নির্বাত নল
নির্বাত নল বা বায়ুশূন্য নল হলো এক ধরনের কাচের নল, যার ভেতর থেকে সমস্ত বায়বীয় পদার্থ নিষ্কাশন করে ফেলা হয় এবং এতে একাধিক তড়িৎদ্বার স্থাপন করে এর ভেতরে ইলেকট্রনের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আদি কম্পিউটার যন্ত্রগুলিতে নির্বাত নলগুলিকে সুইচ (বর্তনী সম্পূর্ণকারক-বিচ্ছিন্নকারক) কিংবা বিবর্ধক হিসেবে ব্যবহার করা হত। নির্বাত নলের ইংরেজি পারিভাষিক নাম ভ্যাকুয়াম টিউব (Vacuum tube)।
ইলেকট্রন বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয় এডিসন ক্রিয়া আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী ফ্লেমিং ১৯০৪ সালে এডিসন ক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে প্রথম নির্বাত নল উদ্ভাবন করেন। ফ্লেমিংয়ের নির্বাত নলটি একমুখীকারক (রেকটিফায়ার) হিসেবে কাজ করে। এতে দুটি তড়িৎদ্বার (ইলেকট্রোড) ছিল বলে এর নাম দেয়া হয় দ্বি-তড়িৎদ্বার বা ডায়োড (Diode)।
দ্য ফরেস্ট ত্রি-তড়িৎদ্বার বা ট্রায়োড নামে একটি নির্বাত নল আবিষ্কার করেন, যাতে তিনটি তড়িৎদ্বার ছিল।
১৯২০-এর দশকে নির্বাত নল ব্যবহার করা হত। যেখানে এক প্রান্তে একটি উত্তপ্তকারক থাকত যা ধাতুকে উত্তপ্ত করত। ধাতুটি তাপ গ্রহণ করে ইলেকট্রন নিঃসরণ করত। শুধু উত্তপ্তকারকটিকে খোলা বা বন্ধ করা হত।
২০শ শতকের প্রথমার্ধে বেতার সম্প্রচার, দূরপাল্লার টেলিফোন তথা দূরালাপন সেবা, টেলিভিশন এবং একেবারে প্রথম দিককার ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার, এই সবগুলি প্রযুক্তিই নির্বাত নলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। বিশেষ করে আদি কম্পিউটারগুলি নির্বাত নল দিয়ে তৈরি সবচেয়ে বৃহদাকার ব্যবস্থা ছিল। ২০শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এসে প্রায় সমস্ত ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এগুলিকে ট্রানজিস্টর নামক যন্ত্র দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়। এর পরেও টেলিভিশন ও কম্পিউটার মনিটরের মত চিত্র প্রদর্শক যন্ত্রাংশগুলিতে নির্বাত নলের ব্যবহার অব্যাহত থাকে; এগুলিকে ক্যাথোড রশ্মি নল বলা হত। এছাড়া অণুতরঙ্গ চুল্লী ও মহাশূন্যের কৃত্রিম উপগ্রহগুলিতে উচ্চ কম্পাঙ্কের সম্প্রচারক হিসেবে এগুলি আজও ব্যবহৃত হয়।