টালিডো, ওহাইও

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের একটি শহর ও লুকাস কাউন্টির সদর দপ্তর

টালিডো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের একটি শহর ও লুকাস কাউন্টির সদর দপ্তর। [] এটি মধ্য-পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী। এটি জনসংখ্যায় ওহাইও-র চতুর্থ বৃহত্তম ও যুক্তরাষ্ট্রের ৭১-তম বৃহত্তম শহর। টালিডো বন্দর গ্রেট লেকস অঞ্চলের পঞ্চম ব্যস্ততম ও যুক্তরাষ্ট্রের ৫৪ তম বৃহত্তম বন্দর। [] ১৮৩৩ সালে মাওমি নদীর তীরে শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এটি মিশিগান ভূখণ্ডের মনরো কাউন্টির অংশ ছিল। ১৮৩৭ সালে টালিডো যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটলে এটি ওহাইও-র অংশ হয়।

টালিডো শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা

১৮৪৫ সালে মায়ামি ও এরি খাল নির্মিত হলে টালিডো শহরটি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। নিউইয়র্ক ও শিকাগো রেলসড়কের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এর প্রসার দ্রুততর হয়। ১৮৮০ এর দশকে এখানে ব্যাপক হারে কাচ উৎপাদন শুরু হয়, যার ফলে শহরটি কাচের শহর নামে পরিচিতি পায়।

ইতিহাস

সম্পাদনা

টালিডো শহরটি যে অঞ্চলে গড়ে ওঠেছে, সেখানে অনেকগুলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করত। এদের মধ্যে রয়েছে- ওয়ানদত, ওজিবোয়ে, পটাটাউমি ও ওদায়া। ১৬৮০ সালের দিকে পশম ব্যবসার সুযোগ নিতে ফ্রেঞ্চরা এখানে একটি বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। ফ্রেঞ্চদের আমন্ত্রণে ওদায়া জাতির লোক মানিতোলিন দ্বীপ থেকে ব্রুস উপদ্বীপে আগমন করে। তারা পরবর্তীতে উত্তর-পশ্চিম ওহাইওতে বসবাস করতে শুরু করে। ওদায়া জাতির মানুষ মাওমি নদীর উৎসমুখে বসবাস করত। তারা ফ্রেঞ্চ ও উত্তর-পশ্চিমে বসবাসকারী গোত্রগুলোর মধ্যে দালাল হিসেবে কাজ করত। ওয়ানদতরা মধ্য ওহাইও এবং লেনাপি ও শাউনি জাতির লোক দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকায় বসবাস করত।

চার্লস ই স্লোকামের মতে, ১৮০৫ সালে সোয়ান খাঁড়ির মুখে সেনাবাহিনী ইন্ডাস্ট্রি দুর্গ নির্মাণ করে। ঊনবিংশ শতকের কোন কাগজপত্রে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা নেই। []

১৮০৭ সালের ১৭ নভেম্বর আদিবাসীরা ডেট্রয়েট চুক্তি স্বাক্ষর করে। তারা দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগান ও উত্তর-পশ্চিম ওহাইওর বিশাল ভূখণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের নিকট হস্তান্তরে বাধ্য হয়। মিশিগান ভূখণ্ডের গভর্নর উইলিয়াম হাল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। []

১৮১২ সালের যুদ্ধের পর অনেক ইউরোপীয়-আমেরিকান বসতি স্থাপনকারী এখানে আগমন করে। আবার, ব্রিটিশ ও আদিবাসীদের সম্মিলিত আগ্রাসনের হাত থেকে বাঁচতে অনেকে পালিয়েও যায়। ১৮১৮ সালে সিনসিনাটির একটি চক্র সোয়ান খাঁড়ির মুখে ৯০০ একর জমি ক্রয় করে। তারা একে পোর্ট লরেন্স নাম দেয়, বর্তমানে যেটি টালিডো শহরের কেন্দ্রস্থল। এর উত্তরেই আরেকটি চক্র ভিস্তুলা শহর প্রতিষ্ঠা করে। চেরি স্ট্রিটে পোর্ট লরেন্স ও ভিস্তুলা সীমানা অবস্থিত।

১৮২৪ সালে ওহাইও বিধানসভা মায়ামি ও এরি খাল নির্মাণ করে। ১৮৩৩ সালে "ওয়াবাস ও ইয়ারি" খাল নামে খালটির সম্প্রসারণ করা হয়। এ খাল নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল সিনসিনাটিকে ইয়ারি হ্রদের সাথে সংযুক্ত করা। এ সময় মাউমি নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত অনেক শহর-ই খালটির শেষ গন্তব্য হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল। ওয়াটারভিল ও মাউমি শহরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ১৮৩৩ সালে পোর্ট লরেন্স ও ভিস্তুলা একীভূত হয়ে টালিডো শহর গঠন করে।

টালিডো শহরের আয়তন ৮৪.১২ বর্গমাইল। এর ৮০.৬৯ বর্গমাইল স্থল ও ৩.৪৩ বর্গমাইল জল। []

জলবায়ু

সম্পাদনা

গ্রেট লেকস অঞ্চলের অন্যান্য শহরের মতোই টালিডোর জলবায়ু আর্দ্র মহাদেশীয় ধরনের।

গ্রীষ্মকাল অত্যন্ত উষ্ণ ও আর্দ্র। জুলাই মাসে টালিডো শহরে ৭৩.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট গড় তাপমাত্রা বিরাজ করে। প্রতিবছর গড়ে ৩৭ ইঞ্চি তুষারপাত হয়। বসন্তকাল বছরের সবচেয়ে আর্দ্র ঋতু।

জনমিতি

সম্পাদনা

২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী টালিডোর জনসংখ্যা ২,৮৭,২০৮। শহরে ৬৮,৩৬৪টি পরিবার বসবাস করে। টালিডোর জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,৩৭৪.৩ জন। শহরের বাসিন্দাদের ৬৪.৮% শ্বেতাঙ্গ, ২৭.২% আফ্রিকান আমেরিকান, ০.৪% আদিবাসী আমেরিকান ও ১.১% এশীয়। হিস্পানিক ও লাতিনোরা জনসংখ্যার ৭.৪%।

শহরের পরিবারগুলোর গড় আয় ৪১,১৭৫ ডলার। পুরুষদের গড় আয় ৩৫,৪০৭ ডলার ও নারীদের গড় আয় ২৫,০২৩ ডলার। শহরের মাথাপিছু আয় ১৭,৩৮৮ ডলার। ১৪.২% পরিবার ও ১৭.৯% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদের মধ্যে ২৫.৯% এর বয়স ১৮ এর নিচে ও ১০.৪% এর বয়স ৬৫ এর সমান বা বেশি।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা