্যের প্রতি আনুগত্য দেখায়। কিন্তু এই সময় আমিনদিভির দক্ষিণের লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ কণ্ণনূর সাম্রাজ্যের অনুগত রয়ে যায়।
ভূগোল
[সম্পাদনা]লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ শ্রেণীর দ্বীপগুলির মধ্যে রয়েছে আগাট্টি বিমানবন্দরসহ আগাট্টি দ্বীপ এবং বাঙ্গারাম প্রবালদ্বীপ। এরমধ্যে আগাট্টি বিমানবন্দর হলো সমগ্র লাক্ষাদ্বীপ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একমাত্র বিমানবন্দর এবং বাঙ্গারাম সমুদ্র সৈকত বৃহত্তর পর্যটক স্থল।
লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ শ্রেণীতে রয়েছে দুটি তালুক যথা: ১৫,০৪৮ জন জনসংখ্যা বিশিষ্ট আন্দরোত দ্বীপপুঞ্জ এবং ১৭,১৯৩ জন জনসংখ্যা বিশিষ্ট কাবারাত্তি দ্বীপ। [৫] দ্বীপগুলির মধ্যে আগাট্টি, আন্দরোত, কাবারাত্তি এবং কালপেনি দ্বীপ চারটি জনবসতি যুক্ত। [৬]
লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ শ্রেণীর দ্বীপগুলির অধিকাংশই প্রবাল প্রাচীর যুক্ত দ্বীপ এবং এগুলির তটরেখা নিমজ্জিত উচ্চভূমির অংশ। আমিনদিভি এবং লাক্ষাদ্বীপ শ্রেণীর দ্বীপগুলির মধ্যে পিট্টি দ্বীপিকা নামক একটি জনহীন বৃহৎ নিমজ্জিত প্রবাল দ্বীপ দ্বারা যোগাযোগ রয়েছে। [৭]
প্রবালদ্বীপ/সমুদ্রগর্ভস্থ শৈলপ্রাচীর/সমুদ্রগর্ভস্থ উচ্চভূমি | ধরন | ভূমি ক্ষেত্রফল (বর্গকিমি) |
উপহ্রদ ক্ষেত্রফল (বর্গকিমি) |
ক্ষুদ্র দ্বীপ সংখ্যা |
জনসংখ্যা জনশুমারি ২০০১ |
অবস্থান | ||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ | ||||||||
আগাট্টি | প্রবালদ্বীপ | ২.৭০ | ৪.৮৪ | ১ | ৮,০০০ | ১০°৫০′ উত্তর ৭৩°৪১′ পূর্ব / ১০.৮৩৩° উত্তর ৭৩.৬৮৩° পূর্ব | ||
বাঙ্গারাম | প্রবালদ্বীপ | ২.৩০ | ৪.৮৪ | ১ | ৬১ | ১০°৫০′ উত্তর ৭৩°৪১′ পূর্ব / ১০.৮৩৩° উত্তর ৭৩.৬৮৩° পূর্ব | ||
পিট্টি ১) | ক্ষুদ্রদ্বীপ ১) | ০.০১ | ১৫৫.০৯ ১) | ১ | – | ১০°৫০′ উত্তর ৭২°৩৮′ পূর্ব / ১০.৮৩৩° উত্তর ৭২.৬৩৩° পূর্ব | ||
আন্দরোত | প্রবালদ্বীপ | ৪.৯০ | ৪.৮৪ | ১ | ১০,৭২০ | ১০°৫০′ উত্তর ৭৩°৪১′ পূর্ব / ১০.৮৩৩° উত্তর ৭৩.৬৮৩° পূর্ব | ||
কাবারাত্তি | প্রবালদ্বীপ | ৪.২২ | ৪.৯৬ | ১ | ১০,১১৩ | ১০°৩৩′ উত্তর ৭২°৩৮′ পূর্ব / ১০.৫৫০° উত্তর ৭২.৬৩৩° পূর্ব | ||
কালপেনি | প্রবালদ্বীপ | ২.৭৯ | ২৫.৬০ | ৭ | ৪,৩১৯ | ১০°০৫′ উত্তর ৭৩°৩৮′ পূর্ব / ১০.০৮৩° উত্তর ৭৩.৬৩৩° পূর্ব | ||
সুহেলি পার | প্রবালদ্বীপ | ০.৫৭ | ৭৮.৭৬ | ২ | – | ১০°০৫′ উত্তর ৭২°১৭′ পূর্ব / ১০.০৮৩° উত্তর ৭২.২৮৩° পূর্ব |
ইতিহাস
[সম্পাদনা]উত্তর দিকে অবস্থিত আমিনদিভি দ্বীপপুঞ্জের মতোই লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জও বহুপূর্ব থেকেই জনবসতিপূর্ণ ছিলো৷ প্রাথমিকভাবে নিকটবর্তী কেরালা থেকে এবং পরবর্তীকালে আরব থেকে আসা ধর্মপ্রচারক ও বণিকরা এখানে বসতি স্থাপন করেন৷ ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা দ্বীপপুঞ্জ পরিদর্শনে আসেন। ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় লাক্ষা মিনিকয় আমিনদিভি এই তিন শ্রেণীর দ্বীপপুঞ্জের সমস্ত অধিবাসী পর্তুগিজ আধিপত্য থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আরক্কাল সাম্রাজ্যের প্রতি আনুগত্য দেখায়।
১৬৯৭ খ্রিস্টাব্দে অত্যাচারী জলদস্যু ক্যাপ্টেন উইলিয়াম কিড এবং তার দল "অ্যাডভেঞ্চার গ্যালারি" নামক জাহাজ নিয়ে লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জে পাড়ি জমান। দুরাচারী দল স্থানীয়দের নৌকা ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং স্থানীয় মহিলাদের শারীরিক নির্যাতন করে। প্রতিশোধ হিসেবে স্থানীয়রা জাহাজের পিপা-নির্মাতাকে হত্যা করলে নাবিক ও তার দলবল গ্রামে ঢুকে সমস্ত গ্রামবাসীদের অত্যাচার শুরু করে।
প্রায় ১০০ বছর পর ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ দ্বীপপুঞ্জের আমিনদিভি শ্রেণি কণ্ণনূরের আরক্কাল রাজাদের সুরক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয় মহীশূর সাম্রাজ্যের আনুগত্য মেনে নিয়ে তাদের সামন্ত রাজ্যে পরিণত হয়। [৮] তবে দক্ষিণে অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জের লাক্ষা শ্রেণি কণ্ণনূরের আরক্কাল রাজাদের অনুগত রয়ে যায়। [৯]
১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি অনুসারে টিপু সুলতানের পরাজয় নিশ্চিত হলে, দক্ষিণের উপশ্রেণীটিকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বার্ষিক ১৫ হাজার ভারতীয় টাকা মূল্যের বিনিময়ে সেটিকে কণ্ণনূর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত রাখেন। [১০] বারংবার রাজস্বের পরিমাণে গাফিলতি দেখা দিলে ব্রিটিশ সরকার এই দ্বীপপুঞ্জকে সরাসরি ভাবে নিজেদের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। প্রাথমিকভাবে ১৮৫৫ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এবং চূড়ান্তভাবে ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে স্বত্ববিলোপ নীতির অন্তর্ভুক্ত করে [১১] এটিকে মালাবার জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। [১২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ GEBCO Gazetteer of undersea feature names
- ↑ Lakshadweep | union territory, India | Britannica
- ↑ "The name of the Laccadive, Minicoy and Amindivi islands"। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ Imperial Gazetteer of India, v. 16, p. 85.
- ↑ Lakshadweep Tehsil Map - Maps of India
- ↑ Web123India
- ↑ Prakash Chauhan & Shailesh Nayak, Detection of submerged reef banks in the Lakshadweep Sea using IRS-P4 OCM satellite data
- ↑ Logan, William (২০০৪) [1887]। Malabar Manual। New Delhi: Asian Education Services। পৃষ্ঠা 2। আইএসবিএন 81-206-0446-6।
- ↑ 1902 Encyclopedia - Laccadives (also known as: Laccadive Islands; Laccadive, Minicoy, and Amindivi Islands; Lakshadweep)
- ↑ William Logan, Malabar Manual, p. CCLXXIX
- ↑ Allan Octavian Hume, Stray Feathers, vol. iv., 1876, Calcutta.
- ↑ William Logan, Malabar Manual, p. CCLXXVI