ক্লোরোপ্লাস্ট
উদ্ভিদ কোষের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু হচ্ছে প্লাস্টিড। সবুজ রঙের এই প্লাস্টিডগুলিতে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ঘটে। এদের স্ট্রোমার মধ্যে ক্লোরোফিল অণুর উপস্থিতির জন্যেই এদের রং সবুজ হয়। ক্রোরোপ্লাস্ট দুইস্তর বিশিষ্ট একটি পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। বাইরের দিকের স্তরটিকে বলা হয় বহিঃস্তর এবং ভেতরের দিকের স্তরটিকে বলা হয় অন্তঃস্তর। ক্রোরোপ্লাস্টে গ্রানাম (বহুবচনে গ্রানা) চাকতি নামক একটি স্তরিভূত অঙ্গ থাকে। একটি ক্লোরোপ্লাস্টে সাধারণত ৪০-৮০টি গ্রানা থাকে এবং এই গ্রানাগুলো একটির পর একটি সজ্জিত হয়ে ৫-২৫টি গ্রানাম চক্র বা চাকতি গঠন করে। ক্লোরোপ্লাস্টে অবস্থিত গ্রানাগুলো পরস্পর গ্রানাম ল্যামেলা নামক নালিকা দ্বারা সংযুক্ত থাকে।
ক্লোরোপ্লাস্ট মূলত থাকে গাছের পাতায়, কচি কান্ডের ত্বকে, ফুলের বৃতিতে এবং কচি ফলের ত্বকে। সাধারণত যে সমস্ত কোষকলাতে সালোকসংশ্লেষণ হয়, সেই সব কলার কোষে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোপ্লাস্ট উপস্থিত থাকে। এছাড়াও বীজের মধ্যে ভ্রূণে আর বড় গাছের প্যারেনকাইমা কলার কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট পাওয়া যায়। সাধারণত একটি উদ্ভিদ কোষে গড়ে ১০-৪০টি ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে।
ক্লোরোপ্লাস্ট এর গঠন:
১/আবরণী ঝিল্লি: সমস্ত ক্লোরোপ্লাস্ট একটি দুই স্তর বিশিষ্ট ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে। এটি লিপিড ও প্রোটিন দ্বারা গঠিত।
২/স্ট্রোমা: ঝিল্লি দ্বারা আবৃত পানিগ্রাহী ম্যাট্রিক্স বিদ্যমান।
৩/থাইলাকয়েড ও গ্রানাম: স্ট্রোমাতে অসংখ্য থাইলাকয়েড থাকে। এটি থলে আকৃতির। কতকগুলো থাইলাকয়েড এক সাথে একটির উপর আরেকটি স্তূপ মত থাকে। থাইলাকয়েড এর এই স্তূপকে গ্রানাম বলা হয়।
৪/স্ট্রোমা ল্যামেলি: দুটি পাশাপাশি গ্রানার কিছু সংখ্যক থাইলাকয়েডস সূক্ষ্ম নালিকা দ্বারা সংযুক্ত থাকে। এই সংযুক্তকারী নালিকাকে স্ট্রোমা ল্যামেলি বলে।
৫/ফটোসিনথেটিক ইউনিট : থাইলাকয়েড মেমব্রেন বহু গোলাকার বস্তু বহন করে। এর মধ্যে ATP তৈরির সকল এনজাইম থাকে। মেমব্রেন গুলোতে অসংখ্য ফটোসিনথেটিক ইউনিট থাকে। প্রতি ইউনিটে ক্লোরোফিল- এ, ক্লোরোফিল- বি, ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিল এর প্রায় ৩০০-৪০০ অণু থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের এনজাইম, ফসফোলিপিড ইত্যাদি থাকে।
৬/DNA ও রাইবোজোম: ক্লোরোপ্লাস্টে তার নিজ DNA ও রাইবোজোম থাকে। এদের সাহায্যে ক্লোরোপ্লাস্ট নিজস্ব প্রতিরুপ সৃষ্টি ও কিছু প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি করতে পারে।
নামকরণ
সম্পাদনাক্লোরোপ্লাস্ট শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ "ক্লোরোস" এবং "প্লাস্টেস" থেকে। ক্লোরোস (χλωρός) অর্থ সবুজ এবং প্লাস্টেস (πλάστης) অর্থ যা গঠিত হয়।[১] ১৮৮৩ সালে Andreas Schimper এর নামকরণ করেন। [২][৩]
কাজ
সম্পাদনা- শর্করা জাতীয় খাবার প্রস্তুত করা।
- সৌর শক্তিকে জৈবনিক শক্তিতে রূপান্তর করা।
- ফটোফসফোরাইলেশন অর্থাৎ, সূর্যের আলোর সহায়তায় ADPকে ATPতে রূপান্তর।
- ফটোরেসপিরেশন বা আলোক শ্বসন ঘটায়।
- "গ্রানা"য় সালোকসংশ্লেষণের আলোক পর্যায় এবং "স্ট্রোমা"য় অন্ধকার পর্যায়ের বিক্রিয়া হয়।
- এরা নিজ প্রয়োজনে প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড তৈরি করে।
- কিছু RNA ও ফ্যাটি এসিড এর সংশ্লেষণও ঘটে।
- ক্লোরোপ্লাস্ট থেকে ক্রোমোপ্লাস্ট ও লিউকোপ্লাস্ট গঠিত হতে পারে।
- এতে নিজস্ব রাইবোজোম থাকে যা কিছু প্রোটিন সংশ্লেষণ করে।
- এতে নিজস্ব DNA থাকায় সাইটোপ্লাজমিক ইনহেরিটেন্স এ অংশ নেয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ https://www.etymonline.com/word/chloroplast
- ↑ https://web.archive.org/web/20131019121025/http://publikationen.stub.uni-frankfurt.de/frontdoor/index/index/docId/19551
- ↑ https://books.google.com.bd/books?id=OT8GCAAAQBAJ&redir_esc=y