কেশবচন্দ্র সেন
কেশবচন্দ্র সেন | |
---|---|
ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন | |
জন্ম তারিখ | ১৯ নভেম্বর ১৮৩৮ |
জন্মস্থান | কলুটোলা,কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) |
মৃত্যু তারিখ | ৮ জানুয়ারি ১৮৮৪ | (বয়স ৪৫)
মৃত্যুস্থান | কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত |
আন্দোলন | বাংলার নবজাগরণ |
প্রধান সংগঠন | ব্রাহ্মসমাজ |
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
পিতামাতা | প্যারীমোহন সেন(পিতা) সারদাসুন্দরী সেন (মাতা) |
সন্তান | ৫ পুত্র ও ৫ কন্যা |
কেশবচন্দ্র সেন (১৯ নভেম্বর ১৮৩৮ [১] – ৮ জানুয়ারি ১৮৮৪[২]) ছিলেন বিশিষ্ট ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশশাসিত ভারতের একজন বাঙ্গালী ব্রাহ্মনেতা, বক্তা ও বাঙালি হিন্দু সমাজের অন্যতম ধর্মসংস্কারক। ব্রহ্মানন্দ উপাধিতে ভূষিত কেশবচন্দ্র শুধু বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্বই ছিলেন না, বরং ভারতের জাতীয় চেতনা ও ঐক্যের অন্যতম উন্মেষক ও মুখপাত্র হিসাবেও তিনি নন্দিত।[৩]
জীবনী
[সম্পাদনা]জন্ম ও বংশপরিচয়
[সম্পাদনা]কলকাতার কলুটোলার এক সম্ভ্রান্ত বৈদ্য বংশে কেশবচন্দ্র সেনের জন্ম। তার পিতামহ দেওয়ান রামকমল সেন ছিলেন রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গলের প্রথম ভারতীয় সেক্রেটারি। রামকমলের দ্বিতীয় পুত্র প্যারীমোহন সেন ছিলেন কেশবচন্দ্রের পিতা। প্যারীমোহনের জন্ম হয় ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে । সুপুরুষ ও গুণবান প্যারীমোহন ছিলেন মধুর স্বভাব, সূক্ষ্ম রুচি ও শিল্পীভাবাপন্ন। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়সেই তার মৃত্যু হয়। কেশবচন্দ্রের মা ছিলেন সারদাসুন্দরী দেবী। তিনিও পরম রূপবতী ও মহীয়সী নারী ছিলেন। বালক কেশবচন্দ্রের চরিত্রগঠনে তার প্রভাব ছিল সর্বাধিক। [৩] এঁদের আদি নিবাস ছিল উত্তর চব্বিশ পরগনার গরিফা গ্রামে।
শৈশব,কৈশোর ও ছাত্রজীবন
[সম্পাদনা]খুব ছোটবেলা থেকেই কেশবের মধ্যে বুদ্ধিমত্তা ও চারিত্রিক বিশিষ্টতার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। বাড়িতে ব্রাহ্মণ গুরুমশায়ের কাছে তার প্রাথমিক পড়াশোনার শুরু।সাত বৎসর বয়সে তৎকালীন হিন্দু স্কুলে ভর্তি হন। মেধা ও বুদ্ধিমত্তার কারণে তিনি অন্য সবায়ের থেকে আলাদা ছিলেন। শান্ত,ধীর ও সংযত স্বভাবে জন্য তার তেজস্বী রূপ সেসময় সুপ্ত ছিল।হিন্দু কলেজে তিনি ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, ন্যায়, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।কিছুদিনের জন্য তিনি হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজে শিক্ষালাভ করেন। [৪]
যৌবন
[সম্পাদনা]নববিধান প্রতিষ্ঠা ও ধর্মপ্রচার
[সম্পাদনা]শেষজীবন ও মৃত্যু
[সম্পাদনা]৮ জানুয়ারি ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সেই তার মৃত্যু হয়।
ইংল্যান্ড ভ্রমণ
[সম্পাদনা]কেশবচন্দ্র ১৮৭০ সালে ইংল্যান্ডে গমন করেন এবং সেখানে তিনি ৬ মাস অবস্থান করেন । ইংল্যান্ডে অবস্থানকালে তিনি রানী ভিক্টোরিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি লাভ করেন ।
দর্শনচিন্তা
[সম্পাদনা]কেশবচন্দ্রের রাজনৈতিক মতাদর্শের মধ্যে ইংরেজ বিদ্বেষের ভাব লক্ষিত না হলেও, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে তার দৃপ্ত ভাষণগুলি স্বাধীনতা আন্দোলনের অব্যবহিত পূর্বযুগে ভারতের জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তর্কযুদ্ধে ইউরোপীয় মিশনারিদের পরাস্ত করে ভারতের ধর্ম, সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিষয়ে তাদের ছড়ানো কুৎসার সমুচিৎ জবাব দেন। শ্রীরামকৃষ্ণের বিশেষ স্নেহধন্য কেশবচন্দ্র ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ডের নানা স্থানে ধর্মপ্রচার করেন এবং তার বাগ্মীতায় সেকালের প্রগতিপন্থী শিক্ষিত ভারতবাসীর মনে অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি হয়।[৩]
সাংবাদিকতা ও সাহিত্যরচনা
[সম্পাদনা]সমাজ সংস্কার
[সম্পাদনা]ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র হিন্দুসমাজের বর্ণপ্রথা বিলোপ, বিধবা বিবাহের প্রবর্তন ও স্ত্রীশিক্ষার উন্নতিসাধন প্রভৃতি প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার সমর্থক ছিলেন। তিনি হিন্দুসমাজের থেকে ব্রাহ্মসমাজের স্বাতন্ত্রবিধানেও বিশেষ যত্নবান ছিলেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তার বৈপ্লবিক চিন্তাভাবনারগুলির বিরোধ বাধলে তিনি ও তার অনুগামীরা ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তার কন্যা সুনীতি দেবীর বিবাহকালে ব্রাহ্মপ্রথা লঙ্ঘিত হলে, কয়েকজন অনুগামী ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ ত্যাগ করে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর কেশবচন্দ্র বিভিন্ন ধর্মমতের সমন্বয়ে নববিধান ব্রাহ্মসমাজের সূচনা করেন ও অবশিষ্ট জীবন ধর্মাচরণেই অতিবাহিত করেন।
কেশবচন্দ্র ও বাংলার নবজাগরণ
[সম্পাদনা]গ্রন্থতালিকা
[সম্পাদনা]- সত্যবিশ্বাস,
- জীবনবেদ,
- সাধু-সমাগম,
- দৈনিক প্রার্থনা,
- মাঘোৎসব,
- ইংলণ্ডে কেশবচন্দ্র সেন,
- নবসংহিতা,
- হাফেজ।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ তৃপ্তি চৌধুরী (২০১২)। "সেন, কেশবচন্দ্র"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "Keshab Chunder Sen | Hindu philosopher and social reformer | Britannica"। www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১০।
- ↑ ক খ গ [আধুনিক ভারতের নির্মাতাঃ কেশবচন্দ্র সেন, অরুণ কুমার মুখোপাধ্যায়, প্রকাশন বিভাগ, তথ্য ও বেতার মন্ত্রক, ভারত সরকার, নয়াদিল্লি, ১৯৯৬ ]
- ↑ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ১৬২,১৬৩,আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- বাঙালি সমাজ সংস্কারক
- ১৮৩৮-এ জন্ম
- ১৮৮৪-এ মৃত্যু
- বাঙালি হিন্দু
- ভারতীয় হিন্দু
- ১৯শ শতাব্দীর হিন্দু গুরু
- ভারতীয় হিন্দু আধ্যাত্মিক শিক্ষক
- প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ব্রাহ্ম
- হিন্দু দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ববিদ
- ১৯শ শতাব্দীর হিন্দু দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ববিদ
- হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী
- কলকাতার পণ্ডিত
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- পশ্চিমবঙ্গের সমাজকর্মী
- কলকাতার শিক্ষায়তনিক