বিপন চন্দ্র
বিপন চন্দ্র (২৪ মে ১৯২৮ – ৩০ আগস্ট ২০১৪) [২] একজন ভারতীয় ইতিহাসবিদ, আধুনিক ভারতের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ইতিহাসের একজন সম্মান ও উপাধিসহ অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিষয়ের উপর বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন এবং মহাত্মা গান্ধী বিষয়ে একজন মুখ্য পণ্ডিত হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি দ্য রাইজ অ্যান্ড গ্রোথ অফ ইকোনমিক ন্যাশনালিজম সহ বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। [৩]
বিপন চন্দ্র | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৩০ আগস্ট ২০১৪ | (বয়স ৮৬)
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | ইন্ডিয়াস স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স |
পুরস্কার | পদ্মভূষণ (২০১০),[১] রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি অব বিহার প্লেক |
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা
সম্পাদনাবিপন চন্দ্রের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের কাংরায় (বর্তমানে হিমাচল প্রদেশে )। ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলের প্রচলন অনুসারে, তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল উর্দুতে, জীবনের শুরুর দিকে বাড়িতে তার উর্দু উপন্যাস নিয়ে সময় কাটত। তিনি ১৯৪৬ সালে ফরম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজ, লাহোর থেকে স্নাতক হন যার পরে দেশভাগ হওয়ার দরুন তাকে চলে যেতে হয়। এরপরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান যেখানে তিনি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি সেখানে কমিউনিস্টদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং সেনেটর ম্যাকার্থির কমিউনিস্ট বিরোধী ক্রুসেডের জালে ধরা পরায় তাকে ভারতে নির্বাসিত করা হয়। ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে দিল্লিতে ফিরে, বিপন চন্দ্র দিল্লির হিন্দু কলেজে ইতিহাসের প্রভাষক নিযুক্ত হন। [৪] পরে ১৯৬৩ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি শেষ করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাচন্দ্র বহু বছর ধরে প্রভাষক এবং তারপরে হিন্দু কলেজ, দিল্লিতে রিডার হিসাবে পড়ান। [৫] তিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন দিল্লি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই সেখানে ইতিহাসের অধ্যাপক হন, এবং অবসর গ্রহণের পর একজন সান্মানিক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি অনুসন্ধান জার্নাল প্রতিষ্ঠা করেন এবং দীর্ঘদিন এটির সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য ছিলেন। [৪]
চন্দ্র একজন বিভাগীয় সভাপতি এবং ১৯৮৫ সালে ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেসের সাধারণ সভাপতি ছিলেন [৬] তিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর হিস্টোরিক্যাল স্টাডিজ, নয়াদিল্লির চেয়ারপারসন ছিলেন। [৭] তিনি ১৯৯৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য হন [৫] ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, নয়াদিল্লির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। [৮] ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি অনেক নতুন ধারাবাহিক যেমন জনপ্রিয় সামাজিক বিজ্ঞান, আত্মজীবনী, আফ্রো-এশিয়ান কান্ট্রি সিরিজ, ইন্ডিয়ান ডায়াস্পোরা স্টাডিজ ইত্যাদি শুরু করেছিলেন [৯]
তার অবসরের বছরগুলিতে তিনি ২০০৭ সালে জাতীয় গবেষণা অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন [৪]
গবেষণা
সম্পাদনাচন্দ্র স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন। [১০] তাঁর সহ-লেখিত বই, ফ্রিডম স্ট্রাগল, ১৯৭৭ সালে ভারতে ক্ষমতায় আসা নতুন কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা সেন্সর করা হয়েছিল [১১] তিনি নুরুল হাসান, রাম শরণ শর্মা, সর্বপল্লী গোপাল, সতীশ চন্দ্র, রোমিলা থাপর, ইরফান হাবিব, বরুন দে এবং অর্জুন দেব এবং তাঁর কয়েকজন ছাত্র যেমন মৃদুলা মুখার্জি, আদিত্য মুখার্জি, সুচেতা মহাজন এবং বিশালাক্ষি মেননের মতো ইতিহাসবিদদের সাথে কোলাবারেট করেছিলেন, যাদের পাঠ্যপুস্তকগুলি পূর্বে ভারতের স্কুলগুলির ইতিহাস পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল। [১২] [১৩]
বিতর্ক
সম্পাদনাএপ্রিল ২০১৬ সালে, দক্ষিণপন্থী কর্মী দীনানাথ বাত্রা, বিপনেরভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিলেন কারণ এতে ব্যবহৃত পরিভাষা বুঝতে ভুল হয়েছিল। [১৪] [১৫]
মৃত্যু
সম্পাদনাচন্দ্র ৮৬ বছর বয়সে দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৩০ আগস্ট ২০১৪ তারিখে গুরগাঁওতে তার বাড়িতে মারা যান [১৬] [১৭] তাঁর জন্মবার্ষিকীতে জেএনইউ একটি স্মারক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। [১৮] [১৯]
প্রকাশনা
সম্পাদনা- দ্য মেকিং অফ মডার্ন ইন্ডিয়া: ফ্রম মার্কস টু গান্ধী, ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসওয়ান, ২০০০
- হিস্ট্রি অফ মডার্ন ইন্ডিয়া , ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসওয়ান, ১৯৯০
- কমুনালিসম: আ প্রাইমার, (নতুন দিল্লি, ২০০৮)
- ইন দা নেম অফ ডেমোক্রেসি: দা জেপি মুভমেন্ট এন্ড দা ইমারজেন্সি, (নতুন দিল্লি, ২০০৩)
- এসেস অন কলোনিয়ালিসম, (নতুন দিল্লি, ১৯৯৯)
- ইন্ডিয়া সিন্স ইন্ডিপেন্ডেন্স, ( মৃদুলা মুখোপাধ্যায় এবং আদিত্য মুখার্জির সাথে যৌথভাবে), (নতুন দিল্লি, ১৯৯৯) [২০]
- আইডিওলজি এন্ড পলিটিক্স ইন মডার্ন ইন্ডিয়া, (নতুন দিল্লি, ১৯৯৪)
- এসেস অন ন্যাশনালিজম , (নতুন দিল্লি, ১৯৯৩)
- এসেস অন কনটেম্পোরারি ইন্ডিয়া , (নয়া দিল্লি, ১৯৯৩)
- দ্য এপিক স্ট্রাগল, (নতুন দিল্লি, ১৯৯২)
- ইন্ডিয়াস স্ট্রাগল অফ ইনডিপেনডেন্স, ১৮৫৭-১৯৪৭, (নতুন দিল্লি, ১৯৮৯) [২১]
- ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল মুভমেন্ট: দ্যা লং টার্ম ডায়নামিক্স , (নতুন দিল্লি, ১৯৮৮)
- কমিওনালিজম ইন মডার্ন ইন্ডিয়া , (নতুন দিল্লি, ১৯৮৪)
- দ্য ইন্ডিয়ান লেফট ক্রিটিক্যাল এপ্রাইসাল, (নতুন দিল্লি, ১৯৮৩)
- ন্যাশনালিজিম এন্ড কলোনিয়ালিজম ইন মডার্ন ইন্ডিয়া, (নতুন দিল্লি, ১৯৭৯)
- ফ্রিডম স্ট্রাগল, (অমলেশ ত্রিপাঠি এবং বরুন দে এর সাথে যৌথভাবে), (নতুন দিল্লী, ১৯৭২))
- দা রাইস এন্ড গ্রোথ অফ ইকোনোমিক ন্যাশনালিজম ইন ইন্ডিয়া: ইকোনোমিক পলিসিস অফ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লিডারশিপ , ১৮৮০-১৯০৫ (নতুন দিল্লি, ১৯৬৬)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Padma Awards Directory (1954–2013)" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs। ১৪ আগস্ট ২০১৩। পৃষ্ঠা 153। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Ravi Bhushan (১৯৯২)। Reference India: biographical notes on men & women of achievement of today & tomorrow। Rifacimento International। পৃষ্ঠা 139।
- ↑ "Bipan Chandra, The Rise and Growth of Economic Nationalism" Googlebooks.com.
- ↑ ক খ গ "Bipan Chandra and Andre Beteille Appointed as National Research Professors".
- ↑ ক খ "Renowned Indian Historian Dr. Bipan Chandra Passes Away - Kitaab" Retrieved 2015-03-25.
- ↑ "Historian Bipan Chandra dies at the age of 86"। The Times of India। ৩০ আগস্ট ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-৩১।
- ↑ "Centre for Historical Studies, JNU" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে.
- ↑ "Bipan Chandra appointed NBT chairman".
- ↑ Patnaik, Prabhat.
- ↑ T.K.Rajalakshmi, Targeting History, in Frontline, Vol. 18, Issue 09, 28 April – 11 May 2001[অধিগ্রহণকৃত!]
- ↑ "Censorship of Historical Thought: A World Guide" - Antoon de Baets Books.google.com Retrieved 2015-03-25.
- ↑ D.R. Chaudhry (২০০২-০৪-২৮)। "Critiques galore!"। The Tribune (Chandigarh)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৬।
- ↑ `Call me Bipan, not prof', The Telegraph, 31 August 2014.
- ↑ Vikas Pathak, 'Ban Sought on Bipan Chandra's book' in The Hindu, 29 April 2016
- ↑ Siddhartha Rai, 'Bipan Chandra's book on India's freedom struggle raises controversy, calls Bhagat Singh a terrorist' in India Today, 28 April 2016
- ↑ "Historian Bipan Chandra Dies At The Age of 86"। NDTV। ৩০ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ "Historian Bipan Chandra is dead"। ৩০ আগস্ট ২০১৪। ৩০ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ "JNU to organize Jashn-e-Azadi on historian Bipan Chandras birth anniversary"। indiatoday.intoday.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-২৮।
- ↑ "Idea of Bharat Mata is European import: Irfan Habib"। The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৩-২৯। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-১০।
- ↑ Mukherjee, Bipan Chandra, Mridula Mukherjee, Aditya (২০০৮)। India since independence (Rev. সংস্করণ)। Penguin Books। পৃষ্ঠা 771। আইএসবিএন 9780143104094।
- ↑ "Why you should read India's Struggle for Independence by Bipin Chandra for UPSC exams?| Kaitholil.com"। kaitholil.com। ২০২২-০৮-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৩।