তারিক রামাদান
তারিক রামাদান | |
---|---|
জন্ম | |
যুগ | ২১তম-শতাব্দীর দার্শনিক |
প্রধান আগ্রহ | Islamic studies Theology Philosophy Politics Interfaith dialogue Literature |
ভাবগুরু | |
ওয়েবসাইট | www |
তারিক রামাদান (আরবি: طارق رمضان; জন্ম: ২৬শে অগাস্ট, ১৯৬২) একজন সুইস শিক্ষাবিদ, বুদ্ধজীবী এবং লেখক। তারিক রামাদান ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসের টাইম ম্যাগাজিনের জরীপ অনুযায়ী একুশ শতকে পৃথিবীর সেরা ১০০ জন বিজ্ঞানী এবং চিন্তাবিদদের মধ্যে অন্যতম। তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অফ অরিয়েন্টাল স্টাডিস এর কন্টেমপরারি ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের অধ্যাপক। এছাড়াও তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয় এবং মালোয়েশিয়া পেরিলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের ভিসিটিং প্রফেসর। তিনি জাপানের দোশিশা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এবং কাতারে অবস্থিত রিসার্চ সেন্টার অফ ইসলামিক লেজিসলেশন অ্যান্ড এথিক্স এর ডিরেক্টর। তিনি চিন্তা-গবেষণা বা ইজতিহাদের মাধ্যমে মুসলিম জীবনের সমস্যাগুলোর নতুন সমাধান এর জন্য সামাজিক বিজ্ঞান এবং ইসলামি ফিকাহ শাস্ত্রের মূলনীতি বা উসূল আল ফিকহ এর একটি নতুন সেতুবন্ধন তৈরীতে একটি পূনর্গঠনমূলক সংস্কারের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।[২] তিনি ত্রিশটির বেশি বই লিখেছেন এবং সারা পৃথিবীর অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেছেন।
জন্ম ও পরিবার
[সম্পাদনা]তারিক রামাদান ১৯৬২ সালের ২৬ অগাস্ট সুইজারল্যান্ড এর জেনেভায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাঈদ রামাদান এবং ওয়াফা আল বান্নার সন্তান।
ওয়াফা আল বান্নার পিতা ছিলেন হাসান আল বান্না যিনি ১৯২৮ সালে আরব বিশ্বের নন্দিত ইসলামি আন্দোলন ইখওয়ানুল মুসলিমুন (Muslim Brotherhood) প্রতিষ্ঠা করেন। তারিক রামাদানের পিতা সাঈদ রামাদান ইখওয়ান এর একজন প্রথম সারির নেতা ছিলেন। স্বৈরশাসক জামাল আবুল নাসের সরকার তারিক রামাদানের বাবাকে মিশর থেকে নির্বাসিত করেন। সাইদ রামাদান পরিবার সহ সুইজারল্যান্ডে চলে যান। সেখানেই জন্ম হয় তারিক রামাদানের। তারিক রামাদানের স্ত্রী একজন ফরাসি ও সাবেক ক্যাথলিক এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। রামাদান দম্পতি চারটি সন্তান দ্বারা ধন্য।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]তারিক রামাদান জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর (এম এ) করেছেন দর্শন এবং ফরাসি সাহিত্যে; ডক্টরেট করেছেন অ্যারাবিক এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ এ ইউনিভার্সিটি অফ জেনেভা থেকে।
প্রফেসর রামাদান কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে ধ্রুপদি ইসলামী শিক্ষাদান পদ্ধতিতে অর্থাৎ গুরু-শিষ্য (ওয়ান-অন-ওয়ান) নিয়মে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন।
যে শিক্ষা সমাপন-এ গড়ে ৬-৭ বছর লাগে, তারিক রামাদান অসাধারণ নৈপুণ্য আর দক্ষতার মাধ্যমে তা ২ বছরে (১৯৯২-৯৩) সম্পন্ন করেছিলেন। তার পাঠদান শেষে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকার তাকে ইসলামী উসূল আল ফিকহ এর অনেকগুলো শাখায় সনদ (ইযাযাত) দান করেন। একটা সাক্ষাৎকারে তারিক রামাদান বলেছিলেন যে, তিনি আল-আজহারের দিনগুলোতে তিনি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত লাগাতার পড়াশোনা করতেন।
কর্ম
[সম্পাদনা]প্রফেসর তারিক রামাদান বর্তমানে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের ইউরোপিয়ান থিঙ্ক ট্যাংক -- ইউরোপিয়ান মুসলিম নেটওয়ার্ক (ইএমএন) এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্তব্য পালন করছেন। এছাড়া তিনি কাতারে অবস্থিত রিসার্চ সেন্টার অফ ইসলামিক লেজিসলেশন অ্যান্ড এথিক্স এর ডিরেক্টর। রিসার্চ সেন্টার অফ ইসলামিক লেজিসলেশন অ্যান্ড এথিক্স মূলত তারই লেখা বই “Radical Reform, Islamic Ethics and Liberation” OUP USA (2008). এর কন্সেপ্ট এর উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটি উচ্চতর ইসলামী গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেটি অর্থনীতি, পদ্ধতিবিজ্ঞান,মিডিয়া, জৈব-এথিক্স ইত্যাদি সমসাময়িক বিষয়ে ইসলামী স্কলার এবং প্রফেশনাল দের সমন্বয়ে কিছু ব্রিলিয়ান্ট পথ খোঁজার চেষ্টা করছে।[৩]
উল্লেখ্য, তিনি মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সালে ক্লাসিক্স ডিপার্টমেন্টের ইসলামিক স্টাডিজ এর অধ্যাপক পদ এবং রিলিজিয়ন, কনফ্লিক্ট অ্যান্ড পিস-বিল্ডিং এ হেনরি আর লিউস প্রফেসর পদ অধিকার করেন। বুশ নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন তার ভিসা প্রত্যাহার করলে তিনি এই দু'টো পদ প্রত্যাহার করেন। ওবামা প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর তার উপর এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আমেরিকা।
তিনি ৩০টি'র বেশি বই ও ৭০০টির অধিক প্রবন্ধের লেখক। বিশ্বের ইসলামি পুনর্জাগরণে বিশেষ করে পাশ্চাত্য ও সমকালীন বিশ্বে ইসলাম সম্পর্কিত তর্ক-বিতর্কে লেখা এবং বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, রাখছেন। তিনি একাডেমিক লেকচার ছাড়াও বিশ্বজুড়ে তৃণমূল পর্যায়েও বক্তৃতাদান করে থাকেন। তার বক্তৃতার রেকর্ডগুলো প্রতিবছরে মিলিয়ন কপি বিক্রি হত আর এখন তার ইউটিউব ভিডিও গুলোতে অসংখ্য হিট পরে। তার শত্রু মিত্র নির্বিশেষে সবাই স্বীকার করে নেয় যে ইসলামী পূনর্জাগরনে তার সমসাময়িক কালে তার অবস্থান মধ্যগগনে। তার আলোচনার বিষয়ে থিওলোজি, ইসলামিক আইন এবং বিচার, অ্যাপ্লাইড এথিকস, সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনীতি, রাজনীতি, ইন্টারফেইথ এবং ইন্ট্রাকমিউনিটি ডায়ালোগ।
২০০৪ সালের এপ্রিল মাসের টাইম ম্যাগাজিনের জরীপে বিশ্বের ১০০জন বিজ্ঞানী এবং চিন্তবিদের তালিকায় তারিক রামাদান রয়েছেন। ২০০৯ সালে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের অনলাইন ভোটে তারিক রামাদান সমসাময়িক ১০০ জন সেরা বুদ্ধিজীবীর তালিকায় ৪৯তম অবস্থান পেয়েছিলেন।
প্রকাশনা
[সম্পাদনা]- Arab Awakening, 2012. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৬১৪-৬৫০-৩
- The Quest for Meaning: Developing A Philosophy of Pluralism, 2010. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৪-১৯১৯৫৭-৭
- What I Believe, 2009. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫৩৮৭৮৫-৮
- Radical Reform: Islamic Ethics and Liberation, 2009. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫৩৩১৭১-৪
- In the Footsteps of the Prophet: Lessons from the Life of Muhammad, 2007. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫৩০৮৮০-৮
- Western Muslims and the future of Islam, 2004. আইএসবিএন ০-১৯-৫১৭১১১-X
- Islam, the West, and the Challenge of Modernity, 2001. আইএসবিএন ০-৮৬০৩৭-৩১১-৮
- To Be a European Muslim, 1999. আইএসবিএন ০-৮৬০৩৭-৩০০-২
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Tariq Ramdan's tribute to Muhammad Asad"। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Radical Reform: Islamic Ethics and Liberation: Tariq Ramadan: 9780195331714: Amazon.com: Books"। www.amazon.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-০২।
- ↑ AdaabIns। "Tariq Ramadan: Reform - what do we mean? - Lecture 2"।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- দাপ্তরিক ওয়েবসাইট
- Tariq Ramadan audio and video lectures from Halal Tube
- Tariq Ramadan argues for a new understanding of what it means to be a “moderate” Muslim ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে
- Tariq Ramadan Debates Moustafa Bayoumi on Proposed Islamic Center Near Ground Zero – video by Democracy Now!