টাঙ্গাইল জেলা
টাঙ্গাইল | |
---|---|
জেলা | |
বাংলাদেশে টাঙ্গাইল জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°১৮′০″ উত্তর ৮৯°৫৫′১২″ পূর্ব / ২৪.৩০০০০° উত্তর ৮৯.৯২০০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ঢাকা বিভাগ |
আসন | টাংগাইল ১-৮ |
আয়তন | |
• মোট | ৩,৪১৪.৩৫ বর্গকিমি (১,৩১৮.২৯ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০২২)[১] | |
• মোট | ৪০,৩৭,৬০৮ |
• জনঘনত্ব | ১,২০০/বর্গকিমি (৩,১০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৭১.২১% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৯৩ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
টাঙ্গাইল জেলা হলো বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার একটি, যা ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল মহকুমা থেকে ৯৭৫ বর্গকিলোমিটার এবং ময়মনসিংহ সদর মহকুমা থেকে ২৪৩৯ বর্গকিলোমিটার জমি নিয়ে বর্তমান টাঙ্গাইল জেলাটি তৈরি করা হয়। উপজেলার সংখ্যা অনুসারে টাঙ্গাইল বাংলাদেশের “এ” শ্রেণীভুক্ত একটি জেলা। [২] জেলাটির মোট আয়তন ৩৪১৪.৩৫ বর্গ কিলোমিটার এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ৩৮ লাখ। টাঙ্গাইল আয়তনের ভিত্তিতে ঢাকা বিভাগের সর্ববৃহৎ জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ২য় সর্ববৃহৎ জেলা।
১৯৬৯ সাল অবধি টাঙ্গাইল ছিল অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমা এবং ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে টাঙ্গাইল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। এটি একটি নদী বিধৌত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এ জেলা যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এবং এর মাঝ দিয়ে লৌহজং নদী প্রবহমান।
অবস্থান ও আয়তন
[সম্পাদনা]টাঙ্গাইল জেলা ঢাকা হতে প্রায় ৮৪ কি মি দূরে অবস্থিত। এর আয়তন ৩৪১৪.৩৮ বর্গ কি.মি.। এই জেলার উত্তরে জামালপুর জেলা, দক্ষিণে ঢাকা জেলা ও মানিকগঞ্জ জেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ জেলা ও গাজীপুর জেলা, পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ জেলা।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]নামকরণের ইতিহাস
[সম্পাদনা]টাঙ্গাইলের নামকরণ বিষয়ে রয়েছে বহুজনশ্রুতি ও নানা মতামত। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রেনেল তার মানচিত্রে এ সম্পূর্ণ অঞ্চলকেই আটিয়া বলে দেখিয়েছেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের আগে টাঙ্গাইল নামে কোনো স্বতন্ত্র স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না। টাঙ্গাইল নামটি পরিচিতি লাভ করে ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মহকুমা সদর দপ্তর আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে স্থানান্তরের সময় থেকে।
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানের নামে ‘আইল’শব্দের আধিক্য আছে (যেমন- বাসাইল, ঘাটাইল, ডুবাইল, নিকরাইল, রামাইল ইত্যাদি)। অনেকের ধারণা টাঙ্গাইলের অন্য স্থানের নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঘটনা প্রবাহে ‘টাঙ্গাইল’নাম হয়েছে। টং শব্দের ফরাসী অর্থ উঁচু। আর আইল হচ্ছে আবাদী জমির সীমানা সংলগ্ন অংশ। এখানকার মানুষ বসবাসের জন্য মাটির উপর বাঁশ পুঁতে টং ঘর নির্মাণ করতো। টং ফরাসী শব্দ, অর্থ হলো উঁচু। অতীত সময়ে স্থানীয় অনার্য বাসিন্দারা বাসস্থানকে ‘ইল’বলতো। টাঙ্গাইল জেলা প্রাচীনকাল থেকে পাহাড়ের উঁচু ভূমি ও নিকটবর্তী কৃষি জমির সমাহার। এই উঁচু ভূমি বা টং ও জমির ‘আইল’এই দুইয়ের সমন্বয়ের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের এলাকার নাম টাঙ্গাইল হয়েছে।
টাঙ্গাইলের ইতিহাস প্রণেতা খন্দকার আব্দুর রহিম সাহেবের মতে, ইংরেজ আমলে এদেশের লোকেরা উচু শব্দের পরিবর্তে ‘টান’শব্দই ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল বেশি। এখনো টাঙ্গাইল অঞ্চলে ‘টান’শব্দের প্রচলন আছে। এই টানের সাথে আইল শব্দটি যুক্ত হয়ে হয়েছিল টান আইল। আর সেই টান আইলটি রূপান্তরিত হয়েছে টাঙ্গাইলে।
আরেক জনশ্রুতিতে রয়েছে, নীলকর টেংগু সাহেবের গল্প এবং এটিই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। বৃটিশ শাসনের প্রায় প্রারম্ভে আকুরটাকুর ও শাহবালিয়া মৌজার মধ্যবর্তী এলাকায় টেংগু সাহেবের নীল চাষ ও নীলের কারখানা ছিল। পূর্বোক্ত দুই মৌজার সীমানা বরাবর তিনি উচু মেটোপথ বা আইল যাতায়াতের জন্য তৈরী করেছিলেন। কয়েকজন সাধারণ এই আইলকে টেংগু সাহেবের আইল বলে উল্লেখ করতো। সুতরাং অনুমান করা হয় যে, টাঙ্গাইল শব্দটি টেংগু সাহেবের আইল নামেরই অপভ্রংশ।
বাংলাদেশ আদম শুমারী রিপোর্ট, টাঙ্গাইল জেলা গেজেটিয়ারে, তরুণ গবেষক ইতিহাসবিদ, অনুবাদক জনাব খুররম হোসাইন তার "টাঙ্গাইলের স্থান নামঃ ইতিহাস ও কিংবদন্তি" নামক এক প্রবন্ধে এবং ডঃ তারা চাঁদের "The influence of Islam on Indian culture" বইয়ে পাওয়া যায় যে, সুবাদার শায়েস্তা খাঁ মগ আর পর্তুগীজ জলদস্যুদের দমন করার জন্য দক্ষিণ ভারতের মালাবর অঞ্চলের মোপলাদের আনার সিদ্ধান্ত নেন। সমুদ্র পাড়ের এই সব মোপলা, যারা অসম সাহসী যোদ্ধা, সম্মুখ যুদ্ধে যারা কখনও পিছু হটে না। এক শক্তিশালী নৌ-বাহিনী গঠণ করে জলদস্যুদের উৎপাত যখন কিছুটা দমিত হলো তখন তাদের বসতির স্থান নির্ধারণ করলেন বর্তমান টাঙ্গাইল শহরের পশ্চিম প্রান্তে পরে তারা লৌহজং নদীর চর এলাকায় বসতি স্থাপন করে। মোপলাদের ধর্মগুরুকে তারা নিজস্ব ভাষায় তাংগাইল বলে। নতুন গড়ে ওঠা বসতিগুলোকে মোগলরা অভিহিত করেছিলেন দিহ্ টাঙ্গাল (দিহ্ শব্দের ফরাসী অর্থ হলো মহল্লা) যা কালক্রমে টাঙ্গাইল হয়েছে।
অন্য মতে, বৃটিশ শাসনামলে মোগল প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হয় আটিয়া। নীল ব্যবসার চরম উন্নতির সময় তখন আর আটিয়া স্থানটিকে আশ্রয় করে তখন এই অঞ্চল জম-জমাট হয়ে উঠে। সে সময়ে ঘোড়ার গাড়ি ছিল যাতায়াতের একমাত্র বাহন, যাকে টাঙ্গাইলের স্থানীয় লোকেরা বলত ‘টাঙ্গা’। বর্তমান শতকের মাঝামাঝি পর্যন্তও এ অঞ্চলে টাঙ্গা গাড়ির সর্বত্র চলাচল ছিল। "আল" শব্দটির কথা এ প্রসঙ্গে চলে আসে। বর্তমান টাঙ্গাইল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের নামের সাথে এই আল শব্দটির যোগ লক্ষ্য করা যায়। আল শব্দটির অর্থ সম্ভবত সীমা নির্দেশক যার স্থানীয় উচ্চারণ আইল। একটি স্থানকে যে সীমানা দিয়ে বাঁধা হয় তাকেই আইল বলা হয়। টাঙ্গাওয়ালাদের বাসস্থানের সীমানাকে ‘টাঙ্গা+আইল’এভাবে যোগ করে হয়েছে ‘টাঙ্গাইল’এমতটি অনেকে পোষণ করেন।
ইতিহাসবিদ মুফাখখারুল ইসলামের মতে, কাগমারি পরগণার জমিদার ইনাযাতুল্লাহ খাঁ চৌধুরী (১৭০৭-১৭২৭খ্রিস্টাব্দ) লৌহজং নদীর টানের আইল দিয়া কাগমারী আধামাইল দূরে খুশনুদপুর (খুশির জায়গা যার সংস্কৃতায়ন করলে সন্তোষ) তার সদর কাচারিতে যাতায়াতে করতেন। এই টানের আইল বা টান আইল বলিয়া বলে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চারিত হতে হতে টাঙ্গাইল নামকরণ হয়েছে।
অন্য মতবাদে জানা যায় ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ সরকারের আদেশ অনুযায়ী পারদীঘুলিয়া মৌজায় অন্তর্গত আতিয়া নামক গ্রামে টান-আইল থানার সদর স্থাপন করা হয়। গত শতাব্দীর মধ্যবর্তীকালীণ সময়ে টান-আইল মৌজা টাঙ্গাইল নামের রূপান্তরিত হয়। আইল (সীমানা) শব্দটি কৃষিজমির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই শব্দটি আঞ্চলিক ভাবে বহুল ব্যবহৃত শব্দ। টাঙ্গাইলের ভূ-প্রকৃতি অনুসারে স্বাভাবিক ভাবে এর ভূমি উঁচু এবং ঢালু। স্থানীয়ভাবে যার সমার্থক শব্দ হলো টান। তাই এই ভূমিরূপের কারণেই এ অঞ্চলকে হয়তো পূর্বে ‘টান আইল’বলা হতো। যা পরিবর্তীত হয়ে টাঙ্গাইল হয়েছে।
অন্য একটা সূত্রে জানা যায় হযরত শাহ জামাল (রাঃ) জাহাজ যোগে এদেশে আগমন করার সময় মাদ্রাজ থেকে একদল জেলে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। এদের দলপতির নাম ‘টাংগা’। জেলেরা লৌহজং নদীর পূর্ব তীরে বসবাস শুরু করে। তাদের দলপতির নামানুসারে স্থানের নাম হয় ‘টাঙ্গাইল’।
কথিত আছে জনৈক ইংরেজ সন্তোষ জমিদারিতে ব্রিটিশ আমলে রাজস্ব আদায় করতে এসেছিলেন। রাজস্ব আদায় শেষে ঢাকা যাওয়ার পথে একদল ঠগ রাজস্বের অর্থ লুটপাট করে সেই সঙ্গে ইংরেজ সাহেবকে হত্যা করে লৌহজং এর পূর্ব পারে টাংগিয়ে রেখে যায়। সেই থেকে নাম দেওয়া হয়েছে টাঙ্গাইল।
আবার কারো করো মতে ‘টান’এবং ‘ইল’নামক দু’জন ইংরেজ সাহেব সন্তোষ জমিদারিতে এসেছিলেন থানার স্থান নির্বাচনের জন্য তাদের নামানুসারে নাম হয়েছে টাঙ্গাইল।
আঞ্চলিক ইতিহাস
[সম্পাদনা]ইতিহাসে টাঙ্গাইলের সম্পর্কে যা জানা যায় তা হল আজ থেকে পাঁচ, সাড়ে পাঁচ হাজার বৎসর পূর্বে বৃহত্তর ময়মনসিংহের অধিকাংশ অঞ্চলই সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত ছিলো। শুধু মাত্র মধুপুর ভাওয়াল বনাঞ্চল শৈল শিলার উচ্চতা নিয়ে বিরাজ করেছিলো। ধারণা করা হয় যে, সোমেশ্বরী নদীর পাড়ের গারো পাহাড় হতে ভাওয়াল গড় পর্যন্ত যে পাহাড়মালা তাই হচ্ছে বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম স্থলভাগ। এই স্থলভাগের বড় অংশ টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত। কাজেই এ জেলার জনবসতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সু-প্রাচীন।
অতীত কাল থেকেই বহু ভাঙ্গাগড়া ও রাজনৈতিক দখল-বেদখল, চড়াই উৎরাই পেরিয়ে যে এলাকা আজ টাঙ্গাইল জেলা বলে পরিচিত লাভ করেছে, টাঙ্গাইল হিসাবে তার গঠন ও স্বতন্ত্র পরিচয় ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পাওয়া যায় না। অর্থাৎ এই ভূমিতে জন বসতি পুরাতন হলেও টাঙ্গাইল নামটি সাম্প্রতিক। বরং এই অঞ্চল আটিয়া পরগণার অংশ হিসেবে মোগল আমল থেকে পরিচিত।
প্রাচীনকালে (৬২৯-৬৪৫ খ্রিঃ) পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ভারতবর্ষ পরিভ্রমণ করেন। হিউয়েন সাঙ এর ভ্রমণ কাহিনী পাঠে জানা যায় বঙ্গভূমি ছয়টি প্রধান রাজ্যে বিভক্ত ছিলো। ১। পৌন্ড্র, (উত্তর বঙ্গ, ব্রক্ষপুত্রের পশ্চিম ভাগ) ২। কামরূপ (ময়মনসিংহের পূর্বভাগসহ পূর্ববঙ্গ ও আসাম) ৩। সমতট (ঢাকা-ফরিদপুর) ৪। কমলাহু (ত্রিপুরা বা কুমিল্লা) ৫। তাম্রলিপ্ত (দক্ষিণ পশ্চিম ভাগ) ও ৬। কর্ণ সুবর্ণ (পশ্চিমবঙ্গ)। আমাদের টাঙ্গাইল জেলা তৎকালে কামরূপ রাজ্যের বা প্রাগ জ্যোতিষপুর রাজ্যাংশ- যাকে বলা হয় ‘ভাটির মুল্লুক’এর অন্তর্গত ছিলো। মহাভারত কাব্যগ্রন্থের কামরূপ রাজ্যের সীমানা পর্যন্ত প্রসারিত বলা হয়েছে।
তাছাড়া পর্যটক ইবনে বতুতার গ্রন্থেও এ এলাকার বর্ণনা পাওয়া যায়।
আটিয়া পরগনা থেকে টাঙ্গাইল জেলার উৎপত্তির ঘটনা প্রবাহ
[সম্পাদনা]হিন্দু শাসন আমলে খ্রি. দশম শতাব্দীতে বাঙ্গলায় সেন ও পাল রাজ বংশের আবির্ভাব হয়। এই উভয় বংশের নৃপতিবর্গ বঙ্গভূমির বিভিন্ন অঞ্চল শাসন করতো। ক্রমে কামরূপ রাজ্যেও তাঁদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। জানা যায় টাঙ্গাইল অঞ্চল খ্রি. দশম হতে একাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভ পর্যন্ত ১২০ বছর কাল পাল রাজেন্যবর্গ এই অঞ্চল শাসন করেছে। এই সময়ে ময়মনসিংহর দক্ষিণ অংশ বর্তমান কাপাসিয়া, রায়পুরা ও ধামরাই নামক স্থানত্রয়ে শিশুপাল, হরিশ্চন্দ্র পাল ও যশোপাল নামক পাল বংশীয় তিনজন ক্ষুদ্র নৃপতির রাজ্য ছিল। পশ্চিমাংশে মধুপুরে পাল রাজ ভগদত্তের ক্ষুদ্র রাজ্য ধীরে ধীরে বাড়ছিল।
এর পর দ্বাদশ শতাব্দীতে সেন বংশের নৃপতি সেনের আমলে টাঙ্গাইল জেলা সেনদের অধিকারে আসে। সেন রাজবংশের অভ্যূদয়ে এই ক্ষুদ্র রাজ্যগুলো লয় প্রাপ্ত হয়ে যায়।
এয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে সোনার গাঁ পতনের সময় পর্যন্ত পূর্ববঙ্গ সেন রাজ্য বংশের শাসনাধীন ছিলো। সেন সাম্রাজ্যের উপর মরণাঘাত হানেন তুর্কী আক্রমণকারী ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী। তিনি ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা লক্ষণ সেনের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী নদীয়া (বা নদীয়া) আক্রমণ করেন। বৃদ্ধ রাজা রাজধানী থেকে পালিয়ে এসে পূর্ববাংলার বিক্রমপুরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তারপর তার রাজত্বকাল দু’বৎসর স্থায়ী হয় এবং তার রাজ্য সীমাও খুব সংকুচিত হয়ে পড়ে। তবে মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী তার বিজয়-অভিযান পূর্বদিকে প্রসারিত না করায় টাঙ্গাইলের অঞ্চলে তার প্রভাব বা প্রমাণ পাওয়া যায় না।
প্রথম যে মুসলিম নরপতি যিনি এ জেলার উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি হলেন গোড়াধিপতি সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ্ (দেহলভী)। তিনি ১৩০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার বলেন, সম্ভবত শামসুদ্দিন ফিরোজের (দেহলভী) রাজত্ব কালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে বর্তমান কালের ময়মনসিংহ জেলার মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বর্তমান টাঙ্গাইল জেলা যা পূর্বে ময়মনসিংহ জেলার অংশ বিশেষ ছিল সেখানে মুসলমান রাজত্বের সূচনা হয় চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমদিকে। ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দ ফকরুদ্দিন মুবারক শাহ বাংলার পূর্বাঞ্চল সোনার গাঁয়ে স্বাধীনভাবে রাজত্ব শুরু করেন। এ সময়ে বাংলা তৎকালীন রাজধানী গৌড়ের অধিপতি ছিলেন। ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দ শামছুউদ্দিন ইলিয়াস শাহ, আলাউদ্দিন আলী শাহকে হত্যা করে দুই বাংলা একত্রিত করে স্বাধীন রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত করেন, যা প্রায় দুই শত বৎসরকাল অর্থাৎ ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দ শেরশাহ গৌড় দখলের পূর্ব পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল।
গৌড়ের সন্তান হোসেনশাহ (১৪৯৩-১৫১৮ খ্রিস্টাব্দ) কামরূপ রাজ্য অধিকার করেন এবং বর্তমান মোমেনশাহী অঞ্চলটি কামরূপ থেকে আলাদা করে স্বীয়পূত্র নসরত শাহকে আধিপত্য দান করেন।
এরপর বাংলা মুগল শাসনের অন্তভূক্ত হওয়ার পূর্বপর্যন্ত প্রায় ৩৮ বৎসরকাল রাজধানী গৌড়কে কেন্দ্র করে নানা যুদ্ধ বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ ছিলো। ফলে বাংলার উত্তরাঞ্চলের এ অরাজকতাময় পরিবেশ থেকে বিশাল যমুনানদী পার হয়ে অনেক লোক চলে আসে পূর্বাঞ্চলে। পূর্ব বাংলায় তখন বার ভূঁইয়াদের রাজত্ব। অপর দিকে ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ মুগল সেনাপতি মুনিম খান, দাউদ খানকে পরাজিত করে গৌড়ের তথা বাংলার শাসনভার গ্রহণ করলে বাংলার বার ভূঁইয়াদের স্বাধীন জমিদাররা তা মেনে নিতে অস্বীকার করেন। ঈশা খাঁ এ সকল বা ভূঁইয়াদের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন এবং সোনারগাঁয়ে তার রাজধানী স্থাপন করেন।
কিংবদন্তি মতে, ঈশা খাঁ বাইশ পরগণার মালিক ছিলেন। ঈশা খাঁয়ের রাজ্যের প্রকৃত আয়তন বা চৌহদ্দির সঠিক বিবরণ প্রকৃতভাবে পাওয়া না গেলেও বাইশ পরগণার মালিকানা সম্পর্কে যে কিংবদন্তি প্রচলিত আছে সেটা সঠিক বলে মনে হয়। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সূত্র হতে ঈশা খাঁয়ের পরগণাগুলোর নাম পাওয়া যায়: কেদারনাথ মজুমদার রচিত ময়মনসিংহের ইতিহাস; জেলা গেজেটীয়ার, ময়মনসিংহ এবং পূর্ববঙ্গ গীতিকার ‘দেওয়ান ঈছা খাঁর’পালাগানে। এসব ঘটনাবলীর সমন্বয়ে কিছু গরমিল লক্ষণীয়। এ তালিকায় আটিয়াকে একটি পরগণা হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবুল ফজলের বিবরণ থেকে জানা যায়, পুখুরিয়া, কাগমারী, আটিয়া এবং বড়বাজু পরগণার অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত ছিল এ সময়ের টাঙ্গাইল।বর্তমানে টাঙ্গাইল থানাধীন আটিয়া একটি ইউনিয়ন ও গ্রাম।
১৫৮২ খ্রিস্টাব্দ টোডরমলের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় বঙ্গদেশ ১৯ সরকার ও ৬৮২ মহাল বা পরগণাতে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে বাজুহার অধিকাংশ এলাকা নিয়ে বর্তমান ময়মনসিংহ জেলা গঠিত হয়েছে এবং এর অবশিষ্ট অংশ ঢাকা ফরিদপুর ও পাবনা জেলার অন্তর্গত। সরকার বাজুহার সীমানা পর্যবেক্ষণে প্রতীয়মান হয় আটিয়া পরগণা অধিকাংশ সময় সরকার বাজুহার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানে উল্লেখ্য, টোডরমলের শাসন ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসের সময়ই আটিয়া ও কাগমারী দু’টিকে পরগণায় পওন করা হয়।
১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ মুগল সম্রাট আকবরের মৃত্যু হলে ক্ষমতায় আসেন জাহাঙ্গীর। তিনি ইসলাম খানকে বাংলার সুবেদার করে পাঠান।
বেঙ্গল ডিস্ট্রিক গেজেটিয়ারে বলা আছে সাঈদ খান পন্নী সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ) কাছ থেকে ও করটিয়ার পন্নী পরিবারের ঊর্ধ্বতন পুরুষ সাঈদ খান পন্নী সম্রাট আকবরের আমলে একটি জায়গার জায়গীর প্রাপ্ত হন। অন্য মতে সাঈদ খান শাহজাহান বাদশাহ (১৬২৭-১৬৫৮খ্রিস্টাব্দ) থেকে আটিয়ার শাসক নিযুক্ত হন। তবে সময় কাল যাই হোকনা কেনো সাঈদ খান পন্নীই করটিয়া জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা। ঘটনা প্রবাহে ও পারিপাশির্বকতায় সাঈদ খান ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দ আটিয়া পরগণার শাসক নিযুক্ত হয়ে ছিলেন এ কথা অধিক যুক্তি গ্রাহ্য। জায়গীরের প্রাণকেন্দ্র ছিল আটিয়া। অন্যমতে আটিয়া পরগণার শাসক বাবা আদম শাহ্ কাশ্মিরী মৃত্যুর পূর্বে প্রিয়ভক্ত সাঈদ খাঁকে আটিয়া পরগণার শাসনভার অর্পণ করেন এবং তার পরামর্শক্রমে সুবেদার ইসলাম খাঁর সুপারিশে দিল্লীর মোগল বাদশা জাহাঙ্গীর ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে সাঈদ খাঁকে আটিয়া পরগণার শাসক নিযুক্ত করেন।
১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম খান তার রাজধানীকে রাজমহল থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঐতিহাসিক আবদুল করিমের মতে, ইসলাম খান মুসা খানের বিরুদ্ধে সমরাভিযান শুরু করে যেহেতু ইসলাম খান ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করেন ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে এবং মুসা খান অন্যান্য বার ভূঁইয়াদের শাসনাধীন অঞ্চলে মুগল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে। তাই ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দের পরে টাঙ্গাইলের করটিয়া অঞ্চলের পন্নী পরিবারের সঙ্গে ইসলাম খানের কোনই সম্পর্ক ছিল না এ কথা নির্ভূল ভাবে বলা চলে। তার সময় থেকে টাঙ্গাইল জেলা বাংলার সুবাদারের অধীনে থেকে ঢাকার নায়েব নাজিম কর্তৃত্ব শাসিত হয়েছে।
১৬০৯-১৬১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমগ্র পূর্বাঞ্চল মুগল শাসনাধীনে আনতে সচেষ্ট হন। অপরপক্ষে টাঙ্গাইল অঞ্চলে বিদ্যমান সর্বপ্রথম মস্জিদ স্থাপত্য (আটিয়া মস্জিদ) নিদর্শনের উল্লেখ পাওয়া যায় সপ্তদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে। শিলালিপি অনুযায়ী এটি এ অঞ্চলের বিখ্যাত পন্নী পরিবারের সাঈদ খান পন্নী নির্মাণ করেন। সমসাময়িক ইতিহাসে সাঈদ খান পন্নীর সাথে মুসা খানের কোন সম্পর্কের উল্লেখ পাওয়া যায় না।
১৬১১ খ্রিস্টাব্দে মুসা খান অন্যান্য বার ভূঁইয়াদের শাসনাধীন অঞ্চলে মুগল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
নবাব মুর্শিদ কুলী খান তার নাত-জামাই মির্জা লুৎফুল্লাহ্কে ঢাকার নায়েব নাজিম নিযুক্ত করেন এবং তার অনুমোদনক্রমে দিল্লীর তদানীন্তন বাদশাহ মির্জা লুৎফুল্লাহ্কে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলী খান উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি তার শ্বশুর নবাব সুজাউদ্দিনের শাসনকালেও উক্ত পদে আসীন ছিলেন। নবাব সুজাউদ্দিনের সময় বিহার এবং উড়িষ্যা প্রদেশ দু’টিকে বাংলার সাথে যুক্ত করা হয়। ফলে এ বিরাট সুবা’র শাসনকার্যের সুবিধার জন্য একে চারটি ভাগে বিভক্ত করতে হয়। ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব মির্জা লুৎফুল্লাহ্র উপর ন্যস্ত হওয়ার ফলে টাঙ্গাইল জেলাসহ সমগ্র পূর্ববাংলা, দক্ষিণ বাংলা এবং উত্তর বাংলা কিয়দংশ ঢাকার নায়েব-নাজিমের অধীনে চলে আসে। মির্জা লুৎফুল্লাহ্ ওরফে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলী খান তার এলাকায় সামগ্রিক উন্নতিকল্পে বিশেষ যত্নবান হন। কবিতা রচনায় এবং হস্তলিপিতে তার রূচিবোধের পরিচয় মিলে। দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলী খানের পর ঢাকার নায়েব-নাজিম হিসাবে নিযুক্ত হন সরফরাজ খান। তার অবর্তমানে তার সহকারী সৈয়দ গালিব আলী খান শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। সরফরাজ খানের দেওয়ান হিসাবে নিযুক্ত হন যশোবন্ত রায়।
যশোবন্ত রায় ছিলেন খুবই দক্ষ শাসক। ফলে ঢাকা বিভাগে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসে নবাব শায়েস্তা খানের আমলের ন্যায়। জিনিসের দাম, বিশেষ করে খাদ্য দ্রব্যের দাম উল্লেখ করার মত। এই শাসক সম্পর্কেও স্যার যদুনাথ সরকারের উক্তি প্রণিধান যোগ্য। এর ফলস্বরূপ, উৎপন্ন দ্রব্যের মূল্য এত কমে যে শায়েস্তা খানের আমলের মত আট মন চালের বিনিময় মূল্য হয়েছিল এক টাকা। সরফরাজ খানের পর ঢাকার নাজিম হন মুরাদ আলী খান। তার স্বপ্লকালীন শাসনকালে বাংলার আকাশ ছিল খুবই দুর্যোগপূর্ণ। এ অবস্থার সুযোগ নিলেন নবাব আলীবর্দী খান।
নবাব আলীবর্দী খান ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে মুগল বাদশাহ মোহাম্মদ শাহের ফরমান বলে বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন। নবাব আলীবর্দী খান মসনদে আসীন হয়ে তার ভ্রাতৃস্পুত্র নাওয়াজিস মোহাম্মদকে ঢাকার নায়েব-নাজিম নিযুক্ত করেন। তার সহকারী হিসাবে নিযুক্ত হন হুসেন কুলী খান। নবাব আলীবর্দী খানের পর বাংলার মসনদে খুব অল্প সময়ের জন্য আসীন ছিলেন তার পৌত্র নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রতিভূ বরার্ট ক্লাইভের হস্তে পরাজয় বরণ করলে বাংলার ইতিহাসে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয়।
১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে কাসিম বাংলার নবাব হওয়ার পর খাজনা আদায়ের জন্য যে ভূমি বন্দোবস্ত করেন তাতে আটিয়া, কাগমারী, বড়বাজু হোসেনশাহী ইত্যাদি পরগণার নাম পাওয়া যায়- টাঙ্গাইলের নাম পাওয়া যায় না।
১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী নবাব শাহ্ সুজা প্রবর্তিত ‘সরকার বাজুহার’কে তিনটি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করেন- ১) জমিদারি রাজশাহী, ২) আটিয়াদিগর, ৩) জামালপুর, ঢাকা। আটিয়া দিগরের অধীনে আটিয়া, বড়বাজু ও কাগমারী পরগণা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঈশা খাঁর আমলে আটিয়া পরগণার সবটাই মহৎ কাজের উদ্দেশ্যে বাবা আদম কাশ্মিরীকে দান করেন। বাবা আদম কাশ্মিমীরীর মৃত্যুর পূর্বে সাঈদ খাঁ এই পরগণার বন্দোবস্ত পান। সাঈদ খাঁর পরবর্তী বংশধরগণই করটিয়ার পন্নী জমিদার এই টাঙ্গাইল অঞ্চলের সবচেয়ে প্রতাপশালী জমিদার।
১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে এ এলাকার উপর ব্রিটিশের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। লর্ড ক্লাইভ, দিল্লীর বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমের নিকট থেকে ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী প্রাপ্ত হ’লে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন বাংলার উপ সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে টাঙ্গাইল জেলা ঢাকার নায়েব-নাজিমের অধীন থেকে কোম্পানীর শাসনাধীনে চলে আসে।
১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রেনেলের মানচিত্রে টাঙ্গাইলের উল্লেখ নেই।
১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে পলাশী যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ক্ষমতা গ্রহণের পর এদেশে সর্বপ্রথম ভূমি জরিপ হয়। সেখানেও টাঙ্গাইলের উল্লেখ নেই।
১৭৫৪-১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তখন ঢাকার নায়েব-নাজিম পদের আসীন ছিলেন নবাব জাসারত খান আর নবাব কাজিম আলী খান তখন বাংলার সুবাদার ছিলেন। এসময় তাঁকে কয়েক বৎসর পাটনা অবস্থান করতে হয়। ঢাকায় তার অবর্তমানে কোম্পানীর পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করেছিলেন জনৈক স্কটল্যান্ডবাসী লেফ্টেনান্ট (পরে ক্যাপ্টেন) সুইন্টন। কোম্পানীর রাজত্ব শুরু হওয়ার পর থেকে ঢাকার নায়েব-নাজিমগণের ক্ষমতা বিভাগীয় শাসকের পর্যায় থেকে আস্তে আস্তে স্থানীয় জমিদারদের ক্ষমতায় সংকুচিত হয়। ঢাকার নায়েব-নাজিমগণ ক্ষমতাশালী ছিলেন। তখন থেকে শুরু করে কোম্পানীর রাজত্বের শেষকাল পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে যেসব জমিদার এ জেলার উপর তাঁদের প্রভাব প্রতিপত্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। তারা হলেন; করটিয়া পন্নীগণ, ও ধনবাড়ির জমিদারগণ এবং দেলদুয়ার, পাকুল্লা, নাটোরের মহারানী ভবানী ও তার বংশধর, সন্তোষের মহারানী দিনমণি চৌধুরাণীর পূর্বপুরুষেরা বা এ বংশের জমিদারগণ নাগরপুর সহ স্থানীয় জমিদারগণ।
কোম্পানীর শাসনকালে শুধু প্রজা নয় খাজনা আদায়ে ব্যর্থ হলে জমিদাররাও নিগৃহীত হয়েছে। কোম্পানীর শাসন আমলের প্রথম পর্যায়ে (১৯৬৯-৭০ ছিয়াত্তরের মন্নন্তর) সারা বাংলাদেশে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মত এ জেলার লোকদেরকে অবর্ণীয় দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয় এবং বহু লোক খাদ্যাভাবে মৃত্যুবরণ করে। অনেকে উপায়ন্তর না দেখে দস্যূবৃত্তি অবলম্বন করে। তাঁদের অনেককেই, পরবর্তী পর্যায়ে ফকির ও সন্ন্যাসীদের কোম্পানী শাসনের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহী কার্যক্রম আমরা এ অঞ্চলে দেখতে পাই, সে কার্যক্রমে যোগদান করতে দেখা যায়।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষক ও কারিগরদের বিদ্রোহ ঘটে। যার ব্যাপ্তি টাঙ্গাইল অঞ্চলে কার্যকর ছিলো সাম্প্রতিককালে ইতিহাসে এ বিদ্রোহ ‘ফকির-সন্ন্যাসী’বিদ্রোহ নামে পরিচিত। কিন্তু এই বিদ্রোহকে তৎকালীন ইংরেজ শাসকদের লিখিত পত্রাবলী ও রিপোর্টে সন্ন্যাসীদের আক্রমণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গভর্নর জেনারেল হেস্টিংস এই বিদ্রোহকে প্রথম ‘কৃষক-বিদ্রোহ’নামে অভিহিত করেন।
১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ময়মনসিংহ কালেক্টরেট সৃষ্টি করা হয়। ফকির সন্ন্যাসীদের দমন ঢাকা কেন্দ্র থেকে পরিচালনের অসুবিধার জন্য এটি সৃষ্টি করা হয়। মিঃ রটন ছিলেন ময়মনসিংহ জেলার প্রথম কালেক্টর ম্যাজিস্ট্রেট। এ অবস্থায় আটিয়া পরগণা ব্যতীত টাঙ্গাইলের বেশি ভাগ অঞ্চল ময়মনসিংহ কালেক্টরের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। আটিয়া ঢাকা কালেক্টরের অধীনে থাকে। এ সময় যমুনা ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তনের ফলে ময়মনসিংহ জেলার সীমানার পরিবর্তন হয়েছে।
খন্দকার আবদুর রহিম টাঙ্গাইলের ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে যখন ময়মনসিংহ জেলা স্থাপিত হয়েছিল, তখন শ্রীহট্ট জেলার তরফ, ত্রিপুরা জেলার মেহের, সবাইল, বরদাখাত ইত্যাদি, নোয়াখালী জেলার ভেলুয়া, পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ, আসামের তুরা ইত্যাদি দূরবর্তী স্থান সমূহ ময়মনসিংহ কালেক্টরেট এর অধীনে ছিল। কাগমারী ও আটিয়া পরগণা অঞ্চলটি ময়মনসিংহ জেলার শাসনাধীনের ছিল। জেলা স্থাপনের পর ময়মনসিংহ জেলায় ৮ টি তহসিল কাচারী স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমান টাঙ্গাইল জেলায় তখন কাগমারী ও পুখুরিয়া পরগণায় তহসিল কাচারী স্থাপন করা হয়েছিল।
১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে তহসিল কাচারী বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে কাননগোর কার্যালয় স্থাপন করা হয়।
১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে কাননগোর পদ বিলুপ্ত করা হয়।
১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মহকুমা ব্যবস্থা চালু করা এবং প্রশাসনিক সুবিধার জন্য
১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলাকে বিভক্ত করে জামালপুর বিভাগ করা হয় যার অধীনে ছিল শেরপুর, হাজিপুর/হাজিগঞ্জ, পিংনা ও সিরাজগঞ্জ থানা সমন্বয়ে। এই ব্যবস্থায় বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার আটিয়া পরগণার অঞ্চল ঢাকা জেলায়, মধুপুর থানা ময়মনসিংহ সদর মহকুমার এবং নাসিরাবাদ, গাবতলী, মধুপুর, নেত্রকোণা, ঘোষ গাঁও, ফতেপুর, গফরগাঁও, মাদারগঞ্জ, নিকলি ও বাজিতপুর থানা সমন্বয়ে সদর মহকুমা স্থাপন করা হয়।
১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ভূমি জরিপের সময়েও টাঙ্গাইলের উল্লেখ পাওয়া যায় না। রেনেলের মানচিত্রে আটিয়া পরগণার উল্লেখ ছিল। তখন বর্তমান টাঙ্গাইলের অধিকাংশ অঞ্চল আটিয়া পরগণার অধীনে ছিল। আঠার ও উনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত আটিয়া নামে পরিচিত অঞ্চলই বর্ধিত হয়ে বর্তমান টাঙ্গাইলের রূপলাভ করেছে। এ থেকে বুঝা যায় টাঙ্গাইলের সাবেকি নাম আটিয়া তা সম্পূর্ণ নিশ্চিত।
১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে সিরাজগঞ্জ থানার কিছু অংশ পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে আটিয়া থানায় রূপান্তর করে ময়মনসিংহ কালেক্টরেটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। টাঙ্গাইলের অধিকাংশ মৌজা তখন এই আটিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সরকার পারদিঘুলিয়া মৌজায় টানআইল (পরে নাম রূপান্তর হয়ে টাঙ্গাইল হয়) থানার প্রত্তন করে। করটিয়ার মুসলিম জমিদারও বরাবর ইংরেজ বিদ্বেষী ছিল বিধায় আটিয়া পরগণাতেও নতুন থানা বা চৌকির স্থান নির্দিষ্ট হয়নি। যদিও প্রশাসনিক দিক থেকে সেটাই ছিল সর্বোত্তম।
১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার পারদিঘুলিয়া মৌজার অন্তর্গত আটিয়া পরগণায় টানআইল থানা পত্তন করে। নতুন থানাকেই মহকুমা ঘোষণা দিয়ে মোমেনশাহীর সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়। যা পরে টাঙ্গাইল নামে রূপান্তরিত হয়। এরপর বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার আটিয়া থানা ঢাকা জেলায়, মধুপুর থানা ময়মনসিংহ সদর মহকুমা এবং অন্যান্য অঞ্চল জামালপুর মহকুমা অন্তর্ভুক্ত হয়। ৩ মে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে আটিয়া, পিংনা ও মধুপুর থানা সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় আটিয়া মহকুমা। একদা ময়মনসিংহ জেলাই টাঙ্গাইল অঞ্চলের গোপালপুর থানার সূবর্ণ খালীতে স্থানান্তর হতে চেয়েছিল। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য ময়মনসিংহের তৎকালীন সিভিল সার্জন ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলা সদর সুর্বণখালীতে স্থানান্তরের পরমর্শ রেখেছিলেন। সরকারের নিকট গেজেটিয়ারে উল্লেখ আছে - The towns of Maymenshingh are not sufficient impertinence to merit special attention in this chapter. In 1869 civil surgeon recommended the transfer of the head quarters of the district to Seaborne Khaki or Jamalpur.
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে মহকুমা সদর দপ্তর স্থানান্তর করা হয়। জনাব ব্রহ্মনাথ সেন ছিলেন টাঙ্গাইল মহকুমার প্রথম মহকুমা প্রশাসক।
১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল মহকুমার আয়তন ছিল ১০৪১ বর্গমাইল। তখন মহকুমায় টাঙ্গাইল, কালিহাতী ও গোপালপুর এই তিনটি থানা এবং নাগরপুর, মির্জাপুর, ঘাটাইল ও জগন্নাথগঞ্জ- এই চারটি ফাঁড়ি থানা ছিল। মধুপুর থানা তখন ময়মনসিংহ সদর মহকুমার সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরে জগন্নাথগঞ্জ ফাঁড়ি থানাকে পাবনা এবং মধুপুর থানাকে টাঙ্গাইলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে যমুনা নদীকে বগুড়া ও ময়মনসিংহ জেলার সীমানা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ময়মনসিংহ জেলার ১৬৫টি গ্রামকে বগুড়া জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মপুত্র নদকে রংপুর ও ময়মনসিংহের সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছিল। তখন এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিভিন্ন পরগণার নিম্নে বর্ণিত অংশসমূহ তৎকালীন টাঙ্গাইল মহকুমা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ক) পরগণা আটিয়া, এলাকা ৭৭৯.৬৯ বর্গমাইল, মহাল- ১৪৭টি। খ) পরগণা জাফরশাহি, এলাকা ২৩২.৬৩ বর্গমাইল, মহাল- ১০টি। গ) পরগণা কাগমারি, এলাকা ৩৪৪ বর্গমাইল, মহাল- ৪৫২টি। ঘ) পরগণা কাশীপুর, এলাকা ১.৬০ বর্গমাইল, মহাল- ৬৬টি। ঙ) পরগণা পুখুরিয়া, এলাকা ৫১৫.২৫ বর্গমাইল, মহাল- ৬০৪টি।
১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে যমুনাকে পাবনা ও ময়মনসিংহের সীমানা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে সিরাজগঞ্জ থানাকে এনে ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলায় জেলাবোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। জেলার কালেক্টর এই বোর্ডের সভাপতি মনোনীত হতেন। সদস্যগণের মধ্য হতে ১ জন সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হতো।সহ-সভাপতি সহ মোট ২৫ জন এই বোর্ডের সভ্য ছিলেন। তন্মধ্যে ১২ জন লোকাল বোর্ডের সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত। বাকী ১২ জন সরকার কর্তৃক মনোনীত হতেন।ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের আয়তন ছিল ৬২৭৮ বর্গকিলোমিটার। ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের অধীনে ৫ টি লোকাল বোর্ড স্থাপন করা হয়। লোকাল বোর্ড গুলো হলো- ময়মনসিংহ সদর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও টাঙ্গাইল।
১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে Sir Andrew Fraser ময়মনসিংহ জেলা বিভক্ত করে পৃথক জেলা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আবার আলোচনায় নিয়ে আসেন।
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গ ভঙ্গ হলেও বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলতে থাকে।
১৬ জুন ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাগরপুর, মির্জাপুর, ঘাটাইল ও জগন্নাথগঞ্জ ফাঁড়ি থানাকে পূর্ণাঙ্গ থানায় রূপান্তরিত করা হয়। ময়মনসিংহকে বিভক্ত করে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও গোপালপুর জেলা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়।
১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব বঙ্গ ও আসাম সরকার এক প্রজ্ঞাপণের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেলা সদরের দুই প্রান্তে পৃথক দু’টি জেলা সদর স্থাপন করে ময়মনসিংহকে দু'টি পৃথক জেলায় রূপান্তর করার বিষয়ে জনমত জরিপের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রস্তাবটি বিরোধিতার সম্মুখীন হলে টাঙ্গাইল জামালপুর মহকুমা নিয়ে পৃথক একটি জেলা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ পূর্বক জনমত জরিপের ব্যবস্থা করেন।
১৯১২ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইলে সদর দপ্তর স্থাপন করে টাঙ্গাইল ও জামালপুর মহকুমা সমন্নয়ে পৃথক জেলা স্থাপনের খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছিল। ইংরেজ লাটের কাউন্সিলার স্যার নওয়াব আলী চৌধুরীর নেতৃত্বে ও তৎকালীন রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম গজনবীর মিলিত প্রচেষ্টায় টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলা করার দাবী প্রত্থাপিত হয়। প্রশাসনিক কারণে ময়মনসিংহ জেলা ভাগ করার লক্ষে তৎকালীন ইংরেজ সরকার রাউল্যান্ড কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সুপারিশক্রমে ভারতে বড় লার্ট লড রোনাগোসে ময়মনসিংহ জেলাকে ভেঙ্গে জামালপুরের জেলা সদর ও ধনবাড়িতে মহকুমা স্থাপনের অনুমোদন দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি।
১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ অক্টোবর বাংলার বিভিন্ন জেলা সমূহে বিদ্যমান অসুবিধা ও জটিল পরিস্থিতি যাচাই করার জন্য সরকার ৬ সদস্য বিশিষ্ট Bengal District Administration committee গঠন করেন। কমিটির মেয়াদকাল ছিল ১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দ। মিঃ ই.ভি লিভিঞ্জ ছিলেন কমিটির সভাপতি এবং সদস্য সচিব ছিলেন মিঃ সি.ই.লো। কমিটির সম্মানিত সদস্য ছিলেন মিঃ এইচ. ভি. লোভেট, মিঃ এন.ডি বিটসন বেল, মিঃ কে.সি.দে এবং মিঃ ই.এন. ব্লান্ডি।
১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দ উক্ত কমিটি টাঙ্গাইল ও জামালপুর, সদর মহকুমা সমন্বয়ে প্রস্তাবিত ‘গোপালপুর জেলার’ রূপরেখা ও কাঠামো চূড়ান্ত করার পাশাপাশি জেলা ও মহকুমা সমূহের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি নজর রেখেছিলেন। কারণ জলাভূমি, নদ-নদী, উপনদী, খালবিল নালার কারণে তৎকালীন স্থল যোগাযোগ ব্যবস্থা সন্তোষজনক ছিল না। এলাকার উন্নয়ন ও গতিশীল প্রশাসনের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা অপরিহার্য এজন্য কমিটি টাঙ্গাইল থেকে ময়মনসিংহ-সিংঝানি এবং যমুনা নদী তীরবর্তী বিখ্যাত বন্দরনগরী সুবর্ণাখালী হতে ময়মনসিংহ, ভৈরব বাজার হতে কিশোরগঞ্জ হয়ে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও ধারানগিরি কয়লা খনি পর্যন্ত নতুন রেলপথ স্থাপনেরও সুপারিশ করেছিলেন। প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলা বাস্তবায়িত হয়নি।
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলে এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ই. ভি. লেবিঞ্জ (Levinge) এর সভাপতিত্বে গঠিত Administration Committee এর Reprot এ পুনরায় ময়মনসিংহকে বিভক্ত করে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও গোপালপুর জেলা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। উল্লেখ্য ধনবাড়ির জমিদার সৈয়দ নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী গর্ভণরের নির্বাহী পরিষদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে ময়মনসিংহ, জেলাকে বিভক্ত করাসহ ধনবাড়িতে একটা মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। তার প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়।
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ধনবাড়িতে মহকুমা স্থাপনের জন্য ৫৫.৫ একর জমি হুকুম দখল করা হয়। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনে এই পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হতে পারেনি।
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে খেলাফত আন্দোলন শুরু হয়। মওলালা মুহম্মদ আলী ও মওলানা শওকত আলী এই আন্দোলনকে মহাত্নাগান্ধী সমর্থন করেন। ফলে আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের খেলাফত আন্দোলন বৃটিশ সাম্রাজ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। খেলাফত আন্দোলনের জন্য টাঙ্গাইলকে জেলা করার পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যায়।
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিভাগীয় কমিশনারের পদ সৃস্টি করা হয়।
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই সময় বাংলার দুই তৃতীয়াংশ লোক অনাহারে মারা যায়। মানুষ কচু ঘেচু নানারকম অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে অকালে প্রাণ ত্যাগ করতে থাকে।ইংরেজ সরকার কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ রোধ করার জন্য চেষ্টা করেন। বাংলার বাইরে থেকে খাদ্যশস্য এনে জেলাওয়ারী খাদ্যশস্য বণ্টন করে দুর্ভিক্ষ রোধ করার চেষ্টা করা হয়। এই সময় অবিভক্ত বাংলার খাদ্য মন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব। টাঙ্গাইলের লোকজন টাঙ্গাইলের জন্য আরো খাদ্য শস্য বরাদ্দের জন্য খাদ্য মন্ত্রীর নিকট দাবি জানায়। শহীদ সাহেব সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই টাঙ্গাইলকে আলাদা একটি জেলায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেন।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে উপ-মহাদেশ বিভক্তের পর ময়মনসিংহ জেলাকে ৩ টি জেলায় ভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাবিত জেলাগুলোর নাম হলো- নাসিরাবাদ, কায়দাবাদ ও টাঙ্গাইল। এমনকি ময়মনসিংহ জেলার ৫টি মহকুমাকে ৫টি জেলায় বিভক্ত করার প্রস্তাবও করা হয়েছিল।
১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন টাঙ্গাইল থেকে উপ-নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিলেন। সে সময় মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অছিয়তে তরুণ অগ্নিবর্ষী নেতা শামছুল হকের নেতৃত্বে টাঙ্গাইলবাসী ১৭ দফা দাবি সংবলিত এক স্মারক লিপি পেশ করেছিলেন। খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে। সেই ১৭ দফার মধ্যে প্রধান ছিল টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলায় পরিণত করার দাবী। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট র্যাডক্লিফ সীমানা কমিশন বাংলাকে দু’টি ভাগে বিভক্ত করে। ফলে পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশের কিছু জেলার সীমানা পরিবর্তন ঘটে। তবে ময়মনসিংহ জেলার সীমানা আগের মত বহাল রাখা হয়।
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব-পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন উপলক্ষে হক-ভাসানী- সোহরাওয়ার্দী যুক্তফ্রন্ট গঠণ করেন। এই সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগ সূচনীয় ভাবে পরাজিত হয়। যুক্তফ্রন্টের কাছে টাঙ্গাইল বাসী টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলা ঘোষণা করার দাবি জানায়। যুক্তফ্রন্ট তা নির্বাচনী ওয়াদা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু করে। এ ব্যাপারে মওলানা ভাসানীর সক্রিয় সমর্থন ছিল।
১৯৬০,১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান অর্থনৈতিক কাউন্সিল মোমেনশাহীকে ভেঙ্গে টাঙ্গাইল, কাইদাবাদ ও নাসিরাবাদ জেলা করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের গ্রাম পরিসংখ্যানে স্থানটি কসবা আটিয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের নিকট ময়মনসিংহকে বিভক্ত করে কায়েদাবাদ, নাসিরাবাদ, টাঙ্গাইল ও ইসলামাবাদ নামে ৪ টি জেলা স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল। প্রস্তাবটিতে টাঙ্গাইলে জেলা সদর স্থাপন করে টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ মহকুমা সমন্বয়ে টাঙ্গাইল জেলার প্রতিষ্ঠাসহ গোপালপুরে পৃথক মহকুমা স্থাপনের কথা বলা হয়েছিল।
১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের পাক-ভারত যুদ্ধের কারণে জেলা স্থাপনের কাজ স্থগিত হয়ে যায়।
১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ কর্তৃক টাঙ্গাইলে একটি পৃথক জেলা স্থাপনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এই পরিকল্পনা অনুসরণে
১৯৬৬,১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ তৎকালীন গভর্ণর মোনায়েম খাঁর ভাই খোরশেদ খান সাহেব এক শ্রেণীর কায়েমী স্বার্থন্বেষীদের যোগসাহসে গভর্ণরের আর্শিবাদ পুষ্ট হয়ে জুট মিলে বিনিময়ে জেলার দাবী প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন।
১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ৩৪১ একর জমি হুমুক দখল করে টাঙ্গাইল জেলা সদরের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ১ ডিসেম্বর তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তানের গর্ভণর এডমিরাল এস. এম আহ্সান টাঙ্গাইল জেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। জনাব এ. এন কলিমুল্লাহ ছিল টাঙ্গাইল জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক।
১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের গ্রাম পরিসংখ্যানে স্থানটি কসবা আটিয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এইভাবে বিভিন্ন সময়ে দাবির প্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল মহকুমা প্রতিষ্ঠার একশত বৎসর পর অর্থাৎ ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১ডিসেম্বর টাঙ্গাইল মহকুমা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৯তম জেলা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
[সম্পাদনা]টাঙ্গাইল জেলায় মোট উপজেলার সংখ্যা ১২ টি এবং মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১১৯ টি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১২ টি।
করটিয়া, ঘারিন্দা, গালা, পোড়াবাড়ী, সিলিমপুর, কাকুয়া, কাতুলী, মগড়া, মাহামুদনগর, হুগড়া, দাইন্যা এবং বাঘিল।
কালিহাতি উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১৩ টি।
কোকডহড়া, গোহালিয়াবাড়ী, দশকিয়া, দুর্গাপুর, নাগবাড়ী, নারান্দিয়া, পাইকড়া, পারখি, বল্লা, বাংড়া, বীরবাসিন্দা, সল্লা, সহদেবপুর।
ঘাটাইল উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১৪ টি।
দেউলাবাড়ী, ঘাটাইল, জামুরিয়া, দিগড়, দিঘলকান্দি, আনেহলা, দেওপাড়া, ধলাপাড়া, সন্ধানপুর, লোকেরপাড়া এবং রসুলপুর,সংগ্রামপুর ইউনিয়ন,লক্ষিন্দর ইউনিয়ন,সাগরদিঘী ইউনিয়ন।
বাসাইল উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৬ টি।
কাউলজানী, কাঞ্চনপুর, কাশিল, ফুলকী, বাসাইল এবং হাবলা।
গোপালপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৭ টি।
হাদিরা, নগদাশিমলা, ঝাওয়াইল, হেমনগর, আলমনগর, মির্জাপুর এবং ধোপাকান্দি।
মির্জাপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১৪ টি।
মহেড়া, ফতেপুর, জামুর্কী, বানাইল, আনাইতারা, ভাতগ্রাম, ওয়ার্শী, বহুরিয়া, গোড়াই, তরফপুর, আজগানা, বাঁশতৈল, লতিফপুর, ভাওড়া।
ভূঞাপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৬ টি।
ফলদা, অর্জুনা, গাবসারা, গোবিন্দাসী, অলোয়া, নিকরাইল।
নাগরপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১২ টি।
নাগরপুর, ভাররা, সহবতপুর, গয়হাটা, বেকড়া, সলিমাবাদ, ধুবরিয়া, ভাদ্রা, দপ্তিয়র, মামুদনগর, পাকুটিয়া এবং মোকনা।
মধুপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১১ টি।
আলোকদিয়া, আরণখোলা, আউশনাড়া, গোলাবাড়ী, মির্জাবাড়ী, শোলাকুড়ি।
সখিপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৯ টি।
কাকড়াজান, বহুরিয়া, কালিয়া, গজারিয়া, দাড়িয়াপুর, বহেড়াতৈল, যাদবপুর, হাতীবান্ধা এবং হতেয়া রাজাবাড়ি
দেলদুয়ার উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৮ টি।
আটিয়া, ডুবাইল, ফাজিলহাটি, পাথরাইল, লাউহা্টী, দেলদুয়ার, দেউলী এবং এলাসিন।
ধনবাড়ী উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৭ টি।
বীরতারা, বানিয়াজান, পাইস্কা, ধোপাখালী, যদুনাথপুর, মুশুদ্দি এবং বলিভদ্র।
ঐতিহ্য
[সম্পাদনা]বাংলার চির পরিচিত লোক-সংস্কৃতি নিয়ে টাঙ্গাইল একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ। টাঙ্গাইলের তৈরি চমচম মিষ্টি আর তাঁতের শাড়ি ছিল উপমহাদেশ খ্যাত। বাংলাদেশের লোক ঐতিহ্যের অংশ মাটির মৃৎপাত্রের ফলক আর নকশী কাঁথা এখানেই বিকাশ লাভ করে। এছাড়াও কয়েকটি মুসলিম ঐতিহ্য তার মধ্যে আটিয়ার মসজিদ, ধনবাড়ির মসজিদ ও মাজার, কদিম হামজানির মসজিদ, খামার পাড়ার মসজিদ ও মাজার প্রভৃতি। উপজাতির ঐতিহ্যও রয়েছে গারোদের ওয়ানগালার যা বেশ পরিচিত।
হিন্দু ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে গুপ্ত বৃন্দাবন, পাকুটিয়ার সৎসঙ্গ আশ্রম, বারো তীর্থ, আনন্দ মঠ ইত্যাদি। পাল, সেন আমলে প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহ্য টাঙ্গাইল অঞ্চলে লুকায়িত রয়েছে। যেমন কালীদাস গ্রামে কালিদাস পন্ডিতের পুকুর। আর বায়ান্ন খাদা জমি নিয়ে রাধাকৃষ্ণ গোপিনীদের লীলা ভূমি গুপ্ত বৃন্দাবন। এখনো সাদৃশ্য ঐতিহ্যবাহী তমাল গাছ আর কাঠের যুগল রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি। পাশেই প্রাচীন পুকুর। প্রবাহিত র্ঝনা ধারার পাশে এখনো বিরাট পাথরের স্ত্তপ জেগে আছে। কৃষ্ণ বিরহে আজও বিরহী রাধার আকূতি প্রতিধ্বনিত হয় এই গুপ্ত বৃন্দাবনে। তাছাড়া কালিয়া, মহানন্দপুর, কীর্ত্তন খোলা, প্রতিমা বংশী, দাড়িয়াপুর, শহর গোপিনাথপুর, রতনগঞ্জ, বেহুলা, লক্ষ্ণিদর, গড় গোবিন্দপুর প্রভৃতি স্থানগুলো ঐতিহ্যের শিরোনাম। ভাওয়ালের অরণ্যে শিশুপালের বিশাল দিঘি ও বিরাট রাজধানীর ভগ্ন কাঠামো পাওয়া যায়। মধুপুর ভগদত্তের গৃহভগ্নাবশেষে, পুষ্করিণী- ‘বারতীর্থ দিঘি, দেবলায়, মদন গোপালের বাড়ি প্রভৃতির চিহ্ন এখনও বিদ্যমান আছে। ভগদত্তের প্রতিষ্ঠিত ‘বারতীর্থ’ক্ষেত্র এখনও প্রতিবৎসর বৈশাখ মাসে ‘মেলা’হয়ে থাকে। প্রবাদ এই যে, রাজা ভগদত্ত স্বীয় পুণ্যশীলা জননীর আজ্ঞামতে বারতীর্থের পূণ্যোদক আনিয়া নিজ রাজধানীকে ‘বারতীর্থাশ্রম’করে ছিলেন। সেই ‘বারতীর্থাশ্রমের’পুণ্যনাম আজও তিরোহিত হয়নি।
অর্থনীতি
[সম্পাদনা]শিল্প
[সম্পাদনা]প্রকৃতপক্ষে টাঙ্গাইল শাড়ি জেলার গর্বের বস্ত্ত। টাঙ্গাইলের শাড়ির কদর দেশ জোড়া। এক সময় বাংলাদেশের খ্যাতি ও গৌরব ছিল মসলিন এবং জামদানিরজন্য। তন্মধ্যে জামদানি টিকে থাকলেও মসলিন শুধু এখন ইতিহাসের সামগ্রী। তবে মসলিন ও জামদানির পর বাংলাদেশের বস্ত্র খাতে টাঙ্গাইল শাড়ি নতুনমাত্রা যোগ করতে সক্ষম হয়েছে।
টাঙ্গাইল শাড়ি ছাড়া টাঙ্গাইলের বিভিন্ন গ্রামে যেমন, আদি টাঙ্গাইল, পাথরাইল, নলশোধা, আকদ, ঘারিন্দা, ছাতিহাটি, গোলরা, রামপুরা, জোয়াইর, মোমিননগর, করটিয়া প্রভৃতি এলাকায় মোটা বস্ত্র তৈরি হয়। এ-সব কাপড়ের রং পাকা এবং মজবুত। শাড়ি ছাড়াও টাঙ্গাইলের লুঙ্গি, গামছা ইত্যাদি তৈরি হয়।
টাঙ্গাইল জেলার কুটির শিল্প বলতে বর্তমানে তন্তুবায়ীদের বোঝায়; যারা হিন্দু সম্প্রদায়ের তাদেরকে তাঁতি এবং যারা মুসলিম সম্প্রদায়ভূক্ত তাদের জোলা বা কারিগর বলা হয়ে থাকে।
তাঁত শিল্প
[সম্পাদনা]ইতিহাস থেকে জানা যায়, বসাক সম্প্রদায়ের তাঁতিরাই হচ্ছে টাঙ্গাইলের আদি তাঁতি অর্থাৎ আদিকাল থেকেই এরা তন্তুবায়ী গোত্রের লোক। এরা সিন্ধু অববাহিকা থেকে পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদে এসে তাঁতের কাজ শুরু করেন। তারপর চলে আসেন বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে। সেখানেও আবহাওয়া অনেকাংশে প্রতিকূল দেখে বসাকরা দু’দলে ভাগ হয়ে একদল চলে আসে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, অন্যদল ঢাকার ধামরাইয়ে। তবে এদের কিছু অংশ সিল্কের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজশাহীতেই থেকে যায়। ধামরাইয়ে আবার ভাগ হয়ে অনেক বসাক চলে যান প্রতিবেশী দেশের চোহাট্টা অঞ্চলে। এর পর থেকে বসাক তাঁতিরা চৌহাট্টা ও ধামরাইয়া’ এ দু’গ্রুপে স্থায়ীভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে কিছু বসাক টাঙ্গাইলে এসে বসতি স্থাপন করেন। টাঙ্গাইলে বংশানুক্রমে যুগের পর যুগ তারা তাঁত বুনে আসছেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ ও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর অনেক বসাক তাঁতি ভারত চলে যান।
বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাং তাদের ভ্রমণ কাহিনীতে টাঙ্গাইলের বস্ত্র শিল্প অর্থাৎ তাঁত শিল্পের উল্লেখ করেছেন। এটি আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের ইতিহাস অতি প্রাচীন। প্রাচীন কাল থেকে টাঙ্গাইলের দক্ষ কারিগররা তাদের বংশ পরম্পরায় তৈরি করছেন নানা জাতের কাপড়। আর কাপড় তৈরিতে লাগে সূতো। সূতো তৈরি হয় তুলো থেকে। টাঙ্গাইল জেলার প্রাচীন অঞ্চল মির্জাপুর উপজেলা বিখ্যাত গবেষক জেম্স টেলর মির্জাপুরের তুলোর কথা লিখেছেন। এখানে বাপ্তা হাম্মাম ও অন্যান্য পাঁচমিশালী বস্ত্রের সূতো কাটা হতো তুলো থেকে। টাঙ্গাইলের তাঁতিরা একদা মসলিন শাড়ি বুনতেন বলে শোনা যায়। এক সময় দিল্লির মোগল দরবার থেকে বৃটেনের রাজ প্রাসাদ পর্যন্ত এই মসলিনের অবাধ গতি ছিল। বিদেশী বণিক চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মসলিন কাপড় কালের প্রবাহে হারিয়ে গেছে।
তাঁত শিল্পের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে টাঙ্গাইলের জামদানী, বেনারসী, তাঁতের শাড়ি, সফট সিল্ক ও কটন শাড়ি। এ ছাড়াও টাঙ্গাইলের তাঁতিরা তাঁতের শাড়ির, লুঙ্গি, গামছা ও চাদর তৈরি করে থাকে।
তামা-কাঁসা শিল্প
[সম্পাদনা]হাজার বছরের পুরনো এ শিল্প ইতিহাসে প্রমাণ আছে। গ্রাম সমবায়ে কাংস্যকার, কাংস্যবণিক ইত্যাদি বৃত্তিধারী শ্রেণী ছিল। পাঠান, মোগল ও বৃটিশ শাসনামলে কাংস্যকার যখন যে রূপ পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল, সেরূপ বিকাশ লাভ করতে পেরেছিলো। কাঁসা ও পিতলের অপূর্ব শিল্প কর্মের জন্য ব্রিটিশ সরকার কাঁসা শিল্পীদের মধ্যে নাম করা অনেককেই প্রশংসা ও পদকে ভূষিত করেছেন। এদের মধ্যে প্রয়াত মধুসূদন কর্মকার, গণেশ কর্মকার, বসন্ত কর্মকার, যোগেশ কর্মকার, হারান কর্মকার উল্লেখযোগ্য। কাগমারীতে যারা তামা, পিতল, কাঁসা শিল্পের সাথে জড়িত তাদের বংশগত উপাধি কর্মকার। লৌহ, তামা, পিতল, কাঁসা, স্বর্ণ ও রৌপ্য ইত্যাদি ধাতু নিয়ে যাদের জীবিকা তাদের কর্মকার বলা হয়ে থাকে। এক সময় এ-ব্যবসা ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধিশালী। দেশ ভাগ হওয়ার পর এই শিল্পের শত শত দক্ষ পরিবার ভারতে পাড়ি দিয়েছে।
কাঁসার বাসন ছাড়াও তামা-পিতলের থালা, বাটি, কলসী, গ্লাস, জগ, ঝারি, পঞ্চ প্রদীপদান, মোমবাতিদান আগর বাতিদান, কুপি, চামচ, কাজলদানী, ডেকচি, ডেগ, বোল, খুন্তি, সড়তা, বাটি তৈরি হয়। এছাড়া তৈরি করা হত পিতলের কলসি, জগ, ঘটি, বদনা, লোটা, থালা, গ্রাস, বোল, ডেকচি, চামচ, খুন্তি,কাঁসার ঘন্টা, বাটি, পুষ্পাধার প্রভৃতি। বাদ্যযন্ত্র যেমন করতাল, ঝুনঝুনি ইত্যাদিও এখানে তৈরি হয়। সুদৃশ্য কারুকার্য ও অনুপম গুণগত মানের জন্যই টাঙ্গাইলের কাঁসা ও পিতলের তৈরি তৈজসপত্র এতটা প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছিলো।
টাঙ্গাইলের কাগমারীসহ জেলার নানা গ্রামাঞ্চলে এই কাঁসা ও পিতল শিল্পীরা তৈরি করছে নানা দ্রব্যাদি।
মৃৎ শিল্প
[সম্পাদনা]টাঙ্গাইলের এঁটেল মাটির তৈজসপত্র অতন্ত্য টেকসই। মাটির তৈজসপত্র, সানকি, হাড়ি, সরা, বাটি, পিঠা তৈরির ছিদ্রযুক্ত পাতিল, গবাদি পশুর সম্মুখে যে পাত্রে খাওয়া দেওয়া হয় (চাড়ি), দইয়ের ঠিলা, কোলা, গুড়ের মটকি প্রভৃতি টাঙ্গাইলের কুমারদের অনবদ্য সৃষ্টি। নানা ধরনের খেলনা ঘোড়া, গরু, বাঘ, হাতি, কুকুর, মাছ, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি মাটির তৈরি খেলনা তৈরি করা হয়। টাঙ্গাইলের কুমারদের মধ্যে অনেকে প্রতিমা নির্মাণে সিদ্ধহস্ত।
বাঁশ ও বেত শিল্প
[সম্পাদনা]বাঁশ দিয়ে বাঁশি. ডালি, চাটাই, ধাড়ি, কাইত্যা, বেড়, ডুলি, ঘরের বেড়া, টুকরি, ঝাকা, কূলা চালনি, খালই, তালাই, মাথাইল ইত্যাদি। বেতের তৈরি ডালিয়া, ধান চাউলের বেড় ও তিল তিসি, সরিষা রাখার ছোট বড় ডুলি। বাটখারা প্রচলনের পূর্বে পাঁচসেরি মুনকা বা ধামার ব্যবহার ছিল। পাট বেতের সাহায্যে চমৎকার শীতল পাটি তৈরি হয়।
কাঠ শিল্প
[সম্পাদনা]সূত্রধর বা ছুতার কৃষি সরঞ্জাম যেমন, লাঙ্গল, ঈষ, মই, আচড়া, ইচামুগর, গরুর গাড়ি, ঢেঁকি, গৃহনির্মাণ ও নৌ-নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। খাট, পালঙ্ক, বারকোশ, পিঁড়ি, টুল, জলচৌকি থেকে শুরু করে আধুনিক টেবিল চেয়ার শোকেস, আলমিরা প্রভৃতি তৈরিতেও টাঙ্গাইলের সূত্রধররা দক্ষতার সাথে কাজ করছে। টাঙ্গাইলের তক্তারচালা, মধুপুর, ধনবাড়ী, কালিহাতী, ঘাটাইল, মির্জাপুর, করটিয়া উল্লেখযোগ্য কাঠশিল্পের স্থান।
নদী ও খালের তীরবর্তী হওয়ায় সাধারণ নৌকাসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার নৌকাও তৈরি হয়।
মিষ্টান্ন শিল্প
[সম্পাদনা]২শ বছরের প্রাচীন মিষ্টিশিল্প টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের মিষ্টিশিল্প। ব্রিটিশ আমল থেকে অবিভক্ত ভারতবর্ষসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোড়াবাড়ির চমচম টাঙ্গাইলকে ব্যাপক পরিচিত করেছে। বাংলা, বিহার, ছাড়িয়ে ভারতবর্ষ তথা গোটা পৃথিবী জুড়ে এর সুনাম রয়েছে। গবেষকদের মতে দশরথ গৌড় নামে এক ব্যক্তি বৃটিশ আমলে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীরবর্তী পোড়াবাড়িতে আসেন। আসাম থেকে আগত এই দশরথ গৌড় যমুনার সুস্বাদু মৃদুপানি ও এখানকার খাঁটি গরুর দুধ দিয়ে প্রথম চমচম তেরি করেন। অতঃপর এখানে ব্যবসা শুরু করেন।
মিষ্টি দধি ও অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যের মিষ্টান্নশিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। টাঙ্গাইল জেলায় অনেক মিষ্টি তৈরি হয়। যেমন- চমচম, দানাদার, রসগোল্লা, আমৃত্তি, জিলাপী, সন্দেশ, বিভিন্ন প্রকার দই, খির, নই, টানা, খাজা, কদমা বাতাসা, আমির্তি, রসমালাই, রসগোল্লা, সন্দেশ, কালোজাম জিলাপী খাজা বাতাসা, কদমা, নই, টানাবাদাম ইত্যাদি। এছাড়া আরও তৈরি হয় জিলাপি, কদমা, বাতাসা, গজা, খাজা, নই, টানা এবং চিনি সহযোগে খোরমা, মিস্ত্রী, চিনি বা গুড়ে সাজ, মুড়ির মোয়া, ঢেপের মোয়া, ঝুরি, জোয়ারের খইসহ বিভিন্ন উপদানের তৈরি নাড়ু ইত্যাদি। এ ছাড়া টাঙ্গাইল দানাদার, দই ও ঘি সহ দুগ্ধজাত দই, ক্ষীর, ঘি, মাখন ইত্যাদি তৈরি হয়।
অন্যান্য শিল্প
[সম্পাদনা]বর্তমানে টাঙ্গাইলে বিড়ি শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। অনেক বিড়ি তৈরির ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। তেলি বা কলু সম্প্রদায় তিল, তিসি, সরিষা প্রভৃতি তৈলবীজ ভেঙ্গে প্রস্ত্তত করে তৈল। কলের ঘানির উদ্ভবের সাথে সাথে টাঙ্গাইলের এই শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। তাছাড়া টাঙ্গাইলের মুচি ও ঋষিরা মৃত গরুর চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করে। এদের মধ্যে অনেকে জুতাও তৈরি করে আসছে। এদের অনেকেই ঢাক, ঢোল, তবল, ডুগি প্রভৃতি তৈরি করে থাকে।টাঙ্গাইলের মধুপুর বাংলাদেশের একমাত্র জায়গা যেখানে অতি মূল্যবান লাল চন্দন পাওয়া গেছে।
কৃষি
[সম্পাদনা]ধান, পাট, গম, সরিষা, কলা, আনারস, আদা, ইক্ষু, আলু, তিল, তিশি, হলুদ, লেবু, পেঁপে, আদা ও কচু ইত্যাদি। টাঙ্গাইলে প্রচুর পাট জন্মে। গোপালপুরের বিভিন্ন এলাকায় সর্বোৎকৃষ্ট পাট উৎপাদিত হয়। এছাড়া জেলার বিভিন্ন থানাগুলোতেও ভালো পাট জন্মে। মধুপুর, সখিপুর, মির্জাপুর, ঘাটাইলের পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। মধুপুরসহ বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর আনারস উৎপন্ন হয়। শীত মৌসুমে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর শাকসব্জী, বাঁধাকপি, ফুলকপি, আলুসহ বিভিন্ন সবজি প্রচুর উৎপন্ন হয়। মে ২০২২ এ প্রকাশিত কৃষি পরিসংখ্যান তথ্যমতে কলা ও আনারস উৎপাদনে শীর্ষ জেলা টাঙ্গাইল।
দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]- মধুপুর জাতীয় উদ্যান, মধুপুর টাঙ্গাইল
- আতিয়া মসজিদ
- ২০১ গম্বুজ মসজিদ, গোপালপুর উপজেলা
- হামিদপুর পলাশতলীর ব্রিজ ও বর্ষাকালিন বিল সখিপুর উপজেলা
- ফালুচাঁদ চীশতি-র মাজার- সখিপুর উপজেলা
- যমুনা বহুমুখী সেতু
- আদম কাশ্মিরী-এর মাজার
- মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার
- পরীর দালান/হেমনগর জমিদার বাড়ি
- খামারপাড়া মসজিদ ও মাজার
- ঝড়কা
- সাগরদীঘি
- গুপ্ত বৃন্দাবন
- মহেড়া জমিদার বাড়ি
- তালিমঘর তক্তারচালা
- নিলাচল বেলতুলি,বহুরিয়া,সখিপুর
- কালমেঘা গড়
- পাকুটিয়া আশ্রম
- মগড়া নাম মন্দির
- পাকুল্লা মসজিদ
- আরুহা-শালিনাপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
- নাগরপুর চৌধুরীবাড়ী
- পুন্ডরীকাক্ষ হাসপাতাল
- উপেন্দ্র সরোবর
- গয়হাটার মঠ
- যমুনা নদীর পাড়
- তেবাড়িয়া জামে মসজিদ
- এলেঙ্গা রিসোর্ট
- এলেঙ্গা জমিদার বাড়ী
- কাদিমহামজানি মসজিদ
- ঐতিহ্যবাহী পোড়াবাড়ি
- করটিয়া সা’দত কলেজ
- করটিয়া জমিদার বাড়ি
- ধনবাড়ি নবাব বাড়ি
- ধনবাড়ী মসজিদ
- নথখোলা স্মৃতিসৌধ
- বাসুলিয়া
- রায়বাড়ী
- কোকিলা পাবর স্মৃতিসৌধ
- মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ
- ধলাপাড়া চৌধুরীবাড়ী
- মহেরা জমিদার বাড়ি
- রাধা কালাচাঁদ মন্দির
- পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী
- বনগ্রাম গনকবর
- স্বপ্ন বিলাস (চিড়িয়াখানা)
- মোকনা জমিদার বাড়ী
- তিনশত বিঘা চর
- ভারতেশ্বরী হোমস
- বায়তুল নূর জামে মসজিদ
- দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি
- নাগরপুর জমিদার বাড়ি
- এলাসিন ব্রিজ
- ডিসি লেক
- সন্তোষ জমিদার বাড়ি
- অলোয়া জমিদার বাড়ি
- ছয়আনী শিব মন্দির
- ধলাপাড়া চৌধুরী বাড়ি
- ধলাপাড়া মসজিদ।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
[সম্পাদনা]- ইবরাহীম খাঁ, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক।
- আব্দুল হামিদ চৌধুরী,স্পিকার
- আবু সাঈদ চৌধুরী, বাংলাদেশের বিচারপতি।
- আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা।
- আবদুল লতিফ সিদ্দিকী
- শাজাহান সিরাজ
- শামসুল হক, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
- আবদুল কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম।
- প্রতুল চন্দ্র সরকার, জাদুকর।
- ওয়াজেদ আলী খান পন্নী, জমিদার।
- মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী, হেযবুত তওহীদ এর প্রতিষ্ঠাতা।
- রণদা প্রসাদ সাহা
- আবদুল আলীম আল-রাজী, প্রখ্যাত আইন বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিবিদ ও ভাষাবিদ।
- রফিক আজাদ (কবি)
- খন্দকার আসাদুজ্জামান
- আব্দুস সালাম পিন্টু
- মামুনুর রশিদ, নাট্য ব্যক্তিত্ব।
- নায়ক মান্না, অভিনেতা।
- আফরান নিশো, অভিনেতা।
- সুমন রেজা, জাতীয় দলের ফুটবলার।
- বেলাল খান, গায়ক।
- আহসান এইচ মনসুর, গভর্নর
- আশরাফ সিদ্দিকী, কবি
- সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]শিক্ষার হার: ৭১.২১%
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
- মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,
- টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ,
- সরকারি সা'দত কলেজ,
- বোরহানুল উলুম আহমাদিয়া ইয়াছিনিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা, আলালপুর, দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল
- সুফিয়া কাশেম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, আলালপুর, টাঙ্গাইল।
- বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
- মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ
- বি এ এফ শাহীন কলেজ পাহাড়কাঞ্চনপুর,সখিপুর।
- সরকারি মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ,
- পোড়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়
- ভূঞাপুর ফাযিল মাদরাসা
- আগতেরিল্যা দাখিল মাদরাসা
- আজিম মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, গোসাই যোয়াইর, টাঙ্গাইল, টাঙ্গাইল সদর।
- ধনবাড়ী সরকারি কলেজ,ধনবাড়ী
- আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ
- সরকারি ধনবাড়ী নওয়াব ইনস্টিটিউট
- ধনবাড়ী কলেজিয়েট মডেল স্কুল
- পাইস্কা উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- গাড়াখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- হাদিরা হাতেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- মুশুদ্দি আফাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- বানিয়াজান বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- সাকিনা মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল,ধনবাড়ী
- পাইস্কা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- উখারিয়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- ধনবাড়ী আলিম মাদ্রাসা,ধনবাড়ী
- যদুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয় ধনবাড়ী
- মমিনপুর আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- বরমপুর গণ উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- নরিল্যা উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- মমতাজ আলী উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- আমিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- সয়া উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- পানকাতা উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- কেরামজানী উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- ধোপাখালী টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ
- পাঁচ পটল ডিগ্রি কলেজ,ধনবাড়ী
- মুশুদ্দি রেজিয়া কলেজ,ধনবাড়ী
- উখারিয়াবাড়ী টেকনিক্যাল কলেজ,ধনবাড়ী
- নরিল্যা কলেজ,ধনবাড়ী
- মুকুল ক্যাডেট,ধনবাড়ী
- লাইটহাউস ল্যাব স্কুল,ধনবাড়ী
- শাহীন স্কুল ধনবাড়ি শাখা
- সিসিমপুর শিক্ষা পরিবার,ধনবাড়ী
- পুষ্প প্রি-ক্যাডেট,ধনবাড়ী
- অনুপম প্রি-ক্যাডেট,ধনবাড়ী
- হাসান ক্যাডেট স্কুল,ধনবাড়ী
- ধনবাড়ি প্রি-ক্যাডেট,ধনবাড়ী
- শহীদ ক্যাডেট একাডেমি,ধনবাড়ী
- ধনবাড়ী মডেল সরঃ প্রাঃ বিদ্যাঃ,ধনবাড়ী
- পাইস্কা সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়
- গাড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- চাতুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- পানকাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- কয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- বেরীপটল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- ধোপাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- হাফেজ মাহমুদ আলি ইনস্টিটিউশন
- হতেয়া হাজী হাফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়
- মধুপুর রাণী ভবানী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- মধুপুর কলেজ
- গোপালপুর সরকারি কলেজ
- রোকেয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা করটিয়া
- ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ,
- বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,
- মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ,
- কুমুদিনী মহিলা মেডিকেল কলেজ,
- কুমুদিনী সরকারি কলেজ
- সৃষ্টি কলেজ অব টাংগাইল
- নাগরপুর সরকারি কলেজ, নাগরপুর।
- সরকারি এম.এম আলী কলেজ,
- সরকারি জি.বি.জি কলেজ,
- অগ্নিবীণা আইডিয়াল কলেজ,সিংজোড়া,নাগরপুর
- কালিহাতি শাহজাহান সিরাজ কলেজ,
- নাগরপুর মহিলা কলেজ,
- হেমনগর শশীমুখী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়
- মমতাজ ফকির উচ্চ বিদ্যালয়
- বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়,
- বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,
- সৈয়দ আব্দুল জব্বার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, দেলদুয়ার।
- বাথুলী উচ্চ বিদ্যালয়, দেলদুয়ার।
- সন্তোষ জান্হবী উচ্চ বিদ্যালয়,
- মধুপুর শহীদস্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়,
- সরকারি শেখ ফজিলাতুন নেসা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয়,
- মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজ,
- এম.এ.করিম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়,ছিলিমপুর
- কালিহাতী আর এস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়,
- বেড়ীপটল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়,
- মাওলানা ভাসানী ডিগ্রি কলেজ, এলাসিন।
- হাজী ইসমাইল খাঁ বেসরকারি কারিগরি কলেজ,
- ইবরাহিম খাঁ সরকারি কলেজ,
- টাঙ্গাইল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট,
- মসদই উচ্চ বিদ্যালয়,
- বেলায়েৎ হোসেন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়,
- এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়,
- সরকারী শামসুল হক কলেজ
- পিটিআই হাই স্কুল,
- আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়,
- বেড়াবুচনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
- বাজিতপুর উচ্চ বিদ্যালয়,
- লায়ন নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজ,
- সৃষ্টি একাডেমিক স্কুল,
- সৃষ্টি রেসিডেন্সিয়াল স্কুল,
- সৃষ্টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল,
- টাঙ্গাইল কমার্স কলেজ,
- পুলিশ লাইন্স কলেজ,
- বুলবুল ক্যাডেট স্কুল,
- বুলবুল রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল,
- সৃষ্টি একাডেমি,
- শাহীন কলেজ,
- আলাউদ্দিন সিদ্দিকী কলেজ,
- বল্লা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ,
- ৫৪ নং বেতডোবা সরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়,
- ইছাপুর শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়,
- খিলদা উচ্চ বিদ্যালয়,
- সিংজোড়া কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়,নাগরপুর
- পটল উচ্চ বিদ্যালয়,
- গয়হাটা উদয়তারা উচ্চ বিদ্যালয়,
- রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়,
- সরকারী যদুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়,নাগরপুর
- নয়ান খান মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়,
- সলিমাবাদ ইউনিয়ন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,
- সলিমাবাদ তেবাড়িয়া ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়,
- ঘুনিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়,
- চৌধুরী মালঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয়,
- ছোট বাসালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়,
- অগ্রনী উচ্চ বিদ্যালয়,
- দেউপুর উচ্চ বিদ্যালয়,
- ভরসরাই উচ্চ বিদ্যালয়,
- বল্লা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,
- নরদহি উচ্চ বিদ্যালয়,
- দেওপাড়া গন উচ্চ বিদ্যালয়,
- ভবন দত্ত গণ উচ্চ বিদ্যালয়,
- ঘড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়,
- হাজী নওয়াব আলী উচ্চ বিদ্যালয়,
- আমজানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,
- ফেরদৌস আলম ফিরোজ উচ্চ বিদ্যালয়,
- শহীদ শাহেদ হাজারী উচ্চ বিদ্যালয়,
- লাঙ্গলজোড়া উচ্চ বিদ্যালয়,
- সোমজানী উচ্চ বিদ্যালয়,
- দেওপাড়া বাহরুন নেছা দাখিল মাদ্রাসা,
- বিরাহিমপুর হাফিজিয়া মাদরাসা,
- বাইচাইল ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা,
- বীর বাসিন্দা ভোজদত্ত দাখিল মাদ্রাসা,
- দারুল সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা,
- ব্রাহ্মণশাসন এ.কে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,
- আবু সাইদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়,
- সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়,
- কালিহাতী কলেজ,
- আথাইল শিমুল উচ্চ বিদ্যালয়,
- ভূয়াপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়,
- ঘাটাইল মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়,
- উখারিয়াবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
- ভাড়রা উমেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়
- ধলাপাড়া এস.ইউ পি উচ্চ বিদ্যালয়
- আদর্শ একাডেমি ধলাপাড়া
- শাফিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দেলদুয়ার
- সল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
- সল্লা সমবায় উচ্চ বিদ্যালয়।
- জামুরকী নবাব সার আব্দুল গনি উচ্চ বিদ্যালয়।
- টেংরীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- হাদিরা কলেজ
- গোপালপুর সরকারি কলেজ
- সরকারি মুমিন্নুনেছা কলেজ
- রাথুরা দারুল ইসলাম কওমি মাদ্রাসা
- রাথুরা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "টাঙ্গাইলে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি"। ২৯ জুন ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ "জেলাগুলোর শ্রেণি হালনাগাদ করেছে সরকার"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ আগস্ট ২০২০। ১৬ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০।
- ↑ "টাঙ্গাইল জেলার বিখ্যাত গুণীজন"। দৈনিক সংগ্রাম। এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। বৃহস্পতিবার ২৪ জানুয়ারি ২০১৩। ২০১৮-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2018-07-27। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"। ২০১৮-০৮-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২৭।
- ↑ "টাঙ্গাইল জেলার বিখ্যাত গুণীজন"। ২০১৮-০৮-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২৭।
- ↑ "প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"। ২০১৭-০৫-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২৭।
- ↑ "টাঙ্গাইল জেলার বিখ্যাত গুণীজন"। ২০১৮-০৭-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২৭।